তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৪

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৪
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

সবাই ডিনার করে একসাথে বসে আছে । সবার হাতে ড্রিঙ্কস মেহতাবের বাদে । টিনা ফিসফিস করে সামিরের কানে কিছু বলে দিলো । সামির কথামত মেঘ আর মেহতাবের ড্রিঙ্কস এ ট্যাবলেট জাতীয় কিছু একটা মিশিয়ে দিলো । সামির ড্রিঙ্কস নিয়ে মেহতাব কে জোর করে ধরিয়ে দিলো । মেঘ নিতে না চাইলে সামির টলমল চোখে তাকাতেই নিতে বাধ্য হলো মেঘ । সবাই ভালো লেভেলের ড্রিঙ্কস করে নিয়েছে । কেউ দুলছে তো কেউ উল্টোপাল্টা কথা বলছে । টিনার বুঝতে বাকি নেই সামির সবাইকে আ্য‍লকোহল দিয়েছে ফ্রুট জুসের বদলে ।

অকর্মন একটা এই ভেবে সে সবাইকে যার যার রুমে দিয়ে আসার চেষ্টা করছে । সবাইকে নিয়ে সামির আর টিনা চলে গেলো মেঘ আর মেহতাবকে বাদে তাদের জন্য আজ বাসর ঘর সাজাবে এই প্লান ওদের । ওদের কাছাকাছি আনলে ওদের ঝামেলাও ঘুচে যাবে আর টিনাকেও ক্ষমা করে দিবে । যতই হোক সে মেহতাবের খারাপ অন্তত চাইনি । সে ভালো থাকুক এটাই তার প্রত্যাশা । এই ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেলে সামির আর টিনা সবাইকে রুমে দিয়ে আসার জন্য নিয়ে গেলো ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহতাব আর মেঘ দুজন পাশাপাশি বসে আছে । টেবিলে হেলান দিয়ে দুজন দুজনকে দেখছে মেঘ মেহতাবের দিকে আর মেহতাব মেঘের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । মেঘ বলে ওঠে ,
মেঘ : আপনি এতো সুদর্শন কেনো ? আপনার মতো এতো সুদর্শন পুরুষ পৃথিবীতে একজনকেও দেখিনি ।
মেহতাব মুচকি হেসে মেঘের কপালের উপর পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দেয় । বলে ওঠে ,
মেহতাব : তোমার দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সুন্দর আর আমি তো তোমারই অর্ধেকঅঙ্গ । তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী । প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে শ্রেষ্ট সুদর্শন পুরুষটি হচ্ছে তার স্বামী ।

মেঘ : আপনি এতো রোমান্টিক কথা বলছেন । আজ কি হলো সাহেব ?
মেহতাব : জানিনা আমি যখনই তোমাকে দেখি আমি ভুবন ভুলে যাই কেবল তোমাকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা অনুভব করি । আমি যখনই তোমাকে আমার পাশে একাকী পাই তখন আমি তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ হারাতে পারি না ।
মেঘ মুচকি হাসে নিজের মুখটাকে মেহতাবের আরো কাছে এনে ভালোবাসার স্পর্শ দেয় কপালে । মেহতাব মেঘের আরো কাছে চলে আসে । টিনা আর সামির নিচে এসে ওদের এতো কাছাকাছি দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে ।

টিনা : সামির আমি যা দেখেছি তুমিও কী তাই দেখেছো ?
সামির : আমি এমনি আধপাগল আমার দেখায় কিছু যায় আসে না ।
টিনা : কথায় যুক্তি আছে ।
সামির রাগী দৃষ্টিতে তাকায় টিনার পানে । টিনা ইতস্তত করে বলে ওঠে ,
টিনা : সরি ভুল হয়েছে । এখন কী করবো এই দুই চাতক পাখিকে নিয়ে ।
টিনা আর সামির উপরে চলে যায় । কোনো স্টাফের সাহায্য নিতে মেঘকে নিতে পারলেও মেহতাব কে তুলতে পারবে না তারা । আর রুমও তো সাজাতে হবে ।

মেঘ মেহতাব কে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় । বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে বলে উঠে ,
মেঘ : আপনি বড্ড খারাপ আমায় ভালোবাসেন না , অনুভব করেন না ।
মেহতাব মেঘের হাত তার বাম বুকে চেপে ধরে । মেঘ অনুভব করতে পারছে মেহতাবের হার্টবিট বিদ্যুতের বেগে চলছে । মেহতাব মেঘের চোখে চোখ রেখে বলে উঠে ,

মেহতাব : কিছু জিনিস শুধু দুর থেকে অনুভব করা যায় ধরা ছোঁয়া যায় না । এই হৃদয়ে তোমার জন্য ব্যাকুলতা অনুভব করতে তোমার কি ধরা ছোঁয়ার প্রোয়জন ?
মেঘ ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে মুচকি হেসে নেশালো কণ্ঠে বলে ওঠে ,
মেঘ : না আপনার কিঞ্চিৎ ভালোবাসাই যথেষ্ট এই মেঘকে অনুভব করিয়ে দিতে । এই সাহেব মেঘের একান্ত মেঘের ।
মেহতাব স্মিত হেসে বলে ওঠে ,

মেহতাব : তোমার ঠোঁটের হাসি যথেষ্ট আমায় অনুভব করিয়ে দিতে যে তুমি আমার । ভীষণ ভালোলাগে যখন তুমি আমার চোখে চোখ রেখে তাকাও তোমার চোখের এক চাহনি আমায় বিশ্বাস করিয়ে দেয় তুমি আমার শুধু আমার । তোমার মুখের চাহনি আমার মনের ছবিতে আকা হয়ে গেছে চাইলেও তা ছিঁড়ে ফেলা সম্ভব নয় । তোমার ঠোঁটের হাসি আমার বুকে গেথে গেছে চাইলেও তা মুছে ফেলা সম্ভব নয় । আসলে তুমি টাই এই মেহতাবের সব । এই সাহেব তোমায় বড্ড চায় অনেক চায় ভীষণভাবে চায় অর্ধাঙ্গিনী ।
মেহতাবের প্রকাশ্য কথাগুলো আজ বেশ ভালো লাগছে শুনতে মেঘের কাছে । মেঘ মেহতাবের চোখে দৃষ্টি রেখে বলে ওঠে ,

মেঘ : ভালোবাসেন আমায় ?
মেহতাব উত্তর দেয় না কোলে তুলে নেয় তার প্রিয়তমাকে ।
সকাল হয়ে গেছে । বাইরে কুয়াশার কারণে জানালায় পানির সূক্ষ কণা জমে আছে । মেঘ বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে । মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে । মেঘ শোয়া থেকে উঠে পরে ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৩

আসে পাশে তাকায় মেহতাব কে খুঁজতে মেহতাব ঘরের কোথাও নেই । মেঘ হাই তুলে নিজের গায়ে মেহতাবের শার্ট দেখে থমকে যায় । কালকের ঘটনা কিছুই মনে পরছে না তার । তারাতারি বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে । ফ্রেশ হয়ে বের হতেই তার চোখ যায় বিছানার পাশে টেবিল ল্যাম্প এর দিকে । তার পাশে চিরকুট জাতীয় কিছু রাখা । মেঘ চিরকুট খুলতেই থমকে যায় ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৫