আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২০

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২০
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

অতীত________
আবিরের কাদম্বিনী নুপুর পড়ে চঞ্চল পায়ে সারাক্ষণ খান বাড়িতে ছুটোছুটি করতো অথচ আবির সামনে আসলেই তার পা থেমে যেতো, মুখ লুকাতো মায়ের আঁচলের নিচে। আবির খুব চেষ্টা করেছিলো ললনার অভিমান ভা*ঙানোর কিন্তু সে প্রতিবার ই ব্য*র্থ হয়েছিল । পড়তে গেলে, ঘুমাতে গেলে সেই চঞ্চল পায়ের নুপুরের শব্দ আবিরের হৃ*দয় ভে*ঙে চূ*র্ণবিচূ*র্ণ করতো। যেই ছুটোছুটি, যেই চঞ্চলতা সে নিজের চোখে দেখতে পারে না তার শব্দ কানে আসলে আকাশ ভে*ঙে পরতো মাথায় । তাই খুলিয়ে নিয়েছিল মেঘের পায়ের নুপুর ।

দেশছেড়ে যাওয়ার কিছুদিন পূর্বে, তানভিরকে জরিয়ে ধরে দুবছরের জমাটবদ্ধ নীল পাহাড় ভে*ঙে অঝরে কেঁ*দেছিল আবির । বোধশক্তি হওয়ার পর সেটায় ছিল আবিরের প্রথম কান্না। লোকে বলে পুরুষ মানুষের কাঁ*দা নিষে*ধ, কা*ন্না এলেও কাঁদা যাবে না । চাপিয়ে রাখতে হবে তা মনের গহীনে। কিন্তু যখন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে যায় বা নিজের থেকেও প্রিয় ব্যক্তির সাথে দূরত্ব বেড়ে যায় তখন পুরুষ মানুষ চাইলেও নিজেকে শক্ত রেখে, অনুভূতি চেপে রাখতে পারে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তানভির আবিরের সেই ম*রা কান্না দেখে বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে ছিল, কয়েক মুহুর্ত পর আবিরকে জরিয়ে ধরে কয়েকশত বার শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, কি হয়েছে? কি হয়েছে ভাইয়া? কাঁদছো কেন? বলো আমায়…
কিন্তু বাঁ*ধহীন কান্নার ফলে আবির কোনো উত্তর ই দিতে পারছিলো না।

পরক্ষনেই তানভির উপলব্ধি করেছিল, হয়তো দেশ ছেড়ে, প্রিয়জনদের ছেড়ে চলে যাবে তাই এভাবে কাঁদছে। সে আর প্রশ্ন করে নি,চুপচাপ ভাইয়ের কান্নার গভীরতা মাপতে ব্য*স্ত হয়েছিল
আবিরের সেই ক্র*ন্দন স্থির হয়েছিল প্রায় ১ ঘন্টা।কা*ন্নার মাত্রা কিছুটা কমার পর তানভির ধীর কন্ঠে শুধিয়েছিল,
“কি হয়েছে ভাইয়া? এভাবে কাঁদছো কেনো?”
আবির কা*ন্নারত কন্ঠে শুধু বলেছিল,

“আমি ওকে ছেড়ে এতদূর কিভাবে থাকবো?”
গভীর রাত, শান্ত, নিস্তব্ধ একটা পরিবেশে আবিরের এই কথাটা তানভিরের হৃ*দয়ে গিয়ে লেগেছিল। তানভিরের বয়স তখন সবেমাত্র ১৬ তে পরেছে। এতকিছু না বুঝলেও ভাইয়ের কথাটার মানে সে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিল।
তানভির ছোট করে প্রশ্ন করেছিল,

“কে সে?”
আবির তখনও অ*ঝরে কেঁ*দেই চলেছে, গলা খাঁকারি দিয়ে ছোট করে বলেছিল,
“মেঘ”
তানভির বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে ছিল বেশ খানিকক্ষণ । তারপর ভাইকে শান্ত করে, ছাদের ফ্লোরে বসে আবিরের অব্য*ক্ত প্রেমানুভূতি শুনেছিল। তানভিরের কাঁধে ছিল গু*রু দায়িত্ব, একদিকে মায়ের পেটের বোন অন্যদিকে চাচাতো ভাইয়ের নি*র্মল কা*ন্না ।

সবকিছু শুনে শেষমেশ তানভির আবিরের চোখ মুছে, মুচকি হেসে শান্ত কন্ঠে বলেছিল,
“তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া। আমি আছি তো মেঘকে দেখে রাখার জন্য । তোমার ভালবাসা তোমার ই থাকবে। ”
সেই রাতে একফোঁটাও ঘুমাই নি দুভাই। সারারাত জেগে শুধু মেঘকে নিয়েই অধিবেশন করেছিল । এমনকি দেশ ছেড়ে যাওয়ার দিনও আবির তানভিরকে জরিয়ে ধরে শুধু একটা কথায় বলেছিল,
“ওকে দেখে রাখিস, ওর উপর যেনো কেনো আঁচ না পরে। ”

আবির দেশ ছাড়ার পর থেকে মেঘকে দেখে রাখার গুরুদায়িত্ব পরেছে তানভিরের উপর। মেঘ কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, খাওয়া,পড়াশোনা, স্কুল-কলেজ,টিউশন, পছন্দ -অপছন্দ সবকিছু দেখে রাখা ছিল তানভিরের প্রথম কাজ৷ শতব্যস্ততার মাঝেও আবির দিনে কমপক্ষে তিনবার করে তানভিরকে কল দিয়ে শুধু মেঘের খোঁজ নিতো। ৭ বছরে এমন একটা দিন কাটে নি যে আবির মেঘের খোঁজ নেয় নি। তবে গত ৭ বছরে মেঘের কোনো ছবি দেখে নি আবির, তানভির অনেকবার বলেছে, পাঠাতেও চেয়েছিল কিন্তু আবিরের এক কথা, বেঁ*চে থাকলে দেশে ফিরেই মেঘকে দেখবে ।

আবির দেশে ফেয়ার দিন এয়ারপোর্টে আসার পর, তানভির আবিরকে জরিয়ে ধরে কানে কানে বলেছিল,
“আজ থেকে আমি রিলাক্স করবো, তোমার বউ তুমি সামলাবে। ”
আবির মুচকি হেসে বলেছিল,
” বউকে সামলাতেই তো ৬ মাস আগে ফিরতে হলো।”

আবির চেয়েছিল আরও ৬ মাস পর নিজেকে গুছিয়ে একেবারে আসতে কিন্তু হঠাৎ ই অ*নাকা*ঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলো যার ফলশ্রু*তিতে ৬ মাস ওয়েট করা আবিরের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
যেই ছেলের জন্য ছোট্ট কাদম্বিনীর গা*য়ে হা*ত তুলেছিল আবির, যার জন্য তাকে ৯ বছর যাবৎ প্রেয়সীর থেকে দূরে থাকতে হয়েছে সেই জয় নামক ছেলে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছিল মেঘের জীবনে। HSC পর মেঘকে যে কোচিং এ ভর্তি করানো হয়েছে সেই কোচিং এ জয়ও ভর্তি হয়েছিল তা তানভির & আবিরের অজানা ছিল।

জয় মেঘকে দেখার পর থেকে খুব চেষ্টা করছিল কথা বলার জন্য৷ কিন্তু কোনোভাবেই সুযোগ হইতেছিল না। কোচিং থেকে আবিরকে তা জানানোর পর, ছেলের ব্যাচ টাইম চেইঞ্জ করে দিতে বলেছিল আবির। তারপর তানভিরও কয়েকদিন মেঘকে কোচিং এ দিয়ে আসছে এবং নিয়ে আসছে । কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয় নি।

ঐ ছেলে মেঘের ব্যাচ টাইমের আগে- পরে কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আবির তানভিরকে ঐ ছেলে সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলে, দিনশেষে জানতে পারে এই ছেলেই ছোটবেলার সেই জয়। এটা জানামাত্র আবিরের মাথায় র*ক্ত উঠে গেছিলো। ইমার্জে*ন্সি ভি*সা ম্যানেজ করে দেশে ফিরেছে। দেশে ফিরেই ৯ বছরের রা*গ,ক্রো*ধ, আ*ক্রো*শ সবটা ঢেলে জয়কে পিটিয়েছিল আবির ।

বর্তমান _____
তানভির ঘন্টাখানেক মেঘের মাথায় জলপট্টি দিয়েছে কিন্তু জ্বর যেনো কোনোভাবেই কমছে না। হালিমা খান ঘুমিয়ে পরেছিলেন হঠাৎ সজাগ হয়ে তানভিরকে জলপট্টি দিতে দেখে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“কিরে তুই এখনও এখানে? সেই কখন এসেছিস, খাবি না?”
তানভির ছোট করে বললো,

“খিদে নেই। ”
হালিমা খান পুনরায় বললেন,
“আবিরও মনে হয় খায় নি, দুই ভাই মিলে খেতে যা। ”
তৎক্ষনাৎ আবিরের কথা মনে পরলো তানভিরের, বিড়বিড় করে বললো,
“এই রে ভাইয়া কোথায় আছে?”
সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, স্বাভাবিক কন্ঠে মাকে বললো,

” আম্মু একটু পর পর বনুর জ্বর টা চেক করো, সমস্যা মনে হলে আমায় ডেকো। ”
কোনোরকমে কথাগুলো বলে স্প্রীডে বের হলো মেঘের রুম থেকে, এক ছুটে চলে গেলো আবিরের রুমে। কিন্তু আবির রুমের কোথাও নেই, বেলকনিতেও নেই। তানভির রুম থেকে বের হয়ে করিডোর থেকে নিচে দেখলো, নিচেও আবির নেই।
তানভির দৌড় দিলো ছাদের দিকে, ছাদের দরজা থেকেই চোখে পরলো আবির সিঙ্গে*ল সোফাতে বসে আকাশের পানে মুখ করে বসে আছে।

এক মুহুর্ত দেরি না করে তানভির বৃষ্টির মধ্যেই আবিরের কাছে দৌড়ে গেলো।
ছোটাছুটির ফলে তানভিরের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, কয়েকবার ঘনঘন শ্বাস ছেড়ে আবিরকে ডাকলো,
“ভাইয়া… বৃষ্টির মধ্যে বসে আছো কেন? রুমে চলো!”
আবির আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখেই শক্ত কন্ঠে উত্তর দিলো,
“তুই রুমে যা। ”
তানভির পুনরায় বললো,

“প্লিজ ভাইয়া, রুমে চলো। কি পাগলামি শুরু করছো তোমরা?”
আবির ক্র*ন্দিত কন্ঠে জবাব দিলো,
“আমার জন্য মেঘের আজ এই অবস্থা। আমার ম*রে যাওয়া উচিত। ”
আবিরের অবিদিত কথায় তানভিরের প্রচন্ড রা*গ হলো, রা*গে ফুঁস*তে ফুঁ*সতে বললো,
“তোমাদের ম*রতে হবে না আমিই ম*রে যায় তাতেই তোমাদের শান্তি হবে ”
আবির ধ*মকের স্বরে বললো,

“তানভির ”
তানভির ধীরকন্ঠে বললো,
“আমাকে ধ*মকাচ্ছো কেন। বনু না হয় অবুঝ, পাগলামি করে ফেলছে, তাই বলে তুমি কেনো পাগলামি করছো ভাইয়া? তোমার কি এমন কাজ করা মানাচ্ছে?”

একটু থেমে রাশভারি কন্ঠে পুনরায় বললো,
“রাকিব ভাইয়া তোমার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে আমায় কল দিয়েছিল। তুমি যদি স্ট্রং না থাকো তাহলে মেঘকে কে সামলাবে বলো? তুমি তো জানো ভাইয়া, আমার জীবনে মেঘ আর তুমি সবচেয়ে কাছের মানুষ৷ তোমার বা মেঘের কিছু হলে আমি বাঁ*চতে পারবো না৷ প্লিজ পা*গলামি করো না। রুমে চলো। ”

প্রথম কথা গুলো শক্ত কন্ঠে বললেও শেষ কথাগুলো বলার সময় তানভিরের গলা ভিজে আসছিলো।
আবির যেনো বিগ্রহের ন্যায় বসে আছে। তানভির বেশ কিছুক্ষণ শান্ত কন্ঠে আবিরকে বুঝিয়ে রুমে নিয়ে গেছে। আবিরকে শাওয়ার নিতে ঢুকিয়ে তানভির ও নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। আবিরের মুখোমুখি তানভির বসেছে। ছাদে অন্ধকার থাকার কারণে আবিরের অভিব্যক্তি বুঝা যায় নি। আবিরের চোখ- মুখ ফুলে আছে, দেখে বুঝায় যাচ্ছে বেশখানিকটা সময় কেঁ*দেছে তারউপর বৃষ্টি । এখনও চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে।

তানভির আবিরের হাতটা সামনে এনে এপাশ- ওপাশ ঘুরিয়ে দেখলো। হাতের অবস্থা খুব খারাপ। তানভির ঔষধের বক্স থেকে একটা মলম বের করে অল্প অল্প করে লাগিয়ে দিচ্ছে, আবির দাঁতে দাঁত চেপে তা সহ্য করছে। গত ১ ঘন্টা যাবৎ আবিরকে বুঝিয়ে তানভির রুমে এনেছে, এখন কোনোভাবেই রিয়েক্ট করা যাবে না৷ তানভির যথেষ্ট শান্ত আর হাস্যোজ্জ্বল একটা ছেলে তবে রা*গ উঠলে কেমন যেন গ*ম্ভীর হয়ে যায়।
আবিরের হাতে মলম লাগিয়ে তানভির আস্তে করে বললো,

“ব্যান্ডেজ করে দিবো ভাইয়া?”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিলো,
“ব্যান্ডেজ লাগবে না। খোলা থাকলে তাড়াতাড়ি ঠিক হবে । ”
তানভির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“ভাইয়া খাবে না?”
আবির গ*ম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“না”

তানভির কোমল স্বরে বললো,
“প্লিজ ভাইয়া চলো না খেতে যাই।”
আবির নিরেট কন্ঠে জানালো,
“আমি খাবো না বললাম তো। তুই খেয়ে নে”

তানভির বুঝতে পারলো ভাইকে জোর করে কোনো লাভ হবে না । তাই চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। আবিরের বাকি রাত কাটলো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ভারী বর্ষণ কমেছে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও এক সময় কমেছে । ফরজের নামাজ পড়ার জন্য আবির বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে ফিরেছে ঘন্টা দুয়েক পর। প্রতিদিন সকাল বেলা নিচে রান্না আর পেপার পড়ার ধুম লাগলেও আজ ড্রয়িংরুম সম্পূর্ণ ফাঁকা। আবির দীর্ঘ পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলো। মেঘের রুমে সবাই হুমড়ি খেয়ে পরেছে।

আলী আহমদ খান, মোজাম্মেল খান,ইকবাল খান থেকে শুরু করে বাড়ির তিন কর্তী, এমনকি মীম আদি আর তানভিরও উপস্থিত সেখানে।
মেঘ শ*ঙ্কিত হয়ে রইলো। সবাই যেনো একজোটে মেঘের উপর হা*মলা চালাচ্ছে। মেঘ সবার দিকে বার বার তাকাচ্ছে শুধু।
মোজাম্মেল খান রাগান্বিত কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
“বৃষ্টিতে ভিজতে গেছিলি কেনো? বৃষ্টিতে ভিজলে যে জ্বর উঠবে, সেই বোধশক্তি কি তোর হয় নি এখনও?”
ইকবাল খান মোজাম্মেল খানকে শান্ত করতে ব্যস্ত।
এরমধ্যে আলী আহমদ খান ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,

” এখন এক মিনিট নষ্ট করা একটা দিন নষ্ট করার সময়। ইচ্ছেকৃত জ্বর বাঁধানো কি ঠিক হয়েছে তোমার?”
কথাটা শান্ত স্বরে বললেও এই কথার অভিপ্রায় অষ্টাদশীর বোধগম্য হলো।
মালিহা খান, আকলিমা খানও যেনো একজোটে বিলাপ শুরু করেছে । যে যার মতো প্রশ্ন করছে, কোথা থেকে ভিজে আসছিস? কখন গেছিলি? ভিজলি কেনো? আরও কত কত প্রশ্ন ।।

মেঘ নির্বাক চোখে শুধু তাকিয়ে আছে। সে কি করে বলবে,
“আবির ভাই অন্য কোনো মেয়ের প্রতি কনসার্ন, এইটা সহ্য করতে না পেরে এমনটা করেছে। ”
হালিমা খান কোমল কন্ঠে বললেন,
“তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি মা? অল্প খেয়ে নে প্লিজ!”

মেঘ সবার উপরে উঠা রা*গ যেনো মায়ের উপর ঝা*ড়ল, কাঁপা কাঁপা গলায় চিৎকার দিয়ে বললো,
“বললাম তো খাবো না, তেঁতো লাগে সবকিছু । ”
কথাটা ঠিকমতো শেষও করতে পারলো না। আবির হাজির হলো রুমে। মেঘের দৃষ্টি আবিরের দিকে পরতেই অকস্মাৎ কম্বল টানলো কপাল পর্যন্ত ।
আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,

” এখানে এত ভিড় করার মতো কি হয়েছে? অসুস্থ রোগী দেখতে এসেছো, দেখে চুপচাপ চলে যাবে। রোগীকে এত প্রশ্ন করছো কেন? ডাক্তার বলেছেন, ওরে কোনোপ্রকার চাপ না দিতে৷ অনুগ্রহ করে ওকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও । ”

একদমে কথাগুলো বললো আবির। ইকবাল খান ভাতিজার রা*গ বুঝতে পেরে শান্ত কন্ঠে বললেন,
” না মানে মেঘ জেনে-বুঝে বৃষ্টিতে কেনো ভিজেছে এটায় সবাই জিজ্ঞেস করছিলো। আর কিছু না ”
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,
“ওর ইচ্ছে হয়েছে বৃষ্টিতে ভেজার তাই ভিজেছে। তাছাড়া জ্বর হলে মাথা ফ্রেশ হয়। এখন সবাই নাস্তা করতে যাও। ”
মেঘ কম্বলের নিচ থেকে ভেঙচি কেটে মনে মনে বললো,

“যার জন্য করি চু*রি সেই বলে চো*র।আপনি আমায় বাধ্য করেছেন বৃষ্টিতে ভিজছে আর এখন সবার সামনে সেটা আমার ইচ্ছে বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। বাহ হি*টলার বাহ! কি বু*দ্ধি আপনার! ”
বাড়ির কেউ কোনো কথা বললো না। চুপচাপ সকলে রুম থেকে বের হতে লাগলো।
আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“তানভির, মেঘের জন্য নাস্তা নিয়ে আয়। ”
হালিমা খানও চলে গেলেন মেঘের নাস্তা রেডি করতে।
মেঘ তখনও কপাল পর্যন্ত কম্বল টেনে রেখেছিলো। রুম নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় মেঘ ভেবেছে সবাই চলে গেছে। তাই এক আঙুলে আস্তে করে কম্বল টা কপাল থেকে নামাতেই চোখ পড়লো আবির ভাইয়ের শাণিত চোখের দিকে৷
মেঘ আর আবিরের চোখাচোখি হতেই আবির একটানা দুবার ভ্রু নাচালো। আবির ভাইয়ের এমন কান্ডে মেঘ হেসে ফেললো, তৎক্ষনাৎ মনে পরে গেলো, ও তো আবির ভাইয়ের উপর রে*গে আছে। অকস্মাৎ মুখ গোমড়া করে ফেললো মেঘ।

আবির চেয়ার টেনে মেঘের বিছানার পাশে বসে মৃদু কন্ঠে শুধালো,
“এখন কেমন লাগছে? জ্বর কি কমেছে? ”
মেঘ ওষ্ঠ উল্টালো কিছুই বললো না।
আবির সহসা মেঘের কপালে হাত রাখলো সাথে একবার গলায় হাত রেখে সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে হাত সরিয়ে নিলো। তটস্থ হয়ে বললো,
“এখনও তো অনেক জ্বর..!! ”

বসা থেকে উঠে টেবিল থেকে থার্মোমিটার নিয়ে বিছানায় বসে মেঘের জিহ্বার নিচে ধরলো। মেঘ হা করে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে। আবির কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো মেঘের দিকে। দুজনেই নিস্ত*ব্ধ, দুইজোড়া চোখ গভীরভাবে অনুবন্ধী । মেঘের বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হচ্ছে।

এরমধ্যে তানভির গলা খাঁকারি দিয়ে রুমে ঢুকলো। তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আবির। তানভিরের কন্ঠ শুনে মেঘও দৃষ্টি সরিয়ে ভাইয়ের দিকে চাইলো। আবির থার্মোমিটার চেক করতে ব্যস্ত হলো, তানভির ভাইয়ের দিকে প্লেট বাড়াতেই মেঘ চোখ গোল গোল করে তাকালো। মনে মনে বললো,
“এখনও কি আবির ভাই খাইয়ে দিবেন আমায়?”
আবির কোনোদিকে না তাকিয়ে ছোট করে বললো,

“তুই খাইয়ে দে। ”
তানভির বিস্ময় সমেত তাকালো আবিরের দিকে । আবির তানভিরকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই তানভির স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,
“ঠিক আছে আমিই খাইয়ে দিচ্ছি। ”

আবির বিছানা থেকে উঠে চেয়ারে বসে আছে৷ তানভির মেঘকে উঠিয়ে খাওয়ানো শুরু করলো। মেঘ জোর করে অল্প অল্প খাচ্ছে। তানভির মেঘকে এটা সেটা বলে বলে বুঝাচ্ছে আর খাওয়াচ্ছে। আবির যেনো নিরব দর্শক, একবার ফোনের দিকে দেখছে একবার মেঘের খাওয়া দেখছে। কোনোমতে অল্প খেয়ে মেঘ শীতল কন্ঠে বললো,
“আর খাবো না ভাইয়া”
তানভিরও আর জোর করলো না। পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো মেঘের দিকে। খাওয়া শেষে পানির গ্লাস টেবিলে রাখতে রাখতে তানভির বলে উঠলো,

“ভাইয়া, বনুকে ঔষধ গুলো খাইয়ে দাও প্লিজ । আমি নিচে যাচ্ছি, খুব খুদা লাগছে । ”
তানভির রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেছে। আবির ফোন পকেটে রেখে টেবিল থেকে ঔষধ রেডি করে মেঘের দিকে এগিয়ে দিলো। মেঘও মাথা নিচু করে ঔষধ গুলো খেয়ে নিলো।
আবির নিরেট কন্ঠে বললো,
“” সাবধানে থাকিস। ’”

আবির চলে যেতে নিলে মেঘ আবিরের ডানহাত আঁকড়ে ধরে।
সহসা আবির ব্যথায় “উফফ” করে উঠলো।
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিলো। মেঘ ভেবেছে আবির ভাই হইতো বিরক্ত হয়েছেন মেঘের ছোঁয়াতে। অকস্মাৎ মেঘের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

কাঁদো কাঁদো কন্ঠে মেঘ বললো,
“”আমি ম*রে গেলে আপনি……””
এতটুকু বলতেই আবির অ*গ্নিদৃষ্টিতে চাইলো অষ্টাদশীর দিকে৷ মেঘ কথা সম্পন্নও করতে পারলো না।
আবির রা*গান্বিত কন্ঠে বললো,
“চুপ। ”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে পুনরায় বললো,

“আর কোনোদিন যদি তোর মুখে এই কথা শুনি তাহলে ঐদিনই তোকে মে*রে বু*ড়িগ*ঙ্গায় ফে*লে দিয়ে আসবো। ”
মেঘের ছোট হৃদয়টা আবির ভাইয়ের কথায় আবারও চূ*র্ণবিচূ*র্ণ হলো । একটু রম্য স্বরেও তো বলতে পারতেন, তা না মে*রে ফে*লবেন।
মেঘের অক্ষিপট ভিজে আসছে। চিবুক নামিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
” এই বাড়ির কেউ আমায় ভালোবাসে না, সবাই শুধু ব*কে। সবার রা*গ ঝাড়ার একমাত্র জায়গা আমি। কেউ কেউ তো আবার গা*য়েও হা*ত তুলেন। ”

শেষ কথাটা বলে আবিরের দিকে তাকালো। পল্লব ঝাপটাতেই গাল বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পরলো ।
আবির অষ্টাদশীর মুখের পানে চেয়ে মনে মনে বললো,
“এই কেউ টা তোকে ইচ্ছেকৃত মারতে চাই নি, এটা কি করে বুঝাবো তোকে। এই কেউটা যে নিজের থেকেও বেশি তোকে ভালোবাসে, তোকে মা*রার সাধ্যি কি তার আছে? আমি পারছি না তোকে বুকে জরিয়ে চিৎকার করে বলতে যে, তুই আমার সবকিছু, তোকে ছাড়া আমি নিঃস্ব। ”

আবির বিছানার পাশে বসে গলা খাঁকারি দিয়ে তপ্ত স্বরে বললো,
“তুই হয়তো জানিস না কারো অলিখিত কাব্য তুই। কারো স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার কারণ তুই। তোর ডাগর ডাগর চোখের চাউনীতে কারো বিনাশ নিশ্চিত। তোর অনাদেয় কর্মকান্ডে খুব শীঘ্রই কারো মস্তি*ষ্কে র*ক্তক্ষ*রণ ঘটানোর কারণ হবে। সময় থাকতে সাবধান হয়ে যা মেঘ। ”
মেঘ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। জ্বরের ঘোরে কথাগুলোর মানে বুঝলো কি না কে জানে। মেঘ কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,

” কার?”
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রখর স্বরে বললো,
“তোর বাবা-মায়ের। ”
[নিজের মনের ভাব চাচ্চু আর মামনির উপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হলো আবির। ]
মেঘ অক্ষি পল্লব ঝাপটে বৃহৎ নয়নে চেয়ে আছে আবিরের দিকে।
আবির ঠান্ডা কন্ঠে বললো ,

“আর কার ভালোবাসা প্রয়োজন তোর? আমার আব্বু যেখানে আমার সাথে প্রয়োজনের বাহিরে কোনো কথা বলে না সেখানে তোর ইচ্ছে- অনিচ্ছা নিয়ে ভাবে, আম্মুর ভালোবাসা আশা করি আমার তোকে বুঝাতে হবে না। কাকামনি- কাকিয়া তো ওদের সন্তানের থেকেও তোকে বেশি আদর করে। চাচ্চু আর মামনির কথা কি বলবো তোকে, চাচ্চুর আর মামনির খুব শখ ছিল একটা মেয়ে বাবুর।

তোর জন্মের পর দুজন খুশিতে এত কান্না করছে যে এলাকার মানুষ ভেবেছিল এই বাড়িতে কেউ মা*রা গেছে। তানভির ছেলে হয়েও এতটা গুরুত্ব পায় নি, যতটা গুরুত্ব তুই চাচ্চু আর মামনির থেকে পাস। তানভিরের জীবনে বাবা-মায়ের পরেই তোর অবস্থান। মীম-আদি তো তোরই ভ*ক্ত । খান বাড়িতে তোর যতটুকু অগ্রাধিকার তা আমাদের কারো নেই। আর কার ভালোবাসা চাস? ”

একসাথে কথাগুলো বলে আবির থামলো তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
“উল্টাপাল্টা কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দেয়া বোকামি ছাড়া কিছুই না । ”
মেঘ ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে চিন্তিত কন্ঠে শুধালো,
“আপনার কথা বললেন না কেনো?”
মেঘের প্রশ্ন শুনে আবির ঢুক গিলে কপাল কুঁচকালো, তারপর শক্ত কন্ঠে বললো,
“তোর এখন রেস্ট নেয়া প্রয়োজন । ”

আবির চেয়ার থেকে উঠতে নিলে মেঘ আবিরের ডানহাতের দু আঙুল আঁকড়ে ধরে।
সঙ্গে সঙ্গে আবির দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে ফেলে। মেঘ সহসা আবিরের হাতের দিকে চাইলো। আবিরের হাতের কাটা অংশে চাপ পরায় র*ক্ত বের হচ্ছে৷ সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দেয় মেঘ।
মেঘ আর্তনাদ করে বললো,
“আবির ভাই আপনার হাত এতটা কেটেছে কিভাবে?”
আবির তপ্ত স্বরে শুধু বললো,

“এমনি। ”
আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ নির্বাক চোখে তাকিয়ে আবির ভাইয়ের প্র*স্থান দেখলো৷
মেঘের মনে পরলো মেইন গেইটের পাশের দেয়ালে ঘু*ষি দেয়ার কথা, ধরে নিলো এর ফলেই আবির ভাইয়ের হাত কে*টেছে। অষ্টাদশী জানতেও পারলো না তাকে থা*প্পড় দেয়ার অপরাধে আবির কতশত ঘু*ষিতে নিজেকে আ*হত করেছে।

গতকালের ঘটনাগুলো পরপর মনে হতেই মেঘের নিজের উপর বড্ড রা*গ হলো। আবির ভাইয়ের অনুভূতি জানতে চাওয়ার কি দরকার ছিল।৷ রা*গে নিজের গালে থা*প্পড় দিতে ইচ্ছে হলো মেঘের। আবির ভাই জান্নাত আপুকে পছন্দ করলে মেঘের ব্যাপারে কোনো অনুভূতি থাকবে না এটায় তো স্বাভাবিক । আবিরের সাথে এই জীবনে কখনো মেঘের সুসম্পর্ক ছিলো বলে মনে পরছে না মেঘের। এই হি*টলার স্বভাবের ব্যক্তির জন্য আজ সে জ্বরে ভুগছে এটা ভাবতেই মাথায় র*ক্ত উঠছে৷

আবির মেঘের রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে গেলো। একটা তালা নিয়ে ছাদের গেইটে তালা ঝুলিয়ে দিলো। তারপর নাস্তার টেবিলে চলে গেলো। ততক্ষণে নাস্তার টেবিল ফাঁকা হয়ে গেছে। তিন কর্তী রান্নাঘরে কাজ করছে আর এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে।
আবির রান্নাঘরের সামনে গিয়ে রাশভারি কন্ঠে বললো,
“ছাদের গেইটে তালা দিয়ে দিয়েছি। তোমাদের কারো ছাদে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, আমার রুম থেকে চাবি নিয়ে যেও। ”

আকলিমা খান চিন্তিত কন্ঠে শুধালেন,
“মেঘ কি রাতে ছাদে গিয়ে ভিজেছিল ?”
আবির উপর নিচ মাথা নাড়লো শুধু ।
মালিহা খান হালিমা খানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“যে মেয়ে ভূ*তে ভ*য় পাই, সন্ধ্যার পর বৃষ্টি হলে কানে আঙুল দিয়ে বসে থাকে সেই মেয়ে এত রাতে ছাদে গেলো কিভাবে?”

হালিমা খান নির্বাক চোখে তাকিয়ে রইলো মালিহা খানের দিকে। এই প্রশ্নের উত্তর ওনার কাছেও নেই।
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,
“তোমাদের এসব নিয়ে গবেষণা করতে হবে না। যা হওয়ার হয়েছে। মেঘকে এই বিষয় নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন করবা না। ছাদে না যেতে পারলে এমন কান্ডও আর ঘটাতে পারবে না। এই টপিক এখানেই শেষ। ”
আবির চুপচাপ নাস্তা করে নিজের রুমে চলে গেছে।

তানভিরের সারাদিন কাটলো চায়ের পর চা খেতে খেতে। আবিরের জন্য ঘন্টাখানেক তানভিরকেও বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছিল যার ফলস্বরূপ গলা ব্যথা, সর্দির উপক্রম হয়েছে। বিকেলে আবার এমপির সম্মেলনে যেতে হবে। তাই চা কফি খেয়ে গলা ঠিক রাখছে। দুপুরে খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পরেছে সম্মেলনের উদ্দেশ্যে। আবির সারাদিনেও রুম থেকে বের হলো না। ৩ টার দিকে মালিহা খান আদিকে পাঠিয়েছিল ডাকার জন্য। কিন্তু আবির ঘুমাচ্ছে দেখে আদি দরজা থেকেই চুপচাপ চলে আসছে।

আরও কিছুক্ষণ পর বাধ্য হয়ে মালিহা খান নিজেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলেন ছেলের রুমে।
দরজা থেকে একবার আবিরকে ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়া নেই। মালিহা ছেলের কাছে গিয়ে বাহুতে হাত দিতেই আঁতকে উঠলেন। জ্বরে আবিরের গাঁ পু*ড়ে যাচ্ছে৷ ডানহাত ফু*লে গেছে কনুই পর্যন্ত।
মালিহা খান এইযে ছেলেকে ডাকছে, আবির জ্বরের ঘোরে কিছুই বলতে পারছে না। মালিহা খান রুম থেকে বেরিয়ে হাঁকডাক শুরু করলেন। ইকবাল খান সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন, ভাবির ডাক শুনে দৌড়ে গেলেন৷মেঘ ঘুমাচ্ছিলো হালিমা খান মেঘের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছিলেন। বড় ঝা য়ের আর্তনাদে মেঘের রুম থেকে বেড়িয়ে ছুটে গেলেন আবিরের রুমে।

আবিরের মুখমন্ডল অন্ধকার হয়ে আছে। হাতের ব্য*থা সাথে দীর্ঘ সময় বৃষ্টিতে ভেজার ফলে এই দশা হয়েছে।। ইকবাল খান সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার কে কল দিয়েছেন। ঘন্টাখানেক পর পরিস্থিতি শান্ত হলো। আবিরকে ব্যথার ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। মালিহা খান ছেলের মাথায় জলপট্টি দিতে ব্যস্ত হলো। হালিমা খান বেড়িয়ে মেঘের রুমে গেলেন ততক্ষণে মেঘের ঘুম ভে*ঙে গেছে।
হালিমা খানের থমথমে চেহারা দেখে মেঘ শঙ্কিত হলো, উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,

“কি হয়েছে আম্মু?”
হালিমা খান মেয়ের কাছে বসতে বসতে বললেন,
“তোরা তিন ভাই বোন মিলে কি শুরু করছিস বল তো?”
মেঘ স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“কেনো? কি হয়েছ? ”
হালিমা খান তপ্ত স্বরে বললেন,

“এদিকে তোর অবস্থা খারাপ ওদিকে তানভিরের লাগছে সর্দি । সকাল থেকে চা কফি খেতে খেতে কিছুক্ষণ আগে বের হলো। । এখন আবার আবিরের.. ”
মেঘ আঁতকে উঠে প্রশ্ন করলো,
“কি হয়েছে আবির ভাইয়ের?”
হালিমা খান কোমল কন্ঠে বলা শুরু করলেন,

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ১৯

“রাত থেকেই তো ছেলেটা দৌড়ের উপর । বৃষ্টিতে ভিজে অফিস থেকে আসছে তারপর তোরে ছাদ থেকে রুমে এনে রেখে ডাক্তার আনতে গেছে আবার ডাক্তার কে দিয়ে ঔষধ নিয়ে আসছে। কিভাবে যেন হাত কাটছে, সেই হাত ফুলে, ব্যথায় এখন জ্বর উঠে গেছে। জ্বরে চোখ খুলতে পারছে না ছেলেটা ”
মেঘ মায়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে,
“আবির ভাই আমার জন্য এতকিছু করেছে….????”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২১