তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৮

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৮
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

মেহতাব : ওভার একটিং বন্ধ কর । আমি গেলাম বাই । (রাগ দেখিয়ে)
এই বলে মেহতাব রুম থেকে চলে গেলো । আর সিয়াম বালিশটা নিয়ে পিছনে আসতে আসতে বললো ,
সিয়াম : আপনার প্রজন্ম নিয়ে যান ।

সকলে লাঞ্চ করার জন্য এসে পড়েছে । সবাই মেহতাব আর সৌরভদের আসার জন্য খাবার টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে । মেহতাবরা নিচে নামতেই তারা সকলে নিজেদের জায়গায় বসে পড়লেন । মেহতাব সহ সকলে উপস্থিত হওয়ায় অরিন বেগম বলে উঠলেন ,
অরিন বেগম : আমি আর তোমাদের দাদী চলে যাবো আজকে । তোমরা বরং আর দুটো দিন ঘুরে তারপর এসো ।
আহতাব : কিন্তু কেনো ?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অরিন বেগম : তেমন কেনো কারণ নেই । তোমার দাদীর শরীর টা ভালো নেই । তোমাদের চিন্তা করতে হবে না আমরা যেতে পারবো ।
মেহতাব : আমি তোমাদের গিয়ে দিয়ে আসবো ।
মারজা বেগম : তার কোনো প্রয়োজন নেই দাদু ভাই আমরা চলে যাবো আর ড্রাইভার তো আছেই ।
মেহতাব : কিন্তু ?

অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় । সবাই খাওয়া শুরু করো ।
অরিন বেগমের কথায় কেউ আর দিরুক্তি করে না । সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে অরিন বেগমদের এগিয়ে দিয়ে আসে ।

অরিন বেগমরা গাড়িতে করে সেখান থেকে চলে যান ।
সবাই আবার রিসোর্টে ফিরে আসে । রিসোর্টে ফিরতেই আহতাব আর অহনা সেখান থেকে অন্যদিকে ঘুরতে চলে যায় । বাকিরা সবাই বাগানের দিকে হাঁটতে শুরু করে । কিছুক্ষণ পর মেহতাব আর মেঘকে রেখে সবাই সেখান থেকে চলে আসে । আর মেহসান বলে ওঠে , ” আমরা পালাচ্ছি‍ কেনো ? ”
সৌমিক : কেনো আবার তাদের প্রাইভেসি দিতে ?

শাম্মী : ঠিকাছে কিন্তু মিথিলা আপু আর সৌরভ ভাইয়া কোথায় ?
শাম্মীর কথায় সবাই চারদিকে তাকায় কিন্তু মিথিলা আর সৌরভকে তারা দেখতে পায় না । এতে সবার বেশ ঘটকা লাগে ।
রৌফ : গেলো কই ওরা ?
সিয়াম : চল সবাই খুঁজে দেখি ?

সামির : খোঁজার কোনো প্রয়োজন নেই আশেপাশেই হবে হয়তো ।
সামির এর কথায় সবাই সামির কে চেপে ধরে । সিমরান বলে উঠে ,
সিমরান : কিছু তো লুকাচ্ছ ‍সত্যি সত্যি বলো সামির ভাইয়া । তুমি জানো আমি জানি ।
সিয়াম : না বললে তোর বিয়া হইবো না ?
তৌফ : এই প্রথম সিয়াম ঠিক কথা কইছে ।
সামির : ওই যে আসতাছে ।

সামির কথায় সবাই সামনে তাকায় সৌরভ আর মিথিলা এসে পড়েছে তা দেখে কেউ আর প্রশ্ন তুলে না ।
সামির : উফ ঠিক টাইম মতো আইছো‍স নাইলে ওরা বিয়ার আগেই বিধবা বানাইয়া দিতো । ( নেকা কান্না করে )
রৌফ : তোর আর ডং করতে হইবো না ।
সৌরভ : চল সবাই ।
সিমরান : কিন্তু কোথায়?
সিয়াম : ডিনার পার্টির জন্য ।
শাম্মী : তোমরা আবার আমাদের বাদ দিয়ে কিছু করেছো । তাই না ?
সৌরভ : বেশি কিছু না তোগো আমি বুঝাইতাছি ।

মেহতাব আর মেঘ পিছনে ফিরে দেখে কেউ নেই । তাদের বুঝতে বাকি থাকেনা তারা সবাই কেনো চলে গেছে । মেহতাব মেঘকে নিয়ে সামনের একটা নির্জন স্থানে বসে পড়ে । মেহতাব নিরবতা ভেঙে বলে ওঠে ,
মেহতাব : মেঘ আমি কালকে লন্ডন ব্যাক করছি ।
মেহতাব হঠাৎ এমন কথা বলায় মেঘ বেশ হকচকিয়ে যায় । নিজেকে ধাতস্থ করে বলে ওঠে ,
মেঘ : কালকেই ফিরতে হবে ?

মেহতাব : হুম আর্জেন্ট । অনেকদিন হয়ে গেছে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্বে যাদের নিয়োজিত করেছি । তাদের উপর আর প্রেসার ক্রিয়েট করতে চাই না । সো কি করবো বলো ? প্রবলেম নেই তোমার জন্য একটা গিফট রেখে যাবো । যাতে আমার অনুপস্থিতি তোমায় কিছু টা ভুলিয়ে দেয়। আফটার অল আমি তোমার হাজব্যান্ড আমায় তো মনে পড়বেই । ( মেঘের চোখে চোখ রেখে )
মেঘ মেহতাবের থেকে চোখ সরিয়ে নেয় । তার কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলে না সে । সে যে তাকে মিস করবে সেটা কিছুটা হলেও সে নিজেও অনুভব করতে পারছে । নিজের অধিকার খাটিয়ে বলার মতো অনুভুতি এখনও তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি ।

সৌরভরা মিলে সবাই প্লান এটে ফেলে । প্লান মোতাবেক মেয়েরা একদল আর ছেলেরা অন্য দলে ভাগ হয়ে যায়। সৌরভরা মেহতাবের কাছে আর মেয়েরা মেঘের কাছে এসে হাজির হয় । আর মেহসানকে আহতাব আর অহনার কাছে ডিনার পার্টির জন্য জায়গা বুক করতে পাঠিয়ে দেয় আহতাবদের আগেই বলে রেখেছে সৌরভ।
শাম্মী মেঘকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে ওঠে,

শাম্মী : ভাবী চলো আমরা ওই দিক টা ঘুরে আসি ।
মেঘ : কিন্তু ?
সিমরান : কোনো কিন্তু নয় । আমরা ননদ আর ভাবী একটু আলাদা টাইম স্পেন্ড করবো চলো ।
মেঘ আর আপত্তি জানায় না । মেয়েরা মিলে অন্যদিকে চলে যায় । আর সৌরভরা মেহতাবকে নিয়ে তার বিপরীত দিকে চলে যায় ।

সৌরভ : দোস্ত আজকে রাতে মেঘ আর তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে । আসলে তখন বললাম না মেঘ সারপ্রাইজ দিবো ঐটা আসলে সত্যি ছি‍লো না । কিন্তু দোস্ত তোদের আমরা ভালো চাই সো প্লিজ আমাদের গিফট টা নাকোজ করিস না ।
সিয়াম : হুম সৌরভের সাথে আমরা সকলে সহমত ।
সিয়ামের কথায় সবাই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ‍ সূচক উত্তর দেয় ।

মেহতাব আন্দাজ তো করেছিলো তাই তাদের একটু শায়েস্তা করার জন্য মেহতাব একটু ভেবে বলে ওঠে ,
মেহতাব : I have one condition . যদি তোরা আমার শর্তে রাজি হতে পারিস এন্ড আমার শর্ত পূরণ করিস তাহলে ভেবে দেখবো যে আমি তোদের গিফট একসেপ্ট করবো কিনা ।
সবাই একটু ভেবে রাজি হয়ে যায় । মেহতাব আবার বলে ওঠে ,

মেহতাব : এখান থেকে তোদের মধ্যে একজন কোনো মেয়েকে ইম্প্রেস করতে পারলেই হবে সিম্পল ।
মেহতাবের কথায় সবাই আর না করতে পারে না তারা জানে মেহতাব তাদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছে । সৌরভ বলে ওঠে ,
” মেহতাব বুনো শিয়াল হলে আমরাও বাঘা কুমির ”

মেহতাব : প্লিজ কুমির গুলোকে তোদের সাথে তুলনা করে অপমান করিস না আই রিকুয়েস্ট । ( কিঞ্চিৎ হেসে )
সবাই ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে হাত পা এদিক ওদিক সরিয়ে ব্যা‍য়াম করতে থাকে । একটা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে সামনে থাকা টপস আর জিন্স পরা অনেকগুলো মেয়ের সামনে দাঁড়ায় । রৌফ চুল স্পাইক করতে করতে কবিতার ছন্দে বলে ওঠে ,

রৌফ : আমার বাবার ছিলো বড় বড় গোফ নাম আমার রৌফ ।
রৌফের কথা শুনে একটা মেয়ে বলে উঠে , ” আপনার গোঁফ কেনো নেই তাহলে ”
সৌরভ রৌফ কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠে ,
সৌরভ : বাবা-মা করত আমায় নিয়ে গৌরব নাম আমার সৌরভ ।
সৌরভের কথা শুনে আরেকটা মেয়ে বলে উঠে , ” কেনো সৌরভ ভাইয়া করত বললেন কেনো এখন কেউ আর গৌরব করে না ” ( হেসে দিয়ে )

রৌফ , সিয়াম , সামির ভাইয়া নাম শুনে হেসে বলে ” ভাইয়া টিকিটের মেয়াদ শেষ সাইট প্লিজ ”
সামির সৌরভ আর রৌফের সামনে এসে বলে ,
সামির : আমি ছিলাম আগের জন্মের আমির নাম আমার সামির ।
সিয়াম , সৌরভ আর রৌফ ঠাট্টার স্বরে হেসে বলে উঠে , ” গরীবের আমির ”
এবার শেষ পালা সিয়ামের সিয়াম বলে ওঠে ,

সিয়াম : ওগোরে এতিমখানায় দিয়াম নাম আমার সিয়াম ।
আরেকটা মেয়ে হেসে বলে ওঠে ” ধন্যবাদ আমাদের তিনজন লোক দরকার ছিলো এতিমখানা পরিষ্কার করার জন্য । আর এখানে তিনজনের সাথে একজনকে ফ্রি দিচ্ছে ”

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৭

মেয়েগুলো তাদের ইজ্জতের তান্দুরি বানিয়ে দিয়েছে । তা আর তাদের বুঝতে বাকি নেই । সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে হাসা হাসি করছে । সিয়াম বলে উঠলো , ” আমি বাংলাতে একটু কাঁচা তাই বানানে বেশ ভুল হয় ” ( জোরপূর্বক হাসি দিয়ে )

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৯