আমার তুমি পর্ব ৪২

আমার তুমি পর্ব ৪২
জান্নাত সুলতানা

সাদনান শাওয়ার নিয়ে মাত্রই বেড়িয়ে এলো।পড়নে ছাই রঙের একটা ট্রাউজার বলিষ্ঠ পেটানো উদাম শরীর বুকের ঘন কালো লোম গুলো পানি চিকচিক করছে। গলায় একটা টাওয়াল জড়ানো যার এক পাশ দিয়ে মাথার চুল গুলো মুছে নিচ্ছে।

শাওয়ার নেওয়ার ফলে চেয়ারায় আলাদা একটা স্নিগ্ধু লাগছে কিন্তু সেই স্নিগ্ধতা চাপা পড়ে মুখে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে বেশি।
সাদনান টাওয়াল সোফায় ছুঁড়ে ফেলে। চুল তার আগে বউ মুছে দিতো সব সময় কিন্তু আজ অনেক দিন হয় বউ এই কাজ হতে বিরতি নিয়েছে। কিন্তু সাদনান বিরতি আজ শেষ করবে আগের মতো আবার কন্টিনিউ করবে সব ঠিক ঠাক করতে হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাদনান এগিয়ে গেলো। দরজায় দাঁড়িয়ে নিজের বলিষ্ঠ কণ্ঠে মাকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।
সাদনান জানে মা তার সমস্যা বুঝতে পারবে।সাদনান এর মা নিচ থেকে গলা ছেড়ে ছেলে কে উত্তর করলো আসছি বলে।সাদনান ফিরে গিয়ে সোফায় বসে থাকে উদোম শরীর নিয়ে চুল থেকে তখনো পানি পড়ছে।
সাদনান এর ভাবনা সত্যি হলো মা প্রিয়তা কেই পাঠিয়েছে।

প্রিয়তা ওড়নার এক মাথায় হাত মুছতে মুছতে ঘরে প্রবেশ করে মাথা হতে ঘোমটা ফেলে দেয়।
সোজা বিছানার উপর ওড়না রেখে সাদনান এর দিকে এগিয়ে যায় সাদনান পুরো টা সময় বউয়ের দিকে তাকিয়েদ রয়।প্রিয়তা
সোফা থেকে টাওয়াল তুলে চুল মুছে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো

-“খাবার রুমে দেবো?”
-“তুমি তো খাও নি।তাছাড়া নিচে অনেক মানুষ এখন।
রুমে নিয়ে এসো।”
-“আচ্ছা,ঠিক আছে।”

সাদনান এর কথার বিপরীতে প্রিয়তা সম্মতি দিয়ে বলল।অতঃপর নিজের হাত দিয়ে সাদনান এর চুল মুছে টাওয়াল নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো ফিরে এসে ওয়াশ রুম গিয়ে হাল্কা ফ্রেশ হয়ে নিলো।যদিও ঘন্টা সময় এর মতো হবে শাওয়ার নিয়েছে তবে রান্না ঘরে ছিল বিধায় শরীর কেমন ভার লাগছে।
প্রিয়তা রুমে খাবার নিয়ে এলো তার পর দু’জন মিলে খেয়ে নিলো।

খাবার শেষ এঁটো থালা বাসন নিয়ে প্রিয়তা নিচে চলে গেলো। আর এদিকে সাদনান নিজে রেডি হয়ে নিলো এখন পাঁচ টার আশেপাশে বাজে সময়। মেহমান সব নিশ্চয়ই আসতে চলছে।
আজ প্রায় অনেক মানুষদের কে ইনভাইটেশন করেছে তার কারণও অবশ্য আছে।
বউ তার ধারে কাছে বেশি ঘেঁষে না সে বুঝতে পারে রাগের কারণ তবে কিছু করতে পারে নি মূলত সময় করতে পারে নি।
সাদনান রেডি হয়ে গায়ে পারফিউম দিয়ে নিজের গম্ভীর মুখ নিয়ে বেড়িয়ে এলো রুম হতে।

-“আপনারা কেউ কেউ হয়তো জানেন!
আমি বিয়ে করেছি,তবে সেটা ঘরোয়া ভাবে তাই কাউ কে বলার বা নিমন্ত্রণ করার মতো সময় করে উঠতে পারি নি।আগামী সাপ্তাহে আমার বোনের বিয়ে আর সেই দিন সবার উপস্থিতি কামণা করছি।তখন না হয় আমার স্ত্রী কে দেখে নিবেন।”

সাদনান কথা শেষ সবাই করতালি দিলো।সাদনান কথা শেষ আবারও ফিরে এলো স্টেজ থেকে।
একটু আগেই কেক কাটার পর্ব শেষ হয়েছে এখন সবাই যে যার মতো এনজয় করছে।
প্রিয়তা সালেহা বেগম এর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে পড়নে মিষ্টি কালার একটা জামদানী শাড়ী জড়ানো। দেখতে ঠিক শাড়ী টার কালার এর মতোই মিষ্টি লাগছে পাশেই সারা ফোনে কিছু করছে।

আয়ান মাইশা কে আগলে একটা টেবিলে বসে আছে।মেয়ে টা একটু পর পর বমি করছে কিছু মুখে তুলতে পারছে না।আর একটু আগেই বমি করার ফলে হয়তো ক্লান্ত। রাহাত, আয়না ইনিয়া কে নিয়ে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে। আর ওদিক টায়?ওই তো কবির তার ছেলে কে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে পাশেই টেবিলে বসে তিন্নি খাবার খাচ্ছে।

এখানে প্রতি টা মানুষ তার ভালোবাসার মানুষ টাকে সময় দিচ্ছে আগলে রাখছে।প্রিয়তা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করলো।ভীষণ ভালো লাগলো তবে মনের কোথাও বড্ড কষ্ট হচ্ছে একটা চাপা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
-“ছোট নাত বউ!
সারা কে নিয়ে ভেতরে চলে যাও।”

প্রিয়তার মন টা আরও দিগুণ খারাপ হলো আম্বিয়া মির্জার কথায়।
সারা বিরক্ত হলো।তবে মুখে প্রকাশ করলো না মুখ ভেংচি কেটে প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে চলে গেলো।
সাদনান সব টা লক্ষ্য করলো।
দাদি তার এই কাজ টা একদম ঠিক করেছে মনে ধরলো সাদনান এর।তার অবশ্য কারণও রয়েছে।স্টেজে বসে তিন চার টা ছেলে সারা প্রিয়তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। ছেলে গুলো ভদ্র পরিবারের আর এদের বাবারা এখানে আছে তাই ওদের কোনো ব্যবস্থা তো করতে পারবে না তার উপর অতিথি।

-“আমাকে মায়ের কাছে রেখে আসুন।”
সাদনান রুমে আসা মাত্রই প্রিয়তা কথা টা বলে উঠলো। সাদনান মোটেও অবাক হয় না,আর না কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো।বরং খুব স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মিররের প্রিয়তার প্রতিবিম্বর দিকে তাকালো শান্ত কণ্ঠে জানালো
-“দ্বিতীয় বার মুখে এনো না।

ঠেং ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো, অতঃপর নিজে হাতে সব করিয়ে দেবো।”
প্রিয়তা সাদনান এর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।কিছু বলে আর কথা বাড়াতে চাইলো না।ঝামেলা করে কি লাভ সাদনান তো আর ইচ্ছে করে করছে না এসব ও জানে।কিন্তু এটা মস্তিষ্ক মানলেও মন মেনে নিতে নারাজ। প্রিয়তা চুপটি করে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। সাদনান ড্রেস চেঞ্জ করে লাইট অফ করে বিছানায় এসে শুয়ে প্রিয়তা কে ফিরিয়ে নিজের দিকে করে নিলো।প্রিয়তা তখন শক্ত হয়ে আছে।সাদনান বউয়ের মুখের দিকে তাকালো ছোট ছোট চুল গুলো কমলা রঙের ড্রিম লাইটেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সাদনান ফু দিয়ে চুল গুলো মুখের উপর হতে সারানো প্রায়শ চালালো তবে ব্যর্থ হলো তাই বাধ্য হয়ে হাত দিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল

-“সরি।”
-“সরি?
আপনার সরি আপনার মাথায় দিয়ে বসে থাকুন।”
প্রিয়তা ফুঁসে ওঠে বলল।
সাদনান এবার মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলো
-“তুমি এমন কেন করছো?
আমি ইচ্ছে করে তো আর এমনটা করছি না, পরিস্থিতি তুমি বুঝতে হবে।”

-“হ্যাঁ,আর আমার পরিস্থিতি?”
-“আর কয় টা দিন অপেক্ষা করো।”
-“আঠারো হয়ে গিয়েছে।”
-“আচ্ছা?”
-“আমি বাচ্চা না বাচ্চার মা হতে চাই।”
সাদনান ঝট করে প্রিয়তা কে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলো দিলো।

প্রিয়তা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। শক্ত করে সাদনান এর আকাশী রঙের টি-শার্ট টার কলার চেপে ধরে।
সাদনান সে দিকে তাকিয়ে হাসলো আজও বউ টা তার ছোঁয়া দিশে হারা হয়।অল্পতেই মূর্ছা যায় তবুও যথাসাধ্য নিজে কে শক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়।

সাদনান নিজের দানবীয় হাতের স্পর্শে কাবু করলো বউ কে।নিজের পুরুষালী শক্ত অধরের ভাঁজে চেপে ধরে প্রিয়তা অধর।প্রিয়তার নখ গেঁথে সাদনান এর উন্মুক্ত পিঠে সাদনান আরও উন্মাদ হলো নিজের সব টা দিয়ে বউ কে ভালোবাসতে লাগলো।প্রিয়তার আস্তে করে চোখ বন্ধ করে নিলো আর অমনি চোখের কোঠরি হতে গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো

আমার তুমি পর্ব ৪১

সাদনান চাইলো বউয়ের বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে যা এখন কাজল লেপ্টে একাকার অবস্থা হয়ে আছে।
সাদনান সেই ভেজা চোখের পাতায় চুমু খেয়ে নেশাতুর কণ্ঠে বলল
-“কেন আমাকে পাগল করতে আসো!
শুধু শুধু নিজের কষ্ট ডেকে আনো।”
-“যদি সেই কষ্টের কারণ আপনি হোন তবে তা আমি হাসতে হাসতে গ্রহণ করবো।”

আমার তুমি পর্ব ৪৩