আমার আদরিনী পর্ব ২১+২২

আমার আদরিনী পর্ব ২১+২২
আশুথিনী হাওলাদার

__‘ ভাবতে পারছিস বিষয়টা তিনু। তুই হিসু টিসু না পুরু পটিতে চলে গিয়েছিলি। আজ সেই তিনুরানী নাকি আমার বউ। তার সাথে নাকি আমি এখন রোম্যান্স করছি। হায়! কপাল!’
কটমট করে তাঁকায় তিয়ানা। ফুঁসে ওঠে সে! মেঘালয়কে ঠেলে নিজের থেকে সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে সে। তিয়ানাকে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে দেখে হো হো করে হেসে দেয় মেঘালয়। তাতে তিয়ানা আরও রেগে যায়। রেগে গিয়ে মেঘালয়ে পিঠে মারতে থাকে। মেঘালয় হেসে তিয়ানার হাত আঁকড়ে ধরে। তিয়ানা দমে না গিয়ে মেঘালয়ের নাকে কামড় দেয়। মেঘালয় ব্যাথায় ‘উহ’ করে ওঠে তিয়ানা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মেঘালয়ের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। মেঘালয় নাকে হাত বুলিয়ে বলল,

__‘রাক্ষুসি একটা! আহ! আমার নাক। তোর মতো রাক্ষুসি বউ কারো কপালে জুটেনি হয়তো। আমি’ই এক পিস যার ভাগ্যেএমন একটা রাক্ষুসি জুটেছে।’
মেঘালয়ের কথাকে পাত্তা না দিয়ে সিরিয়াস কন্ঠে বলে উঠলো তিয়ানা,,
__‘আপনার কি সত্যি’ই প্রেমিকা আছে? ‘
নাক থেকে হাত সরিয়ে পূর্ন দৃষ্টিতে তিয়ানার দিকে তাঁকায় মেঘালয়। কিছু একটা ভেবে সিরিয়াস ভাবে বলল,,
__‘হ্যা!’
থমকায় তিয়ানা বিস্মিত চোখে মেঘালয়কে দেখে সে। তবে বেশিক্ষন তাঁকিয়ে থাকতে পারে না। বিছানা থেকে উঠে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। মেঘালয় তিয়ানার যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে। নিজ মনে বলল সে,,
__‘আই এম সরি তিনু। তোকে কষ্ট দেয়ার জন্য কিন্তু এটা দরকার। যেদিন সত্যি’টা সামনে আসবে সেদিন পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ হবি তোরা তিন জন তুই এবং তারা ও হ্যা শুধু তোরা তিনজন না আরও একজন আছে। ‘
ভেবে হালকা হাসে মেঘালয়। সে শুধু চাচ্ছে এসবে তিয়ানা অতিষ্ঠ হয়ে যাবে আর সেটা যেদিন সাদিদের কানে যাবে ঠিক তখন,, সেটা সিক্রেট। হেসে পাশে থাকা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমোনোর চেষ্টা করে মেঘালয়।
“অবন্তীর বাড়ির সামনে গিয়ে ঘুরঘুর করছে তিলাত। কখনো ফুটপাতে বসে নখ খুঁটছে বা উঠে রাস্তার এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করছে। মাথায় কিছু খেলছে না তিলাতের। তার মন শুধু একটা কথা’ই বলছে, ‘তোর অবন্তীকেই চাই তিলাত। ইউ ফেল ইন লাভ উইথ হিম।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

খানিক্ষন পায়চারি করে অবন্তীদের ফ্লাটের দিকে তাঁকিয়ে উঁকিঝুকি মারে সে। তবে অবন্তীর দেখা নেই। রেগে পা দিয়ে রাস্তায় বাড়ি মারে তিলাত কিন্তু ব্যাথাটা সে’ই ই পায়। পা ধরে ফুটপাতে বসে পরে। এখন নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে তিলাতের। এর চেয়ে আগে’ই তো ভালো লাগতো। এক সাথে কয়েকটা প্রেম, টাইমপাস। জীবন বিন্দাস ছিল! এখন বুড়ো বয়সে প্রেমে পরে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের মতো থাকো দাঁড়িয়ে। ভাংগা স্বরে গান ধরে তিলাত,,
__‘অন্তী তুই অপরাধী রে’
‘তোর ইনোসেন্ট চেহারা দেখিয়ে তোর প্রেমে ফেললি রে’
‘এখন কই লুকাইলিরে’ তুই অপরাধী রে’
নিজের কাকের মতো ক্যা ক্যা করা কন্ঠের উপর বিরক্ত হয় তিলাত। গান বাদ দিয়ে মেঘালয়কে ফোন দেয় সে। ফোন ধরে গাইল দেয়া শুরু করে মেঘালয়,,,
__‘শালার ঘরে শালা আমার ঘুমের উপর তোদের গুষ্টির এত কীসের শত্রুতা?’
মেঘালয়ের গালি তে বিরক্ত হয় তিলাত। যাকে বলে চরম বিরক্ত। কিন্তু মেঘালয়কে তার এখন দরকার তাই তাকে না চটানই ভালো। তাই নিজের চরম বিরক্তিকে দমন করে মিষ্টি কন্ঠে দাতে দাতে চেপে বলল,,
__‘আমি জানি! জানি আমি! তোর শালা আমি। বারবার বলতে হবে না। কাল থেকে শুনতে শুনতে কান পোঁচে গেল আমার।’
তিলাতের মিষ্টি বুলিকে সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে বলে উঠলো মেঘালয়,,

__‘কি চাই?’
__‘আই এম ইন লাভ’
বিস্ময়ে চিল্লিয়ে ওঠে বলে মেঘালয়,,
__‘হোয়াট? ইউ ফেল ইন লাভ?’
দুঃখি কন্ঠে উত্তর দেয় তিলাত,,
__‘ইহা! আই এম ইন লাভ।’
ফটাফট বলে উঠলো মেঘালয়,
__‘আই ডোন্ট বিলভ দিস।’
__‘আমি সত্যি বলছি মেঘ।’
মেঘালয় আহমক হয়ে প্রশ্ন করে,,
__‘মেয়েটা কে?’
__‘অবন্তী।’
মেঘাকয় দ্বিগুণ চিল্লিয়ে বলল,
__‘হোয়াট শেষ অব্দি বোনের বান্ধুবির প্রেমে পরলি ছাগল।’
তাকে ‘ছাগল’ বলাটা পছন্দ হয় না তিলাতের। তাই ফুঁসে ওঠে বলল,
__‘তাহলে তুইও ছাগল। আমার মতো তুইও তো বন্ধু বোনের প্রেমে পরেছিস। তার বেলায়?’
ছাদের রেলিং এ দু’হাতে ভর দিয়ে বসে আছে তিয়ানা। হঠাৎ করে তার জীবনটা উলটপালট হয়ে গেল। ভালই তো ছিল তার নিজের জগত। সেখানে কেন সে নিজের জীবনের সত্যিটা জানতে পারলো? তার আম্মু তার নিজের আম্মু না। এটা কি করে মানবে সে? যাবে ছোটো বেলা আম্মু জেনে এসেছে সে নাকি তার মা’ই না। আর জিনি মা সে কবরে শুয়ে আছেন অন্যের জীবন ধ্বংস করে। আর যাকে ভালোবাসলো সে নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে। ‘হু! হু!’ করে কেঁদে দেয় তিয়ানা। কিছু ভালো লাগছে না তার। কোথায় একটা চলে যেতে ইচ্ছে করছে। পাশে কারো উপস্থিতি টের অএয়ে চোখের জল মুছে তিয়ানা। পিছন ফরে তুলিকাকে দেখে মলিন হেসে বলল,,

__‘কিছু বলবে আম্মু?’
মেয়ের দিকে ভালো করে তাকায় তুলিকা। নেয়েটা দিম দিন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। খায় না ঠিক মতো কেমন একটা গুটিয়ে ফেলছে নিজেকে। যে মেয়েটা বাড়ি মাতয়ে রাখে সে এখন প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথাও বলছে না। মেয়ের এক গালে হাত রেখে বলে,,
__‘ কি হয়েছে বলতো?’
__‘কি হবে কিছু না।’
সন্দেহ নিয়ে বলে তুলিকা,,
__‘কিছু একটা হয়েছে। নাহলে, আমার মেয়ে এভাবে চুপ থাকতে পারে না।’
মায়ের চোখ চোখ রেখে মলিন হেসে বলল তিয়ানা,,
__‘তোমার মেয়ে?’
হঠাৎ তিয়ানার এমন কথা বুকে ধক করে ওঠে তুলিকা। নিজের মনের ওঠা ঝড় কে দমিয়ে। অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথে হেসে বলে উঠে,,
__‘হ্যা আমার মেয়ে। এখন বলতো কি হয়েছে এমন চুপচাপ কেন তুই? মেঘ একা ঘরে ‘ও’ কি ভাবছে বলতো?’
মায়ের কথায় কিছুটা রাগ নিয়ে বলে তিয়ানা,,

__‘তোমার মেঘ কি কখনো এই বাড়িতে একা থাকেনি আম্মু?’
__‘কিন্তু! তখনের থাকা আর এখনের থাকা এক নয়। এখন সে এই বাড়ির নতুন জামাই। তোর বর হয়!’
__‘আমি বর হতে বলেনি আম্মু।’
ধমকে ওঠে তুলিকা,,
__‘তিনু!! এসব কোন ধরনের কথা। আগে যে সম্পর্কই থাকুক না কেন! এখন মেঘ তোমার স্বামী। তাই তাকে তার যোগ্য সম্মান দিয়ে কথা বলবে।’
রাগ নিয়ে বলে উঠে তিয়ানা,,
__‘তাকে স্বামী হতে কেউ বলেনি আম্মু। তোমরা আমাকে বিয়েতে জোর করেছো। এমন কি মেঘ ভাইয়া কেও তোমরা জোর করেছো।’
তিয়ানার শেষের কথাটা শোনা মাত্র ভ্রু কুচকে ফেলে তুলিকা। বলল,
__‘মানে?’
কথা ঘুড়ায় তিয়ানা। আমতা আমতা করে বলল,,
__‘কিছু না।’
একটু থেমে বলল,,
__‘এটা সত্যি আম্মু। তুমি আমার চেয়ে মেঘ ভাইয়াকে বেশি ভালোবাসো’
হাসে তুলিকা। হেসে তিয়ানার দু’গালে হাত রেখে বলল,,
__‘প্রথমত নিজের স্বামীকে ‘ভাই’ বলতে নেই। জানি অভ্যেস! কিন্তু! অভ্যেস তো বদলাতে হবে।’
থেমে তিয়ানার কপালে ঠোঁট ছুয়ে বলল,,
__‘তুই তো আমার নাড়ি ছেরা ধন! তোর থেকে আর কাউকে ভালবাসতে পারি?’
মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল তিয়ানা,,
__‘সত্যি কি তাই? নাড়ি ছেড়ে ধন?’

থমকায় তুলিকা সেই সাথে অবাক চোখে তিয়ানাকে দেখে। তিয়ানার ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক যন্ত্রণাময় হাসির রেখা। অজানা ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে তুলিকা। তিয়ানার গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয় সে। তুলিকার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে ছাদ থেকে চলে যায় তিয়ানা। তবে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে তুলিকা। মেয়ের বলা শেষ কথার মানে খোজার চেষ্টা তার। ‘
মৌমিতার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে মেঘালয়। মৌমিতা ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘালয় হাত বাড়িয়ে মৌমিতাকে আলতো জড়িয়ে ধরে বলল,,,
__‘থ্যাংকস! আম্মু তিনুকে আমার করে দেয়ার জন্য।’
মুচকি হাসি মৌমিতা। কিছুটা জোড়ে মেঘালয়ের চুলে টান দেয়। মেঘালয় ব্যাথাতুর স্বরে বলল,,
__‘উফ! আম্মু লাগছে। ‘
হেসে বলল মৌমিতা,,
__‘তোর মনে মনে এসব ছিল বলিসনি কেন?’
মেঘালয় মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে বলল,,
__‘তখন সময় আসেনি।’
__‘যদি! সাদিদ ভাই প্রস্তাব দিলো। আমি শুধু ভাবছিলাম তোকে বলবো কি করে। পরে শুনি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস বহুদিন।’
কথা শেষে খিলখিল করে হেসে দেয় মৌমিতা। সাথে যোগ দেয় মেঘালয়। মৌমিতা হাসি বন্ধ করে বলল,,
__‘জানিস তিনু কে আমি আমার কাছেই রাখতে চেয়েছিলাম। আর আমার কাছে রাখার উপায় ছিল তিনুকে তোর বউ করা। কিন্তু! তুলি বা সাদিদ ভাইকে বলার সাহস পায়নি তাছাড়া তুই মানবি কিনা সেটাও তো জানতাম না। ‘
ফটাফট বলল মেঘালয়,,

__‘এখন তো জেনেছো। বিয়েও হয়েছে এখন আমার বউকে আমার কাছে এনে দাও।”
চোখহ ছোটো ছোটো করে ফেলে মৌমিতা পরক্ষণে হেসে ছেলের গালে আলতো থাপ্পড় মেরে বলল,,
__‘বউ পাগল একটা। ‘
শব্দ করে হাসে ওঠে মেঘালয়।
তিয়ানা আনমনে অবন্তীর বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার কি করা উচিত বুঝতে পারছে না। মেঘালয়কে প্রশ্ন করলেও মেঘালয় তাকে আশানুরূপ উত্তর দিচ্ছে না। কি করা উচিত তার? তিয়ানার পাশে এসে দাঁড়ায় অবন্তী। কিছুক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,,
__‘তিনু? মন খারাপ?
অবন্তীর দিকে তাঁকিয়ে মলিন হেসে অশান্ত কন্ঠে বলল তিয়ানা,,
__‘নাহ! ঠিক আছি। ‘
খানিক থেমে বলল তিয়ানা,,
__‘আমার বিয়ে হয়ে গেছে অন্তী।’
অবন্তী বিস্ময় নিয়ে বলল,,
__‘হোয়াট?”
তিয়ানা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
__‘ইয়াহ! বিয়ে হয়ে গেছে।”
__‘কবে? কখন? কার সাথে? ”
তিয়ানায় মৃদু হেসে আস্তে ধীরে প্রশ্ন কর বলছি,

__‘আজ এক সপ্তাহ হলো বিয়ে হয়েছে। সেদিন তোর সাথে কথা শেষে বাড়ি গিয়ে শুনলাম আমার নাকি বিয়ে। বাসর ঘরে গিয়ে দেখলাম আমার বর আর কেউ না মেঘ ভাইয়া। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানিস বিয়ের পরের দিন মেঘ ভাইয়ার কাছ থেকে জানতি পারি “সে অল্রেডি রিলেশনে আছেন। তার প্রেমিকা আছে যার নাম আদরিনী।”
শেষের কথা গুলো বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে তিয়ানার। চোখের কোণের জল মুছে মুচকি হাসে।’
অবন্তী বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে তিয়ানার দিকে তাঁকিয়ে থাকে এভাবে। দু’জনে’ই চুপ থাকে কিছুক্ষণ। অবন্তী নিরবতা ভেংগে বলল,,
__‘এখন কি করবি?’
তাচ্ছিল্য হেসে বলল তিয়ানা,,
__‘অন্য সব টিপিকাল বউদের মতো স্বামীকে মানানোর চেষ্টা করবো। যদি মানে!”
তিয়ানার কথা শেষের সাথে সাথে তিলাত এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। তিলাত অবন্তীকে আড়চোখে এক পলক দেখেহে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,,,
__‘তিনু চল। তোকে নিতে আসছি।”
তিয়ানা বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করল,
__‘আমাকে?”
তিলাত হাসার চেষ্টা করে বলল,,
__‘হ্যা! আম্মু বলল তুই আজ বাইক নিয়ে আসিসনি। তাই ভাবলাম তোকে নিয়ে যাই।”
তিয়ানা অবাক কন্ঠে বলল,,
__‘আজ সূর্য কোন দিক থেকে উঠলো?’
তিলাতের কপালে হাত দিয়ে বলল,,
__‘ দেখি! দেখি! তোর জ্বর টর এলো কিনা?”
অবন্তী হেসে বলল,,

__‘তিনু ভাইয়ার সাথে মজা করছিস কেন?’
অবন্তীর ভাইয়া ডাকে মেজাজ চটে যায় তিলাতের। ফোস করে বলল,,
__‘দেব একটা। বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলে। চল বাড়ি চল।
অবন্তীর দিকে তাঁকিয়ে তাকে মৃদু স্বরে,
__‘আসছি’
বলে তিয়ানার হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায় তিলাত।”
তিয়ানার বাড়ি ফরে নিজ ঘরে গিয়ে দেখে মেঘালয় তার বিছানা দখল করে শুয়ে আছে। তিয়ানা কটমট করে বলল,,
__‘আপনি আজ আমাদের বাড়িতে কি করছেন?’
হেসে শোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসে হাতের আংগুল ফুটাতে ফুটাতে বলল,,
__‘আর বলিস না বউ কে মিস করছিলাম। তাই বউয়ের কাছে চলে এলাম। ছেলেদের এই এক দোষ বুঝলি একবার বিয়ে হলে বউ ছাড়া চলে না। আমার চলছে তাই চলে এলাম।”
কপাল কুচকে ফেলে তিয়ানা। সাথে থাকা ব্যাগ পড়ার টেবিলের উপর রেখে। পা চেয়ারের উপর তুলে জুতো খুলতে খুলতে বলল,,
__‘বউ তো বোন। আপনার প্রেমিকা কই? তার কাছে যান।’
ফটাফট উত্তর দেয় মেঘালয়,,

__‘প্রেমিকা বিজি মানুষ। তাছাড়া অপশনাল হিসেবে বউ যখন আছে’ই,,,
ভ্রু কুচকে ফেলে তিয়ানা। তাকে কি বুঝালো মেঘালয়? সে ঐচ্ছিক? রাগী স্বরে বলল তিয়ানা,,
__‘ভাইয়া আপনি ঠিক কি চান? বউ নাকি প্রেমিকা?
থেমে মেঘালয়ের কাছে গিয়ে বলল,,
__‘ আমি অন্য সব মেয়েদের মতো নই যে নিজে সেক্রিফাইস করবো। আমার অধিকার আমি বুঝে নেব।’
বাঁকা হাসে মেঘালয়,,
__‘তাই? আমি আমার প্রেমিকাকে ছাড়ছি না তিনু। দেখি তুই কি করতে পারিস। সব তোর বাপ আর আমার বাপের জন্য হয়েছে তারা আমাকে জোর করেছে।’
এক কথা বার বার সহ্য হচ্ছে না তিয়ানার রেগে বলল,,
__‘সেটা আপনার আর তাদের ব্যাপার আমার নয়? আপনি ছোটো বাচ্চা না যে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেবে কেউ। আর হ্যা! আমি যতটুকু জানি মেঘালয় চৌধুরীকে জোর করে কোনো কাজ করানো ক্ষমতা কোনো মানুষের অন্তত নেই।’
নিজেকে শান্ত করে তিয়ানা। ধরে আসা স্বরে বলল,,
__‘আমি এসব নিতে পারছি না মেঘ ভাইয়া। হয় তুমি আমাকে রাখো নয়তো তোমার প্রেমিকাকে। এমনিতে আমি খুব ডিপ্রেসড আছি। এই বিয়ে বিয়ে খেলা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ নিতে চাচ্ছি না। ”
কথা শেষে ওয়াশ্রুমে গিয়ে শব্দ করে ওয়াস্রুমের দরজা আটকে দেয় তিয়ানা। মেঘালয় আহমক হয়ে চেয়ে আছে। এত এত কথা তাকে তিয়ানা শুনালো? রিয়াল্লি? বিয়ে হতে না হতে এতো সাহস বেড়ে গেল?
সোফায় বসে চা খাচ্ছিল সাদিদ। তুলিকা তার সোজাসুজি কাউচে এসে বসলো। কিচ্ছুক্ষণ হাসঅফাস করে বলল,,

আমার আদরিনী পর্ব ১৯+২০

__‘একটা কথা ছিল।’
সাদিদ পেপারের কাগজ হাতে নিয়ে বলল,,
__‘বলো?’
তুলিকা আমতা আমতা করে বলল,,
__‘বলছিলাম। তিনুকে এভাবে জোর করে বিয়ে দেয়াটা কি ঠিক হলো?’
কপাল কুচকে ফেলে সাদিদ। নিউস পেপার থেকে চোখ সরিয়ে তুলিকার দিকে তাঁকিয়ে বলল,,
__‘মানে?’
__‘আসলে তিনু হয়তো এই বিয়েতে খুশি না। ‘
সাদিদ ভ্রু কুচকে শান্ত কন্ঠে অরশ্ন করলো,,
__‘তিয়া তোমাকে কিছু বলেছে?
__‘না! বলেনি কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। ইদানিং তিনু খুব আনমনা থাকছে। তিনু তো এমন নয়।”
__‘ যখন তিয়া নিজে থেকে কিছু বলেনি। তখন তোমাকে আগ বাড়িয়ে কিছু ভাবতে হবে না। তেমন কিছু না।’
মেজাজ চটে যায় তুলিকার। ধীর কন্ঠে বলল,,
__‘তিয়ানা আমার মেয়ে সাদিদ। আমাকে ভাবতে হবে।’
সাদিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,,
__‘উমহুম! ভুল। তোমার মেয়ে নয় তোমার বোন আর আমার মেয়ে। ”
কথাটা মনে হলো তুলিকার বুকে গিয়ে বাঁধলো মনে হলো। কাঁপা স্বরে বলল,,

__‘সাদিদ! আমার মেয়ে হয় তিয়ানা। কোলে পিঠে করে বড় করেছি। জন্ম না দেই মানুষ তো করেছি।
তুলিকার কথার প্রতি উত্তরে কিছু মা বলে সোফা থেকে উঠে চলে যায় সাদিদ। তুলিকা পাথর হয়ে বসে থাকে। আজ তিয়ানা তার নিজের সন্তান হওয়া সত্যেও জোর গলায় বলতে পারছে না সে। ইচ্ছে করলো তুলিকার চিৎকার করে সাদিদকে বলতে,,
__‘তিয়ানা শুধু তোমার মেয়ে নয় সাদিদ। আমারও মেয়ে আমার নিজের পেটের সন্তান। যাকে আমি গর্ভে ধারণ করেছি। যাকে দশ মাস দশ দিন পেটে রেখে সকল কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করে জন্ম দিয়েছি। তিয়ানার প্রতি তোমার যতটা অধিকার ঠিক তার সমান অধিকার আমারও। কারণ আমি ‘ওর’ মা। নিজের মা! যে তাকে জন্ম দিয়েছে।”

আমার আদরিনী পর্ব ২৩+২৪