আমার তুমি পর্ব ৪৫

আমার তুমি পর্ব ৪৫
জান্নাত সুলতানা

প্রিয়তা নিজের হাতের প্রেগন্যান্সির কিট দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাম চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু দৃষ্টি তার অনড়।
ঠোঁট দু’টো তিরতির করে কাঁপছে। কোনো রকম ওয়াশ রুমের দরজা খোলে বেড়িয়ে এসে হাতের যন্ত্র টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বিছানায় বসে পড়লো।

আলতো করে নিজের ডান হাত টা পেটে ছোঁয়াতেই টুপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে বাম চক্ষু হতে।
অতঃপর কিছু বিরবির করতে করতে বিছানায় শুয়ে ঘুমের দে-শে তলিয়ে গেলো।
রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটার মতো বাজে।সাদনান মাত্রই রুমে এলো।
হাতের ঘড়ি খোলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।গায়ের ঘামে ভেজা জবজবে সফেদা রঙের পাঞ্জাবি গা হতে একটা টানে খোলে সোফায় রাখে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দৃষ্টি তার বউয়ের দিকে।
যে এখন দুই হাতের কনুই ভাঁজ করে ঘুমিয়ে আছে।
সাদনান সে দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে ব্যালকনি হতে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে প্রায় আধঘণ্টা পর বেড়িয়ে এলো গায়ে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের টাওয়াল পেঁচিয়ে। বাম হাত কোমড়ে রেখে ডান হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো ঝেড়ে নিচ্ছে।

সাদনান এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো ঘন্টাখানেক আগে রাখা প্রিয়তার সেই যন্ত্র টা যেটাই স্পষ্ট লাল দুই টা দাগ জ্বলজ্বল করছে।
সাদনান কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা নিজের হাতে নিলো।চোখ দুইটা লাল হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
সাদনান নিঃশব্দে সেটা আগের স্থানে রেখে দিলো।
ড্রেস চেঞ্জ করে বউয়ের পাশে শুয়ে বউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তা হাল্কা কেঁপে উঠল তবে তন্দ্রা ছুটে না।নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে গেলো।

সাদনান আবারও বউয়ের কপালে চুমু খেলো আর অমনি প্রিয়তা ধপ করে চোখ খুলে ফেলো।সাদনান কে নিজের পাশে দেখে ছাড়িয়ে উঠে বসলো।
সাদনান নিজেও ওঠে বসে।সে অপলক বউয়ের ছোট গোলগাল মুখ খানার দিকে তাকিয়ে রইলো। যে চোখ দুই টায় তার জন্য অভিমান স্পষ্ট।
এই অভিমান সে কবে শেষ করতে পারবে?কবে ভাঙতে পারবে এই অভিমানের পাহাড়?

-“তাড়াতাড়ি ফিরলেন?”
-“কাজ শেষ।”
প্রিয়তা মুখ টা আরও ছোট হয়ে এলো।কাজ শেষ হয়েছে তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এসছে। লোক টা কেন অন্য কিছু বললো না! চাইলেই তো অন্য কিছু বলতে পারতো।
প্রিয়তা বেশি কিছু আর ভাবলো না।
নুইয়ে রাখা মাথা টা উঁচু করে জানতে চাইলো

-“খাবার?”
-“খেয়ে এসছি।”
সাদনান এর ছোট জবাব।
প্রিয়তা নিজেও ছোট করে বলল
-“ওহ্।”
অতঃপর ড্রেসিং টেবিলের উপর দৃষ্টি যেতেই দেখলো যন্ত্র টা সেভাবেই পরে আছে। যেভাবে সে রেখে এসছিল।যা দেখে মন টা দিগুণ খারাপ হলো। লোক টা এতো অমনোযোগী?
পাশ ফিরে শুয়ে পড়তে চাইলো।

কিন্তু সাদনান তা হতে দিলো না। নিজের শক্ত হাতের সাহায্য টেনে নিয়ে আসে নিজের বক্ষে।শক্ত করে চেপে ধরে প্রিয়তা ছুটতে চাইলো না কোনো রকম শব্দও করলো না। পরে রইলো সেভাবে। সাদনান বউয়ের এলোমেলো চুলের ফাঁকে চুমু খেলো।
মৃদু স্বরে জানতে চাইলো

-“চুল বিনুনি করো নি কেন?”
-“ইচ্ছে করে নি।”
সাদনান হাসলো তবে শব্দহীন হাসি।বউয়ের অভিমান এবার বেশ জোড়ালো কিভাবে ভাঙ্গবে?এটা ভেবে একটু চিন্তিত হলো।থমকে মুখ করে
বউ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো এগিয়ে এসে চিরুনি নিয়ে প্রিয়তা কে পাশ ফিরিয়ে বসিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলো।

প্রিয়তা চুপ করে রইলো। সাদনান এর একটু কষ্ট হলো লম্বা চুল গুলো বিছানায় বসে আঁচড়াতে। তবে শেষমেশ সফল হলো।লম্বা একটা বিনুনি করে দিলো।
চিরুনী ঢিল ছুঁড়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বউ কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তা তখন চুপ করে রইলো।
তবে ভেতরে ভেতরে ঠিক ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে এলো।রোজকার ন্যায় শরীরে মৃদু কম্পন হলো।তবে শক্ত হয়ে বসে থাকে।সাদনান সব টা অনুভব করতে পারলো।

বউয়ের ঢোলাঢুলা কুর্তি ঘাড় হতে সরিয়ে উন্মুক্ত ঘাড়ে নিজের পুরুষালী শক্ত অধর ছুঁয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল
-“এতো অভিমান করলে চলে!
জানতো কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়!
এই কয়টা মাসই তো।বাবা কে এমপি পদে নিয়োগ করছি আর আমি এমপি পদ হতে পদত্যাগ করছি।”
কথা টা প্রিয়তার কর্নপাত হতেই প্রিয়তা নড়াচড়া করে ছুটতে চাইলো।কিছু বলবে তার আগেই সাদনান আগের চেয়ে দিগুণ চেপে ধরে নিজের সাথে অতঃপর বলল

-“উঁহু, নড়চড় নয়।আগে সবটা বলি।
ওয়াসিফ দেওয়ান মন্ত্রী পদত্যাগ করেছে।সেখানে আমাকে সিলেকশন করা হয়েছে।”
প্রিয়তা এবার অবাক হলো সাথে ভীষণ খুশি। সাদনান এর বাঁধন ততক্ষণে হাল্কা হয়েছে প্রিয়তাও সেই সুযোগে ফিরে জড়িয়ে ধরলো সাদনান কে।সাদনান নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
বউ তার ভীষণ আদুরে একটু আদুরে স্পর্শ করেলেই গলে যায়।

-“এখন বলো, তুমি কেন বলো নি আমি ব
-“আপনি বাবা হবেন আর আমি মা।”
সাদনান বলার আগেই প্রিয়তা বলে ফেলে।সাদনান বউয়ের কণ্ঠে স্পষ্ট লজ্জার আভাস পেলো।
প্রিয়তা কথা টা বলেই জোরে জোরে শ্বাস টানে। যা সাদনান কে আরও মাতাল করে।
নিজের সাথে আরও কিছু টা চেপে ধরে বউ কে।
-“আদর চাই!”

সাদনান এর কথার বিপরীতে কোনো জবাব দিলো না তবে আরও নুইয়ে গেলো।সম্মতির লক্ষ্মণ দেখা দিলো।সাদনান এর ভ্রু কুঁচকে এলো।এই মেয়ে তাকে পাগল কেন করছে যদি কোনো সমস্যা হয় পরে।আর বউ এর শরীর এর যা অবস্থা তাকে সামলাতে পারবে তো?
সাদনান কিছু টা চিন্তিত কণ্ঠে জানতে চাইলো

-“সহ্য করতে পারবে?
যদি কিছু হয়?”
-“কিছু হবে না।”
সাদনান বউয়ের এরূপ কথা এমন রোমাঞ্চকর মূহুর্তেও হাসি পেলো। যার একটু গভীর স্পর্শে বারবার মেয়ে মূর্ছা যায় সেই মেয়ে কি বলছে হয়তো নিজেও জানে না।
সাদনান বউয়ের আবদার পূর্ণ করলো।তবে যতটা করলে কোনো সমস্যা হবে না ঠিক ততটাই।

সারা আর প্রিয়তার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে।
প্রিয়তার এখন ভরা পেট নয় মাস চলছে। যেকোনো সময় যা কিছু হতে পারে ডক্টর বলেছে।
আজ শেষ পরীক্ষা প্রিয়তা পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে এলো।শরীর টা ভীষণ খারাপ লাগছে সাথে পেটেও হাল্কা চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে তবে বিষয় টা পাত্তা দিলো না। পরীক্ষা গুলো সহিসালামতে দিতে পেরেছে এতেই খুশি।
সারা প্রিয়তা ভার্সিটির ভবন হতে বেড়িয়ে এলো।আজ তাদের হলে কবির স্যার ছিল ভীষণ সাহায্য করছে প্রিয়তা কে।যতই হোক প্রথম অনুভূতি প্রথম ভালোবাসা হোক না একতরফা তবুও তো ভালোবাসা। যদিও এখন কবির এর সব টা জুড়ে তার বউ আর ছেলে।

প্রিয়তা মাঠের মাঝখানে এসে হটাৎ মাথা টা চক্কর দিয়ে ওঠে। পরে যেতে নিলে সারা নিজের হাতের সব ফেলে আগলে ধরলো প্রিয়তা কে।বাহিরেই ওদের গাড়ী অপেক্ষা করছে।
প্রিয়তা নিজে কে সামলে চোখ গুলো বন্ধ করে রাখলো।ততক্ষণে অনেক মানুষ জড়োসড়ো হয়েছে কেউ কেউ বাতাস দিচ্ছে তো কেউ আবার পানির বোতল এগিয়ে পানি খাইয়ে দিলো।
তবে প্রিয়তার শরীর সায় দিলো না তার পেটে প্রচুর ব্যাথা শুরু হলে নাক মুখ কুঁচকে নিয়ে সারার বাহু খামচে ধরে কোনো রকম বলল

-“তাড়াতাড়ি গাড়ীতে চল।”
সারা শুনলো। এক হাতে বোরখা হিজাব পরিহিত প্রিয়তা কে আগলে আরেক হাতে প্রিয়তার ফাইল সহ নিজের টা নিয়ে নিলো।

তবে গেইট টপকে যাওয়ার আগে কোথা থেকে যেনো সাদনান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।
এসেই বউ কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।
সাথে তার নিজস্ব সিকিউরিটি তো আছেই।পাশেই একটা মন্ত্রী সভা ছিল আজ সেখানেই ছিল সে।প্রিয়তা কে না জানিয়ে রাখা তার গোপন সিকিউরিটি তাকে পাঁচ মিনিট আগে ফোন দিয়ে এখানকার খবর জানিয়েছে সাদনান ড্রাইভার কে রেখেই দশমিনিট এর রাস্তা চার মিনিটে চলে এসছে হয়তো। পেছন পেছন এসছে তার জন্য বরাদ্দকৃত সিকিউরিটির গাড়ী।

আমার তুমি পর্ব ৪৪

[বলেছিলাম এই পর্বে শেষ করে দেবো।কিন্তু গুছিয়ে আসতে পারলাম না😞।আর গল্পে অনেক গুলো চরিত্র আছে তো কোনো চরিত্র বা কোনো সমস্যা অথবা আমি উল্লেখ করতে ভুলে গেছি নয়তো আপনারা বুঝতে অসুবিধা হয়েছে তেমন কোনো সমস্যা থাকলে জানাবেন আমি সমাধানের চেষ্টা করবো।]

আমার তুমি শেষ পর্ব