তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৩০

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৩০
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

বাড়িতে বিয়ে অথচ কারো কোনো হেলদোল নেই। গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান পালন করা হবে আজ। সবাই সোফায় বসে আছে দৃষ্টি মেঘের দিকে। মেঘকে কাজে সাহায্য করতে গেলে মেঘের কাজ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তাই কেউ আর আগ বাড়িয়ে যায় নি। তবুও একা হাতে সব দিক সামলে নিচ্ছে মেঘ। অরিন বেগম এসে মেঘকে তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন,

অরিন বেগম : রেডি হয়ে নে শপিংয়ে যেতে হবে?
মেঘ : মা ,আপনি একটু অপেক্ষা করুন অল্প কিছু কাজ বাকি আছে।
অরিন বেগম মেঘকে সরিয়ে বলে উঠলো,
অরিন বেগম : এতো ব্যস্ত থাকিস শরীরের যত্ন নিস না কেনো?তুই যা এইদিকের সবকিছু আমি সামলে নিবো।
মেঘ : কিন্তু মা আপনি যাবেন না?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অরিন : না, মেহতাবকে বলে দিয়েছি ও গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। আর মিথিলা,সিমরান,শাম্মী ওরা তো আছেই। ওরা হেল্প করে দিবে। একটু ঠাণ্ডা বাতাস খেয়ে আয় ভালো লাগবে। মায়ের কথা ফেলবি না যেনো।
মেঘ : কিন্তু মা?
অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় তুই যাবি ব্যাস। তোর পছন্দ সবার পছন্দ হবে আমার বিশ্বাস। আমার লক্ষ্মী মেয়ে যাও রেডি হয়ে নেও।
মেঘ ম্লান হেসে উপরের রেডি হতে চলে গেলো। সবার গুরুদায়িত্ব এখন তার উপর। এই পরিবার এখন তার সব। মেহতাবের মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছে, স্নেহময়ী মায়ের মতো শাশুড়ি পেয়েছে, বাবা, বোন,ভাই সব কিছু পূরণ হয়ে গেছে। আর কীসের অভাব?

মেহতাব গাড়ির বোনাটের উপর বসে আছে। ধূসর রঙের শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স চোখে সানগ্লাস। দৃষ্টি তার সদর দরজায়, মেঘকে একদণ্ড শান্তিতে দেখার সুযোগ নেই। এতো ব্যস্ততা! যার জন্য সব কাজ ফেলে রেখে এসেছে তারই কোনো পাত্তা নেই। ভালোবাসা শব্দটা বলার পর থেকে যেনো আরো।

সদর দরজা থেকে হুড়মুড় করে হুল্লোড় পার্টির সবাই দৌঁড়ে আসছে যেনো কম্পিটিশন চলছে। মেহতাবের মেজাজ যেনো আরো তুঙ্গে চড়ে গেলো। সিয়াম এসে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাকিরাও তাকে ফলো করে মেহতাবকে ঘিরে ধরলো। সবার দৃষ্টি মেহতাব এর দিকে যেনো কিছু বলতে চায়। মেহতাব সবার দিকে চোখ বুলিয়ে সানগ্লাসটা খুলে হাতে নিয়ে বলে উঠলো,

মেহতাব : তোদের সবার কী চাই?
সৌমের সোজা সাপ্টা উত্তর,
সৌম : ট্রিট।
মেহতাব : কিসের জন্য?
মেহসান : ভাবী আম্মা আর তোমার মিলনের।
মেহতাব স্মিত হাসলো তবে নাকোচ করলো না। প্রতিউত্তর বলে উঠলো,
মেহতাব : নো প্রব্লেম যা খেতে চাস খাবি। তবে এই গাড়িতে এক জন ও উঠবি না। আন্ডারস্ট্যান্ড?
শাম্মী : উই বেটার আন্ডারস্টুড।

মেহতাব শাম্মীর ঝুঁটি টেনে দিলো। সিমরান বলে উঠলো,
সিমরান : ভাইয়া তুমি কত রোমান্টিক! আমার বিয়ে বিয়ে ফিলিংস আসছে।
মিথিলা : বিয়ের ফিলিংস টাই আলাদা যদি সঠিক মানুষের সাথে হয়। তাই না ভাইয়া?
মেহতাব মুচকি হেসে তিন বোনকে জড়িয়ে ধরলো। সামির বলে উঠলো,
সামির : তোরে রোমান্টিক হওয়ার ট্রিপস দিলাম আমরা। অথচ ক্রেডিট ওদের!
মেহতাব বাঁকা হাসি হেসে বলে উঠলো,

মেহতাব : ওহ, মনে হয় সুইংমিং পুলের ঘটনা ভুলে গেছিস? মনে করাতে হবে নাকি?
রৌফ : না দোস্ত ওর মগজ অত খারাপ না। প্রত্যেকদিন দুধ আর বাদাম খায়। খাওয়া ছাড়া তো কিছুই মনে থাকে না।
সবাই রৌফের কথায় সামিরকে নিয়ে হাসাহাসি করলো। সৌম সবাইকে থামিয়ে বলে উঠলো,
সৌম : এবারের সংগ্রাম,,
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,
“মেহতাবকে ফতুর করার সংগ্রাম”

সবাই ভদ্র বাচ্চাদের মতো গাড়িতে বসে আছে। মেহতাব একইভাবে সামনের গাড়ির সামনে স্থির দৃষ্টিতে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মেঘের আগমন ঘটলো। হালকা গোলাপি রঙের থ্রিপিস পড়েছে। বেশ ভালো লাগে এই রঙে মেঘকে, ঝিলমিল করছে রোদের আলোতে যেন। আবেদনময়ী লাগছে তাকে!

মেহতাব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তমার দিকে। সবাই গাড়ির কাঁচ নামিয়ে “ওহহহহ” বলে চলছে, সিটি বাজাচ্ছে। মেহতাবের ধ্যান ভাঙ্গেনি তাতে। মেঘ সামনে এসে তুরি মারতেই মেহতাব দৃষ্টি সরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো। মেঘের বেশ অভিমান হয়েছে তার পছন্দের কালারের থ্রিপিস পড়েছে। অথচ একটা প্রশংসাও করলো না। মেঘ গাড়িতে উঠে বসলো। মেহতাব গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো। মেহতাব মিরর গ্লাস দিয়ে মেঘের মুখের অদল দেখে মনে মনে হাসলো। মেঘ কিছু একটা লক্ষ করে বলে উঠলো,

মেঘ : হাসছেন কেন?
মেহতাব থতমত খেয়ে গেল। গাড়ি সাইডে থামিয়ে বলে উঠলো,
মেহতাব : তুমি দেখলে কিভাবে?
মেঘের সোজা সাপ্টা উত্তর,
মেঘ : সিম্পল চোখ দিয়ে।
মেহতাব : হাউ ইজ ইট পসিবল?

মেঘ স্মিত হাসলো মেহতাব তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। মেঘ নিজের মুখ মেহতাবের কাছে এনে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
মেঘ : মনের চোখ দিয়ে।

মেঘের কথায় যেনো মেহতাবের অদ্ভুত এক ভালো লাগা বিচরন করলো। ঘোর লেগে গেল যেনো! তাকে কাটিয়া তোলা আপত্তিকর। মেহতাব মেঘকে এক টানে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। আর মেঘকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিলো। মেঘ ও সায় দিলো তাতে। পবিত্র স্পর্শ তাতে আপত্তিকর কিছু নেই। পরিস্থিতি গভীর থেকে গভীরে যাচ্ছে। দুজনেই আরো বেসামাল হয়ে পরছে। মেঘ মেহতাব কে ঠেলে সরিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিলো। মেহতাবের ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে গেল। তবে সে বুঝতে পেরেছে মেঘের অনুমতি না নেওয়ায় সে রেগে গেছে হয়তো। তাই সে বলে উঠলো,
মেহতাব : রাগ করেছো? সরি আমার অনুমতি নেওয়া উচিত ছিলো। আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।
সত্যি মেঘের ভীষণ রাগ হচ্ছে সে লজ্জায় নুয়ে পড়লো বলে উঠলো,

মেঘ : সরি বলতে বলেছি নাকি? এটা পাবলিক প্লেস আপনার এইটুকু মাথায় রাখা উচিত ছিলো। বাসায় থাকার সময় পিড়িত কোথায় থাকে?
মেহতাব হতবাক হয়ে গেলো। সে হাসবে না কাঁদবে সেটা বুঝতে তার বেশ কাঠখড় পোহাতে হলো। মেঘ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে পুরো! মেহতাব মুচকি হেসে বলে উঠলো,

মেহতাব : ভালোবাসি তোমায় তাই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারি নি। এক কথায় কান্ট্রোল করতে পারিনি নিজেকে। তুমি জীবনে এসেছিলে বলে বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা কী? আর ভালোবাসা যখন তখন পেতে পারে বলে কয়ে আসে নাকি?

শেষ কথাটা বলে মেহতাব গাড়ি আবার স্টার্ট করলো। মেঘ আর কিছু বললো না তবে তার মেহতাবের কথাগুলো বেশ ভালো লেগেছে। গাড়ির কাঁচের গ্লাস দিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মেহতাবের আড়ালে আনমনে মুচকি হাসলো। মেহতাবের চোখের আড়াল হলো না তা। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্মিত হেসে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে দিলো। মেঘ তা দেখে খুশি হলো তবে ফিরে তাকালো না। গালে হাত রাখতেই অনুভব করলো গাল দুটো এখনও আগুনের মতো গরম হয়ে আছে।

গাড়ি শপিং মলের সামনে এসে দাড় করালো। সাইডে পার্ক করে দুজনেই নেমে পরলো। পুরো গাড়িতে তাদের আর কথা হয় নি। ছেলেরা দূরে এসে এক স্থানে দাড়ালো, সৌরভও এসেছে। বিয়ের দরুন তার মেহতাববের বাড়িতে আনাগোনা সম্ভব হচ্ছে না। সুযোগ পেয়েছে তাই মিথিলাকে দেখতে এসে পড়েছে। মেহসান তাদের দিকে এগিয়ে এসে মাথা চুলকে বলে উঠলো,

মেহসান : ভাইয়া ভাবীর সাথে তুই কী করেছিস?
মেহসানের কথার মানে কেউ বুঝতে পারলো না। সবাই মেঘের দিকে নজর দিলো। মেঘ একবারও মেহতাবের দিকে তাকাচ্ছে না। গাল দুটো এখনো রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। মেহতাব আনমনে হেসে বলে উঠলো,
মেহতাব : তোর ভাবী মিথিলার জেরক্সকপি একদম।
কেউ তার মানে বুঝতে পাড়লো না। সবাই ইতস্ত হেসে উড়িয়ে দিলো।
মেঘ শপিং মলে ঢুকতে যাবে তখনি তার কয়েকটা লোকের উপর চোখ পড়লো। মেঘ হাতের ইশারায় মিথিলাদের লোকগুলো দেখালো,

মেঘ : ওই লোকগুলো না যারা প্রথম দিন মেয়েদের আজেবাজে নোংড়া কথা বলছিলো।
৫ টা ছেলে মেঘকে দেখে মুখ লুকিয়ে ফেললো। একটা ছেলে বলে উঠলো,
“আপা আপনার ভুল হইতাছে। আমরা খারাপ ছিলাম এহন আমরা গুড বয়। কোনো মেয়েদের দিকে ভুলেও তাকাই না। নাউজুবিল্লাহ, ভাই দেখলে জানে মাইরা ফেলবো”
আরেকটা ছেলে ওর মুখ ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৯

“আপা চানাচুর নিবেন? এখন আমরা হালাল উপায়ে ব্যাবসা করি। নো গালি, নো মারামারি, ওনলি হালাল পন্থা”
মেঘের বেশ ভালো লাগলো। সবাই একসাথে এসে পা ধরে ক্ষমা চাইতে নিলে। মেঘ ওদের সরিয়ে বলে উঠলো,তুমি এসেছিলে বলেমেঘ : তোমরা তোমাদের ভুল বুঝতে পেরেছ এটাই অনেক।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৩১