আমার তুমি পর্ব ৪৩

আমার তুমি পর্ব ৪৩
জান্নাত সুলতানা

-“আপনি কি করে জানতে পেরে ছিলেন স্টিভ আমার জাস্ট ফ্রেন্ড?
প্রথম তো বিশ্বাস করলেন না।”
-“কিছু জিনিস গোপনে সুন্দর।”
ওয়াজিদ কথা শেষ রিধির ঘাড়ে আবার চুমু খেলো।রিধি মোচড়ামুচড়ি করে সড়ে যেতে চাইলো তবে ওয়াজিদ এর শক্ত বাঁধন হতে নিজে কে ছাড়াতে পারলো না।
যা দেখে ওয়াজিদ হাসলো শব্দ করে সেই হাসি রিধির সর্বাঙ্গে শিউরে ওঠলে

-“এই বাঁধন এতো সহজে ভাঙ্গা যাবে?”
-“আমি চাইও না ভাঙ্গতে।
ওয়াজিদ রিধির কাঁধে আবারও চুমু খেলো। রিধি এবার ফিরে ওয়াজিদ কে জড়িয়ে ধরলো।
ওয়াজিদ বুঝতে পারে বউ তার সঙ্গ চাচ্ছে তাই তো কথা না বাড়িয়ে বউ কে কোলে তুলে সোজা রুমে চলে এলো।আর একে অপরের মাঝে ডুবে গেলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাহান আর সারার বিয়ের শপিং এর জন্য বাড়িতে দোকান দার নিজে সব রকম পোশাক নিয়ে এসছে।দোকান গুলো অবশ্য মির্জাদের কর্মচারী রেখে দিয়েছে শুধু। আম্বিয়া মির্জার আদেশ কোনো মহিলা মার্কেট যেতে পারবে না।
এতে অবশ্য কারোর কোনো অসুবিধা নেই এতো বছর ধরে তো এই রীতি অনুযায়ী কাজ হয়ে আসছে।
শুধু মাইশার সময় মাইশার জোরাজুরি করাতে মাইশার বিয়ের শপিং মাইশা নিজে করতে চেয়েছে তাই দেওয়া হয়ে ছিল।

সবার জন্য সবার মোটামুটি কাপড় নেওয়া হয়েছে। গায়ে হলুদ এর কাপড় রাহান নিজে পাঠাবে।আর বিয়ের পোশাকও রাহান পাঠিয়ে দিয়েছে।
বাকি ছিল শুধু বাড়ির মানুষ জন। কাল সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ বাড়ির ঘর ঝকঝকে পরিষ্কার সাথে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে গায়ে হলুদের জায়গায় আগের ন্যায় বাগান টাই করছে, বিশাল জায়গায় নিয়ে তার কারণও অবশ্য রয়েছে ছেলের গায়ে হলুদও এখানে হবে। পরিবার বংশের ছোট মেয়ে তাই বিশাল ধুমধাম করে আয়োজন করা হয়েছে। পাড়াপ্রতিবেশি কাউ কে মনে হয় বাদ রাখে নি পাশের দুই এলাকায় পর্যন্ত বড় বড় মান্য গন্য ব্যাক্তিদের নিমন্ত্রিত করা হয়েছে।

সবার কাপড় নেওয়া শেষ আম্বিয়া মির্জা বেশ দামী দেখে ভারী একটা শাড়ী নিলো একদম লাল টকটকে যেটার দিকে সবাই কমবেশি হা করে তাকালো সাথে অবাক। জাফর মির্জা তো স্ত্রী দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে বলেই ফেললো

-“আমু নিজের বয়সের দিকে একটু নজর দাও।
এই বয়সে এসে তুমি এসব পড়বে?”
আম্বিয়া মির্জা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না, আর না কারোর দিকে তাকালো। সোজা সবার পেছন চুপ টি করে দাঁড়ানো প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কাছে ডাকলো।প্রিয়তা ভয় পেলো ফাঁকা একটা ঢুক গিলে আশেপাশে সবার দিকে দৃষ্টি বোলাল।

সাদনান এর দিকেও তাকালো তবে সাদনান ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়তা বোনের দিকে তাকাতেই আয়না যেতে ইশারা করে প্রিয়তা হাতে থাকা চা পাতা কালার স্লিভলেস এর শাড়ী টা শক্ত করে চেপে ধরে এগিয়ে এলো।আম্বিয়া মির্জা উঠে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের শাড়ী টা প্রিয়তার গায়ের উপর মেলে ধরতেই সবার বোধগম্য হলো এটা প্রিয়তার জন্য নিয়েছে প্রিয়তা নিজেও অবাক হলো।আম্বিয়া মির্জা সবাই কে আরও একদফা চমকে দিয়ে প্রিয়তা কে হুকুমের স্বরে বলল

-“তুমি নিশ্চয়ই জানো সারার বিয়ের দিন তোমাদের একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠান করা হবে।
বিয়ের পর পরই এটা পড়ে রেডি হয়ে নিবে।
আর বিয়েতে ওই চা পাতা কালার শাড়ী টা পড়বে।”
প্রিয়তার চোখে পানি চলে এলো।তবে সেটা চোখের কোঠরি হতে বেড়িয়ে আসার আগেই আম্বিয়া মির্জা নিজের হাতের তালুর সাহায্য মুছে নিয়ে কঠিন স্বরে বলল

-“আমার সামনে একদম ন্যাকামো করবে না।
আর হ্যাঁ, দুই বোন রাতে আমার ঘরে আসবে। ”
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ মুছে নিলো আর সবার মুখে হাসি।আম্বিয়া মির্জা বরাবরই ভালো মানুষ শুধু একটু রাগী মানুষ টা সাথে বেশ পুরনো দিনের নিয়ম কানুন মানে এটাই যা নয়তো ভিষণ ভালো মানুষ প্রিয়তা আগে থেকে জানতো অবশ্য এটা শুধু প্রিয়তা না মির্জা বাড়ির প্রতি টা সদস্য জানে তাই তো সাদনান দাদি কে কখনো কোনো বিষয়ে কিছু বলতো আর না প্রিয়তা সাদনান এর কাছে কিছু জানাতো।

-“আচ্ছা দাদি।”
প্রিয়তা জানালো।আয়নাও সম্মতি দিলো।
অতঃপর আবারও সবাই কাপড় দেখায় মনোযোগী হলো। রাহাত আয়নার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই যখন কাপড় দেখতে ব্যস্ত রাহাত তখন আয়নার একটা হাত মুঠি পুরে নিয়ে ফিসফিস করে বলল

-“বলেছিলাম না দাদি ভীষণ ভালো!সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমার কথা ঠিক হলো তো?”
আয়না শুধু প্রশান্তির হাসি হাসলো।আয়না বরাবরই চুপ চাপ কথা কাটাকাটি কোনো দিনই করে নি রাহাত এর সাথে সব সময় কথা কম বলে।
রাহাতের অবশ্য প্রথম প্রথম মনে হতো আয়না হয়তো ওর সাথে এমন কিন্তু না আয়না মানুষ টাই এমন।থাকে না কিছু মানুষ অল্পতেই খুশি আয়নাও ঠিক তেমন।

প্রিয়তা, আয়না,সুফিয়া বেগম, সালেহা বেগম সবাই আম্বিয়া মির্জার রুমে উপস্থিত।
আম্বিয়া মির্জা বসে আছে বিছানায় সামনেই অনেক গুলো গহনা রাখা। গহনা গুলো যে অনেক পুরনো সেগুলো এক দেখায় যে কেউ বুঝতে পারবে।
তবে প্রিয়তা বুঝতে পারছে না তাদের এখানে ডেকে দাদি এগুলো কেন বেড় করেছে।

-“ছোট নাত বউ, এগুলো তুমি আমার দেওয়া শাড়ী টার সাথে পড়বে অনুষ্ঠানে।
মনে থাকবে?”
-“কিন্তু দা,,,
-“আমি কিছু শুনতে চাই না।”
প্রিয়তা চুপ করে গহনা গুলো হাতে নিলো। আম্বিয়া মির্জা আয়নার হাতেও সেম ডিজাইন এর একটা নেকলেস মোটা মোটা দুই টা বালা বড় বড় এক জোড়া কানের জিনিস এক জোড়া নুপুর সাথে নাকের একটা বড় নথ আর কোমড়ের একটা বিছা।
প্রিয়তা গহনা গুলো এক পলক দেখে নিলো গহনা সাজুগুজু এসবের প্রতি কোনো দিনই দুই বোনের বেশি আগ্রহ নেই।
আম্বিয়া মির্জা গহনা গুলো দিয়ে আগের স্থানে গিয়ে বসে পড়লো আবার অতঃপর দুই ছেলে বউয়ের উদ্দেশ্য বলল

-“তোমাদেরও কিন্তু দেওয়া হয়েছে।
আর তোমাদের মেয়েদের জন্য আছে।তবে বালা জোড়া শুধু বাড়ির বউয়ের পায়।”
-“জ্বি আম্মা।”
সুফিয়া বেগম বলল।
তার পর সবাই আম্বিয়া মির্জা রুম হতে বেড়িয়ে এলো।
প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে রুমে এসে সেগুলো বিছানায় রেখে সাদনান এর উন্মুক্ত বুকে শুয়ে পড়লো।
জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বলল

-“দাদি দিয়েছে।”
-“তোমার নেই।”
-“দাদি দিয়েছে।”
-“ভালো তো।”
সাদনান এর দায়সারা ভাবে জবাব। প্রিয়তা এবার মুখের অবস্থা এমন করলো যেনো কেঁদে ফেলবে।
সাদনান তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো বউ কে নিজের বাহুডোর আগলে নিলো।
মুচকি হেঁসে বলল

-“পাগল,মজা করছিলাম।”
প্রিয়তা তাও নাক টানে। ও ভেবেছে হয়তো সাদনান রাগ করে এসব বলেছে।
সাদনান বউ কে বুকের উপর আগলে রেখেই হঠাৎ জানতে চাইলো
-“ঔষধ খেয়েছো?”
-“প্লিজ।”

কণ্ঠে আকুতি। সাদনান এর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।সে কি একটু বেশি করছে?
সাদনান প্রিয়তা কে নিজের বুকের উপর হতে আলগা করলো। দুই হাতের আঁজল নিয়ে নিলো প্রিয়তার মুখখানা।
প্রিয়তা দৃষ্টিতে কেমন আকুলতা কিছু পাওয়ার জন্য আবেদন। সাদনান সে দিকে তাকিয়ে থমথমে খেলো।ফিরাবে না বউ কে আল্লাহ যদি চাই তবে আর কোনো কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার করবে না দেখা যাক কি হয়।
-“আমার তুমি কে সুস্থ দেখতে চাই, সব দিক সামলে চলবে।”
প্রিয়তা কি বুঝলো কে জানে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সাদনান কে।সাদনান নিজেও বউ কে আগলে নিলো।

-“একটু তো লজ্জা পাওয়া উচিত সারু।”
সারা মাইশার কথা শুনে মুখ ভেংচি কাটে কোনো কথা বলে না।
মাইশা হতাশার শ্বাস ছাড়ে। এই মেয়ে কে বলেও কোনো লাভ নেই।কে বলবে এই মেয়ের বিয়ে আজ!দেখো কত সুন্দর সবার সাথে হেঁসে হেঁসে আড্ডা দিচ্ছি। একটু তো লজ্জা সরম পাওয়া উচিত কনের।

আমার তুমি পর্ব ৪২

-“নিচে অনেক মানুষ।
আশা করি সেখানে ভদ্র ভাবে থাকবি।
নয়তো দাদি কে ডাকবো।”
মাইশা কথা শেষ করে চলে গেলো। মাইশা যাওয়ার পর পরই সারা কে কয়েকজন মেয়ে মিলে হলুদের অনুষ্ঠানের জায়গায় নিয়ে এলো।

আমার তুমি পর্ব ৪৪