আমার তুমি পর্ব ৪৪

আমার তুমি পর্ব ৪৪
জান্নাত সুলতানা

সারা আর রাহানের হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।রাহান রা আবার তাদের বাড়ি ফিরে গিয়েছে। এখন শুধু সবাই যে যার মতো মজা করছে। প্রিয়তা সারার পাশেই বসে আছে তার ঠিক বরাবর সাদনান দাঁড়িয়ে কথা বলেছে কিছু লোকের সাথে প্রিয়তা সাদনান এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদনান একবারের জন্যও তাকায় নি।
অবশ্য বাড়ির পুরুষ লোক ছাড়া বাহিরের লোক এদিকে আসা নিষিদ্ধ।
সালেহা বেগম কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।

-“এখানে আর বসে থেকে কাজ নেই।
যা ফ্রেশ হয়ে চট করে শুয়ে পড় গিয়ে।”
সারা মায়ের মুখে পানে একবার তাকাল। কাল কের পর থেকে আর এই মুখ টা রোজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখা হবে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ওমা দেখো এখনো বসে আছে!
প্রিয়ু ওকে নিয়ে যা তো।”
প্রিয়তা কে উদ্দেশ্য করে বল সালেহা বেগম। প্রিয়তা সম্মতি দিয়ে জানায়
-“আচ্ছা মা।”
সারা চোখে হাল্কা পানি এলো তবে তা গড়িয়ে পড়ার আগে মুছে নিয়ে প্রিয়তার সাথে চলে গেলো।

সারা আর রাহানের বিয়ে টা খুব সুন্দর করে হয়ে গেলো।একটু তাড়াহুড়ো সহিতেই হয়েছে। বেলা এখন দুইটা।সারার বিয়ে শেষ ওদের এক সাথে বসানো হলো।ততক্ষণে প্রিয়তা কেও সাজিয়েগুছিয়ে নিয়ে এসছে আম্বিয়া মির্জা।
কেউ কেউ অবাক হলো কেউ আবার প্রশংসা করলো।অবাক হওয়ার অবশ্য অনেক কারণ রয়েছে।সাথে প্রশংসা করারও।

সবাই প্রিয়তা কে এটা সেটা দিচ্ছে কেউ আবার আগেই দিয়ে দিয়েছে। প্রিয়তার পাশেই আম্বিয়া মির্জা বসে আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই ওনি ওঠে চলে গেলো। প্রিয়তার এবার ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগলো।এতো মানুষের ভীড়ে পরিচিত মুখ খুব কমই আছে।তাও আবার সবাই দূরে দূরে। শুধু মাইশা একটু কাছে আছে তাও মাইশা নিজেও অসুস্থ তাকে তার মা সুফিয়া বেগম আগলে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান নেই এখানে থাকলে ঠিক বোনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো আর আয়না সে তো ইনিয়া কে নিয়ে হয়রান রাহাত নিজেও হয়তো কোথাও কাজ করছে।

প্রিয়তা সবার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে তবে ভেতরে ভেতরে ভয়ে লজ্জায় আড়ষ্ট।
ঠিক তক্ষুনি কোথা থেকে যেনো একজন বলিষ্ঠ শরীরের লোক প্রিয়তার পাশে ধপ করে বসে গেলো।প্রিয়তা ভাবনায় বিভোর ছিল তাই হঠাৎ এহেন ঘটনা হকচকিয়ে উঠে সরে বসতে চাইলো তবে পাশে বসা সুদর্শন পুরুষ সাদনান তা হতে দিলো না নিজের দানবীয় হাত খানা বউয়ের কোমড় চেপে ধরে। প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ ফিরিয়ে দেখে নিলো ব্যক্তিটা কে।

যে এখন কি সুন্দর হেঁসে হেঁসে সামনে কিছু লোকের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।
প্রিয়তা সাদনান কে দেখে একটু স্বভাবিক হলো।ধীরস্থির করে নিজে কে।
-“আমি আছি না!
এতো নার্ভাস কেন হচ্ছিলে?”
-“আগে ছিলেন না।”
-“কে বলেছে?
না থাকলে দেখলাম কি করে তুমি নার্ভাস?”

প্রিয়তা এবার থমথমে খেলো। সত্যি তো।তবে পরক্ষণেই কিছু মনে হতে, জিগ্যেস করলো
-“তাহলে তখন আসলেন না কেনো?”
-“ছিলাম তুমি দেখো নি।”

প্রিয়তা আর কথা বাড়ায় না চুপটি করে থাকে সাদনান নিজেও।
বিকেল সাড়ে পাঁচ টার দিকে সারা কে বিদায় দিবে সবাই তোড়জোড় করছে।বাড়ি কাছে হওয়াতে কেউ তেমন তাগাদা দেয় নি।কিন্তু এখন তো রাত হয়ে আসছে যাওয়া দরকার। কিন্তু সারা সে তো কতক্ষণ বড় ভাই কতক্ষণ ছোট ভাই তো কতক্ষণ মা একে একে সবাই কে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করেই যাচ্ছে। কত সুন্দর করেই না সেজে ছিল পার্লারের মেয়ে গুলো কে নিজে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে বলে সেজে ছিল কিন্তু এখন সেই সাজের বারো টা বেজে গিয়েছে।

বেশ অনেক টা সময় পর রাহানের বাবা আজ্জম মির্জা কে ইশারায় কিছু বোঝাতেই তিনি এগিয়ে এসে মেয়ে কে আগলে নিয়ে রাহানের হাতে মেয়ে কে তুলে দিলো। রাহান হাত টা শক্ত করে ধরে সেভাবে গিয়েই গাড়ীতে বসে।
সাদনান সে দিকে এগিয়ে যায় রাহান কঠিন স্বরে কিছু বলে যা সারার কানে যায় কিন্তু ততটা গুরুত্ব দেয় না
রাহান মুচকি হেঁসে আশ্বাস দিয়ে জানালো

-“তোদের মতো এতো বিলাসবহুল জীবন হয়তো দিতে পারবো না। কিন্তু ভালোবাসার কোনো কমতি হবে না, ইনশাআল্লাহ।”
গাড়ি ছেড়ে দিলো।সাঁই সাঁই করে গাড়ি ছুটে দৃষ্টির আড়াল হলো।সাদনান এর চোখ হতে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।বাড়ির প্রতি টা সদস্য কেমন চুপ চাপ হয়ে গেলো মূহুর্তের মধ্যে।
সালেহা বেগম ততক্ষণে কেঁদে কেটে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। চুপ করে আছে তিনি ওনাকে নিয়ে সুফিয়া বেগম আর প্রিয়তা ভেতরে চলে গেলো।
আস্তে আস্তে জায়গা টা জনমানবহীন হয়ে গেলো।

সারা রিধির সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে।এই ঘন্টা খানিকক্ষণ হবে কয়েকটা মেয়ে মিলে সারা কে এখানে রেখে গিয়েছে।
সারা এখন একটা স্লিভলেস এর ব্লু কালার শাড়ী পড়ে আছে।শাড়ী টা রাহানের মা দিয়েছে মহিলা খুব ভালো মানুষ সারা জানে।

সারা রিধির সাথে কথা বলে ফোন কাটতেই দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সারা মাথায় ভালো করে ঘোম টা টেনে বসে।রাহানের মা এসছে।হাতে খাবার এর থালা।
সারা বুঝতে বাকি থাকে না খাবার তার জন্যেই এনেছে।
-” আজ সারা দিন নিশ্চয়ই কিছু খেতে পারো নি!

খাবার টা চট করে খেয়ে নাও।না-কি আমি খাইয়ে দেবো?”
রাহানের মা জানতে চাইলো।
সারা সহসা একটু অবাক হলো তবে মুখে বলল
-“না মা আমি পারবো।
আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন গিয়ে রাত তো অনেক হলো।
বাবা কোথায় আপনারা খেয়েছেন।”

-“পাগলি মেয়ে সবে তো সাড়ে আটটা বাজে। আমরা কেউ এখনো খাই নি। তোমার খাবার টা আরও আগে দিতাম কিন্তু এতো কাজ সব একা হাত,,,
-“না মা কোনো সমস্যা নেই।
আপনি যান খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ুন গিয়ে।”
সারার কথা শুনে তিনি মুচকি হেঁসে খাবার এর প্লেট টা সেন্টার টেবিলে রেখে সারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে প্রস্থান নিলো।

সারা দরজা টা হাল্কা ভিড়িয়ে এসে হাত টা ধুয়ে খেতে বসে গেলো। পেটেও ভীষণ ক্ষুধা ছিল তাই কোনো দিকে আর তাকাল না।
খাওয়ার মাঝেই কাশি ওঠে গেলো আর ঠিক তক্ষুনি কেউ পানির গ্লাস ধরে সামনে সারা না দেখে পানি নিয়ে খেয়ে নিলো।কিন্তু পানি খাওয়ার পর গ্লাসে রাখতে গিয়ে হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই মাথা তুলে তাকাতেই দেখা মিলে স্বামী নামক ব্যক্তিটার।
রাহান বউয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
সারা লজ্জা পেলো।মুখ ফিরে উঠে যেতে নিলেই রাহান হাত ধরে আঁটকে দেয়।
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে

-“খাবার ফেলে কোথায় যাচ্ছো?”
-“আমার খাওয়া শেষ।”
-“আচ্ছা।
কিন্তু আমরা খাওয়া শেষ হয় নি।
বসো আমাকে খাইয়ে দাও।”
সারা চমকে উঠলো। হাত টা মোচড়ামুচড়ি করে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল

-“আপনি বসুন।
আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
-“আনতে হবে না।
তোমার হাতের টা খাইয়ে দাও।”

সারা আর কোনো বাক্য প্রয়োগ করলো না। সেভাবে বসে খাবার থালা হতে খাবার নিয়ে রাহান কে খাইয়ে দিলো রাহান তৃপ্তি করে খেলো সাথে খাওয়ার ফাঁকে সারার হাতে কামড় আর নিজের দানবীয় হাতের বেহায়া স্পর্শ তো আছেই। সারা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে।তবে একটা অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করেছে মেয়েটা দেহ মন জুড়ে।
খাবার শেষ এঁটো থালা রেখে নিজ হাত ধুয়ে রাহানের মুখ মুছিয়ে পানি খাইয়ে দিলো।
রাহান পুরো টা সময় বউয়ের দিকে তাকিয়ে রয়।

বিছানায় ফেলে রাখা গোলাপের পাপড়ি হাতে সারার উপর সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে।
সারা তবুও ফিরে তাকায় না যে মেয়ে টা কাল অব্দি লজ্জা পাচ্ছিল না আর আজ এখন এসে লজ্জায় বারংবার আড়ষ্ট হচ্ছে।

সারা নিজের চুল খোলে সে গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে বিনুনি করে।
রাহান ততক্ষণে বউয়ের একদম নিকটে এসে দাঁড়িয়ে। সারা মিররে দেখলো কিন্তু তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া করে না কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিক অস্বস্তি বোধ করে।
গলার নিচে নাকের ডগায় ঘাম চিকচিক করছে রাহান সব টা অবলোকন করলো।
আলগোছে নিজের দুই হাত সারার বাহুর উপর রেখে নিজের দিকে ফিরালো। সারা চোখ বন্ধ করে নিলো।রাহান হাসলো।এই মেয়ে ফোনে কি ফরফর করেই না কত কথা বলতো।
আর এখন দেখো লজ্জায় তাকাচ্ছেই না।

আমার তুমি পর্ব ৪৩

-“ঘুমিয়ে পড়বো?”
সারার কি হলো কে জানে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রাহান কে।
রাহান যেনো নিজের উত্তর পেয়ে গেলো।
এতো দিনের জমানো ভালোবাসা সব দিয়ে বউ কে উজাড় করে ভালোবাসলো।

আমার তুমি পর্ব ৪৫