তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৯

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৯
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

সবাই একসাথে গোল টেবিলে বসে আছে । সিয়াম , রৌফ , সামির মুখ কালো করে বসে আছে । তাদের হজম করতে কষ্ট হচ্ছে মেয়েগুলো তাদের ইজ্জতে আলপিন ফুটিয়েছে তাও আবার অধুনিক পদ্ধতিতে । সৌরভের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই সে বিন্দাসভাবে বসে কফি খাচ্ছে । মেঘ , মেহতাব , আহতাব আর অহনা চেয়ারে বসে আছে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে । মেহসানের ধ্যান ফোনে সে ফোনে গেমস খেলছে । মিথিলা , শাম্মী , সৌম আর সিমরান দাড়িয়ে সামিরদের দিকে তাকিয়ে আছে । নিরবতা ভেঙে শাম্মী বলে উঠলো ,

শাম্মী : হজম করতে কষ্ট হচ্ছে নাকি ? হজমের গুলি এনে দিই ? ( মজা করে )
সিয়াম : কচু গাছ এনে দে ফাঁস দিয়া মইরা যাই ।
রৌফ : দোস্ত আমার তো সন্দেহ হচ্ছে আমি কি আমার আব্বা – আম্মার ছেলে না ? যদি হই তাইলে আমার আব্বার মতো গোঁফ কই ? ( বেদনার সুরে )

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সামির : দোস্ত আগের জন্মে ছিলাম আমি বাদশা আমির এই জন্মে আমি গরীবের সামির ।
সিমরান : কথা সত্য । ( মুখ টিপে হেসে )
সামির : ভালো মানুষের কদর নাই ।
মেহসান : কেমন ছ্যাঁকা ছ্যাঁকা গন্ধ পাচ্ছি ।

রৌফ : চুপ থাক নইলে তোর ১ দিন কি আমাগো ৩৬৫ দিন ।
সৌরভ : ছ্যাঁকা ছ্যাঁকা লাগে , লাগে অন্তরে । ( সুর দিয়ে )
সামির : দোস্ত তুই ও । এই রাজাকারনীদের দলে যোগ দিলি ।
শাম্মী : ভাইয়া মুখ সামলাও । নইলে বিয়া করার আগেই বিধবা হয়ে যাবে তোমার স্ত্রী ।
সামির : ভাই আর বোন একরকম । পুরাই টাস্কি মার্কা ।
মেহতাব : তোরা থামবি শুধু আজেবাজে কথা ।

সৌরভ : চল দোস্ত উপরে গিয়া ঠান্ডা বাতাস খেয়ে ঝাক্কাস হয়ে আসি । প্লান তো করতে হবে নাকি চল । ( নিচু কণ্ঠে )
হুল্লোড় পার্টির সবাই সৌরভকে ফলো করে উপরে চলে গেলো । আহতাব আর অহনা নিজের রুমের উদ্দেশ্যে আর মেঘ আর মেহতাব নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো ।

মেঘ আর মেহতাব রুমে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো । খুব সুন্দর করে রুমের ডেকোরেশন করা হয়েছে । বারান্দায় সুন্দর করে ডিনারের ব্যাবস্থা করা । তারা বিছানায় দুটো প্যাকেটও দেখতে পেলো । একটা প্যাকেটের উপর মেঘের নাম আরেকটা প্যাকেটের উপর মেহতাবের নাম । প্যাকেট খুলতে তারা আরেকদফা অবাক হলো মেঘের প্যাকেট এ খুব সুন্দর একটা রেড আর ব্ল্যাক কম্বিনেশনের শাড়ি আর মেহতাবের প্যাকেটে ব্ল্যাক ব্লেজার , প্যান্ট আর রেড শার্ট । তাদের বুঝতে বাকি নেই এইসব চক্রান্ত কাদের । মেহতাব বলে উঠলো ,

মেহতাব : ওরা এতো পরিশ্রম করে যেহুতু এইসব করেছে । আমাদের ওদের পরিশ্রমের মান রাখা উচিত নয় কি ?
মেঘ মেহতাবের কথায় সম্মতি জানালো । মেহতাব ওয়াশরুমে ডুকতে ডুকতে বললো ,
মেহতাব : আমি রেডি হচ্ছি তোমার শাড়ী চেঞ্জ করা হয়ে গেলে ডোরে নক করো ।
মেঘ : হুম ঠিকাছে ।

এই বলে মেহতাব ওয়াশরুমে ডুকে পড়লো আর মেঘ রুমে শাড়ি চেঞ্জ করতে লাগলো । শাড়ি চেঞ্জ করে মেঘ মেকআপ করতে বসে পড়লো । সে বেশি গর্জিয়াস মেকআপ করতে পছন্দ করে না । সে চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে গাঢ় করে লাল রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছে। তাতেই যেনো তাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে । মেঘ রেডি হয়ে ওয়াশরুমে নক করে দিলো ।

কিছুক্ষণ পর মেহতাব ওয়াশরুম থেকে বের হলো । বের হতেই মেঘের দিকে চোখ পড়লো সে পা থেকে মাথা অব্দি স্ক্যান করলো মেঘকে । তাকে এতো অল্প সাজে কোনো পরীর থেকে কম লাগছে না চোখ ফেরানো দায় । মেহতাবকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ মেহতাবের দিকে একটা তুরি মারলো । মেহতাবের হুশ ফিরতেই সে ভীষণ লজ্জা পেলো । ব্লেজার পড়তে পড়তে মেহতাব বলে উঠলো ,
মেহতাব : You’re looking beautiful .

মেঘ : ধন্যবাদ । আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। ( হাল্কা হেসে )
মেঘের কথায় মেহতাব ছোট একটা হাসি দিলো । আর তারা দুজনেই একসাথে বারান্দায় প্রবেশ করলো । খুব সুন্দর করে গোল টেবিলটি সাজানো হয়েছে । টেবিলের চারপাশে বেলুন ভর্তি । মেহতাব একটা চেয়ার টেনে মেঘকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো । টেবিলে অনেক রকমের খাবার সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । তারা হালকা খাবার নিয়ে দুজনেই কিছু কথা বলে খেতে লাগলো ।

অন্যদিকে সৌরভ,সিয়াম,সামির, রৌফ,মেহসান,সৌম আর মিথিলারা ঝোঁপঝারে দাড়িয়ে দূরবীন দিয়ে মেহতাব আর মেঘকে দেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । সৌরভ বলে উঠলো ,
সৌরভ : বাহ! মেঘ আর মেহতাব কে অনেক সুন্দর লাগছে ।
মিথিলা : হুম সত্যিই অনেক সুন্দর!

মেহসান : তারা খাচ্ছে পোলাও বিরিয়ানি কোরমা আমরা খাচ্ছি মশার কামোড় ওহ মা !
সিয়াম : চুপ থাক । তোর কবিতার চেয়ে নর্দমার ময়লা গুলা বেশি সুন্দর ।
রৌফ : খাঁটি কথা শুনতেও ভালো লাগে ।
মেহসান : হুমম । তাহলে বিয়ের পর ওই নর্দমায় বাসর ঘর সাজিয়ে দিবো ওকে ? ( মজা করে )
সৌম : সহমত আমি । ( মুচকি হেসে )

এই কথা শুনে রৌফ আর সিয়াম মেহসান আর সৌমের মাথায় চাটি মারলো ।
সিমরান : সবারটাই ঠিক আছে । শুধু মিথিলা আপুর হবু বরের পোড়া কপাল ।
শাম্মী : হুমম ঠিক আপু ।
সৌরভ মিথিলার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন তুলে বললো ,
সৌরভ : কেনো বোনেরা আমার ?

সিমরান : কেনো আবার । মিথিলা আপু যেইরকমের আনরোমান্টিক তা আমরা সবাই জানি । নয় কি ?
সিমরানের কথায় সবাই মাথা নেরে সম্মতি জানালো । সৌরভ বলে উঠলো ,
সৌরভ : হুম ঠিক । বেচারা জামাইটার কথা ভাবলে আমার বুকটার ভিতরে ধুকপুক ধুকপুক করে ।
মিথিলা : ভাইয়া আপনাকে এতো ভাবতে হবে না । আমার জামাই তো রোমান্টিকের বাজার সে আমায় শিখিয়ে দিবে

সৌরভ : তাই নাকি । ( লজ্জা পেয়ে )
শাম্মী : তুমি কেনো লজ্জা পাচ্ছ । মিথিলা আপুতো তার হবু জামাইয়ের কথা বলেছে তোমার না । ঠিক বললাম কিনা ?

সবাই শাম্মীর কথায় একমত পোষণ করলো । সামির পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বলে উঠলো ,
সামির : থাম সবাই । এই জায়গা থেইকা ওগো কথা ভালো কইরা শুনা যাইতাসে না উপরে গিয়া কান পাইতা শুনতে হবে চল ।

সামির এর কথায় কেউ আর কথা বাড়ালো না । সবাই সামিরের পিছু পিছু উপরে চলে গেলো । রুমের সামনে আসতে তারা রীতিমতো অবাক সেখানে আগে থেকেই অহনা আর আহতাব কান পেতে দাড়িয়ে আছে । তা দেখে কেউ আর হাসি থামাতে পারলো না সবাই একসাথে উচ্চস্বরে হেসে ফেললো । হাসির শব্দ শুনে আহতাব আর অহনা চমকে উঠলো।

আহতাব : উফফ তোরা তো আমাদের ভয় পাইয়ে দিলি ।
সিয়াম : আজকের তাজা খবর নতুন দম্পতির ঘরে কান পেতে কথা শুনছে আরেক নতুন দম্পতি । এরকম আরো নিউজ পেতে চোখ রাখুন অসময় টিভিতে ।
সিয়ামের কথায় সবাই আরেকদফা হেসে নিলো ।
সিমরান : চলো আমরাও শুনি ।

সিমরানের কথামতো সবাই সিরিয়ালভাবে কথা শুনতে আহতাব আর অহনার পিছনে দাড়িয়ে পড়লো । আশেপাশের সবাই তাদের কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসতে লাগলো । তাদের ওইদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । তারা সবাই কথা শুনতে ব্যাস্ত ।

অন্যদিকে হালকা খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেঘ আর মেহতাব দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । মেহতাব মেঘের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলো তার ঠান্ডা লাগছে । তাই সে তার ব্লেজার খুলে মেঘকে পরিয়ে দিলো আর বললো ,
মেহতাব : এখন ঠান্ডা লাগছে ?
মেঘ : উহুম ।

কিছুক্ষণ পর মেহতাব মেঘের দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলো । মেঘ অবাক দৃষ্টিতে মেহতাব এর দিকে তাকিয়ে প্যাকেট টি হাতে নিল । প্যাকেট খুলতেই সে হতভম্ব হয়ে গেলো ।
মেঘ : এটা তো অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার স্কুলের শিক্ষিকা পদে নিয়োগ হওয়ার ।
মেহতাব : হুম । অহনা আপু আর তোমার দুজনের জন্যেই ।
মেঘ : আপনি কি করে জানলেন আমাদের দুজনের সপ্ন শিক্ষিকা হওয়ার ?

মেহতাব : এটা কোনো কঠিন কাজ ছিলো না । আর এমনিতেও আমি লন্ডনে ব্যাক করবো তুমি যাতে তোমার হাজব্যান্ডকে বেশি মিস না করো সেই প্রস্তুতি । তাই ভাবলাম তোমায় একটু ব্যাস্ত করে যাই । কেনো তুমি খুশি নোও ?
মেঘ : খুশি ভীষণ খুশি । থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ । ( হেসে )
মেহতাব : আমি তো ভেবছিলাম ওইদিনের মতো আবার আই লাভ ইউ বলে না ফেলো । ( মেঘের দিকে চোখ মেরে )

মেহতাবের কথায় মেঘ ভীষণ লজ্জা পায় । লোকটা লজ্জায় ফেলতে ওস্তাদ । লজ্জা পেতে দেখে মেহতাব বলে উঠলো ,
মেহতাব : তোমায় লজ্জা পেতে দেখলে ভীষণ ভালো লাগে । জানি না কেনো ? ( মুচকি হেসে )

মেহতাবের কথায় মেঘ এই নিয়ে আরেকদফা লজ্জা পায় । দরজায় কিছু শব্দ শুনে মেহতাব আর মেঘ দোলনা থেকে উঠে পড়ে । মেহতাব দরজা খুলতেই আহতাব অহনা সহ সবাই একসাথে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । সবাইকে এভাবে একসাথে দেখে মেঘ আর মেহতাব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । আহতাব মুচকি হেসে ইতস্তত করে বলে উঠে ,

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৮

আহতাব : আতা গাছে তোতা পাখি ডালিম গাছে মৌ , তুমি থাকো আমি যাই বউ । ( ইতস্তত করে )
বলতে দেরি কিন্তু আহতাবের দৌড় দিতে দেরী না । আহতাবের কান্ড দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২০