তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২১

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২১
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

শীতের মৌসুম ভোরের রৌদ্রজ্জল মিষ্টি সকাল । সূর্যের দেখা মেলেনি কাঁচের জনালাগুলো বড় বড় পর্দা দ্বারা আবৃত । মেঘ আর মেহতাব বিছানায় শুয়ে আছে । মেঘ ছোট বাচ্চাদের মতো মেহতাববের উষ্ণ দেহতে মুখ ডুবিয়ে শুয়ে রয়েছে । কখন সে এই বুকে ঠাই নিয়েছে কারোই জানা নেই কনকনে শীত তাদের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছে । হুল্লোড় পার্টি থাকলে শীত কে পা ধরে সালাম করতো । গালে কিছুর খোঁচা খেতেই ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো সে ।

বলিষ্ঠ হাতের বাঁধন গুলো আরো শক্তপোক্ত হলো । মেহতবাকে নিজের সন্নিকটে দেখে চমকে উঠলো । অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও ব্যাথায় মেঘ চেঁচিয়ে উঠলো । মেহতাব পরিস্থিতি বোঝার জন্য ঘুম মগ্ন অবস্থায় শোয়া থেকে উঠে পড়লো । চুল গুলো কপালে এলোমেলো ভাবে পরে আছে তবুও তাকে সুদর্শন পুরুষ বলা যায় । মেহতাবের নজর গেলো খাটের পাশে পড়ে থাকা সুন্দরী রমণীর দিকে । মেঘ গালে হাত ডলতে ডলতে নিচে বসে আছে । মেহতাব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । বলে উঠলো ,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহতাব : নিচে বসে আছো কেনো ?
মেঘ কিছু বললো না কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো । মেহতাব উত্তরের আশা না করে শোয়া থেকে উঠে চুল গুলো ঠিক করতে করতে সৌরভদের ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো ।

রিসর্টের টপ ফ্লোর অর্থাৎ ছাঁদে ছোট ছোট গোল টেবিলে মেহতাব আর তার বন্ধুরা বসে আছে ।
সৌরভ সামির কে গুঁতিয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে বললো । সামিরের সেই দিকে মনোযোগ নেই তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা টেবিলের উপর সুন্দর করে সজ্জিত খাবার খাচ্ছে সে । সিয়াম ব্যায়াম করছে । রৌফ ছাঁদে দৌড়াচ্ছে । মেহতাব ফোনে নিউজ দেখছে আর কফি খাচ্ছে । সবাই নিজেদের কাজে ব্যাস্ত শুধু সৌরভ নিজে ছাড়া । সৌরভ বলে উঠলো ,

সৌরভ : পেটুক সামির খাবার গুলোকে আধমরা করা বন্ধ কর । আর সকিনার স্বামী মর্নিং দৌড় বন্ধ কর । এতিমখানার এটিএম ব্যা‍য়াম করা থামা বলছি । সবাই এদিকে আয় ।
সৌরভের কথায় সকলের মুখ চুপসে গেলো । মেহতাব ধোঁয়া ওঠা কফির মগটা সাইডে রেখে দিয়ে বললো ,
মেহতাব : প্লিজ নতুন কোনো ঝামেলা ক্রিয়েট করিস না । অনেক কাজ বাকি । I’m so busy .
রৌফ বলে উঠলো ,

রৌফ : দোস্ত এই পৃথিবীতে সৌরভ আজ পর্যন্ত যত ঝামেলার আবিষ্কার করছে ওই আবিষ্কারের সম্পদ দিয়া আজ ওয় উগান্ডার প্রেসিডেন্ট হইয়া যাইতো । সুং সাং সৌরভাং ।
সৌরভ আফসোসের সুরে বললো ,
সৌরভ : ইসস আমি ওই সকল আবিষ্কার উগান্ডার জন্য না করে তোর জন্য করেছি মেহতাব । ভাব আমি কতোটা উদার মনের অধিকারী । ( চুল ঝারা দিয়ে )
সিয়াম : ওহ নো ! তাইলে আজকেই পাবনায় খবর দিতে হইবো ।

সামির : পাবনায় কেন ?
সিয়াম : উগান্ডার প্রেসিডেন্টের তো পাবনার পাগলা গারদে থাকা উচিত । নয় কি ? মায়ের কোলে সন্তান আর বনের পশু বনে শোভা পায় ।
সৌরভ : থাম সমুদ্রের মাঝখানের আম ।
সিয়াম : হোয়াট এভার ।
সৌরভ : তো আসলে দোস্ত আমরা কিছু প্রশ্ন করবো তুই উত্তর দিবি তাইলে আমরা কোনো কথা কি কোন শব্দ ছাড়া লন্ডন এ ব্যাক করবো ।

মেহতাব : এমনিতেও তোদের জন্য অনেক দেরী করেছি । বেশি উল্টোপাল্টা কাজ করলে আই প্রমিজ আজই রওনা দেবো ।
মেহতাবের কোনো ভাবাবেগ না দেখে সৌরভ আর বাকিরা চারটা চেয়ার টেনে নিয়ে মেহতাবের সামনে বসে পড়লো । তাতেও মেহতাব গুরত্বরোপ করলো না সে ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করছে । সৌরভ ফোন টা কেড়ে নিলো । আর বলে উঠলো ,

সৌরভ : দোস্ত আমার নানার তার দাদার তার শ্বশুরের শালির কসম শেষ সুযোগ চাই ।
সবাই চাই চাই বলে সম্মতি জানালো । মেহতাবের অন্য কোনো উপায় না থাকায় বলে উঠলো ,
মেহতাব : দিস ইজ দা লাস্ট চান্স ওকে ?
সৌরভ : হুমমম ওকে । তো আমাদের প্রথম প্রশ্ন করবে লাল বাতি টিমের পক্ষ থেকে সিয়াম ।
সিয়াম একটু নিজেকে ঠিকঠাক করে নিলো। একটা শিট হাতে নিয়ে বলে উঠলো ,

সিয়াম : আপনি কে মেঘকে ভালোবাসেন ? অপশন রয়েছে ,
১.ভালোবাসি ।
২.ভালোবাসি ।
৩.ভালোবাসি ।
৪.ভালোবাসি ।
মেহতাব : ৫. কোনোটিই নয় ।
সিয়াম : এটা আমার অপশনে ছিলো না । দিস ইজ বাজে চিটিং ।
মেহতাব : যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর । চিটিং এর কি দেখলি ?
সৌরভ : দোস্ত সিয়াম বরাবর বাংলায় একটু কাঁচা লাল বাতি ক্ষমা পার্থী । এবার চুল কালো টিমের পক্ষ থেকে রৌফ নাই যার গোঁফ ।

রৌফ : করমু আমি বিয়া তোমাগো দাওয়াত দিয়া । তো আমার প্রশ্ন ,
ভালোবাসা বলতে কি বোঝেন আপনি ?
মেহতাব : ভালোবাসা ? এরকম টাইপ প্রশ্ন করলে আমি কিন্তু চলে যাবো প্লিজ অন্য কিছু আস্ক কর ।
সৌরভ : ওকে আর একজন বাকি তো আধপেটুক টিম থেকে সামির যার দিবাসপ্ন হলো সে বাদশা আমির ।
সামির : আমি সামির । বয়স ২৫ । একদম খাঁটি সিঙ্গেল । আমার জীবনে তিনটি সখ খাওয়া , খাওয়া আর খাওয়া ।
সৌরভ : আয় আয় সূর্য মামা বুদ্ধি দিয়ে যা সামিরের মাথায় একটু বুদ্ধি দিয়ে যা । মাথারে হরলিক্স খাওয়া যদি একটু বুদ্ধি হয় । টেকো মাথায় চুল গজাইতে পারলে মস্তিষ্কহীন মাথায় বুদ্ধির বীজ লাগানো কোনো ব্যাপার না ।

সামির : হে প্রভু , পেট টা আমার একটু খেতে ভালোবাসে ওকে কি করে অনাহারে রাখি আমি এতোটা নির্দয় নই ।
মেহতাব আর এক মুহূর্তও নষ্ট না করে নিচে চলে যায় । আর কিছুক্ষণ ওদের সাথে থাকলে মেহতাবেরও পাবনার পাগলা গারদে নিজেকে এডমিট করতে টিকিট কাটতে হতে পারে ।
নিজেকে ধাতস্থ করে মেহতাব রুমে প্রবেশ করতেই মেঘকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু লাগাতে দেখে থমকে যায় ।

মেহতাব : কী করছো গালে ব্যাথা পেলে কিভাবে ?
মেঘ কোনো উত্তর দেয় না । কিছুক্ষণ পর রিনরিনিয়ে বলে উঠে ,
মেঘ : আপনি দিয়েছেন ?
মেহতাব অবাক হয়ে যায় সে আবার কখন দিলো । নিজেকে ধাতস্থ করে বলে ওঠে,
মেহতাব : রেলি ? আমি তোমাকে হাউ ইজ ইট পসিবেল ?

মেঘ : কিভাবে আবার আপনার খোঁচা খোঁ‍চা দাড়ি দিয়ে ঘষা দিয়েছেন ।
সৌরভরা মেহতাবকে তার ফোন দিতে এসেই এই কথা শুনে থমকে যায় ।
সৌরভ : এটা আমি কি শুনলাম মেহতাব তো অনেক অ্যাডভান্স লাভ বাইট এর জায়গায় দাড়ি বাইত দিয়ে দিলো । আমি সামিরের মতো দিবাসপ্ন দেখছি‍ না তো ? দোস্ত একটা চিমটি দে তো ।
এটা বলতে দেরী তিনটে হাতের সজোরে চিমটি কাটতে দেরী হয়নি । সৌরভ ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো ,
সিয়াম : কী বেসুরে গলা ।

রৌফ : হুম উগান্ডার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট কিনা ।
সামির : উগান্ডায় কী ভালো খাবার পাওয়া যায় ?
সৌরভের আওয়াজ শুনে মেহতাব আর মেঘ দরজার দিকে দৃষ্টি পড়ে । মেহতাব আফসোসের সুরে বলে ওঠে ,
মেহতাব : নিজের বউয়ের সাথে ঠিকঠাক মতো কথা বলার সুযোগ নেই আবার রোমান্স । আমার মনে হয় উগান্ডার টিকেট কিনে ওখানেই হানিমুনের ব্যাবস্থা করতে হবে ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২০

মেহতাবের কথাটা সৌরভের কর্নপাত হতেই । সে বলে ওঠে ,
সৌরভ : তাহলে আজকেই ফ্লাইটের টিকেট বুক করি কী বলিস দোস্ত । লাভ গুরুর পক্ষ থেকে উগান্ডা হানিমুন গিফট । ( মুচকি হেসে )

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২২