তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২২

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২২
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

মেহতাবের কথাটা সৌরভের কর্নপাত হতেই । সে বলে ওঠে ,
সৌরভ : তাহলে আজকেই ফ্লাইটের টিকেট বুক করি কী বলিস দোস্ত । লাভ গুরুর পক্ষ থেকে উগান্ডা হানিমুন গিফট । ( মুচকি হেসে )

সকাল গড়িয়ে দুপুর । সবাই নিচের কেফ এ বসে গল্প করছে । মেহতাব আর মেঘ রুমে আছে । তাই তারা আর বিরক্ত করেনি । তাদের কেউ প্রাইভেসি দেওয়া উচিত । আহতাব আর অহনার নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নরমাল থাকলেও তারা ঝগড়ার অ্যাক্টিং করছে । সৌরভ তার বাকি বন্ধুদের টিম আর মিথিলার টিম আলাদা বসে আছে । সৌম আর মেহসান শান্তি বজায় রাখার কাজে নিযুক্ত । টিনার শরীর ব্যাথা করছে । সে ওয়াশরুমে ঘুমাচ্ছিল সে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এটাকে তার ঘুমের ওষুধ না খাওয়ার জন্য ঘুমের মধ্যে হাটাকে দায়ী করছে । কাউকে বলেও নি মজা করবে ভেবে । নিরব নিস্তব্ধ পরিবেশ । দুই দল তাদের চোখের ইশারায় তর্ক বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছে । সৌম আর মেহসান ক্ষণে ক্ষণে শুঁকনো ঢোক গিলছে আর পানি খাচ্ছে । আহতাব আর অহনা বেশ মজা পাচ্ছে । এই ছমছমে পরিবেশ সম্পর্কে অবগত নয় টিনা । টিনা এক ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তাদের মুখ পানে । বলে উঠলো ,

টিনা : কী হয়েছে ?
সকলের অগ্নি নিক্ষেপণ দেখে আগ বাড়িয়ে আর কিছু বললো না টিনা । নিরব দর্শকের মতো দেখতে লাগলো । জল কতটুকু গড়িয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে ।

মেহতাবদের রুমে মেঘ কোনো এক উপন্যাসের বই পরছে । মেহতাব মেঘের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আছে আর ল্যাপটপে কাজ করছে । মেঘকে সে দাড়ি বাইট দিয়েছে । তা সম্পর্কে সে অবগত ছিলো না । মেঘের নরম গালগুলো ফুলে গেছে । হয়তো তাই সে আজ নিচে যায় নি আর মেহতাব এর সাথে কথাও বলে নি বইয়ে মশগুল হয়ে আছে । মেহতাব কে আড় চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ বলে উঠলো ,

মেঘ : কিছু বলবেন ?
মেহতাব ইতস্তত করে বলে উঠলো ,
মেহতাব : ব্যাথা করছে মেডিসিন এনে দিবো ?
মেঘ : না ঠিক আছি ।
মেহতাব : ওকে ।

এই বলে সে রুম থেকে চলে গেলো । মেঘ একটা তপ্ত শ্বাস ফেললো । গালে হাত দিতেই ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো । সামান্য ব্যাথা কিন্তু ভীষণ জ্বলছে । সে বই রেখে বারান্দায় খোলা আকাশের পানে তাকিয়ে রইলো । লোকটার প্রতি অনুভুতিটা ভালোবাসায় পরিপূর্নরূপ ধারণ করেছে তা বুঝতে পারছে মেঘ । অপলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় লোকটার মুখের পানে ।

তার মুখে বিষন্নতার ছাপ এই ব্যাথার জন্য নয় বরং তার মন মধ্যিখানে মানুষটিকে নিজের করে না পাবার ব্যাথা যা সর্বক্ষণ ধাওয়া করে । উথালপাথাল করে দেয় তাকে । সে চায় নিজে মেহতাবের ভালোবাসার শিকড়ে জড়ানোর আগে মেহতাব যেন তাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নেয় । একটিবার যেনো মেঘকে নিজের অনুভুতি সম্পর্কে অবগত করিয়ে দেয় । বেশি কিছু নয় একটু ভরসা , আস্থা আর কিঞ্চিৎ ভালোবাসাই যথেষ্ট ।

পিছনে কিছুর শব্দে ভাবনার ছেদ ঘটে মেঘের । পিছনে তাকাতেই দেখতে পায় মেহতাব এসেছে হাতে অনেকগুলো প্যাকেটে ফল , চকলেট আর কিছু একটা নিয়ে । জিনিসটা নিয়ে এগিয়ে আসতেই মেঘ জিজ্ঞেস করে ,
মেঘ : কী এটা ?

মেহতাব উত্তর দেয় না বরং মেঘের অনেকটা কাছে চলে আসে সে । মেহতাবের হৃদস্পন্দনের আওয়াজ শুনতে পারছে সে । মেহতাব বিনাবাক্য খরচ করে একটু ক্রিম বের করে মেঘের গালে লাগিয়ে দেয় । মেঘের দৃষ্টি মেহতাবের মুখের পানে । আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে সে নির্ঘাত কিছু একটা করে বসবে । ক্রিমটা লাগানো শেষ হতেই সে কোনো রিয়েক্ট না করে সেখান থেকে নিচে চলে গেলো । মেঘকে লজ্জা পেতে দেখে মেহতাব আনমনে হাসলো । পিছনে চুলে হাত দিয়ে বলে উঠলো ,

মেহতাব : লাজুকতা মেয়েদের শোভা পায় । বউ আমার বড্ড লাজুক একটু বেশি । ( মুচকি হেসে )
সৌরভ : তাহলে দেরী কিসের উগান্ডার প্ল্যান টিকেট কেটে ফেলি ।
কারো আওয়াজ পেয়ে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো ,
মেহতাব : তোদের কী আর কোনো কাজ নেই ?

সিয়াম : হুমম গভীর প্রশ্ন । একটা এপস খুলবো ভাবছি ভালোবাসা ডট কম । দামে সস্তা ভালোবাসার বস্তা ।
মেহতাব কিছু বললো না ওদের কথায় হাসতে বাধ্য সবাই এই ভেবে বারান্দার সোফায় বসে পড়লো । রৌফ বলে উঠলো ,

রৌফ : দোস্ত আজকে একটা পার্টি আছে । মেয়েদের থেকে ছেলেরা যেন এগিয়ে থাকে । বি রেডি ।
সামির : পার্টিতে কী ভালো খাবার পাওয়া যাইবো ?
সৌরভ : তুই বরং বেগুনের সাথে বিয়ে করিস । কুমড়োর সঙ্গে গাঁয়ে হলুদ । ফুলকপির সঙ্গে ফুলসজ্জা । অধপেটুক একটা ।

সামির : তাহলে খাবো কাকে ?
সৌরভ : এটা তো ভেবে দেখিনি গুড কোয়েশ্চেন ।
সৌরভ আর সামিরের কথায় হাসিতে ফেটে পরলো সবাই মেহতাব ও তাদের সাথে যোগ দিলো ।

অহনার রুমে বসে আছে সবাই । টিনা সবার হাতে কিছু একটা ধরিয়ে দিলো । সবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে টিনা বলে উঠলো ,
টিনা : সিস এটাতে শাড়ি আছে হোয়াইট কালার সবার জন্য । সন্ধ্যায় পার্টি আছে । ছেলেদের থোতা মুখ ভোতা করে দিয়েই ছাড়ব ।

শাম্মী : উফফ এই প্রথম আমার মন জয় করে নিয়েছো টিন আপু এক বালতি চুমু ।
এই বলে শাম্মী টিনাকে চুমু দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো । টিনা অবাক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে বলে উঠলো ,
টিনা : আমাকে কী অপমান করলো না প্রশংসা ।
সিমরান : যাই হোক । সবাই আমাদের রুমে চলে আসো । ওখানে রেডি হয়ে নিবো । অহনা আর মেঘ ভাবীতো আছেই ।

মেঘ : আমি পার্টিতে থাকতে পারবো না ।
মিথিলা : কেনো ভাবী ? এমন করো না প্লিজ ।
অহনা : মেঘ আসবে আমার লাস্ট কথা নাহলে আমিও আসবোনা ।
মেঘ : আপু এমন করিস না আমার শরীর ভালো লাগছে না ।
অহনা : না কোনো কথা নয় । আপুর কথা রাখবি তুই নাহলে ভাববো তুই আমায় ভালবাসিস না ।
মেঘ : ব্ল্যাকমেল করছিস ভালো খুব ভালো । ( রাগ দেখিয়ে )
টিনা : হোয়াইটমেল এটা মেঘু ভাবী ।
টিনার কথায় সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো ।
টিনা : যাক ভাবীর মুখে হাসি ফুটলো । ( মুচকি হেসে )

সন্ধ্যা আকাশ । শীত হওয়ায় পার্টির আয়োজন সন্ধ্যার দিকে করা হয়েছে । মেহতাব একটা ব্ল্যাক শার্ট তার সাথে ব্ল্যাক প্যান্ট পড়েছে । চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিয়েছে । মেঘ এখনও রুমে আসে নি । তাই মেহতাব রেডি হয়ে নিচে মেঘকে খুঁজতে চলে গেছে । পথের মাঝখানে কাঁটার মতো সৌরভ আর তার দল দাড়িয়ে আছে ।
সৌরভ : বাহ্ ! দোস্ত কারো নজর না লাগে বড্ড রূপবতী তুই ।
সৌরভের কথায় মেহতাব মুচকি হাসলো ।

মেহতাব : হুম তাই নাকি বেশি দিন নেই সেই তো লান্ডান ব্যাক করতে হবে । তখন শোধ তুলবো । উগান্ডা হানিমুন গিফট করবো মিথিলার সাথে যাস ওকে ।
শেষ কথাটা আস্তে বলাতে বাকিরা না শুনলেও সৌরভের কান অব্দি পৌঁছেছে । সে শুঁকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলে উঠলো ,

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২১

সৌরভ : ওর চোখ এনাকণ্ডার মতো । কান ডাইনাছর এর মতো। কিভাবে জানলো শালায় ।
মেহতাব এর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো ,
সৌরভ : চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে , জেনে যাবে হবু জ্বালা জেনে যাবে ।
মেহতাব কিছুই বললো না তার চোখ এড়ানো এতো সহজ নয় । সৌরভের ভয়ার্ত কন্ঠে বলা কথায় হেসে দিলো ।
মেহতাব : জ্বালা নয় শালা হবে ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৩