তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৭

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৭
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

মিথিলা : আমার রুমে একটা ক্রিম আছে । কোমড়ের ব্যাথা এক ঝোটকায় শেষ করে দিবে । আমি এনে দিচ্ছি ভাইয়া লাগিয়ে দিবে ঠিকাছে ।
এই বলে তারা মেহতাব আর মেঘ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি রুম থেকে চলে এলো । বের হওয়ার সাথে সাথে শাম্মী বলে উঠে ,
শাম্মী : ভাইয়া ভাবির কোমরে ক্রিম লাগিয়ে দিবে । How romantic ! ভাবতেও লজ্জা লজ্জা লাগে । ( লজ্জামাখা হাসি দিয়ে )

শাম্মীর এমন কথা বার্তায় সিমরান আর মিথিলা হেসে দেয় । আর মিথিলা বলে উঠে ,
মিথিলা : আমার হবু দুলাভাইকে বলবো যাতে তোর কোমর সহ হাঁটুতেও মলম লাগিয়ে দেয় বুদ্ধিতো সব হাঁটুর তোলায় এসে পড়েছে । খালি উল্টোপাল্টা কথা গাধা একটা ।
শাম্মী মিথিলার কথার প্রতিউত্তরে রাগ নিয়ে বলে উঠলো ,
শাম্মী : গাঁধী হতে পারি তবে গাধা নই ।
মিথিলা : তোকে নিয়ে পারা যাবে না । ঠিকিই বলেছিস কিন্তু তোর সাথে তুলনা করা মানে গাধার স্ত্রীকে অপমান করা ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সিমরান : গাঁধী মানে গাধার স্ত্রী বেশ বলেছিস আপু ।
শাম্মী : চুপ থাক সিমরান । ( রাগ দেখিয়ে )
এই সব বলে তারা ক্রিম আনতে রুমে চলে যায় । অন্যদিকে সিয়াম , সৌরভ আর সামির তাদের কাজ সেরে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই সবাই তাদের পায়ের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসতে থাকে । এতে তাদের বেশ অদ্ভুত লাগে । তারা তাদের পায়ের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে তাদের পায়ে জুতো নেই । তাদের খেয়ালই ছিল না । সবার এমন হাসি মজা দেখে সৌরভ মডেলদের মতো ক্যাট ওয়াক করে হেঁটে সামনে যেতে থাকে । তা দেখে সিয়াম বলে উঠে ,

সিয়াম : তুই আবার নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চাস নাকি ? ( ভ্রু কুচকে )
সৌরভ : নিউ ট্রেন্ড হয়ে যাবে । মানুষ যা দেখে তাকেই ট্রেন্ড মনে করে । সম্মান রাখতে চাইলে অনুসরণ কর ।
তখনি কিছু মেয়ে সামির এর দিকে এগিয়ে আসে আর একটা মেয়ে সামির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে , ” ভাইয়া ওয়াশরুম যাতে নংরা না হয় তাই জুতো পড়েন নি নাকি ? ( হেসে দিয়ে )

সামির : নাহ বোন । আজ শহিদ দিবস পালন হচ্ছিল টয়লেট এ তাই আর কি সম্মান প্রদর্শন করছিলাম খালি পায়ে ডুকে । তোমরা চাইলে যেতেই পারো আমরা কিছু মনে করব না ।
সামির এর কথায় মেয়েগুলো নিজেদের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । তারা এই উত্তরের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না । তাদের কে মুরগি বানিয়ে দিলো ।
ততোক্ষনে সামির আর সিয়াম দুজনেই সৌরভ কে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে ।

মিথিলা , শাম্মী আর সিমরান একজন স্টাফকে দিয়ে কোমড়ের মলম টা পাঠিয়ে দেয় । তা দেখে শাম্মী বলে ওঠে ,
শাম্মী : আপু আমরা দিলে কি হতো ?
সিমরান : কী আর হতো ? ভাইয়া আমাদের বলতো ভাবীকে দিয়ে দিতে ।
শাম্মী : ওহ তাহলে চল গিয়ে বাকি সিন টুকু দেখে আসি ।( মুচকি হেসে )
শাম্মীর কথা শুনে মিথিলা ওদের দুজনকে বলে ওঠে ,
মিথিলা : নো এরকম হবে না । চল নিচে যাই ।

এই বলে শাম্মী আর সিমরানকে টেনে নিচে নিয়ে যায় মিথিলা । এতে অবশ্য তারা রাগ করেছিলো। কিন্তু মেহতাবদের একান্ত টাইম স্পেন্ড করা উচিত এইভেবে তারাও চলে আসে ।
অন্য দিকে মেহতাব ক্রিম টা হাতে নিয়ে মেঘের কোমরে লাগাতেই মেঘের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো মেঘের বেশ অস্বস্তি হচ্ছে । মেহতাবের প্রতিটি স্পর্শে মেঘ কেঁপে কেঁপে উঠছে । তা দেখে মেঘ কে উদ্দেশ্য করে মেহতাব বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোমার কি অসুবিধা হচ্ছে নাকি ?
মেঘ : উহুম । একটু অদ্ভুত লাগছে জানি না কেনো ?
মেহতাব : তুমি আবার ভালোবেসে ফেললে নাকি আমাকে ? ( ভ্রু কুচকে )
তখনি মেহসান রুমের ভিতর প্রবেশ করলো । মেহসান পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারলো সে আবার ভুল টাইমে এন্ট্রি করেছে ।

মেহতাব : ওকে ভালো করে লাগিয়ে দিয়েছি । আর তোমার জন্য এখানে খাবার নিয়ে আসছি ?
মেঘ : না আমি যেতে পারবো আপনি শাওয়ার নিয়ে নিন ।
মেহতাব : Are you sure ?
মেঘ : হুম ।

মেঘের কথা শেষে মেহতাব একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে মেহসান কে বললো ,
মেহতাব : মিথিলাদের বলে দিবি মেঘকে নিয়ে নিচে যেতে । আর সৌরভ দের আমার রুমে পাঠিয়ে দিস ।
মেহসান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো । মেহতাব আর সময় নষ্ট না করে ওয়াশরুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলো । তখনি রুমে হুল্লোড় পার্টির সবাই প্রবেশ করে। একসাথে ডুকতে গিয়ে সৌরভ পরে যেতে নিলেই মিথিলা সৌরভের কোমড় ধরে ফেলে । সেখানে মুহূর্তেই রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায় । সৌরভ মিথিলার দিকে তাকিয়ে আছে আর মিথিলা সৌরভের দিকে তা দেখে সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে । তাদের নিরবতা ভেঙে সিয়াম বলে উঠে ,

সিয়াম : এমন ভাবে তাকিয়ে আছে দুজনে যেন এখানে রোমান্টিক শুটিং চলছে । কিন্তু ডিরেক্টর ভুলে নায়ককে নায়কার চরিত্রে দিয়ে দিয়েছে আর নায়কাকে নায়কের চরিত্রে । স্ক্রিপ্ট লেখার সময় বানান বেশ ভুল হয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে । ( মুখ টিপে হেসে )
সিয়ামের কথায় সকলে হেসে সহমত জানায় । সিমরান বলে উঠে ,
সিমরান : ডান চোখ টা লাফাচ্ছে আজ কিছু তো হবে । ( মুচকি হেসে )
সবার এমন কথাবার্তায় সৌরভ আর মিথিলা ভরকে যায় । নিজেদের ধাতস্ত করে সৌরভ সকলের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে ,

সৌরভ : জনগন পরিবেশকে এভাবে দূষণ কেনো করিতেছো তোমাদের ময়লা ‍কথাবার্তা দ্বারা । এখানে ময়লা কথা বলা নিষিদ্ধ ।
রৌফ : দোস্ত ময়লা আবার কথাবার্তা হয় নাকি ? ( হেসে )
রৌফের কথায় সবাই একটু হাসাহাসি করে । সবার নজর হঠাৎ মেঘের দিকে যায় । মেঘ তাদের কথাবার্তায় হাসছে । তা দেখে সবাই একটু লজ্জা পায় । তখনি শাম্মী বলে উঠে ,

শাম্মী : ভাবী মলম লাগিয়েছো ? এখন কেমন লাগছে ?
মেঘ : হুম ভালো । কোমড়ের ব্যাথা একটুও নেই ।
তা শুনে বাকিরা একসাথে জিজ্ঞেস করে উঠলো , ” কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছে মেঘ ভাবী ”
শাম্মী হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ালো ।

মেঘ : ঘাবড়ানোর কারণ নেই তেমন কিছু হয়নি । তোমাদের কথাবার্তা সব ব্যাথা ভুলিয়ে দিয়েছে । ( হেসে )
এতে সবাই আরেকদফা লজ্জা পেলো । তারা সবাই কিছুক্ষণ এইসব নিয়ে কথা বলে নিচে চলে গেলো । সৌরভ আর তার বাকি বন্ধুরা মেহতাবের আসার জন্য সোফাতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো ।
মেহতাব তখনি একটা কালো রঙের শার্ট আর প্যান্ট পরে বের হলো ওয়াশরুম থেকে । সৌরভদের দেখতে পেয়ে বললো , ” কাল ফিরে যাচ্ছি আমরা ”

হঠাৎ ফিরে যাবার কথা শুনে সবাই একসাথে বিষম খেয়ে উঠলো । সৌরভ বলে উঠলো , ” কালকেই যেতে হবে ”
তারা সবাই মেহতাব আর মেঘকে সেটেল করার মিশন সম্পূর্ন করেই যাবে । তাই তারা যাওয়ার জন্য বেশ আগ্রহ দেখায় না । আর মেহতাব চলে গেলে সেটাতো সম্ভবই নয় । তাই রৌফ চোখের ইশারায় সবাইকে তার কথায় হ্যাঁ মিলাতে বলে দেয়। সবার তার ইঙ্গিত বুঝতে কষ্ট হয় না । মেহতাব তাদের ফিসফিস করতে দেখে বলে ওঠে ,
মেহতাব : তোরা এমন বিহেভ কেনো করছিস ? ( ভ্রু কুচকে )

রৌফ‌ : কি করি দোস্ত কালকেই যাইতে হইবো তাহলে ভাবীর সারপ্রাইজ ডিনার এর কি হইবো ।
এই বলে রৌফ সিয়ামকে ধরে কান্না করতে থাকে । রৌফের কথা শুনে মেহতাব সহ উপস্থিত সকলে বেশ অবাক হয় । রৌফ সৌরভ আর বাকিদের দিকে চোখ মারে সবাই তার প্লান বুঝতে পারে ।
মেহতাব : কাদের সারপ্রাইজ ডিনার ? ( অবাক ভঙ্গিতে )
সামির : কার আবার তোর আর মেঘের । মেঘ তোকে সারপ্রাইজ দিবে তাই আমাদের বলতে নিষেধ করেছে তাই বলিনি ?

মেহতাব এই কথা শুনে বেশ অবাক হয়। কিন্তু নিজেকে ধাতস্থ করে বলে , ” মেঘ ? কখনই না । It’s impossible . I don’t believe ”
সিয়াম : তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে । মনে তো পপকর্ন ফুটছে ।
মেহতাব : যাই হোক । I’m not interested .
সৌরভ আর সামির তা দেখে নিজেরা মেহতাব আর মেঘ সাজে আর তাদের অভিনয় করতে শুরু করে । সৌরভ সামির কে বলে উঠে ,

সৌরভ : মেঘ তোমার সেই এক চিলতে হাসি আমাকে তোমার দিকে আকৃষ্ট করে । ( চোখের অনেকগুলো পলক ফেলে )
সামির : কিন্তু আমরা তো নিজেদের ফিলিংস বুঝতেই পারি না । আমাদের প্রজন্ম আসবে কি করে ! ( মেয়েদের নেকা কণ্ঠে )
মেহতাব তাদের এইসব কথা শুনে বেশ বিরক্ত হয় । বিরক্ত সহিত সোফা থেকে একটা বালিশ ছুঁড়ে মারে তাদের দিকে ।

সিয়াম বালিশ টাকে আদর করে সামির এর কোলে দিয়ে বলে , ” এই নিন আপনাদের প্রজন্ম যা ২০৮০ সালে জন্মেছে । ফিলিংস বুঝতে দেরি হয়ে গেলো কিনা । ”
সিয়ামের এমন কথা বার্তায় উপস্থিত সবাই উচ্চস্ব‍রে হেসে দিলো । মেহতাব রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো ,

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৬

মেহতাব : ওভার একটিং বন্ধ কর । আমি গেলাম বাই । ( রাগ দেখিয়ে )
এই বলে মেহতাব রুম থেকে চলে গেলো । আর সিয়াম বালিশটা নিয়ে পিছনে আসতে আসতে বললো ,
সিয়াম : আপনার প্রজন্ম নিয়ে যান ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৮