আমার তুমি পর্ব ৩৮

আমার তুমি পর্ব ৩৮
জান্নাত সুলতানা

-“আমার বোন আগেও কষ্ট পেয়েছ রাহাত।
আর এখন দাদি।
কবে ওর আর পাঁচ টা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন হবে?”
কথা গুলো বলেই আয়না কেঁদে দিলো।রাহাত বউয়ের পাশে বসে।
আয়নার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরো বলতে লাগলো
-“এটা কোনো সমস্যা না।দাদি আগের দিনের মানুষ।

আগের দিনের নিয়ম কানুন মেনে চলে। এসব তো শুধু প্রিয়তা না আমাদের সবার উপর এপ্লাই করে।
প্রিয়তা কে একটু বেশি কড়াকড়ি শাসন করার কারণ ও আছে বয়সে ছোট+দেখতে শুনতে ভালো সহজেই যে কারোর নজর পড়ে।তাছাড়া মা, চাচি, দাদি নিজেও বাহিরে লোকজনের সামনে যাওয়া টা পছন্দ করে না সেখানে প্রিয়তা রোজ স্কুল, কলেজ যাচ্ছে। তাই একটু অপছন্দ করে। দেখবে যখন তোমার মতো লেখা পড়া শেষ আর বাড়ির বাহিরে যাবে না তখন আবার তোমার মতো তোমার বোন কেও আদর করবে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাহাত এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথা গুলো বলেই থামলো।
আয়না আসতে করে বিছানা হতে উঠে গিয়ে সেন্টার টেবিলে থেকে গ্লাসে পানি ভর্তি গ্লাস টা রাহাত কে দিলো রাহাত একটানে সব টা পানি শেষ করে গ্লাস টা নিজ ওঠে যথাযথ স্থানে রাখে।
ফিরে এসে আয়না কে বুকে আগলে নিয়ে আবারও শান্তনা দিয়ে বলল
-“আর মন খারাপ করো না তো।
সব ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।”

আয়নার নাক টানা তবুও শোনা যাচ্ছে। রাহাত বুঝতে পারে আয়না বোন কে প্রচুর ভালোবাসে।আর রাহাত নিজেও জানে সেটা।
রাহাত বেশি কিছু না ভেবে আয়না কে তাড়া দিয়ে বলল
-“দেখি চলো রেডি হও।
সাড়ে এগারো টা বেজে গিয়েছে। বরযাত্রী এসে পড়বে এক টা নাগাদ।”
আয়না উঠে এগিয়ে গিয়ে লাগেজ এর কাছে নিচে বসতে নিলেই রাহাত তৎক্ষনাৎ বসা ছেড়ে উঠে এগিয়ে এসে আয়নার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
আয়না বেচারি মেকি হাসি দিয়ে বলল

-“ভুলে গিয়েছি।
আর হবে না।”
রাহাত কিছু না বলে মুখের ভাব গম্ভীর রেখেই নিজে কাপড় বেড় করে লাগেজ হতে।
আয়নার জন্য শাড়ীর সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিস আয়নার হাতে দিয়ে বলল
-“এগুলো পড়ে এসো।
আমি রেডি করে দেবো।নয়তো একা একা পড়তে কষ্ট হবে।আর এখন মা,চাচি সবাই নিশ্চয়ই বিজি।”
আয়না কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।রাহাত সব সময়ই আয়নার প্রতি যত্নশীল আর এখন যেনো আয়না কনসিভ করার পর আরও দিগুণ হয়েছে সেটা।

সাদনান ফোনে কথা বলছে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। রুম থেকে ব্যালকনি একদম বরাবর। সাদনান ফোনে কথা বলছে ঠিক তবে দৃষ্টি তার রুমে শাড়ী পড়তে থাকা বউয়ের উপর।
প্রিয়তা শাড়ীর কুঁচি গুলো হাতে ভাঁজ করে নিচ্ছে। কিন্তু শাড়ী টা বেশ ভারী আর মোটা হওয়ার ফলে বারবারই কুঁচি গুলো ঠিক ঠাক হাতে ভাঁজ নিতে পারছে না। এদিকে সাদনানও রেডি হয়ে গিয়েছে।
প্রিয়তা বিরক্তে চোখ মুখে।চার, পাঁচ টা কুঁচি নিয়ে সেগুলো কোনো রকম আঁচল উপরে তুলে গুঁজতে নিলেই একটা শক্ত হাত বাঁধা প্রদান করলো।

প্রিয়তা মাথা উঁচিয়ে সাদনান কে দেখে সামন্য লজ্জা পেলো।তবে পরক্ষণেই মনে পরে এখন লজ্জা পেলে চলবে না।তাই লজ্জা মনে চেপে রেখেই কপালে বিরক্তিকর ছাপ ফেলে বলল
-“একটু কুঁচি গুলো ভাঁজ করে দিন হচ্ছে না।”
সাদনান প্রিয়তা কথা গুলো বলার আগেই কুঁচি দিয়ে সেগুলো কোমড়েও গুঁজে দিলো।
প্রিয়তা দ্বিতীয় বারের ন্যায় আবারও কুঁকড়ে যায়। এ-র মধ্যে সাদনান নিচে বসে কুঁচি গুলো সুন্দর করে ধরে থেকে প্রিয়তা কে বলল

-“উপরের দিক টা দেখো।”
প্রিয়তা দেখলো।তৎক্ষনাৎ চোখে এলো অনাবৃত কোমড় সহ বুকের কিছু টা অংশও দৃশ্যমান।
প্রিয়তা চট করে আঁচল ঠিক ঠাক করে নিলো।সাদনান নিজেও ওঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের ঘড়ি পড়ে আর সাইডে দাঁড়িয়ে প্রিয়তা নিজেও হাল্কা সাজুগুজু করে নেয়।
যতটুকু সাজ বিয়ে বাড়িতে চলনসই।

প্রিয়তার নিজেরও বেশি সাজতে বেশি ভালো লাগে না তারমধ্যে সাদনান এর কড়াকড়ি নিষেধও আছে। বেশি সাজগোজ না করতে তবে সেটা শুধু বাহিরে।
সাদনান রেডি হয়ে আগে নিজে বেড়িয়ে গেলো যাওয়ার আগে অবশ্য বলে গিয়েছে সারা বা মাইশা কে পাঠাবে।বিয়ে বাড়ি কে কোথায় আছে আর বিয়ের খবর টা যদি কারোর কানে যায় তবে ঝামেলা হবে।তবে বেশি দিন এই লুকোচুরি চলবে না মাস তিন এক পর প্রিয়তার আঠারো হবে তখন অনুষ্ঠান করে সবাই কে জানিয়ে দিবে।

রিধির বিয়ের সাজ কমপ্লিট। সাজানো শেষ একবার নিজে কে। রিধি দেখতে একটু ভিন্ন রকম সুন্দর। যে কেউ এক দেখায় মায়ায় পড়বে।মুখ টা একদম মায়ায় ভরপুর সেখানে কৃত্রিম সাজ আরও দিগুণ সুন্দর দেখাচ্ছে। তবে এতো সুন্দর মুখ টা কেমন মলিন হয়ে আছে।তবে যেটা শুধু রিধি দেখতে পাচ্ছে।সবাই রিধির রূপের প্রশংসা করছে।কিন্তু কেউ ভিতরে তীব্র যন্ত্রণা টা দেখতে পাচ্ছে না।যে টা রিধি কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। চিৎকার করে কেঁদে বলতে মনে চাচ্ছে “আমি বিয়ে করবো না,করবো যদি পাত্র ওয়াজিদ হয়ে তবেই” রিধির এমন ভাবনা চিন্তায় নিজের উপরেই হাসি পেলো।

এ-র মধ্যে সবাই বাহির হতে বর এসছে বর এসছে বলে হৈ-হুল্লোড় কানে এলো।কম বেশি সবাই চলে গেলো। রুম একদম ফাঁকা থাকার মধ্যে সারা,প্রিয়তা আয়না।
সারা কেও রেডি করে রেখেছে। রিধির বিয়ের পর পরই এনগেজমেন্ট টা হবে।
সারা কে একটা জাম কালার শাড়ী পড়িয়েছে। দেখতে মাশাআল্লাহ। ছোট নাদুসনুদুস দেহখানা ঝলমল করছে। শাড়ী টা বেশ মানিয়েছে।

দরজা হতে রাহান সব টা পর্যবেক্ষণ করে।কিন্তু পরক্ষণেই বোনের দিকে নজর যেতে মন টা খারাপ হয়ে যায়।একটু পরই বোন তার পর হবে।মিনিট সময় ব্যাবধান হয়তো।বেশী ডিফারেন্স না রাহান আর রিধির বয়সের হবে হয়তো এই দেড় বছর এর মতো। বোন তার সাথে ছিল না পাঁচ বছরেরও বেশি সময় কিন্তু তাদের মাঝে তবুও ভালোবাসা কমতি ছিল না।

না আগে ছিল তবে এদিকে এসে বোন টা তার কেমন হয়ে গেলো একদম চুপচাপ আগের মতো আর কথা চঞ্চলতা নেই।এতে অবশ্য রাহান প্রথম মন খারাপ করলেও পরে সব টা ওয়াজিদ এর কাছ থেকে ঘটনা জানতে পেরে ওয়াজিদ কে মারতে গিয়েছিল।পরে অবশ্য ক্ষমাও চেয়েছে। সে জানে বোন তার ভীষণ ভালোবাসে ওয়াজিদ কে তাই তা বোনের মন আর ভালো করার চেষ্টা করে নি।বোনের মন সব সময় যাতে ভালো থাকে সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

-“আপু চল।”
রাহান বলল।রিধি উঠে এলো রাহান বোন কে আগলে নিলো।রুম হতে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো
পেছন পেছন আরও কিছু মানুষ এলো। রিধি কে মাইশা আয়ান রাহান বিয়ের ব্যবস্থা যেখানে করা হয়েছে সেখানে নিয়ে এলো তাদের সাথে সাথে সবাই এলো।

রিধির মাথায় ঘোমটা একটু বড় করেই দেওয়া। তাই আশেপাশের জিনিস খুব একটা নজরে আসে না। তবে ইচ্ছে থাকলে দেখতে পারবে কিন্তু রিধির কিছু দেখতে ইচ্ছে করছে না। তাই চোখ নিচু রেখেই রাহানের হাত ধরে লিভিং রুমে বর বউয়ের জন্য বরাদ্দকৃত সোফায় বসিয়ে দিয়ে রাহান বোনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
রিধি পাশে বসা মাত্রই খুব চিরপরিচিত একটা সুগন্ধি নাকে ভেসে এলো।
তবে এতো মানুষের ভীড়ে পাশে বসা তার না হওয়া বরের দিকে তাকাতে সাহস পেলো না।

-“কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
আমাদের আরও একটা শুভকাজ আছে।”
কাজি সাহেব সম্মতি পেয়ে বিয়ের সব নিয়ম কানুন করতে লাগলো।
তবে কাজের মুখে অনাকাঙ্খিত নাম শুনে চমকে উঠলো কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই রিধি পাশে বসা বর রূপে ওয়াজিদ কে এক পলক দেখে সাথে সাথে চোখ নামায়।

এদিকে কাজিও কবুল বলতে মেয়ে কে তাড়া দিচ্ছে। যা রিধির কান অব্দি যাচ্ছে না।
রিধির পক্ষ হতে কোনো জবাব না পেয়ে অনেকেই ফিসফিস করতে লাগলো।পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে ওয়াজিদ নিজের শক্ত হাত টা রিধির কোমড় স্পর্শ করে।
রিধি তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল সম্মতি ফিরে পেতেই বুঝতে পারে পরিস্থিতি বিগড়ে যাচ্ছে তার মধ্যে ওয়াজিদও ফিসফিস করে বলে উঠলো

আমার তুমি পর্ব ৩৭

-“সারপ্রাইজ পেয়ে এতোটাই চমকে গিয়ছো,যে এখন কবুল বলতে ভুলে গিয়েছো!
ফাস্ট, বলো, বলো।”

আমার তুমি পর্ব ৩৯