আমার আদরিনী পর্ব ২৩+২৪

আমার আদরিনী পর্ব ২৩+২৪
আশুথিনী হাওলাদার

সাদিদ-তিয়াসার বিয়ের পর বহুবছর দেশে ফেরেনি তুলিকা। প্রায় ১১ বছর পর নিজ মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দেশে পা রাখে সে। আপনজন বলতে নানা আর মা ছিল। নানা মারা যান বছর ছয় আগে এরপর মা। নিজের বলতে কেউ ছিল না তুলিকার। শূন্য ঘর আর এত এত স্মৃতি। সাথে সাদিদ সবসময় চোখের সামনে। সাদিদের সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও সাদিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থেকে নিজে আড়াল করতে পারেনা তুলিকা। তুলিকার ফেরার পর তিয়াসা খুব হীনমন্যতায় ছিল। বোনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ তার ছিল না আর না বোনকে নিজের ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয়ার। কারন ততোদিনে সে এক সন্তানের মা। সাদিদ তাকে যত’ই না মানুক এটা তো সত্যি সে সাদিদের বউ। তুলিকা অবশ্য বোনের সাথে স্বাভাবিক ভাবে’ই কথাতা বলেছে এমন যে কিছুই হয়নি। তিলাত কে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। তুলিকাকে দেখে পুরনো ক্ষত গুলো তাজা হয়ে ওঠে সাদিদের। প্রায় আট বছর পর সে আবার বারে যায়। এবং মাত্রাতিরিক্ত ড্রিংক করে শুধু ড্রিংক করে না তুলিকাকে ফোন করে কথা শুনাতে থাকে। বেশি ড্রিংক করে ফোলে সাদিদ উঠে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। বারের ম্যানেজার সাদিদের থেকে ফোন নিয়ে তুলিকাকে সবটা জানায়। কল পেয়ে ছুটে যায় তুলিকা। সাদিদকে ওই অবস্থায় দেখে নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করে তার। হাত ধরে সে সাদিদের। সাদিদ তুলিকার হাত খামচে ধরে। নিজের কাছে টেনে তুলিকার থুতুনি আংগুল দিয়ে চেপে ধরে বলল,,

__‘আই হেইট ইউ।’
এই তিনটি শব্দ কানে যাওয়া মাত্র তুলিকার বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে। সাসিদ নিজের আংগুলের মাথায় জল গুলো নিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,,
__‘ছলনাময়ী! ছলনাময়ীদের কাঁন্নাও পায়? মায়া কাঁন্না!
কথাটা কানে যাওয়া মাত্র তুলিকার মনে হলো কেউ তার বুকে পাথর রেখে দিয়েছে। খুব কষ্ট হয় তার নিশ্বাস আঁটকে যায়। কাঁন্নারা দলা পাঁকিয়ে বেড়িয়ে আসতে চায় ভিতর থেকে। কাঁন্না আঁটকাতে ঢোক গিলে তুলিকা গলায় জ্বলে ওঠে।নিজেকে সামলে ধরা গলায় বলল,,
__‘উঠন! বাড়ি যেতে হবে।’
তুলিকা ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় সাদিদ। রাগী স্বরে চেচিয়ে বলল,,
__‘কার বাড়ি? কীসের বাড়ি? ওই বাড়িতে আমি শান্তি পাইনা। এখানে পাই! এই যে এটা, এটা আমার বাড়ি। তুমি ফিরে আসছো কেন? আমার পুড়ে ছায় হয়ে যাওয়া জীবন কে আরো শেষ করে দিতে? আই হেইট ইউ! আই হেইট ইউ!” ঠকিয়েছো তুমি তোমার বোন সবই সবাই ঠকিয়েছো। আই হেইট বোথ অফ ইউ ।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাদিদের চেচানোতে আসে পাশের সবাই তাদের দিকে তাঁকায়। সাদিদ তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে নিজ মনে ড্রিংক করতে থাকে। তুলিকা ড্রিংকের বোতল কেঁড়ে নেতে চায়। সাদিদ রক্ত চুক্ষ নিয়ে তাঁকায় তুলিকার দিকে। হালকা ভয় পেলেও পাত্তা দেয়না তুলিকা ড্রিংকের বোতল সাদিদের হাত থেকে কেঁড়ে নেয় সে। বারের বিল মিটিয়ে সাদিদ কে নিয়ে বাইরে আসে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। সাদিদ নিজের হাত তুলিকার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বারের ভিতরে যেতে নেয়। তুলিকা তাকে ধরে বৃষ্টি মাথাতে নিয়ে’ই রহনা দেয় বাড়ির পথে । ফেরার পথে দু’জনে বৃষ্টিতে ভিজে যায়। তুলিকা বাড়ি ফিরে সাদিদকে নিজের ঘরে রেখে তিয়াসার ঘরের দরজায় টোকা দেয়। তিয়াসা মাথা ব্যাথার কারনে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরে অনেক আগে’ই। বিরক্ত হয় তুলিকা কিছুক্ষণ দরজায় টোকা দিতে থাকে। তিয়াসার সারা না পেয়ে বিরক্তি নিয়ে ড্রয়ং রুমের দোফায় বসে পরে সে। কি করবে বুঝতে পারছে না তুলিকা। সাদিদ নিজের মধ্যে নেই। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে শরীরের কাপড়ও ভিজে চুপেচুপে হয়ে আছে। কিছুক্ষণ থম মেরে সোফায় বসে থাকে তুলিকা। মানুষটা তার নেই। বোনের স্বামী হয়। বোনের স্বামীকে কি করে চেইঞ্জ করাবে সে? যার স্বামী সে তো মরার মতো ঘুমচ্ছে। রাগ হচ্ছে তুলিকার। নিজের রাগকে দমন করে সাদিদের ঘরে যায় তুলিকা। মানুষটাকে তো সে ভালোবাসে কি করে এভাবে ভেজা কাপড়ে ফেলে রাখবে। যদি! জ্বর হয় তার উপর আবার সাদিদের শরীরে টাইফয়েডের জীবানু আছে। এর আগের বারের কথা ভেবেই কেঁপে ওঠে তুলিকা। সেবার জ্বর হয়ে বেশ কিছুদিন হস্পিটালাইজড হতে হয় সাদিদকে।

তুলিকা ঘরে গিয়ে দেখে সাদিদ ভেজা শরীরে বিছানায় সোজা হয়ে হাত-ছড়িয়ে শুয়ে আছে। রাগ হয় তার রাগে ফোস ফোস করতে করতে নিজে মনে বকে, তাকে ঝামেলায় ফেলে নবাবজাদা ঘুমচ্ছে। তুলিকা কোমড়ে আঁচল গুজে খাটে উঠে সাদিদের শার্টের বুতাম খুলতে নেয়। চোখ বন্ধ অবস্থায় তুলিকার হাত খামছে ধরে সাদিদ। তুলিকা ভ্রু কুচকে সাদিদের মুখ পাণে তাঁকায়। সাদিদ চোখ খুলে তুলিকাকে দেখে ফিচলে হাসে৷ তুলিকা আহমক হয়ে চেয়ে থাকে। সাদিদ তাকে দেখে হাসছে। রিয়াল্লি? নেশায় ভালো মতই’ ধরেছে তাহলে। মৃদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদিদের হাত সরিয়ে বুতাম খুলতে নেয় সে। সাদিদ আবারও হাত ধরে তুলিকার। তুলিকা বিরক্তি নিয়ে সাদিদের দিকে তাঁকায়। সাদিদ হো হো করে হেসে দেয়। সাসিদের হাসি দেখে বুকের ভিতর কেমন কেমন খা খা করে ওঠে তুলিকার। অনেক দিনের তৃষ্ণার্ত লাগছে নিজেকে। এই হাসিটা, এই মানুষটাকে না দেখে সে এত বছর ভীনদেশে পরে ছিল। চোলহ থেকে জল গড়িয়ে পরে তার। পরক্ষনে চোখ মুছে নিজেকে সামলে বলল,

__‘এসব কোন ধরনের পাগলামি সাদিদ? শার্ট খুলতে দাও অনেক্ক্ষণ যাবত ভেজা শরীরে আছো।’
সাদিদ বাচ্চাদের মতো মিনমিন করে বলল,,
__‘হ্যা খুলতে দেই আর তুমি আমার ইজ্জত লুটু।”
সাদিদের এহনো কথায় থতমত খেয়ে যায় তুলিকা। খাট থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,
__‘তোমার অনেক নেশা হয়ে গিয়েছে। আগে নেশা কাঁটাতে হবে।
তুলিকার কোমড় থেকে শাড়ির আঁচল খুলে আঁকড়ে ধরে সাদিদ। সাদিদের এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে যায় তুলিকা।
ভয়ে ভয়ে বলল,
__‘কি করছো? ‘
জোরে হেসে দেয় সাদিদ। নেশাতুর কন্ঠে বলল,
__‘খাবো! তোমাকে খাবো।’
কেঁপে ওঠে তুলিকা। সাদিদের থেকে শাড়ির আঁচল ছাড়াতে নেয়। সাদিদ শাড়ির আঁচল আঁকড়ে ধরে টেনে তুলিকাকে বিছানায় ফেলে তার উপরে উঠে যায়। ভয় পেয়ে যায় তুলিকা। ভয়ে ভয়ে বলল,,
__‘সাদিদ ছাড়ো।’
সাদিদ নেশার ঘোরে বলল,,
__‘না।’
অসহায় কন্ঠে বলল তুলিকা,,
__‘প্লিজ সাদিদ ভুল হয়ে যাবে। ‘

শোনে না সাদিদ। তুলিকার ঘাড়ে মুখ ডুবায় চুল সরিয়ে ঠোঁট ছোয়ায়। শিউরে ওঠে তুলিকার ইচ্ছে করছে সাদিদের এই পাগলামোকে সায় জানিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিতে। কিন্তু না! সে বেইমান হতে পারবে না।
সাদিদকে নিজের থেকে সরাতে চায় সে। তবে সাদিদের পুরুষ শক্তির সাথে পেরে উঠছে না সে। না পেরে অনুনয় করে বলল,,
__‘ভুল হচ্ছে সাদিদ! তুমি নেশার ঘোরে আছো।’
__‘হুম!’
কঠর কন্ঠে বলে তুলিকা,
__‘ছাড়ো আমাকে সাদিদ।’
সাদিদ খিল কখিল করে হেসে উঠে বাচ্চা স্বরে বলল,,
__‘ছাড়বো না! তোমাকে আদর করবো।’
নিজেকে মানাতে পারছে না তুলিকা। আর না সাদিদ কে থামাতে পারছে। তিয়াসাকে কি জবাব দেবে সে? সকাল হলে সাদিদ নিজেও সবটা ভুলে যাবে। তখন, সাদিদ যদি বলে,, সে সাদিদের নেশার ঘোরে সুযোগ নিয়েছে। এমনি সাদিদ তাকে ঘৃনা করে। ঘৃনাটা হয়তো আরও বেড়ে যাবে। সাদিদ কে ঠেলে উঠতে নেয় তুলিকা। কিন্তু সাদিদ আঁকড়ে ধরে তাকে। শত চেষ্টা করেও সাদিদ কে আঁটকাতে পারেনা তুলিকা। পূর্নতা পেয়ে যায় তাদের ভালোবাসা তবে অবৈধ ভাবে। তাদের সম্পর্কের ১৩ বছর পর। দু’জন ভালোবাসার মানুষ শারীরিক ভাবে এক হয়। ভোরে সাদিদ ঘুমোনো মাত্র তুলিকা শরীরে শাড়ি পেঁচিয়ে নিজ ঘরে চলে যায়।
“বর্তমান”

রেস্টুরেন্টে ঢুকে’ই মেঘালয়কে গত দিনের মেয়েটার সাথে দেখতে পায় তিয়ানা। মেঘালয় মেয়েটার হাত ধরে পাশাপাশি বসে আছে। রাগ হয় তিয়ানার রাগে কষ্টে চোখে জল চলে আসে তার। এক পলক সেদিকে তাঁকিয়ে চলে যেতে নেয় তিয়ানা। তবে কিছু একটা ভেবে ফিরে এসে মেঘালয়ের টেবিলের কাছে যায়। এগিয়ে গিয়ে বাইকের চাবিটা টেবিলের উপর ঠাস করে রাখে। হঠাৎ শব্দে থতমত খায় মেঘালয়। ভ্রুকুটি করে পাশে তাঁকিয়ে দেখলো তিয়ানা দাঁড়িয়ে ঠোঁটে মিচকে হাসি। তিয়ানাকে দেখে মেঘালয় তাড়াহুড়ো করে মেয়েটার হাত ছেড়ে দেয়। সেদিকে তাঁকিয়ে মৃদু হাসে তিয়ানা। চেয়ার টেনে পা গুটিয়ে আসন পেতে বসে সে। মিটমিটিয়ে হেসে প্রশ্ন করলো,,
__‘ভাইয়া গার্লফ্রেন্ড? ‘
পাশে থাকা মেয়েটা কপাল কুচকে প্রশ্ন করলো,,
__‘তুমি কে?”
তিয়ানা দাত বের করে হেসে বলল,,
__‘কাজিন। মেঘ ভাইয়ার বোন হই আমি।”
তিয়ানার এহনো উত্তরে বরাবরের মতো বাম ভ্রু কুচক ফেলে মেঘালয়। তিয়ানা আড়ালে মেঘালয়কে চোখ মারে। তিয়ানার এমন কান্ডে বিস্ময়ে কাশি উঠে যায় মেঘালয়ের। মেয়েটা মেঘালয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। তিয়ানা সেদিকে কটমট করে তাঁকিয়ে দাত বের করে মুখে প্লাস্টিকের হাসি জড়িয়ে বলল,,

__‘একি ভাইয়ায়ায়া” হঠাৎ কাঁশি হলো কেন তোমার?’
মেঘালয় চোখ গরম করে তাঁকায়। তিয়ানা তাকে পাত্তা না দিয়ে বলল,,
_—‘আপু আপনার নামটা?
মেয়েটা হেসে বলল,,
__‘আমার নাম বৃষ্টি।’
তিয়ানা সন্দেহ নিয়ে মেঘালয়ের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,,
__‘কিন্তু! আমি তো জানি আদোওঅঅ,,,””
__‘হ্যা! বৃষ্টি! ওর নাম বৃষ্টি। আমি ভালোবেসে ‘আদরিনী’ বলে ডাকি।” (কথা কেঁড়ে নিয়ে গম্ভির মুখে বলল মেঘালয়)
বৃষ্টি কিছু বুঝতে না পেরে আহমক হয়ে মেঘালয়ের দিকে তাঁকায়। মেঘা তাকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলে তাকে।
তিয়ানা ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে আড়চোখে মেঘালয়কে দেখে বলল,,
__‘ওও আচ্ছা! তাহলে, তুমি আমার ভাবি হও। ওহ! মিস্টেক ভাবি না হবু ভাবি হবে। তুমি কিন্তু দারুন দেখতে ভাইয়ার সাথে মানিয়ে যাবে।”
মেঘালয় ভ্রু কুচকে তাঁকায় তিয়ানার দিকে। সে ভেবে পাচ্ছে না, এই মেয়ে এখনো কি করে স্বাভাবিক? কি করে পসিবল। ‘
তিয়ানা হেসে বলল,,

__‘ভাইয়া তাহলে আজ’ই মাম্মিকে জানাই। কি বলো?’
তিয়ানার কথায় চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাঁকায় মেঘালয়।
‘‘প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে তুলিকার পিছন পিছন ঘুরছে তিলাত। কিন্তু! যে কথাটা বলতে চাচ্ছে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। ছেলের এমন কান্ড দেখে রেগে যায় তুলিকা হাতে থাকা পানির জগ ডাইনিং টেবিলের উপর শব্দ করে রেখে বলল,,
__‘হয়! কি বলতে চাস সেটা বলবি। নয়তো, এক্ষুনি আমার চোখের সামনে থেকে যাবি।’
তিলাত করুণ চোখে মায়ের দিকে চেয়ে দুঃখি দুঃখি কন্ঠস্বরে বলল,,
__‘আম্মু!’
তুলিকা বিরক্ত হয়ে কপালে হাত দিয়ে নিজ মনে বলল,,
__‘হায় কপাল! মেয়েটাকে চাইলাম ঘরোয়া বানাতে সেটা তো পারলাম না উলটো ছেলেটা ঘরোয়া হলো মায়ের পিছন পিছন আঁচল ধরে ঘুরছে। একটা কথা বলতে এসে ঘন্টা লাগিয়ে দিলো। কিন্তু! কথার ‘ক’ ও বের করতে পারলো না মুখ ফুটে।
রাগী স্বরে বলল তুলিকা,,,
__‘আঁচল ছাড় আমার।’
বলে তিলাতের হাত থেকে আঁচল ছাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে যায় তুলিকা। তিলাত মায়ের পিছন পিছন গিয়ে মায়েরর সাথে লেগে দাঁড়ায়। তুলিকা একবার বিরক্তি নিয়ে তিলাতের দুঃখি দুঃখি মুখটা দেখে চুলা বন্ধ করে হাতে খুন্তি নিয়ে বলল,
__‘বল! কি বলবি বল। এবার যদি কথা না বের হয়? এই খুরচনের বাড়ি পরবে তোর পিঠে।’
তিলাত আমতা আমতা করে তোতলে বলতে নেয়,,
__‘আআয়ামিইই”

কথা শেষ করতে পারে না তিলাত। তার আগে’ই ঝড়ের গতিতে বাসায় ঢুকে তুলিকাকে চেচিয়ে ডাকতে শুরু করে তিয়ানা।’
তিয়ানার চেচানোর শুনে তিলাতের কথাকে অসম্পূর্ণ রেখে কিচেন থেকে বেড়িয়ে যায় তুলিকা। তিলাত বলতে নিয়েও বলতে না পেরে রেগে নিজের মাথায় টোকা দেয়। ব্যাথা পেয়ে মাথা ডলতে ডলতে দুঃখি স্বরে মনে মনে বলল,,
__‘কোন জন্মের শত্রুকে আল্লাহ আমার বোন করে পাঠালো তিনি’ই জানেন। আমাকে বাশ ছাড়া ‘এ’ আর কিছু দিতে পারে না। ইশ! একটুর জন্য আম্মুকে বলতে পারলাম না অবন্তীর কথা।”
তুলিকা ডাইনিং এ গিয়ে রেগে বলল,,
__‘বাড়িতে ডাকাত পরেছে? এত চেচাচ্ছিস কেন? আস্তে কথা বল।’
তিয়ানা রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলে উঠলো,,
__‘তোমরা আমাকে বিয়ে দিয়েছো। রাইট?
তুলিকা মাথা ঝাঁকিয়ে ‘হ্যা’ বলে।
__‘তো! আমাকে এখনো বাড়িতে বসিয়ে রাখছো কেন?”
তুলিকা আহমক হয়ে প্রশ করলো,
__‘তাহলে কি করবো?
ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে তিয়ানা,,
__“কি আবার? আমকে আমার শশুড় বাড়ি পাঠাবে।’

আমার আদরিনী পর্ব ২১+২২

মেয়ের এমন কথা শুনে তুলিকার হাতে থাকা খুন্তি ফ্লোরে পরে যায়। অবাক হয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাঁকয়ে থাকে সে। তিলাত ফ্রিজ থেকে আপেল বের করে খাচ্ছিলো তিয়ানার কথা তার কানে যাওয়া মাত্র হাত থেকে আপেল পরে যায়। আর সে এক দৃষ্টিতে বোকা চোখে হতবুদ্ধি হয়ে তিয়ানার দিকে ‘হা’ করে তাঁকিয়ে থাকে। এটা কি শুনছে সে? ভুতের মুখে রাম নাম? তিলাত নিজের হাতে চিমটি কাঁটে। না যা দেখছে সত্যি দেখছে। এটাও হয়? তিলাত পাশে থাকা সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে বোনকে দেখতে থাকে।
তুলিকা আহমক কন্ঠে প্রশ্ন করলো,,
__‘কি বললা আম্মা?’
বিরক্ত হয় তিয়ানা। বিরক্তি নিয়ে বলল,,
__‘আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে আম্মু। তাহলে, বাপের বাড়িতে থাকার কি দরকার? আমার শশুড় বাড়ি যাওয়ার ব্যাবস্থা করো।
কথা শেষে নিজ ঘরে চলে যায় তিয়ানা। তুলিকা মেয়ের যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে তিলাত কে উদ্দেশ্যে করে বলল,,
__‘আমি যা শুনছি তুইও কি সেটাই শুনছিস বাবু?’
তিলাত মাথা ঝাঁকিয়ে মিনমিন করে বলল,,
__‘হ্যা আম্মু!’
তিলাতের এখন নিজের মাথা টাকাতে ইচ্ছে করছে। তার’ই বোন কোনো কিছুর পরোয়া না করে এক সেকেন্ডে বলে দিলো শশুড় বাড়ি যাওয়ার কথা। সেখানে সে বড় ভাই হয়ে ঘন্টা ধরে মায়ের আঁচল ধরে মায়ের পিছন পিছন ঘুরেও আসল কথাটা বলতে পারলো না। কচু গাছে সাথে ঝুঁলে পড়া উচিত তার।”

নিজের ঘরে গিয়ে জিনিস পত্র ফ্লোরে ছুড়ে মারে তিয়ানা। রাগ, কষ্ট দুটো’ই হচ্ছে তার। নিজের বিয়ে করা আপন স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখেও কিচ্ছু করতে পারছে না সে। নিজের পাপ্পার উপর রাগ হচ্ছে তার। সে তো শুধু জানিয়েছিল ভালোবাসে সে মেঘালয়কে। তাই বলে, এটাতো বলেনি! এখোনি বিয়ে দিয়ে দিতে। এখন তার কি হবে? সে মোটেও সতীন নিয়ে সংসার করবে না। হয় মেঘালয়কে খুন করবে নয়তো ‘ওই’ মেয়েকে। কি যেন নাম? বৃষ্টি! আবার আদর করে ‘আদরিনীও’ ডাকা হচ্ছে। এই দুঃখ সে কাকে দেখাবে? তার বর! তিয়ানার বর কিনা তিয়ানাকে না ভালোবেসে অন্য কাউকে ভালোবাসে। এই ছিল তার কপালে? নিজের ভাগ্যের উপর বেশ দুঃখ হয় তিয়ানার। ভেবে নিয়েছে সে আজ-কালে মধ্যে বউ হয়ে ঢুকবে ওই বাড়িতে তারপর দেখাবে তিয়ানা কি জিনিস। একদম! সে অন্যসব মেয়েদের মতো ন্যাকা নয় যে নিজের স্বামীকে ছেড়ে দেবে। নিজের করে’ই ছাড়বে সে। আর ওই বৃষ্টিকেও সে তার বরের দিকে কুনজর দেয়ার মজা বুঝাবে। তিয়ানা পেটের নিছে বালিস রেখেহে খাটে উলটো হয়ে ঝুঁলে থাকে। তার পা-মাথা বাইরে খাটেরবাইরে ঝুঁলছে।রাগ হলে এমনটা করে থাকে সে। আজও রাগ হচ্ছে তার ভীষন রাগ। বারবার চোখের সামনে মেঘালয়ের ‘ওই’ মেয়েটার হাত ধরার দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে তার। মেঘালয়ের ওই হাত যদি সে হাজারবার ওয়াস না করেছে তো তার নামও তিয়ানা না। রাগে নিজের চুল খামছে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে তিয়ানা। কাঁদতে কাঁদতে নিজ মনে বলে সে,
__‘আজ আমার রাগে ছোটো বেলার মতো তোমার মাথায় উঠে পটি করে দিতে ইচ্ছে করছে মেঘ ভাইয়া।’

আমার আদরিনী পর্ব ২৫+২৬