আমার শহরে তুমি শেষ পর্ব ||  Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি শেষ পর্ব
 Alisha Rahman Fiza

রাত আমাকে দেখে বললো,
~ভাই আর ভাবি এখানে আসো
রাতের ডাকে আমরা দুজনই তার সামনে যেয়ে দাড়ালাম রাত রক্তিম আর আমার হাত ধরে বললো,
~আমি অনেক অপরাধ করেছি আর বার বার তোমরা আমাকে ক্ষমা করেছে।তার জন্য আমি তোমাদের যতো ধন্যবাদ দিবো তা কম আমার জীবনটাকে খুব সুন্দর ভাবে তোমরা সাজিয়ে দিচ্ছো অথচ আমি নিজে হাতে আমার জীবন নষ্ট করতে যাচ্ছিলাম।সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ আর আমাদের যে ছোট মেহমান আসছে তার জন্য অনেক গুলো ভালোবাসা।
রাতের কথা শেষ হতেই রক্তিম তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ভুল সবাই করে জীবনে তার মানে এটা নয় সেই ভুল ধরে নিজের জীবন নষ্ট করে ফেলা।ভুল করা ব্যক্তি যদি নিজেকে সুধরাতো চায় তাহলে তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।
এতটুকু বলে রক্তিম রাতকে ছেড়ে দিলো আমি বললাম,
~নতুন জীবনের জন্য আপনাকে অনেক শুভকামনা রইলো।
আমরা সবাই বের হয়ে গেলাম সাবিহার বাড়ির উদ্দেশ্যে।কিছুক্ষন পর আমরা সাবিহাদের বাড়ি পৌছে দেখলাম তাদের পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো সাবিহার বাবা আমাদের সবাইকে স্বাগত জানালেন আমরা সবার সাথে কুশলাদি করে যার যার আসনে বসে পরলাম।আমি সাবিহার কাছে যাওয়ার জন্য সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম রুমে ডুকতেই দেখি রাহি সাবিহাকে রেডি করে দিচ্ছে।আমি তাদের দেখে মুচকি হেসে বললাম,

~কেমন আছো?
রাহি আর সাবিহা আমার দিকে তাকিয়ে দুজনই একসাথে বললো,
~ভালো।
রাহি বললো,
~খুশির খবর শুনলাম কিন্তু মিষ্টিতো পেলাম না।
আমি বললাম,
~পাবে তো।
সাবিহা বললো,
~চাচী হওয়ার মজাই আলাদা।
রাহি আর আমি তার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলাম আমি বললাম,
~এই মেয়েটা কোনোদিন ভালো হবে না।বাচ্চা স্বভাবেরই থেকে যাবে
সাবিহা বললো,
~তোমার দেবরকে এই বাচ্চামেয়েটাকেই সামলাতে হবে।
আমি বললাম,
~তা তো একদম সত্যি কথা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাবিহা আর রাতের বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলো পুরো পরিবার অনেক খুশি কাজী সাহেব রাতকে কবুল বলতে বললো রাত কবুল বলে দেয়।এরপর সাবিহাকে বলতে বললে সে একটু সময় নিয়ে কবুল বলে দিলো।
অতঃপর সাবিহা আর রাতের বিয়ে হয়ে গেলো আমি তাদের কাছে গিয়ে বললাম,
~সবসময় সুখে শান্তিতে থাকো।আর সাবিহা তাড়াতাড়ি আমাকে চাচী হওয়ার মজা দিয়ো।
সাবিহা আমাকে বললো,
~বাচ্চামেয়ে আমি তুমি জানো না তোমার দেবর রোজ বলে।
সাবিহার কথা শুনে মুখ টিপে হেসে রাতের দিকে তাকাতেই সে সাবিহার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে।রাত সাবিহাকে বললো,

~একদম বেশি কথা বলবেনা আজ তোমার বিয়ে একটু তো লজ্জাবোধ আনো।
সাবিহা বললো,
~আনতে পারছিনা।
সাবিহার কথা শুনে আরেকদফা হাসির রোল পরে গেলো।
বিদায়ের পালা শেষ করে আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসায় পৌছে সাবিহাকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে রাতের দরজার সামনে দাড়িয়ে গেলাম।রাত আমাকে দেখে বললো,
~কী চাই?
আমি বললাম,
~আপনার একটা ক্রেডিট কার্ড হলেই চলবে আমার।
রাত বললো,
~এতো টাকা দিয়ে করবে?
আমি বললাম,
~শপিং
রাত আমার সাথে না পেরে তার মানিব্যাগ থেকে ১০০০০টাকা বের করে হাতে দিয়ে বললো,
~খুশি?
আমি মুখ বানিয়ে বললাম,
~চলবে।

তারপর দরজার থেকে সরে এসে রাতকে ডুকতে দিলাম।
রাতকে রুমে ডুকিয়ে আমি আমার রুমে চলে গেলাম চারপাশে চোখ বুলিয়ে রক্তিমকে খুজতে লাগলাম বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখলাম রক্তিম সেখানে দাড়িয়ে আছে।আমি পা টিপে টিপে তার পাশে গিয়ে দাড়ালাম সে আমার অস্তিত্ব টের পেয়ে আলতো করে আমার জড়িয়ে ধরে বললো,
~শরীর খারাপ লাগছে?
আমি বললাম,
~না
রক্তিম বললো,
~তোমার সবসময় একটা প্রশ্ন ছিল আমি কেন ২বছর আগে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম?
আমি রক্তিমের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে বললাম,
~এই কথাটি আজ উঠছে কেন?
রক্তিম মৃদু হেসে বললো,
~আজ উঠছে কারণ আমি তোমার মনে আর কোনো প্রশ্ন রাখতে চাচ্ছি না এখন তোমার রেস্ট করা দরকার মাথায় কোনো চিন্তা রাখা যাবে না আর এই সময় আজেবাজে চিন্তা বেশি আসে।
আমি বললাম,
~তাহলে বলেন কেন চলে গিয়েছিলেন?
রক্তিম বললো,
~আমার প্রিয়তমার জন্য।
আমি ভ্রুকুচকে বললান,
~আপনার প্রিয়তমা তো আমি তাহলে কী আমার জন্য?
রক্তিম বললো,

~তোমার সাথে আমার যেদিন প্রথম দেখা হয় রাত তোমাকে তার ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচিত করিয়ে দেয়।সেদিন তোমাকে আমি আমার ভাইয়ের ফ্রেন্ড হিসেবেই দেখেছিলাম কিন্তু দিন যত যেতে লাগলো তোমার মিষ্টি কথা বাচ্চাসুলণ আচরণ আমায় ততো মুগ্ধ করছিল।জীবনে প্রথমবার কেউ আমার মনে জায়গা করে নিচ্ছিল দিনরাত শুধু তোমার কথা চিন্তা করতাম হঠাৎ একদিন নিজেকে প্রস্তুত করলাম তোমাকে মনের কথা জানাবো কিন্তু আমি যখন রাতের রুমের পাশ কাটিয়ে যেতে নিবো তখনই একটা কথায় আমি থমকে যাই সেটা ছিল রাতের বলা কথা
অধরা তোমাকে আমি খুব তাড়াতাড়ি নিজের ঘরের বউ করতে চাই।এই একটা কথা শুনে আমি সেখানে আর এক মূহুর্ত তো ও দাড়াতে পারিনি।

~নিজেকে খুব কষ্টে সামলিয়ে আমি আবার সব শুরু করি কিন্তু ওই যে বলে না নিজের ভালোবাসাকে কেউ অন্যের হতে দেখতে পারে না।তেমনি আমিও দেখতে পারিনি তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো।আর সেটাই করি চলে যাই এই দেশ ছেড়ে কিন্তু দেখো আল্লাহর কি ইচ্ছা ছিল ২বছর পর দেশে এসে দাদীমা আমাকে সব বলে দেয় আর তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই তোমাকেই বিয়ে করবো।
রক্তিমের কথা শেষ হতেই সে আমাকে ছেড়ে দিলো।আমি স্তব্ধ হয়েগেছি তার কথা শুনে রক্তিমের মনে যে এতো কিছু ছিল তা আমি জানতাম না আমি আর কিছু না ভেবে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরলাম।আর বললাম,
~অনেক ভালোবাসি আপনাকে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা আপনি।
রক্তিম আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

~#আমার_শহরে_তুমি এসেছিল অজানা হয়ে রয়ে গেলে আজীবন আমার আপন হয়ে।
আমি রক্তিমের বুকে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
৪ বছর পর,,,
~রাফি একদম দৌড়াবে না খাবার খেয়ে নেও।মাম্মামকে এতো কেন কষ্ট দিচ্ছো না
অধরা তার ছেলের সাথে কথা বলছে আর দৌড়াচ্ছে ছেলেকে খাওয়ানের জন্য এতো ব্যস্ততা।হ্যাঁ অধরার ছেলে হয়েছে তার বয়স ৪বছর সারাবাড়ি সে মাথায় তুলে রাখে রাফি গিয়ে তার চাচীর পিছে লুকিয়ে বললো,
~থাবো না মাম্মাম পতাঁ খাবার।
সাবিহা তার উঁচু পেট নিয়ে রাফিকে আগলিয়ে বললেন,
~ভাবি থাক না বাচ্চাটা খেতে চাচ্ছে না।
অধরা বললো,

~আমি কী করবো বলো খেতেই চায় না।
রাফিকে সাবিহার থেকে নিয়ে বললো,
~চাচীর কাছে এভাবে যাবে না বোনু ব্যাথা পাবে।
রাফি বললো,
~বোনু ব্যাতা পাতে না।আমি আততে করে গিয়েতি
রাফির কথায় অধরা হেসে দিলো সাবিহার বাবু হবে যে কোনো সময় তার ছোট্ট প্রাণ এই পৃথিবীতে আসতে পারে।
অধরা বললো,
~বাবা এসে বকবে খেয়ে নেও।
রাফি বললো,
~দাদী তাবো।
অধরা বললো,
~যাবো হবে বাবা
রাফি মাথা দুলিয়ে বললো,
~দাদী তাবো।
অধরা রাফিকে তার দাদীর কাছে নিয়ে গেলো রাফিকে দেখেই সাহারা রায়জাদা তাকে কোলে তুলে বললো,
~আমার ভাইটা কী করছে?
রাফি বললো,

~মাম্মাম পতা খাবাত দেয়।
সাহারা রায়জাদা অধরার হাত থেকে খাবার নিয়ে বললো,
~তুমি যাও খাবার দাও টেবিলে রক্তিমরা চলে আসবে।
অধরা চলে গেলো রান্নাঘরে সব খাবার গুছিয়ে রুমে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দুপুর ৩টা।সে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে শাড়ি ঠিক করলো আয়নার সামনে দাড়িয়ে হঠাৎ কেউ তাকে পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরলো অধরা হেসে বললো,
~এসেছেন আপনি যান ফ্রেশ হয়ে আসেন।খাবার টেবিলে দেওয়া আছে
রক্তিম বললো,
~তোমার ছেলের জন্য তোমার কাছেই আসতে পারি না।
তখনই পিছন থেকে রাফি বললো,
~পাপা মাম্মামতে ছাতো ধতবেনা মাম্মামতে
রাফির আওয়াজ শুনে রক্তিম অধরাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~আরে বাপজান আমার। তোমার মাম্মাম আমার বউ তাকে তো ধরাই যায়।
রাফি আমার কোলে চরে বললো,
~পঁতা পাপা

আমার শহরে তুমি শেষ পর্ব ২৫

রক্তিম ভেংচি কেটে চলে গেলো ওয়াশরুমে আর অধরা রাফিকে ঘুম পারাতে চলে গেলাম।কিছুক্ষন পর রক্তিম বের হয়ে দেখলো রাফি ঘুম তাই অধরা তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রক্তিমের সাথে নিচে চলে গেলো।সবাই একসাথে খাবার খেলো অনেক গল্প করে উপরে চলে আসলো।রায়জাদা ভিলা এখন সুখের ভিলা সবাই এখন একসাথে। ভালোবাসা দিয়ে পুরো ভরপুর এই বাসা কোনো কমতি নেই কোনোকিছু তে
দুপুরের খাবারের পর অধরা সবকিছু গুছিয়ে চলে আসে রুমে। রুমে এসে দেখে রক্তিম রাফিক কোলে নিয়ে আছে রাফির মাথা রক্তিমের কাঁধে। রাফির চোখ বন্ধ হয়তো ঘুম সে অধরা বললো,

~ঘুমের ছেলেকে কোলে নিয়ে রেখেছেন কেন?
রক্তিম বললো,
~ঘুম থেকে উঠে গেছিলো তাই কোলে নিয়েছি।
এই বলে রক্তিম শুইয়ে দিলো রাফিকে।অধরাকে বললো,
~চলো বারান্দায় যাই।
অধরা আর রক্তিম বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে পরলো।অধরা রক্তিমের কাঁধে মাথা রেখে বললো,
~ভালোবাসি
রক্তিম হেসে বললো,
~অনেক ভালোবাসি।
অধরা বললো,
~#আমার_শহরে_তুমি আছো এক ভালোবাসার সাগর হয়ে।
রক্তিম অধরার হাত শক্ত করে ধরলো।
অধরা আর রক্তিমের জীবন এভাবেই সুখে থাকুক।শুধু অধরা আর রক্তিমই না ভালো থাকুক সকল ভালোথাকুক এই পৃথিবীর সকল ভালোবাসার মানুষ।

সমাপ্ত।।।

(বিদ্রঃ গল্পটা যখন শুরু করেছিলাম ভাবিনি এতো ভালোবাসা পাবো কিন্তু অনেক ভালোবাসা পেয়ে আমি অবাক হয়েছি।সব কিছুর যেমন শুরু আছে তেমনি শেষও আছে তাই গল্পটারও সমাপ্তি হয়ে গেলো।
কিছুদিন পর আবার ফিরে আসবো নতুন কিছু নিয়ে
ততদিন পর্যন্ত আল্লাহ হাফেজ।
পরিশেষেঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো?

2 COMMENTS

Comments are closed.