তুমি এসেছিলে বলে শেষ পর্ব 

তুমি এসেছিলে বলে শেষ পর্ব 
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

দেখতে দেখতে প্রায় ২ বছর কেটে গেছে। সৌরভ আর মিথিলার সাংসারিক জীবন বেশ ভালো কাটছে। আহতাব আর অহনার ছেলে হয়েছে। সবেমাত্র ২ বছরে পা দিয়েছে আহান। বয়সের তুলনায় তার বুদ্ধি বেশ প্রখর।
আজ মেঘ আর মেহতাবের ম্যারেজ এনিভার্সারি। মেঘ ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মেঘের এই অবস্থায় মেহতাব কাজ ফেলে এসে সারাক্ষণ মেঘের আশে পাশে থাকে। বলা যায় না মেঘের কখন কিসের প্রয়োজন পরে? এখন সে শুধু স্বামী নয় বাবা হতে চললো বলে। এই নিয়ে সবাই মজা করলেও মেহতাব গাঁয়ে মাখে না।

কেউ কিছু বললেই এক কথা, ❝বউ আমার আমি আগলে রাখবো না তো কে রাখবে?❞
আপাদত মেঘ সোফায় বসে আছে। পেট সামলে চলতে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়। আর মেহতাব তো আছেই পান থেকে চুন খসলেই সঙ্গে সঙ্গে হাজির। এই যে মেঘ সোফায় বসে আছে নিজের জ্বালায় আর মেহতাব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যদি কোনো আর্জি থাকে সঙ্গে সঙ্গে তা পালন করতে প্রস্তুত। বাকি সদস্যরা তা দেখতে হাজির। হুল্লোড় পার্টির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মজা দেখছে। হঠাৎ সেখানে আহান গুটি গুটি পায়ে হাজির। সব বাচ্চারা এই বয়সে আদো আদো গলায় কথা বললেও আহান একদম আলাদা তার কথায় কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি নেই। এই বয়সেই নির্ভুল এবং স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারে সে। মেহতাব আহান কে কোলে নিয়ে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহতাব : তুমি কি চাও ভাই না বোন?
আহানের সোজা সাপ্টা উত্তর,
আহান : বউ।
সবাই আহানের কথা মজা নিয়ে উড়িয়ে দিলো।

সন্ধ্যায় ঘরোয়াভাবে মেঘ, মেহতাবের ম্যারেজ এনিভার্সারির আয়োজন করা হয়েছে। মেঘ অসুস্থ বলে ঘরোয়া ভাবে আয়োজন করা হয়েছে। আপাদত মেঘ নিজের রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লাল রঙ্গের সাদা পাড়ের শাড়ি পরেছে সে। নুয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করতে পারছে না। হঠাৎ মেহতাব এসে হাঁটু ভাঁজ করে বসে মেঘের কুচি ঠিক করতে লাগলো। মেহতাবের আচমকা আশায় মেঘ হতবিহ্বল হলেও মেহতাব কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মেহতাব কুচি ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে মেঘের কপালে গাঢ় চুম্বন করলো। মেঘকে ঘুরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

মেহতাব : এই যে মিহির মাম্মাম, মিহির আসার অপেক্ষায় তাঁর পিতৃহৃদয় ভীষণ ব্যাকুল, বলে দিও ওকে।
মেঘ মুচকি হাসলো মিহি কে? সে বুঝে গেছে। সে যা ভেবেছে তা নয় সে একটু বেশি ভেবে ফেলেছে। যেই লোকটা তাকে এতো ভালোবাসে সেই লোকটা তার বিশ্বাস কোনোদিনও ভাঙবেনা। লোকটা একান্ত মেঘের, শুধুই মেঘের। এই কথা ভাবতেই দেহে অদ্ভুত এক অনুভুতির জানান দিচ্ছে! মেঘ মধুর, সিগ্ধময়ী হাসি ঝুলিয়ে মনে মনে একটা শব্দই বিড়বিড় করতে থাকলো,

❝আপনি মেঘের, একান্তই মেঘের❞
সন্ধ্যায় সবাই মোটামুটি ভালোই মজা করেছে। সৌরভ আর মিথিলাও এসেছে। বড়রা নিজেদের ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে। মেয়েরা সবাই উপরের রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।ছেলেরা সবাই ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে। অনেকদিন পর দেখা আড্ডা দিচ্ছে সবাই। সৌরভ সোফায় শুয়ে পা দুলাতে দুলাতে মজা করে ঠাট্টার ছলে বলে উঠলো,
সৌরভ : দোস্ত যাই কও। আমার জন্যই কিন্তু তুই পিতা হইতে পারতাছোস।
মেহতাব ফোন টেবিলে রেখে সোফায় হেলান দিয়ে বলে উঠলো,

মেহতাব : বাবা হবো আমি অথচ বাবা হওয়ার সব ক্রেডিট তোর।
সিয়াম আফসোসের সুরে বললো,
সিয়াম : ভাই তোরা তো বিয়া করছোস পিতাও হবি আমাগো তিন জনের ভাগ্য কবে খুলবো।
রৌফ : জীবনে কিছুই করতে পারলাম না।
সামির : আমিও কারো বেবি হওয়ার কারণ হতে চাই।
মেহতাব সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বললো,

মেহতাব : বাবা হওয়া অতো সহজ না। ইটস এ লং প্রসেস।
সিয়াম দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বলে উঠলো,
সিয়াম : নাউজুবিল্লাহ। বেশরম কথাবার্তা লজ্জা বলতে কিচ্ছু নাই।
মেহতাব বাঁকা হেসে বলে উঠলো,

মেহতাব : লজ্জা থাকলে বাবা হতে পারতাম না আর তুই মামা হওয়া থেকে বঞ্চিত হতি।
রৌফ : আমার পাক পবিত্র মন তোগোর লগে মিশা নষ্ট হইবার পথে, দূরে যা।
সামির : এমন ভাব করতাছোস যেনো ভাজা মাছ উল্টাইয়া খাইতে পারোছ না।
রৌফ: খাওয়া শুধু তোর কাজ পেটুক একটা।
সামির : গু খায় সব মাছে দোষ পড়ে পাঙ্গাস মাছের।
সৌরভ হেসে বলে উঠলো,

সৌরভ : তুই পাঙ্গাস মাছ নাকি? পাঙ্গাস মাছ টারে তোর লগে তুলনা কইরা অপমান করিস না।
এই বলে সামিরকে কেন্দ্র করে সবাই হাসিহাসি করলো। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে সবাই যার যার রুমে বিশ্রাম করতে চলে গেলো।

মেহতাব ঘরে প্রবেশ করে মেঘকে দেখতে না পেয়ে মেঘকে খুঁজতে লাগলো সবজায়গায়। অনেক খোঁজা খুঁজির পর ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল মেঘকে। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয়তমা পড়নে ওই একই শাড়ি। চুলগুলো শীতল বাতাসে উড়ছে। দৃষ্টি তাঁর আকাশপানে আকাশে তাঁরার মেলা। তাঁরা ভরা আকাশ মেঘের বরাবরই প্রিয়। মেহতাব পাশে এসে মেঘের গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। মেঘ মেহতাবকে দেখে স্মিত হাসলো। মেহতাবের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে উঠলো,

মেঘ : আমি যদি আপনার জীবনে এইভাবে না আসতাম আপনি কি আমায় ভালোবাসতেন?
মেঘের কথা কর্নপাত হতেই মেহতাব অবাকের সহিত বললো,
মেহতাব : হঠাৎ এই প্রশ্ন?
মেঘ : ভালোবাসতেন?
মেহতাব আকাশপানে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরক্ষনেই বলে উঠলো,

মেহতাব : জানি না তবে #তুমি_এসেছিলে_বলে জীবন আজ সুন্দর। এই এতো সুন্দর তাঁরা ভরা আকাশ তোমায় ছাড়া ভালো লাগত না। আমার জীবনের সৌন্দর্য টাই তো তুমি। তুমি যেভাবেই আমার জীবনে আসতে আমি সেভাবেই তোমায় ভালবাসতাম। ❝ভালোবাসা এমনি হয় তুমি যেভাবেই আসো না কেনো তোমার প্রেমে পড়তে বাধ্য আমি❞

মেঘ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল। প্রতিটি কথা মেঘকে বাধ্য করে মেহতাবের প্রেমে পড়তে। মেহতাবের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত মেঘের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। ঠিকই তো ভালোবাসা এমনই হয় যাকে ভালোবাসার সে যেভাবেই আসুক শুধু ভালোবাসায় পবিত্রতা, ভরসা, বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন। আর কি চাই?

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৩১

মেঘ মেহতাবের মলিন, সিগ্ধকর মুখের পানে তাকলো। মেহতাব একই ভাবে গভীর, ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এগিয়ে গিয়ে মেহতাবকে শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো। যেনো এই বাঁধন আজীবনের। মেহতাবের বুকে মাথা রাখলো এই একটিমাত্র জায়গাই তাঁর একমাত্র ভরসার স্থল। মেহতাব কপালে গাঢ় চুম্বন করে মিহি কন্ঠে বলে উঠলো,
❝ভালোবাসি❞

সমাপ্ত