আমার শহরে তুমি পর্ব ২৪ ||  Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ২৪
 Alisha Rahman Fiza

রক্তিম আর আমি রায়জাদা ভিলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি।অনেকদিন পর আমি সে বাসায় যাচ্ছি মা আমাকে অনেক বললো আরো কয়েকটাদিন থেকে যেতে আমি মাকে বুঝিয়ে বললাম যে আমি আবার আসবো।আমি বাহিরে তাকিয়ে আছি কেন জানি এই ১৫দিন যাবত সবকিছু নির্জীব লাগছে।কোনো কিছুতে সজীবতা খুজে পাই না হয়তো আপনজন হারানোর দুঃখের কারণে।বাবার কথা প্রতি মূহুর্তে মনে পরে জীবনের সবচেয়ে বেস্ট মানুষটিই আজ আমার পাশে নেই।ভাবলেই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে ইশশ কী কষ্টকর শ্বাসরুদ্ধকর এই পৃথিবী।হঠাৎ আমার হাতে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে দেখি রক্তিম আমার হাত শক্ত করে ধরে আছেন।আমি তার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললাম,

~রক্তিম সব ঠিক হয়ে যাবে তো?মায়ের এমন মুখ দেখতে ভালো লাগে না।
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~অধরা,মা হচ্ছে এমন একজন মানুষ যে নিজের সন্তানের জন্য সবকিছু সহ্য করতে পারে।তাই মাও তোমাদের জন্য এ শোক সহ্য করে নিবে কিন্তু তাকে সময় দিতে হবে দিনশেষে সেও একজন মানুষ তারও মন আছে অনুভূতি আছে।
রক্তিমের কথাশুনে মনে হচ্ছে আসলেই মাকে সময় দেওয়া উচিত। সময় সবকিছু হয়তো ঠিক করে দিবে আমারও নিজেকে সামলাতে হবে আমার পরিবারের জন্য।বাবাও আমাকে শিখিয়েছে সব পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাও।
বাসায় পৌছে যেই না ভিতরে ঢুকতে যাবো ভিতর থেকে অনেক চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসলো।এই আওয়াজ শুনে আমি আর রক্তিম ভিতরে গিয়ে দেখি রাত রাগী কন্ঠে বলছে,

~তোমাদের সাহস দেখে আমি অবাক হই বলেছিনা বিয়ে করবো না।তার উপর তোমরা এই বাচ্চা মেয়ে সাবিহাকে আমার জন্য দেখতে গিয়েছো আমাকে ছবিও দেখাচ্ছো।
রাতের কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ সাবিহাকে রাতের জন্য দাদীমা পছন্দ করেছে রাতের কথা শেষ হতেই দাদীমা বলে,
~সাবিহা কোনো বাচ্চা মেয়ে না তার বয়স ১৯বছর।আর মেয়ে হিসেবে ভালো যতদিন এবাসায় এসেছে কতো ভালো করে মিশে গেছে মেয়েটা।একদম অধরার মতো
দাদীমার কথা শুনে রাতের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে রাগে কটমট করতে করতে সে বললো,
~দাদীমা,সাবিহা কোনোদিনই আমার মতো ছেলেকে সে পছন্দ করবে না সে বরাবরই রক্তিম ভাইয়ের মতো ছেলে পছন্দ করবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাত কথা শেষ করেই দরজার দিকে তাকায় আমাকে আর রক্তিমকে দেখে মাথানিচু করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিবে তখনই দাদীমা বললো,
~যদি বলি সাবিহাই নিজে তোকে পছন্দ করেছে তাহলে কী বিশ্বাস করবি?
রাতের পা থেমে গেলো সে পিছে ফিরে দাদীমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে হেসে বললো,
~সাবিহা হয়তো পরিবারের চাপে পরে এমনটা বলছে।আমি কোনো চাপে নেই তাই আমি কোনো মেয়ের জীবন আর নষ্ট করবো না।আর কারোও অভিশাপ আমি নিজের জীবনে নিতে চাই না
রাতের কথা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগছে রাত অনেক অনুতপ্ত এটা তার কথায় বুঝা যাচ্ছে।এই অনুতপ্তের আগুনে সে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে এই ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা জীবনে মানুষ অনেক ভুল করে কিন্তু ভুলের জন্য যদি অনুতপ্ত হয় তাহলে সেই ভুলের ক্ষমা রয়েছে।রক্তিম আর আমি দাদীমার কাছে গিয়ে দাড়ালাম রক্তিম রাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,

~রাত আমরা আগামীকাল সাবিহার সাথে দেখা করতে যাবো।আর এই ব্যাপারে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না
রক্তিমের কথায় রাত হকচকিয়ে গেলো আর বললো,
~ভাই তুমি কী বলছো?সাবিহার সাথে দেখা করার কোনো প্রয়োজন মনে করছি না আমি
রাতের বলা শেষ হতেই আমি বললাম,
~আপনি কেন বারবার একই কথা বলছেন?সাবিহা এমন মেয়ে নয় যে তাকে কেউ force করে কিছু করাতে পারবে।ওর মন যা বলে তাই সে করে
রাত বিরক্ত হয়ে বললো,

~বিয়ের ব্যাপারে অনেক সময় মেয়েরা দূর্বল হয়ে যায় পরিবারের কাছে এটা ভাবি আপনাকে বুঝাতে হবে না বলে মনে করছি।
রক্তিম কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো,
~রাত আমি তোমার বড় ভাই আর আমি যা বলেছি তাই হবে।মা আর বাবার সাথে আমি কথা বলবো।
That’s final no more talk in this topic.
এতটুকু বলে রক্তিম রাতের পাশ কেটে হনহন করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।আমিও রক্তিমের পিছে হাঁটা ধরলাম
রুমে এসে দেখি রক্তিম পায়চারি করছে তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।আমি আসতে করে বিছানার উপরে বসে ঠান্ডা কন্ঠে বললাম,

~রাতকে নিয়ে চিন্তিত?
রক্তিম পায়চারি বন্ধ করে আমার দিকে ফিরে বললো,
~ছেলেটা বড্ড বেশি বুঝে যেখানে সাবিহার কোনো আপত্তি নেই রাতের এতো মাথা ব্যাথা কেন?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~রক্তিম, রাত কোনো সম্পর্ক গড়তে ভয় পাচ্ছে সে মনে করছে এবারো সে হেরে যাবে মাঝপথে ছেড়ে দেবে একটা সম্পর্ক এই ভেবে সে আগে বাড়ছে না।
রক্তিম আমার কথা শুনে বললো,
~রাতের ভয় বুঝতে পেরেছি কিন্তু
রক্তিমের কথা শেষ না করতে দিয়েই আমি বললাম,

~সাবিহার সাথে দেখা করে তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিবো।আর রাতকেও সময় দিতে হয়তো সে এখন বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেনি।
আমার কথা শেষ করে বিছানা ছেড়ে উঠে রক্তিমের কাছে গিয়ে চুলগুলো ঠিক করে বললাম,
~সব ঠিক হয়ে যাবে।আপনিই বলেন যে সময় সব কিছু পরিবর্তন করে দেয়।
রক্তিম মলিন হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আগামীকাল সাবিহার সাথে কথা বলতে হবে রাতকেও সাবিহার কথা শুনতে হবে দুজন যে সিদ্ধান্ত নিবে তাই সবার মানতে হবে।
পরেরদিন সকালে,

আমি আর রক্তিম রেডি হয়ে গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি রাতের অপেক্ষায় সাবিহার সাথে দেখা করতে যাবো আমরা।আমি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি রক্তিম বারবার হাত ঘড়ি দেখছে।কিছুক্ষন পর রাত মুখ গম্ভীর করে আমাদের সামনে চলে আসে রাতের এমন চেহারা দেখে রক্তিম বললো,
~তোকে আমরা যুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছি না তাই একটু হাসলে কোনো প্রবলেম নেই।
রাত বললো,
~ভাই আমার অনেক জরুরি মিটিং আছে যদি তুমি তাড়াতাড়ি করতে।
আমি বললাম,
~সব জিনিসে তাড়তাড়ি হয় না।
রাত বললো,
~ভাবি প্লিজ
রাতের কথা শেষ করতে না দিয়ে রক্তিম বললো,
~বাজে কথা ছেড়ে চল দেরি হচ্ছে।

আমরা গাড়িতে গিয়ে বসলাম রক্তিম ড্রাইভ করছে আমি সাবিহাকে ফোন করে বললাম যে আমরা রওনা দিয়েছি।
আমাদের গন্তব্যে পৌছে আমরা গাড়ি থেকে নেমে পরলাম।রেস্টুরেন্টেই আমরা সাবিহার সাথে দেখা করবো আমি এদিকসেদিক চোখ বুলিয়ে সাবিহাকে খুজতে লাগলাম।হঠাৎ আমাদের সামনে শাড়ি পড়া এক সুন্দর রমনী এসে দাড়ালো আমি তাকে দেখে হা হয়ে গেলাম সাবিহাকে একদম পরী লাগছে হালকা মেরুন রঙের শাড়িতে দারুন লাগছে।আমি চোখ ফিরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি রাত হয়ে আছে।
রক্তিম আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

~সাবিহা বড় হয়ে গেছে এ কয়েকদিনে তাই না?
আমি রক্তিমের কথা শুধু হাসলাম।সাবিহা বললো,
~ভাবি সেই কখন থেকে আমি তোমাদের অপেক্ষা করছি।
আমি বললাম,
~তাই নাকি চলো আমরা কোথাও বসি?রাত চলো
আমার কথায় রাতের ধ্যান ভাঙ্গে তারপর বললো,
~জ্বী ভাবি।
রাতের অবস্থা দেখে সাবিহা মুখ টিপে হাসলো।রাত তার হাসি দেখে বললো,
~এতে হাসার কী হলো?
রাতের কথার জবাব না দিয়ে রক্তিমকে বললো,
~ভাইয়া ওই টেবিলটা খালি আছে ওখানে গিয়ে বসি।
রক্তিম বললো,

~চলো।
আমরা বসে পরলাম টেবিলে সাবিহা আমাদের সাথে বকবক করেই যাচ্ছে রাত মুখ গম্ভীর করে বসে আছে।
তাদের কথা বলার মতো পরিবেশ চাই তাই আমি বললাম,
~সাবিহা আমরা এখানে কীসের জন্য এসেছি তা তোমার অজানা নয় তাই তুমি আর রাত কথা বলো।আমরা ওই টেবিলে গিয়ে বসছি।
সাবিহা মাথাদুলালো আমি আর রক্তিম অন্য টেবিলে গিয়ে বসলাম।রক্তিম আমাকে বললো,
~অধরা কতদিন আমরা একসাথে সময় কাটাইনা আজকের পরিবেশটাও রোমান্টিক তাই আজকে শুধু তুমি আর আমি।
বলেই আমার হাতে তার ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো।আমি বললাম,
~অসভ্য সবাই দেখছে।
রক্তিম বললো,

~তোমার জন্যই তো আমি অসভ্য।
রক্তিমের কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।
রাত আর সাবিহা বসে আছে তাদের মাঝে পিনপতন নীরবতা। কেউই বুঝে উঠতে পারছে না কী থেকে শুরু করবে তাই আগে রাতের ঠোঁট নড়ে উঠলো সে বললো,
~দেখো সাবিহা আমি তোমাকে বিয়ে করতে
রাতের কথা শেষ হওয়ার আগে সাবিহা বললো,
~করতে পারবেন।
রাত ভ্রুকুচকে বললো,
~কী?
সাবিহা বললো,
~বিয়ে করতে পারবেন।
রাত বললো,

~একদম কথা বাড়াবে না ছোট বাচ্চা মেয়ে এখন কীসের বিয়ে?
সাবিহা ঠোঁট উল্টে বললো,
~এখনই তো বিয়ে করবো আমার স্বামী আমাকে লালন-পালন করবে।আর সেই স্বামীটা আপনি হবেন
সাবিহার কথা শুনে রাত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো এই মেয়ের মাথা ঠিক আছে। রাতের ভাবনার মাঝে সাবিহা বললো,
~দেখেন আপনাকে আমার ভালে লেগেছিল রাহি আপির বিয়ের সময় কিন্তু আমি জানতে পারি কোন সারা না পারার সাথে আপনার নিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
এই কথাটা বলতে সাবিহার গলা কাঁপছে সে সেই কাঁপা গলায় বললো,

~কিন্তু পরে জানতে পারি ভাবির কাছ থেকে ওই মেয়ে আপনাকে ভালোবাসে না সেদিন মনে মনে অনেক খুশি হই।তবুও একটা জড়তা কাজ করছিল ওইদিন যখন জিজ্ঞেস করছিলেন আমার কেমন ছেলে পছন্দ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল যে আপনি আমার পছন্দ।কয়েকদিন আগে বাবা আমার কাছে কয়েকটা ছবি এনে বলে এইখান থেকে ছেলে পছন্দ করতে আমি রাগের বসে সেই ছবি গুলো ফেলে দেই কিন্তু একটা ছবিতে চোখ আটকে যায় সেটা ছিল আপনার।দৌড়ে সেই ছবি নিয়ে বাবার হাতে তুলে দেই বাবা আমার নীরবতা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
এতটুকু বলে সাবিহা থেমে যায় রাত স্তব্ধ আজ তাকে কেউ ভালোবাসতে পারে তাও এভাবে এটা সে জানতোনা।এতোটা ভালোবাসা সে ডির্সাভ করে না আচ্ছা সাবিহা কী ভাবির ব্যাপারটা জানে।হয়তো না তাই আমাকে ভালোবেসেছে ভাবির ব্যাপারটা জানলে হয়তো ঘৃণা করবে রাত তার ভাবনা শেষ করে বললো,

~সাবিহা তুমি অনেক ভালো মেয়ে আমি অতোটা ভালো না তুমি হয়তো জানোনা আমি ভাবির সাথে
এতটুকু বলতেই সাবিহা রাতকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
~অতীত চলে গেছে তাকে টানবেন না।ভালোবাসার পরিমাপ অতীত দিয়ে করবেন না বেশ বেমানান লাগে।
রাত আরো অবাক হলো সাবিহা বললো,
~আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আপনি কী আমাকে আপনার মনে এক তিল পরিনাণ জায়গা দিতে পারবেন না।এতো কঠোর আপনি

আমার শহরে তুমি পর্ব ২৩

সাবিহার চোখে পানি হয়তো ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা তার বেড়ে গেছে আর রাত সে তো ভাবছে তার জীবন তাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে একবার এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দেখা যাক এর পরিণাম কী হয়। হয়তো সাবিহার ভালোবাসা তার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে তাই সে এখন একটা ভয়াবহ কান্ড ঘটাবে রাত তার চেয়ার থেকে উঠে সাবিহার দিকে ঝুঁকে তার ঠোঁট সাবিহার গালে ছুয়িয়ে দিয়ে পুনরায় চেয়ারে বসে পরে সাবিহা গালে হাত দিয়ে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে।রাত মুচকি হেসে ফোন বের করে রক্তিমকে ফোন করে বলে চলে আসতে
রক্তিম আর আমি কথা বলছিলাম সেই সময়ই রাত ফোন করে বললো চলে আসতে।আমি আর রক্তিম সেখানে পৌছে দেখি সাবিহা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। রাত আমাদের দেখে বলে,

~ভাই ৩মাস পর বিয়ে হবে কোনো দেরি করা যাবে না।সাবিহার বাবার সাথে কথা বলো এখনই বিয়ে করে নিতাম কিন্তু সাবিহার পরীক্ষা আমি ওর পড়াশোনায় বাঁধা হতে চাই না।
এতটুকু বলে রাত চলে যায় আর আমরা তিনজন বলদ সেজে দাড়িয়ে রইলাম।

আমার শহরে তুমি পর্ব ২৫