তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৩

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৩
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

সন্ধ্যার পার্টি সবাই যার যার মতো ইনজয় করছে । মেহতাব নিজের ফোনে কোনো জরুরি কল এটেন্ড করছে । সৌরভ একটা জুস নিয়ে তাকিয়ে আছে । রৌফ , সামির , সিয়াম তিনজনের নজর মেহতাবের দিকে । সৌম আর মেহসান প্রকৃতি কি অবস্থায় আছে আঁচ করার চেষ্টা করছে । বেশ কিছুক্ষণ পর মেহতাব কথা বলা শেষ করে ওদের সাথে একটা টেবিলে বসে পড়লো । মেহতাবকে আসতে দেখে সিয়াম বলে উঠলো ,

সিয়াম : দোস্ত মেঘ কই ?
মেহতাব : জানিনা তুই যেখানে আমিও সেখানে ।
সিয়াম সৌম আর মেহসান এর দিকে ইশারা করলো । তারা কথা না বাড়িয়ে মেয়েদেরকে খুঁজতে চলে গেলো । সবাইকে গোমড়া দেখে সবার মন ভালো করার জন্য রৌফ চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো ,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রৌফ : বিলকিসের মা ওঠ ।
সবাই নিজেদের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করলো রৌফ কাকে কথাটা বলেছে সেটা বোঝার জন্য । রৌফ কিঞ্চিৎ হেসে সামিরের কোমর জড়িয়ে ধরে বললো ,
রৌফ : রূপবতী হওয়া উচিত তোমার মতো । তোমার বিড়ালের মতো চোখ , কুকুরের মতো দাঁত, হাতির মতো নাক, বাদুড়ের মতো কান আমায় তোমার দিকে আকৃষ্ট করে প্রিয় । ওরে বিলকিসের মা চুল গুলা পাইকা গেছে হাওয়াতে ।

সিয়াম ফোরণ কেটে বলে উঠলো ,
সিয়াম : বিলকিসের মারে দেইখা ক্রাশের নামে বাঁশ খাইলাম ।

( মেহতাবদের রুমে )
অহনা মেঘকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে । সিমরান মেঘের মেকআপ করিয়ে দিচ্ছে । মিথিলা মেঘের চুলে গোলাপ ফুল লাগিয়ে দিচ্ছে । টিনা গহনা পড়িয়ে দিচ্ছে । শাম্মী বিছানায় আধশোয়া হয়ে তাদের কান্ড দেখছে আর হাসছে । সিমরান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো ,
সিমরান : এখানে শুয়ে আছিস‍ কেনো ? দেখ কেউ আসছে নাকি । একদম ঢুকতে দিবি না ।
শাম্মী : জো হুকুম হুজুর ।

এই বলে শাম্মী দরজায় ঠেস হয়ে দাড়িয়ে রইলো । তখনি সৌম আর মেহসান ঢুকতে গেলেই শাম্মীর পায়ের সাথে উষ্ঠা খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো । মেহসান বুকে ফুক দিয়ে বলে উঠলো ,
মেহসান : আপু কী করছো ? আমরা তো উভয় পক্ষ ।
শাম্মী তাচ্ছিললের সুরে বলে উঠলো ,

শাম্মী : ওরে আমার সিঙ্গারার আলু । তোদের ভালো করেই জানা আছে ।
মেহসান : সরো ভাবীকে দেখতে চাই ।
শাম্মী : উহুম একদম চালাকি না । নাহলে ছাদে শুকো দিয়ে শুঁটকি বানিয়ে দিবো ।
সৌম : দেখতে ভেটকি মাছের মতো আমাদের আবার শুঁটকি বানাবে আসামী একটা । (মজা করে)
শাম্মী আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠলো ,

শাম্মী : যা যা মাফ করে দিলাম ।
সৌম আর মেহসান কথা বাড়ালো না । ওরা চলে গেলে শাম্মী পিছনে মেঘ কে দেখেই মুখ হাঁ করে তাকিয়ে রইলো ।
সিমরান : মশা ডুকে যাবে ।
সিমরানের কথায় হুশ ফিরল শাম্মীর।
শাম্মী : হায়! হায়! কারো নজর না লাগে ।

সবাই নিচে বসে বোর হচ্ছে । সৌরভ মুখে তালা দিয়ে রেখেছে । মেহতাব ফোনে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছে আর আহতাবের সাথে ডিসকাস করছে । সিয়াম , রৌফ চুপচাপ বসে আছে । সৌম আর মেহসান ফোনে মগ্ন । সামির পরিস্থিতি ঠিক করতে বলে উঠলো ,
সামির : এক বনে এক সাহসী ছেলে ছিলো ।
মেহসান ফোন থেকে মাথা তুলে বলে উঠলো ,
মেহসান : নাম নিশ্চয়ই সামির ।

সামির : তুই বুঝলি কেমনে ? ব্রেইন হ্যাক করে নিয়েছিস নাকি । ( অবাক ভঙ্গিতে )
সবাই সামিরের ভঙ্গি দেখে হেসে নিজেদের কাজে মন দিলো । তৎক্ষণাৎ মেঘ আর বাকিদের নিচে নামতে দেখে সবার দৃষ্টি সিড়ির দিকে গেলো । মেহতাবের নজর কেড়ে নিলো সাদা শাড়ি পরিধানরত রমণী । চোখে গাঢ় কাজল , ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক , মাথায় লাল গোলাপ । যাকে বলা যায় কোনো কিছুর খামতি নেই । মেহতাব কে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে উপস্থিত সবাই হেসে দিলো । সৌরভ মুখ খুলে বলে উঠলো ,

সৌরভ : দোস্ত এটা মেঘ তোরই বধূ এমন ভাবে দেখছিস যেনো প্রথমবার দেখলি ।
সৌরভকে চিমটি মেরে থামতে বললো আহতাব । আহতাব মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,
আহতাব : শালিকা তোমায় দেখে তো মেহতাব কল্পনাতে ডুব দিয়েছে ওকে বাঁচাও ।
আহতাবের কথায় সবাই হেসে দিলো । হাসলো না মেহতাব । মেঘ লজ্জা পেলো প্রকাশ করলো না । মেয়েরা এসে সবাই এক টেবিলে গোল করে বসলো । মিউজিক চালানো হলো । মুহূর্তেই রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হলো । সবাই ডিনার পার্টির জন্য ভালো ভালো খাবার অর্ডার দিয়েছে । খাবার এসে পড়েছে সঙ্গে পার্টি আরো রসালো করার জন্য টিনা আর সামির এক পাশে এসে পড়লো । টিনা বলে উঠলো,

টিনা : একটা প্লান আছে । আমি আর তুমি এখানে সবচেয়ে অকাজের চরিত্র । তো আমাদের কে আরো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে হবে । তাহলে কোম্পানিতে মেহতাব আমাদের দুজনকে প্রমোশন করিয়ে দিতে পারে ।
সামির : টিনা এমন কিছু করিস না বইন যাতে মেহতাব প্রমোশন তো ধুর চাঙায় তুইলা রাখে ।
টিনা : নো টেনশন ওদের বিয়ে আরো রসালো করবো জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ ।

সামির : আমি জানতাম না তুমি বাবুচি গিরি করতে পারো ।
টিনা মুচকি হেসে টেবিলে এসে বসে পড়লো । সামির কে ইশারা করতেই ও উপরে চলে গেলো । সবাই যার যার মতো খাচ্ছে । সৌরভ পা দিয়ে মিথিলার পায়ে গুতো দিচ্ছে । মিথিলার অগ্নি দৃষ্টি দেখেও থামে নি সে । মিথিলা কেশে বলে উঠলো ,

মিথিলা : সিমরান , শাম্মী আমার পায়ে কিছু একটা পড়েছে দেখ না প্লিজ ।
সৌরভ এই কথা শুনে পা নিজের জায়গায় গুটিয়ে নিলো ।
মেহতাবের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে ওঠে ,
সৌরভ : দোস্ত আমারে কিছু মেয়েদেরকে পটানোর টিপস দে । লাভ গুরু তোরে ময়মসিংহগামী ট্রেনে হানিমুনের টিকেট কাইটা দিবো । ফ্রীতে ট্রেভেল আর হানিমুন হইয়া যাইবো । এক ঢিলে দুই পাখি আর কী ।
মেহতাব বিষম খেয়ে উঠলো সৌরভের কথা শুনে । সৌরভ হা করে তাকিয়ে রইল সে ভুল কিছু বলেছে নাকি ? মেঘ মেহতাব কে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো ।

মেঘ : এই নিন ।
মেহতাব পানি এক ঢোকে শেষ করলো । মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,
মেহতাব : থ্যান্ক ইউ মেঘ ।
সবাই যার যার খাওয়া শেষ করে ফেললো । সামির সবাইকে ড্রিংক সার্ভ করে দিলো । মেঘ ড্রিংক করবে না । সামির বলে উঠলো ,

সামির : ডোন্ট ওয়ারী ভাবী এটা আ্যলকোহল না ফ্রুট জুস।
সামির মেঘকে জোর করে ধরিয়ে দিলো । সামির কে মেহতাব বলে উঠলো ,
মেহতাব : তোরা আজেবাজে কিছু করবি না । আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২২

সামির : দোস্ত ওইটা ফ্রুট জুস সত্যি রৌফের দাড়ির কসম ।
রৌফ চিবুকে হাত দিয়ে বললো ,
রৌফ : কিন্তু আমার তো দাড়ি নাই ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৪