আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ১৪

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ১৪
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

আবির ভাইয়ের এত কঠিন কথাগুলো মেঘের মাথার তিনহাত উপর দিয়ে গেলো। কিছুই বুঝতে পারলো না সে। চিবুক নামিয়েছে গলায়। ওষ্ঠ উল্টে, গাল ফুলালো৷ আবির সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখছে।
আবার রা*গান্বিত কন্ঠে আবির বলে উঠলো,

“এখন যে সময়টা কাটাচ্ছিস, সে সময় আর কখনো আসবে না, আ*জেবা*জে চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দে। ”
মেঘ এবার বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো, ধীর কন্ঠে ডাকলো,
“আবির ভাই!”
সহসা আবিরের তীব্র রা*গ বিলীন হয়ে গেছে, ভ্রু কুঁচকে শান্ত চোখে তাকালো অষ্টাদশীর দিকে।
অতঃপর মৃদুগামী কন্ঠে শুধু বললো,
“হুমমমমমম”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এই হুম তে যেনো এক আকাশ সম ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি মিশে আছে। মেঘ অতর্কিতে তাকালো আবির ভাইয়ের অভিমুখে। এই মোহঘোর মেশানো হুমমম শুনার জন্য মেঘের আমৃত্যু আবির ভাইকে ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে৷ মেঘ সারাজীবন আবির ভাইয়ের কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করবে, আবির ভাই প্রতিত্তোরে শুধু হুমমমমম বললেই হবে। ”

এসব ভেবেই অষ্টাদশীর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠেছে ।
আবির পুনরায় গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কিছু বলবি?”
আবির ভাইয়ের কন্ঠে মেঘের অনিন্দিত কল্পনাদের অবসান হলো। ১ সেকেন্ডেই গায়েব হলো ঠোঁটের কোণের মিষ্টি হাসি। চিবুক নামালো আবির ভাইয়ের মুখের থেকে।
ওষ্ঠপুট নেড়ে নম্রভাবে বললো,
“আবির ভাই আপনি একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসবেন, প্লিজ!”

অকস্মাৎ কথাটা বলে ফেললো মেঘ, কিন্তু এরপরই শুরু হলো কাঁপা কাঁপি, বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। আল্লাহ জানেন আবির ভাই থা*প্পড় ই দেন কি না। সহসা দু হাত নিজের দুগালে রাখলো মেঘ।
আবির ধম*ক দিতে নিয়ে মেঘের এমন কান্ডে কপাল কুঁচকালো, ঢুক গিলে রাগ গিলে সহসা চাপা কন্ঠে বললো,
“কেনো?”

অষ্টাদশী গালে হাত রেখে কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আপনি বাসায় না ফিরলে আমার ঘুম আসে না! ”
কথাটা বলেই দুচোখ বন্ধ করে, কপাল কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো মেঘ।
আবির প্রশস্ত নেত্রে চাইলো অষ্টাদশী দিকে। মেঘের হালচাল দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু অষ্টাদশীর চোখ বন্ধ থাকায় শব্দহীন সেই হাসি দেখতে পেলো না।

আবির নিগূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর দিকে যেনো এই দৃষ্টি সহজে কাটানো সম্ভব না।
কয়েক মুহুর্ত চললো এভাবে। কিছুক্ষণ পর আবিরের ফোনে কল আসায় মনোযোগ নষ্ট হলো। পকেট থেকে ফোন বের করলো, অফিসের কল তৎক্ষনাৎ রিসিভ করলো, ৩০ সেকেন্ড হবে হয়তো, কথা বলে রেখে দিলো।
এতক্ষণে মেঘ অনেকটায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু গাল থেকে হাত নামায় নি এখনো।
আবির কল কেটে পুনরায় শক্ত কন্ঠে বললো,

“আমার তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে। আমার খাওয়া শেষ হওয়ার আগে তোকে যেনো খাবার টেবিলে দেখি। ”
এই বলে করিডোরের দিকে পা বাড়ালো আবির।
মেঘ পিছন থেকে কোমল কন্ঠে আবার ডেকে উঠলো,
“আবির ভাই”
আবির সহসা উত্তর দিলো,
“হুমমমম”

এই হুমম টা ছোট্ট মেঘের বুকে বারবার যেনো ধা*ক্কা লাগছে।কোমল কন্ঠে বললো,
“বললেন না তো তাড়াতাড়ি আসবেন কি না?”
আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো, মেঘ সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে ফেললো,
আবির কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“আসতে পারি যদি তুই আমার কথা মানিস!”

আর কিছু না বলে দ্রুত পায়ে নেমে গেলো নিচে। আবির ভাই এত সহজে মেনে নিয়েছে ভেবেই মেঘ খুশিতে আ*ত্মহারা হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে চুল গুলো ঠিকঠাক করে, হুটোপুটি করে নিচে নামতে লাগলো।
হাসিমুখেই এসে বসলো আবির ভাইয়ের বিপরীতে।একবার দেখলো আবির ভাইকে, প্লেটের দিকেও তাকালো, কিন্তু ততক্ষণে আবির ভাইয়ের খাওয়া শেষের দিকে। মেঘ খাওয়া শুরু করতে করতে আবির ভাই খাওয়া শেষ করে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে যাচ্ছে।

মেঘ এক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো আবির ভাইয়ের দিকে তারপর স্বাভাবিক হয়ে খেতে শুরু করলো৷
আবির ভাইয়ের এত কথার মধ্যে “হুমমমমম” টায় যেনো বার বার কানে বাজছে মেঘের। সবগুলো কথায় মনে পরছে। খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে শুয়ে আবির ভাইয়ের কথা ভাবছে।মেঘ মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করছে, সেই প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিচ্ছে।সবশেষে সব প্রশ্নের একটায় উত্তর পেলো।।

“আবির ভাই চান আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করি তারমানে এতেই আবির ভাই খুশি হবেন। আজ থেকে আমি সিরিয়াসলি পড়াশোনা করবো। তারপর দেখবো আবির ভাই আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে কি না। ”
কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে সব ভেবে সহসা উঠে পড়তে বসলো। মেঘ সবসময় জোরে পড়ে৷ মেঘ পড়লে করিডোর থেকে তো শুনা যায় ই পাশাপাশি তানভির বা আবিরের রুম থেকেও মোটামুটি শুনা যায় ।গোসল,নামাজ, কোচিং, টিউশন সবকিছু সময়মতো করছে মেঘ যেনো আবির ভাই আর রা*গ দেখাতে না পারে। কি সব ধ্বং*সের কথা বললো এসব কথা কঠিন কথা যেনো আর না শুনতে হয়। আবির ভাই যেনো সর্বদা কোমল, ভালোবাসা মিশ্রিত কন্ঠে “হুমমমম” বলে৷ আর কিছুই বলতে হবে না।

এদিকে মনোনয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তানভির দের এমপি দলীয় প্রতীকে মনোনীত হয়েছেন। পার্টি অফিস থেকে শুরু করে এমপির বাড়ি পর্যন্ত হৈচৈ শুরু হয়েছে। নি*ষেধা*জ্ঞা অমান্য করে সব গণহারে মিছিল দিচ্ছে। প্রথমবারের মতো মনোনীত হয়েছেন এমপি৷ তানভির সহ, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সদস্যরা মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন সবাইকে। এক পর্যায়ে এমপির বাড়িতে গেলো তানভির সহ আরও দুজন -চারজন।।।

এমপির মেয়ে হাসিমুখে তানভিরের সামনে এসে দাঁড়ালো। বাবা মনোনয়ন পেয়েছে এতে মেয়ের খুশির সীমা নেই। কিন্তু তানভির মেয়েকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেছে। আবির ভাইয়া গতরাতে বুঝিয়ে গেলো তারপর ও যদি মেয়ে পা*গলামিই করে আর সেটা এমপির নজরে পরলে তানভির শেষ।
তানভির কিছুটা ভীতু গলায় বললো,

“কিছু বলবেন?”
এমপির মেয়ে হাসিমুখে উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ ভাইয়া। ”
তানভির কপাল কুঁচকে বললো,
“কি?”
এমপির মেয়ে হাসি থামিয়ে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“I am Sorry Vaiya.. আমি আপনাকে এই কিছুদিন অনেক জ্বালিয়েছি। আপনি এতবার বলেছেন আবির ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে কিন্তু আমি বিশ্বাস করি নি। গতকাল আবির ভাইয়াও বলে গেছেন ওনার জীবনে অন্য কেউ আছে। এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনোদিন ওনার কথা জিজ্ঞেস করবো না আপনাকে। আপনাকেও আর বিরক্ত করবো না কখনো। আপনি অনেক ভালো। আমি চাই আপনি আব্বুর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন, যাতে আব্বু এমপি হতে পারেন। ”

তানভিরের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।মনে মনে বলছে,
“বাহ! ভাইয়া, তোমার ২ মিনিটের কথায় আমার ১৫ দিনের সমস্যা সমাধান করে দিলে। You are great bro”
হাসিমুখে বললো,
“তুমি যে বুঝতে পারছো এতেই খুশি। ”
এইটুকু বলে মেয়ের থেকে বিদায় নিয়ে এমপির সাথে দেখা করতে চলে গেলো।

বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেছে কিন্তু এখনও বৃষ্টি শুরু হয় নি। আজ বিকেল থেকেই আকাশে মেঘের গর্জন৷ মেঘ কোচিং শেষে বাসায় এসেছে। মেঘের গর্জনের শব্দে পড়তে বসতে ইচ্ছে করছে না তাই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে৷ গোধূলি বেলায় টিপটিপ বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। মেঘ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাস্তায় মানুষের ছুটোছুটি দেখছে।। সবাই ছুটছে নিজস্ব গন্তব্যে। মেঘ বেলকনি থেকে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। বৃষ্টির ফোঁটার স্পর্শে মেঘের সমস্ত অনুভূতিরা যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে, হাত বৃষ্টিতে রেখেই কল্পনার জগতে বিচরণ করছে মেঘ। বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির ছিটে ফোটা মেঘের চোখে মুখে পরতেই হুঁশ ফিরলো অষ্টাদশীর। বেলকনি থেকে রুমে চলে গেলো। টাওয়েল দিয়ে হাত মুখ মুছে বিছানায় বসলো।

মোবাইলের ডাটা অন করতেই একটা নোটিফিকেশন আসছে। ফেসবুকে ঢুকতেই সামনে আসলো আবির ভাইয়ের পোস্ট। অফিসের বেলকনি থেকে তুলা হাতের ছবি। ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টির পানি জমে আছে হাতে।সাথে বৃষ্টি নিয়ে সুন্দর একটা ক্যাপশন ও দিয়েছেন। মেঘ মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখছে। অনুভূতিরা যেনো নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছে মনের ভিতর৷

“আবির ভাইও বৃষ্টিতে হাত ভিজিয়েছে। তারমানে আবির ভাইয়েরও বৃষ্টি ভালোলাগে। ভাবতেই লাজুক হাসলো মেঘ। নিজের ভালোলাগা গুলো যদি ভালোবাসার মানুষের সাথে মিলে যায় তাহলে আর কি লাগে!”
সন্ধ্যার পর ঘন্টাদুয়েক পড়াশোনা করলো মেঘ বৃষ্টি বেশি থাকার কারণে জান্নাত আপু আসবেন না বলেছেন।

বাড়ির কর্তারা বাড়ি ফিরে এসেছেন সেই বৃষ্টি শুরুর দিকে৷ গাড়িতে চলাচল করায় বৃষ্টি ছুঁতেই পারেন নি ওনাদের। তানভির ও হৈহল্লা করে বাড়ি ফিরেছে ঘন্টাখানেক আগে। আকলিমা খান ডাকছেন সবাইকে খাবার খাওয়ার জন্য। মেঘ নেমেই একবার দেখলো ডাইনিং টেবিলের দিকে, আবির ভাই এখনও ফিরেন নি বাকি সবাই আছেন। মেঘ পা বাড়ালো টেবিলের দিকে তখনই কাকভেজা হয়ে ফিরেছে আবির।

মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভিজে একাকার অবস্থা। মেঘ চেয়ারের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে পরলো,
আবিরের এই অবস্থা দেখে মোজাম্মেল খান বলে উঠলেন,
“কিরে, এই বৃষ্টির মধ্যে আসতে গেলি কেন,৷ বৃষ্টি কমলে আসতে পারতি ”
আবির চুল ঝাড়তে ঝাড়তে উত্তর দিলো,

“অফিসে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিলো না। ”
সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে। মালিহা খান ডেকে বললেন,
“তুই কি এখন খাবি, নাকি পরে খাবি বাবা?”
আবির সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে উত্তর দিলো,
“৫ মিনিটে আসছি আমি! ”

৫ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে একটা হালকা গোলাপি রঙের, শর্ট হাতার ট্রিশার্ট সাথে কালো ট্রাউজার পরে নিচে নামলো। ততক্ষণে মোজাম্মেল খান, আলী আহমদ খান চলে গেছেন। তানভিরের খাওয়াও শেষের দিকে।
আবির চেয়ার টেনে বসতে নিলে মেঘের নজর পরে আবির ভাইয়ের দিকে। এই প্রথম বার আবির ভাই শর্ট হাতার ট্রিশার্ট পড়েছে৷ তাও আবার সাদা, কালো রঙ বাদে। মেঘ শব্দহীন হেসে উঠলো, দৃষ্টি তার আবির ভাইতে নিবদ্ধ ।
আবির বসে বললো,

“Congratulation Tanvir, Go ahead. Best of luck. ”
মেঘের দৃষ্টি এবার তানভির ভাইয়ার দিকে যায়। তানভির ভাইয়া খুশিতে গদগদ হয়ে উত্তর দিলো,
“Thank you so much Vaiya.”
আবির এবার কিছুটা চিন্তিত স্বরে বললো,
“ঐ বিষয়টা কি সমাধান হয়ছে?”
এবারও তানভির হাসিমুখে জবাব দিলো,
“জ্বী ভাইয়া। আমার কাছেও মাফ চেয়েছে। ”

মেঘ মনোযোগ দিয়ে দুই ভাইয়ের কথোপকথন শুনছিলো, সহসা উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,
“কি হয়েছে?”
আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
“তানভিরদের নেতা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছে!”
মেঘও এবার খুশিমনে ভাইকে অভিনন্দন জানায়,সাথে মীম আর আদিও অভিনন্দন জানায়।
মীম মজার ছলেই বলে উঠলো,

“ভাইয়া আমাদের ট্রিট দিবা না?”
তানভির বললো,
“কি ট্রিট চাস বল!”
মেঘ তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো,
“এখন ট্রিট লাগবে না, জিতলে পরে বড় করে ট্রিট খাবো। ”
তানভির বললো,
“ঠিক আছে, আজকে তাহলে আমার পক্ষ থেকে তোদের নুডলস ট্রিট দিব রাত ১০ টায়। ”
মীম বলে উঠলো,

“তুমি রান্না করবা ভাইয়া? ”
তানভির দাঁত বের করে হাসলো, আর বললো,
“হ্যাঁ, আমিই রান্না করবো সাথে ভাইয়া থাকবে!”
আবির অকস্মাৎ কপাল কুঁচকে, ঠাট্টার স্বরে জবাব দিলো,
“ইসসস, তুই ট্রিট দিবি আমি কেন হেল্প করবো? আনন্দ যেমন তুই করে আসছিস, এখন কষ্ট টাও তোকেই করতে হবে। ”

তানভির ভ্রু গুটিয়ে এক পলক তাকালো ভাইয়ার দিকে, তারপর বললো,
“ঠিক আছে, ঠিক আছে।৷ আমিই করবো। তোমাদের আমার রুমে দাওয়াত রাত ১০ টায়। ”
মেঘ,মীম আর আদি একসাথে বলে উঠে,
“ইয়াহু”
তানভির আঁতকে উঠে বলে,

‘এই থাম থাম, চুপ কর তোরা । বড় আব্বু আর আব্বু শুনলে সব আনন্দ মাটি চা*পা দিয়ে দিবে। ”
তিনজনই থেমে গেলো। তানভির খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো। মেঘ খাচ্ছে সাথে আবির ভাইকেও একটু পর পর দেখছে। কয়েকবার দেখার পর হঠাৎ আবির চোখ তুলে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনের । মেঘ তখনও শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। মেঘের চাউনি দেখে আবির কপাল কুঁচকালো কিন্তু মেঘের সে দিকে নজর নেই। মীম আর আদি খাচ্ছে তাই আবির কোনো কথা না বলে টানা ২-৩ ভ্রু নাচালো, এতক্ষণে মেঘের আবেশ কাটে। লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেলে। মেঘ মাথা নিচু করেই খাবার শেষ করলো।

রুমে গিয়ে আবারও পড়তে বসলো মেঘ। আবির খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ মা, মামনি আর কাকিয়ার সাথে গল্প করলো। এত রাতে বাড়ি ফেরায় তাদের সাথে ঠিকমতো কথায় হয় না ছেলেটার। গল্প শেষে নিজের রুমে যাওয়ার পথে কানে ভেসে আসে মেঘের পড়ার শব্দ । মুচকি হেসে রুমে চলে গেলো।

রাত ১০ টার পর তানভিরের রুমে সামনে হাজির হলো মেঘ।বিছানার উপর বসে আছে মীম আর আদি। তানভির খাবার পরিবেশন করছে। মেঘ ঢুকতে নিলেই তানভির বলে উঠে,
“বনু বসার আগে ভাইয়াকে একটু ডেকে আসবি প্লিজ! আর হ্যাঁ জোরে ডাকিস না।৷ আব্বুর কানে গেলে খবর আছে আমার!”

মেঘ মলিন হাসলো। মনের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়ে যাচ্ছে মেঘের। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো আবির ভাইয়ের রুমের দিকে। দরজা খুলায় ছিল। মেঘ দরজা থেকে উঁকি দিলো ভিতরে। কিন্তু রুমে কেউ নেই। ধীর পায়ে ভিতরে ঢুকে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো মেঘ। আবির ভাই গ্রিলে হাত রেখে তাকিয়ে আছে আকাশের পানে। বৃষ্টি কম তবে আকাশে মেঘের গর্জন হচ্ছে আর কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ।

মেঘের খুব ইচ্ছে করছে আবির ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করবে। তাই চুপচাপ আবির ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে পরেছে। একটু পর পর বিদ্যুৎ চমকানো দেখে আঁতকে উঠছে মেঘ। দিনের বেলা বৃষ্টি তার যতই পছন্দ হোক না কেনো, রাতের বেলা বৃষ্টি হলে মেঘ কখনো বেলকনিতে বের হয় না।। শব্দের মাত্রা তীব্র হলে কানে আঙুল দিয়ে ঘুমায়। আজ সাহস করে রাত ১০ টায় আবির ভাইয়ের পাশে তো দাঁড়িয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ চমকানো দেখে বার বার বুক কাঁপছে অষ্টাদশীর,

আবির তখনও দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে অসীম দূরত্বে। সহসা বলে উঠলো,
“মনে জোর নেই তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”
মেঘ আবির ভাইয়ের দিকে তাকালো কিন্তু আবির ভাইয়ের অভিব্যক্তি বুঝা গেলো না। তাকিয়ে আছে আকাশের পানে।

মেঘ ভাবছে, “আবির ভাইয়ের কি সব দিকে চোখ আছে? ”
মেঘ আস্তে আস্তে বললো,
“ভাইয়া ডাকতে বলছে আপনাকে। ”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“তুই যা, আমি আসছি!”

মেঘ রুমে ঢুকতে নিতেই ঠা*টার শব্দ হয় সাথে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় চিৎকার দিয়ে উঠলো।
আবির দু কদম এগিয়ে সহসা মেঘের হাত ঝাপ্টে ধরে বলে,
“কি হয়ছে? ভয় পাইছিস?”
আবির পুনরায় বললো,
“তুই ভিতরে ঢুক আমি আছি, ভয় পাইস না।”

মেঘ দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো আবির ভাইয়ের হাত, গুটি গুটি পায়ে ভেতরে ঢুকলো। আবির একহাতে বিছানার উপর থেকে ফোন টা নিয়ে ফ্ল্যাশ জ্বালালো।
মেঘ তখনও শক্ত করে ধরে আছে আবির ভাইয়ের হাত। ফোনের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মেঘের ভ*য়ার্ত মুখমন্ডল, কপাল কুঁচকে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
আবির কোমল কন্ঠে বললো,
“কিছু হয় নি! তাকা”

মেঘ আস্তে আস্তে চোখ পিটপিট করে তাকালো। চোখ পরলো আবির ভাইয়ের হাতের দিকে। দুহাতে খামছে ধরে আছে আবির ভাইয়ের হাত। তৎক্ষনাৎ ছেড়ে দিলো হাত। ততক্ষণে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। মেঘ আর আবির ভাইয়ের দিকে তাকালো না ছুটে চলে গেলো রুম থেকে। ধীরপায়ে ঢুকলো তানভির ভাইয়ার রুমে। বিছানার এককোনায় বসে পড়লো মাথা নিচু করে।
১ মিনিটের মধ্যে আবির ও রুমে ঢুকলো। তানভির সবাইকে খাবার দিতে ব্যস্ত হলো- নুডলস, চা,বিস্কুট, সাথে মুড়ি মাখিয়েছে।
আবির তানভিরের দিকে তাকিয়ে ঠাট্টার স্বরে বললো,

“বাহ! এত আয়োজন? সাবাশ!”
তানভির হাসিমুখে বললো,
“খেতে ভালো না হলে কেউ অভিযোগ করবা না!”
সবাই খাওয়া শুরু করলো। মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কোনো ভাবেই খেতে পারছে না। কোনোরকমে চোখ তুলে তাকালো আবির ভাইয়ের হাতের দিকে, দেখার চেষ্টা করলো, খামছি টা কতটা লেগেছে। আবির ভাই হাত ঘুরাতেই চোখে পরলো সেই দাগ। তিন আঙুলের নখের চাপে চামড়া কেটে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। মেঘ আবির ভাইয়ের হাতের অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকালো। টলমল করছে চোখ, নিজের প্রতি খুব রা*গ হচ্ছে, বার বার দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ১৩

আদি আবির ভাইয়ের হাত দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
“ভাইয়া তোমার হাতে কি হয়েছে?”
সবার নজর পরলো আবিরের হাতের দিকে।
আবির একপলক দেখলো মেঘকে, তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“কিছু হয় নি! কোথায় লেগে কেটে গেছে!”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ১৫