আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৩৪

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৩৪
সালমা খাতুন

সান্ধ্যা সাত টা…
মাইশার মন টা এখন ভীষণ ভালো।‌ যদিও বিকেলের ওই ঘটনার জন্য ওর মন খারাপ ছিল। নিজের কাজে নিজেই ফেঁসে গেছিল এক মাত্র ওর মায়ের জন্য। কিন্তু এখন খুশি মনে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে হালকা সাজুগুজু করতে ব্যস্ত। আর ওর এই খুশি এবং সাজের কারণ আরমান। আরমান মাইশাকে নিজের রুমে ডেকে পাঠিয়েছে। তাই মাইশার মন এখন আকাশে উড়ছে।

মাইশা হালকা সাজে সেজে নিয়ে এগিয়ে গেলো আরামানের রুমের উদ্দেশ্যে। দরজার সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো ও। ভিতর থেকে গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পেলো মাইশা, “Come in.”
মাইশা দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো রুমের ভিতর। চোখ গেলো সোফায় গম্ভীর মুখে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে থাকা আরমানের দিকে।‌ মাইশা মাথা নিচু করে ভদ্র মেয়ের মতো সামনে গিয়ে দাঁড়াল আরমানের সামনে। আরমান ওর দিকে না তাকিয়েই বলল, “বসো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাইশা ভীষণ খুশি হলো, আরমান ওকে তুমি করে বলছে শুনে। কারণ এর আগে আগে আরমান ওকে আপনি বলে সম্বোধন করতো। তাই খুশি মনে এগিয়ে গেলো আরমানের পাশে সোফায় বসার জন্য। ও ঠিক যখনি আরমানের পাশে বসতে যাবে তখনি আরমান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “স্টপ, এখানে না। ওখানে বসো।”
আরমান শেষের কথাটা আঙ্গুল দিয়ে টি টেবিলের সামনে থাকা ফাঁকা মেঝেটা দেখিয়ে বলল। মাইশা অবাক হলো আরমানের আঙ্গুল অনুসরণ করে তাকিয়ে। ও অবাক গলাতেই বললো, “কিহ আমি মেঝেতে বসবো?”
আরমান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো মাইশার দিকে, তারপর গম্ভীর গলায় বলল, “তো তোমার জন্য কি সিংহাসন আনতে হবে?”

মাইশা— “নাহ সেটা বলি নি, কিন্তু আমি মেঝেতে বসতে যাবো কেনো? সোফায় এতো জায়গা থাকতে।”
আরমান কিছুটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “কারণ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আর সেটা ওখানে বসলে তারপরই দিতে পারবো।”
মাইশা সারপ্রাইজ এর কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয়েছে উঠলো, কিন্তু মেঝেতে বসতে বলাই কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলো। তাকালো দরজার দিকে, কারণ দরজাটা একেবারে খোলা আছে। ভিতরের সকল দৃশ্য বাইরে থেকে দেখা যাবে স্পষ্ট। তাই কিছুটা সংকোচ বোধ করলো ও। কিন্তু এদিকে ওর মন পড়ে আছে সারপ্রাইজ জন্য।
আরমান— “কি হলো, সারপ্রাইজ নেওয়ার ইচ্ছে নেই?”

মাইশা আরমানের দিকে তাকিয়ে আবারও একবার তাকালো দরজার দিকে। তারপর কি জেনো ভেবে মুখে হাসি নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে গেলো টি টেবিলের সামনে আরমানের সোজাসুজি। আরমান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “প্লেটের ঢাকনা টা খুলো। তারপর প্লেটে যেটা আছে চুপচাপ খেতে শুরু করো। এটাই তোমার সারপ্রাইজ।”
মাইশা কিছুটা অবাক হলো এটা শুনে। ওকে কিছু খেতে দিচ্ছে আরমান তাও এইভাবে, ও একবার আরমানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরমান ওরে দিকেই তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। কিছুটা দ্বিধা নিয়েই প্লেটের ঢাকনা সরালো মাইশা। আর প্লেটের ঢাকনা সরাতেই চমকে উঠলো ও। লাফিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কারণ প্লেটে রাখা আছে, মায়ার বানানো সেই সিঙ্গারা, যেগুলো তে ও প্রচুর পরিমাণে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে ছিলো।
আরমান ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি হলো সারপ্রাইজ পছন্দ হয়নি? নাও খেতে শুরু করো।”

মাইশা জোড় করে নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “না মানে এগুলো তো সেই সিঙ্গারা, বিকেলে আমি বানিয়ে ছিলাম। তবে ভুল করে বেশি ঝাল দিয়ে ফেলেছি। আপনাকে কে দিলো এগুলো?”
আরমান কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল, “আমাকে এগুলো কে দিয়েছে সেটা বড়ো কথা নয়। এগুলো এখন তুমি খেয়ে শেষ করবে।”
মাইশা— “নাহ! এতে অনেক ঝাল দেওয়া আছে, আমি খাবো না।”
আরমান— “খেতে তো তোমায় হবেই মিস মাইশা। খুব শখ না তোমার, অন্য কে সবার চোখে ছোটো করা। সেই শখ আমি মিটিয়ে দেবো। চলো খাওয়া শুরু করো।”
মাইশা কিছুটা আমতা আমতা করে বলল, “ক..কি বলতে চাইছেন আ..আপনি? কাকে ছোটো করতে চেয়েছি আমি সবার সামনে?”

আরমান বিরক্ত গলায় বলল, “এতো কথা বলতে আমার একদম ভালো লাগে না। ওয়েট।”
কথাটা বলেই আরমান নিজের কাছে থাকা ল্যাপটপ এ কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করে ল্যাপটপ টা টি টেবিলে রেখে মাইশার দিকে ঘুরিয়ে দিলো। ল্যাপটপ এ একটা ভিডিও চলছে। ভিডিও টা দেখা মাত্রই চমকে উঠলো মাইশা। ভিডিও তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিঙ্গারা বানানোর যাবতীয় কাজ করছে মায়া। আর তার পরপরই মাইশা এসে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে দিচ্ছে। পুরোটা ভিডিও টা দেখে মাইশার মুখটা ভয়ে চুপসে গেলো। কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়লো।
আরমান গলার আওয়াজ কিছুটা ভয়ংকর শোনালো, “মিস মাইশা এখন কি খাবেন এই সিঙ্গারা? নাকি বাড়ির সবাইকে এই ভিডিও টা দেখাবো?”

মাইশা— “নাহ! প্লিজ কাউকে দেখাবেন না ভিডিও টা। আমি..ওটা..মানে..আসলে..”
মাইশা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছিল না, তাই আমতা আমতা করছিল। আরমান ধমকে উঠল, “ Shut up. কোনো এক্সপ্লেইন চাইনি আমি আপনার থেকে। চুপচাপ এগুলো খাওয়া শুরু করুন। না হলে এই ভিডিও আমি বাড়ির সবাইকে দেখাবো।”

মাইশা আরমানের ধমকে কিছুটা চমকে উঠলো। ধীর ধীরে বসে পড়লো আরমানের সোজাসুজি মেঝেতে। তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে একটা সিঙ্গারা তুলে নিলো হাতে। প্লেটে মোট ছয়টা সিঙ্গারা আছে। মাইশা ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললো। তারপর সিঙ্গারায় একটা কামড় বসিয়ে চিবোতে শুরু করলো। সাথে সাথে মাইশার পুরো মুখ জ্বলে উঠলো। কান দিয়ে যেনো গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করলো। কোনো মতে মাইশা‌ মুখের টুকু গিলে নিলো। তারপর অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আরমানের দিকে। নীরব আর্জি, এই বারের মতো ছেড়ে দিন। কিন্তু আরমান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে, মাইশা ভয়ে ভয়ে আবারও খেতে শুরু করলো। চোখের জলে নাকের জলে মিশে একাকার হয়ে গেলো। মাইশা কাঁদছে, নাক টানছে আবার কাঁদছে। কোনো রকমে একটা সিঙ্গারা শেষ করলো ও। তারপর কাঁদতে কাঁদতে আরমানকে রিকোয়েস্ট করলো, “প্লিজ মাফ করে দিন। এমন ভুল আর জীবনেও করবো না। এটা অনেক ঝাল, আমি সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ একটু পানি দিন আমায়।”

আরমান কিছুটা তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “কাজ টা করার সময় মনে ছিল না? যে এটা ভুল। পানি? পানি তুমি এই সিঙ্গারা গুলো সব শেষ করার পরেই পাবে, তার আগে নয়।”
সামিরা— “ইয়েস! এই না হলো আমার ভাইয়া। এমন শাস্তি সারাজীবন মনে রাখবে এই মেয়ে। ভুলেও কখনো আর এমন কাজ করবে না।”
আবির— “চুপ থা শামুক, তোর ভাইয়া যদি জানতে পারে আমরা এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে ভিতরের কাজ কর্ম দেখছি, তাহলে ওই সিঙ্গারা আমাদেরকেও খাওয়াবে।”
সামিরা আবারও ফিসফিস করে বললো, “না আবুল ভাইয়া, ওই সিঙ্গারা খাওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই। বাপরে সবার যা অবস্থা হয়ে ছিল ওই এক কামড় খেয়ে।”
আবির— “হুম, তাহলে চুপ থাক।”

সামিরা— “আচ্ছা ভাইয়া, আমি এটা বুঝলাম না যে ভাইয়া মাইশার জন্য এতো পাগল কিন্তু তাকে এমন কষ্ট দিচ্ছে কেনো?”
আবির কিছুটা বাঁকা হেসে বলল, “ওটা তোর এই ছোট্ট মাথায় ঢুকবে না শামুক। তাই বেশি না ভেবে নাটক দেখতে থাক।”
সামিরা আর আবির, আরমানের রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে। ওরা এতোক্ষণ ফিসফিস করে কথা বলছিল। সামিরা সামনে পিছনে আবির। সামিরার মাথার উপরে আবিরের মাথা।
“তোমরা এখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছ কেন?”
একটা গম্ভীর আওয়াজে সামিরা আর আবির চমকে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। সামনে তাকিয়ে দেখলো আয়ান দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর মুখে। ভিতর থেকে আরমান আর মাইশাও তাকালো আয়ানের দিকে। কারণ আয়ান দরজার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে, তাই ভিতর থেকেই দেখতে পাচ্ছে আয়ানকে।

সামিরা আমতা আমতা শুরু করলো, “আসলে ভাইয়া আমরা.. মানে ওই বড়ো ভাইয়ার সাথে একটু দরকার ছিল। কিন্তু ভিতরের দৃশ্য দেখে আর যাওয়ার সাহস পাইনি।”
“কি দরকার?”
আবারো এক গম্ভীর গলার আওয়াজ। কিন্তু এটা আরমানের। আবারও একবার ভয়েস চমকে উঠলো সামিরা। এমনিতেই ও ভয়ে আছে মাইশার অবস্থা দেখে।
সামিরা— “দরকার বলতে, ওই..মানে..বলছিলাম.. ধ্যাত তোমাদের এই দুই ভাইয়ার গম্ভীর মুখের তেঁতো তেঁতো কথা শুনে আমার কথাগুলো সব ভিতরেই গুলিয়ে যাই।‌ কেনো একটু মিষ্টি করে কথা বললে কি ক্ষতি হবে শুনি। হ্যাঁ বড়ো ভাইয়া না হয় প্রথম থেকেই একটু এইরকম। কিন্তু ছোটো ভাইয়া, তুমি তো আগে অনেক হাসিখুশি, চটপটে স্বভাবের জন্য ছিল, তাহলে হঠাৎ বিদেশে গিয়ে কি হলো? যে একবারে বড়ো ভাইয়ার মতো হয়ে গেলে।”

আরমান— “সামিরা! এগুলো কোন ধরনের কথাবার্তা?”
সামিরা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “হ্যাঁ শুরু হয়ে গেলো তোমার ধমকানি, কেউ ভালোবাসে না আমায়।”
কথাটা বলেই আর দাঁড়ালো না সামিরা।
আয়ান পিছন থেকে ডাক দিলো সামিরাকে।
আয়ান— “আরে বনু শোন তো। রাগ করছিস কেনো?”
না থামলো না সামিরা, কাঁদো কাঁদো মুখে প্রস্থান করলো ওখান থেকে।
এদিকে মাইশা তাড়াহুড়ো করে উড়ে দাঁড়িয়েছে। বেচারি অনেক চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার কিন্তু পারছে না। ভিতরে সব কিছু ওর জ্বলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ভয়ংকর রকমের। চারটে সিঙ্গারা খেয়ে শেষ করেছে ও কোনো রকম। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর। চোখের পানি চেয়েও আটকাতে পারছে না। মাইশা একটু অন্য পাশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

আয়ান একবার ভিতরে তাকিয়ে দেখলো মাইশাকে। বুকের ভিতর টা জ্বলে উঠলো ওর। আয়ান মাইশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মাথা নিচু করে নিয়ে বলল, “সরি ভাইয়া, তোমাদের বিরক্ত করলাম হয়তো। রুবি বলছিল তুমি নাকি ডেকেছো আমায়।”
আরমান একবার মাইশার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “হুম বিরক্ত কিছুটা বিরক্তি করলি, তবে হ্যাঁ ডেকেছিলাম। জরুরী কিছু জানার আছে তোর থেকে।”
মাইশা আরমানের বলা কথাটা শুনে ভীষন ভয় পেলো।
আরমান মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মিস মাইশা, আপনি এখন যেতে পারেন।”
এটার অপেক্ষাতেই ছিল মাইশা। আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না ওখানে। ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলো ও ঘর থেকে। আয়ান মাথা নিচু করে রাখাই হকদেখলো না মাইশার অবস্থা।
আরমান— “আই ভিতরে আয়।”
আয়ান প্রবেশ করলো রুমের ভিতর।

বৃহস্পতিবার…
কাল আরমান ও মাইশার বিয়ে। পুরো সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। বিয়ের অনুষ্ঠান বাড়িতেই হবে। বাড়িতে আত্নীয় স্বজন আসতে শুরু করেছে সকাল থেকে। এখন বাড়ির ছোটো রা সবাই সপিং করতে যাবে। যতোই অনুষ্ঠান ছোটো করে হোক, বিয়ে বলে কথা সপিং তো করতে হবেই।
আরমানদের পুরো বাড়ি মেহমান এ ভর্তি হয়ে গেছে। আরমানের মামা, মামি, ফুপি, ফুপা, খালা, খালু, সবাই এসেছে। আয়ানের নানা বাড়ি থেকেও এসেছে। সকল কাজিন মহল এখন এক জায়গায়। তাই হইচয় টা একটু বেশি হচ্ছে। বাড়ির সব ছোটো রা একসাথে বের হলো বাড়ি থেকে। গাড়ি রাখা আছে সারে সারে। সবাই যে যার মতো গাড়িতে উঠে বসলো, কিন্তু আরমানের গাড়িতে কেউ উঠলো না। কারণ কাজিন মহলের সবাই জানে, আরমান কখনো কাউকে ওর গাড়িতে উঠতে নেয় না। বেশি গেঞ্জাম পছন্দ করে না ও। তাই সবাই অন্য গাড়িতে উঠেছে।

কিন্তু মাইশা সোজা গিয়ে আরমানের গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে গেলো। আরমানের গাড়িতে এখন মাইশা ছাড়া কেউ নেই। তাই মাইশা ভীষণ খুশি। হঠাৎ মাইশাকে অবাক করে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো আয়ান। আর তার পর পরই পিছনে দুই দিকের দরজা খুলে উঠে বসলো, সামিরা, রুবি এবং আবির। মাইশা কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে শুরু করলো আয়ান।
এদিকে মায়া বাড়ি থেকে‌ বেরিয়েই দেখলো, একে একে গাড়ি গুলো গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ও ওর পার্স টা রুমে ফেলে এসেছিল, আর সেটা আনতেই গেছিলো। ভীষণ অবাক হলো ও ওকে না নিয়েই সবাই চলে গেলো এটা দেখে। ও প্রথমে যেতেই চাইনি। কিন্তু সামিরার অনেক জোড়াজুড়িতে রাজি হলো। কিন্তু এখন সামিরাও একবার ওর খোঁজ না করে চলে গেলো। কিছুটা মন খারাপ হলো ওর।
এমনিতেই কেনো জানি কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর। এই সব কিছু বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও চলে যেতে। একটু নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে।

“আরে মায়া, আপনি এখানে দাঁড়িয়ে কেনো? যাননি এখনো? গাড়ি তো সব ছেড়ে দিলো।”
একটা পুরুষালী কন্ঠে মায়া নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আওয়াজ অনুসরণ করে তাকালো। দেখলো আসিফ নামের ব্যাক্তি ওর পাশেই বাইক নিয়ে বাইকেই বসে আছে।‌ কখন যে এসেছে লোকটা খেয়াল করেনি মায়া।
আসিফ হচ্ছে আরমানের ফুফাতো ভাই। আরমানের সমবয়সী। মায়া উনাকে চেনে, সামিরা ওর সকল কাজিনের সাথে মায়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এই আসিফ নামের পুরুষ টির ব্যাক্তিত্ব দারুন লেগেছে মায়ার কাছে। মানুষ টি যেমন দেখতে সুন্দর তেমন তার কথা বার্তাও সুন্দর। আসিফ একজন ডাক্তার। আর এই ডাক্তার এব ডাক্তারী পেশা দুটোকেই খুব সম্মান করে মায়া‌। কারণ এই ডাক্তারা অসুস্থ মানুষের সেবা করে।
আসিফ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কি ভাবছেন মিস? বেশি ভাবনা চিন্তা না করে উঠে আসুন বাইকে। আমিও ওখানেই যাবো।”

আসিফের বাইকে উঠতে বলাই চমকে উঠলো মায়া। কারণ একটাই, মায়া এর আগে আবির এবং আরমান ছাড়া কোনো পুরুষ মানুষের কাছে আসেনি। মায়া মুখে হাসি নিয়ে বলল, “না ভাইয়া। আপনি চলে যান। আমি যাবো না।”
আসিফও হেসে মজার ছলে বলল, “আরে আমি আপনাকে সপিং মলেই নিয়ে যাবো, অন্য কোথাও নয়। তাই বেশি সংকোচ বোধ না করে বন্ধু ভেবে বাইকে উঠে পড়ুন।”

মায়া কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই, একটা গাড়ি ঝড়ের বেগে এসে ঠিক মায়ার পাশে একদম মায়ার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। মায়া ভয়ে চমকে উঠলো। বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো। মায়া গাড়িটাকে চেনে, এটা আবিরের গাড়ি। তাই ও আর কোনো কিছু না ভেবেই নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “ধন্যবাদ ভাইয়া, তবে আমি বাইকে যেতে পারি না। ভীষণ ভয় লাগে বাইকে উঠতে। চিন্তা নেই, আবির ভাইয়া চলে এসেছে। আপনি চলুন আমি আবির ভাইয়ার সাথে আসছি।”
কথা গুলো বলেই মায়া আর আসিফের প্রতিউত্তরের অপেক্ষা করলো না। গাড়ির দরজা খুলে সামনের সিটে উঠে বসে ঝটপট সিট বেল্ট লাগিয়ে নিলো। এদিকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা ব্যাক্তিটিও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে, গাড়ী চালাতে শুরু করলো।

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৩৩

মায়া সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতেই পাশে কে আছে না দেখেই বলল, “আবির ভাইয়া, এই ভাবে কেউ এতো স্পিডে চালিয়ে এসে গাড়ি থামায়? আর একটু হলে….একি আপনি? আবির ভাইয়া কোথায়?”
মায়ার সিট বেল্ট লাগানো হয়ে গেলে কথা বলতে বলতে পাশে থাকা মানুষটির দিকে তাকালো। কিন্তু নিজের কথা শেষ না করেই অবাক হয়ে শেষের কথাটি চিল্লিয়ে বলল।

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৩৫