তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২০

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২০
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

সবাই মেহতাবের রুমে চুপচাপ বসে আছে । সৌরভ , রৌফ , সামির , সিয়াম সোফায় বসে নিজেদের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে । সৌম আর মেহসান বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে । শাম্মী , সিমরান , মিথিলা বেতের টুলে বসে আছে । অহনা মেঘের পাশে বসে আছে । নিরব পরিবেশ সবাইকে এভাবে দেখে মেহতাব বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোরা সবাই একসাথে দরজায় কান পেতে ছিলি কেনো ? আর ভাবী শেষমেষ তুমি আর ভাইয়াও ওদের দলে যোগ দিলে । I can’t believe it .
অহনা : মেহতাব কী বলোতো আমি আসতে চাইনি তোমার ভাইয়া দেখতে মানে শুনতে চাইছিলো তোমাদের মধ্যে সম্পর্ক নরমাল কিনা । এ ছাড়া আমরা নির্দোষ ।
সৌরভ : ভাবী দোষ নির্দোষ প্রমান করছো কেনো ? এইডা কী কোর্ট । কারো ঘরে কান পাইতা কথা শুনা কোন দণ্ডনীয় অপরাধ থুরি ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সৌরভ কথা শেষে মেহতাবের দিকে তাকাতেই মেহতাবের দৃষ্টি দেখেই চুপসে গেলো । রৌফ বলে উঠলো ,
রৌফ : আসল কথা আমরা বেশি কিছু শুনি নাই দোস্ত । আজকে সবার কানের নেটওয়ার্ক এ প্রবলেম ছিলো । এই রিসোর্টে খুব দূর্বল নেট দেয় শুনতেই পাই নাই । দরজাগুলো ভালো মানের এই রিসর্টের মালিকের নামে কেস করা উচিত ।

সিমরান : নাম মেহতাব চৌধুরী ৬ ফুট উচ্চতা গাঁয়ের রঙ ফর্সা , জিম করা বডি , সিল্ক চুল । এই তার বর্ণনার সার্টিফিকেট যান খুঁজুন আর কেস ঠুকে দিন ।
সিয়াম : ভাইয়ের প্রশংসার বেলায় কোনো ত্রুটিই থাকে না । আই অ্যাম তো বিস্মিত ।
সিয়ামের কথা শুনে সবাই মুচকি একটা হাসি দিলো ।

পরক্ষণে রৌফের মনে পড়ে যায় এই রিসোর্ট তো মেহতাবদের নিজেরই । মার কাছে মাসির বাড়ির গল্প আরকি ।
সামির : আমার মনে হয় ফার্নিচার গুলা কাকলী ফার্নিচার । দামে কম মানে ভালো । তাই না দোস্ত ? ( মজা করে )
সৌরভ : এই সামিরের মাথায় কেউ শিলা পাথর ঘোষ তো তবুও যদি ধার হয়ে একটু বুদ্ধি হয় ।
শাম্মী : তবুও বুদ্ধি হবার নয় । মরিচা পড়ে গেছে কী করার বলো ?। ( মুচকি হেসে )

সিয়াম : চুপ থাক তোরা । আসল কথা আমরা নিতান্তই ভদ্র ছেলে দোস্ত । মেয়েগুলার সাথে মিশে আমরা নষ্ট হয়ে গেছি । আগে আমরা ছিলাম ভালো এখন আমাদের কী হলো ? ( সুর দিয়ে )
মিথিলা : ভাইয়া আমাদের নামে কী আজেবাজে কথা বলছো । এইসব তোমাদের দোষ ।
শাম্মী : ঠিক আমাদের নামে আজেবাজে কথা বলে ভাইয়ার কান ভাঙাচ্ছো ।

সিমরান : এই সব প্লান তো তোমাদের ছিলো আমাদের নয় । আমাদের মিস ইউজ করেছো‌ ।
সিয়াম : তোমরা কি পুকুরে ধোঁয়া তুলসী পাতা । মীরজাফর সবগুলো ।
মেয়েরা আর কিছু বলতে যাবে মেহতাব তাদের থামিয়ে বলে উঠলো ,
মেহতাব : ফর গড সেইক তোরা থাম সবাই ।
অহনা : চলো সবাই আজ থেকে আমরা মেয়েরা আলাদা ছেলেরা আলাদা দেখা যাক আমাদের হেল্প ছাড়া ওদের ক্ষমতা কতো ।

সৌরভ : ভাবী তুমি ওদের দলে যোগ দিলে শেষমেষ ।
অহনা : তোমাদের দলে আহতাব আছে । ওই দলে আমি নেই ।
এই বলে অহনা সহ বাকি মেয়েরা চলে গেলো । সৌম আর মেহসান হাই তুলতে তুলতে যেতে লাগলো । এই দেখে সৌরভ সহ বাকি সবাই ওদের মাথায় একটা একটা চাটি মেরে চলে গেলো । তা দেখে মেহসান বলে উঠলো ,
মেহসান : আমরা কী করেছি আমরা তো আম্পায়্যার ।
রৌফ পিছনে ফিরে মুচকি হেসে বলে উঠলো ,

রৌফ : এখানে কী কোনো খেলা চলছে যে তোরা আম্পায়্যার ।
সৌরভ , সামির আর সিয়াম রৌফের এমন কথা বার্তায় হেসে দিলো ।
মেহসান মাথা চুলকিয়ে যেতে লাগলো । সৌম বলে উঠলো ,
সৌম : So unfair . ( মুচকি হেসে )
মেহসান : হুমম । আমি আজ থেকে সন্ন্যাসী হয়ে যাবো । কোনো দলে থাকবো না যেখানে যাই সবাই শুধু ফ্রি ভেবে যা ইচ্ছা তাই করে ।

মিথিলা , শাম্মী আর সিমরান রুমে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো । বেড এ টিনা শুয়ে আছে । টিনার কথা তো তারা ভুলেই গেছিল। যে কিনা হেল্প করবে বলে প্রমিজ করেছে সে আরামসে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে । শাম্মী বলে উঠলো ,

শাম্মী : বাহ্ এতো সুন্দর দৃশ্য দেখার পর আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না।
সিমরান : হুম মজা দেখাই চল ।
মিথিলা : তোরা আজেবাজে কিছু করবি না ।
মিথিলার কথায় তারা কোনরকম গুরত্বরোপ করলো না । টিনাকে বিছানা থেকে হাত আর পা ধরে তুলে ওয়াশরুমে শুইয়ে দিলো । টিনার কোনো হুশ নেই সে আরামছে ঘুমাচ্ছে । মিথিলা আর কিছু বললো না । সবাই হাসাহাসি করে শুয়ে পড়লো ।

সৌরভদের রুমে সবাই রেগে বেশ আগুন হয়ে আছে । মেহসান সন্ন্যাসীদের মতো পোশাক পরিধান করে ধ্যাঁন করার ভঙ্গিতে বসে আছে । সৌম বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় চিপস খাচ্ছে । সামির সৌমের থেকে প্যাকেট কেড়ে নিয়ে নিজে খেতে শুরু করেছে । সৌরভ , সিয়াম , রৌফ সিরিয়াস ভঙ্গিতে সোফায় বসে আছে । তাদের উপর সব দোষ চাপিয়ে দিলো । সিয়াম বলে উঠলো ,

সিয়াম : দোস্ত এটা কি ছিলো, যত দোষ নন্দ ঘোষ।
রৌফ : ওই যে কয় না , গু খায় সব মাছে দোষ পড়ে পাঙ্গাস মাছের ।
সৌরভ : তুই কি ইন্ডিরেক্টলি আমাদের পাঙ্গাস মাছ বললি । তুই জানিস না আমার পাঙ্গাস মাছে এলার্জি ।
এই কথা শুনে মেহসান ধ্যানরত অবস্থায় ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি থামাতে লাগলো । সামির বিষম খেয়ে উঠলো । সৌম পানি দিতে গিয়ে সব পানি সামিরের গাঁয়ে ঢেলে দিলো । সৌম ইতোস্ত করে বলে উঠলো ,

সৌম : পানির অপর নাম জীবন । আমি তোমাকে আরেকটা জীবন দিয়েছি তাও আবার ঢেলে । ( মুচকি হেসে )
সামির রাগে গজগজ করে বললো ,
সামির : সৌম তোরে আজ বানামু আমি মমো । ( রাগ দেখিয়ে )
সৌম : ভালো লাগেনা সব সময় এতো খাই খাই করো কেনো ।
সামির : তোকে পরে দেখছি ।
এই বলে সামির ওয়াশরুমে ডুকে পড়লো । সৌম পরান যায় জ্বলিয়া গান ছেড়ে গলা ছেড়ে জোড়ে চিৎকার করে গাইতে লাগলো ,

সৌম : ঠান্ডায় যায় পুড়িয়া রে……….. । ঠান্ডায় যায় পুড়িয়া রে……….. ।
সৌমের গান শুনে মেহসান নিজেকে আর সামলাতে পারলো না সন্ন্যাসীবেশ ছেড়ে সে মুখ দিয়ে বিট বাজাতে বাজাতে গিটার চালানোর ভঙ্গিতে নাচতে থাকে । ওদের এলোাপাথাড়িভাবে নাচ দেখে রৌফ বলে উঠে ,
রৌফ : দাদীর কাছে শুনছিলাম বুড়া বয়সে পাটের ব্যাবসা আর এখন দেখি কিশোর বয়সে মুড়ির ব্যাবসা করতে হইবো ওগো। ( অবাক ভঙ্গিতে )
সৌরভ : আমি বাকরুদ্ধ স্বাধীনতা অর্জনের পরেও । ( মুচকি হেসে )
সিয়াম : হ্যাঁ আল্লাহ আমায় উঠাইয়া নেও । ( কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে )

আহতাব আর অহনার মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই তারা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে । তারা বুদ্ধি করে ওদের মধ্যে ঝামেলা পাকিয়ে দিয়েছে । বাকিটা আর তাদের কিছুই করতে হবে না । মেয়ে আর ছেলে দুই দল করে নিবে । তারা শুধু দেখবে ।

( মেহতাবদের রুমে )
মেঘ শাড়ি চেঞ্জ করে একটি বেগুনি রঙের শাড়ি পড়ে এসেছে । আর মেহতাবও একটা ব্রাউন টি শার্ট আর ট্রাউজার পড়েছে । মেঘকে দেখে মেহতাব বলে উঠলো ,
মেহতাব : সব ঠিকঠাক আছে শুয়ে পড়ো ।
মেঘ মেহতাবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,
মেঘ : আপনি ঘুমাবেন না ?

মেহতাব : আসলে আমি কালকে ফিরে যাবো না সো আগে থেকে বলে দিবো আমার এসিস্ট্যান্টকে যাতে ও কালকের দিন টা একটু ম্যানেজ করে রাখে । অনেক পেন্ডিং কাজ পড়ে আছে । I have no other option .
মেহতাবের কথা শুনে মেঘ ভীষণ খুশি হলো । কিন্তু অনুভুতি গোপনেই থেকে গেলো প্রকাশ করলো না বা তার প্রকাশ করার ক্ষমতাটুকু হয়তো নেই । মেঘের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে মেহতাব ভ্রু কুচকে বলে উঠলো ,

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৯

মেহতাব : তোমার হাজব্যান্ড তার ওয়াইফ এর জন্য থেকে যাচ্ছে । ওয়াইফের তো খুশি হয়ে হাজব্যান্ড কে জড়িয়ে ধরা উচিত নয় কি ? ( মলিন হেসে )
মেহতাবের কথায় মেঘ বিস্মিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো মেহতাবের মলিন , মুগ্ধকর মুখের পানে ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২১