তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৫

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৫
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

মেহতাব একমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে । সৌরভ , রৌফ , সিয়াম বুঝতে পারছে না হঠাৎ মেহতাব কাউকে না বলে লন্ডনের উদ্দেশ্যে কেনো রওনা হয়েছে । অজানা ভয় তাদের গ্রাস করেছে । অন্যদিকে সামির বুঝতে পারছে মেহতাবের এহেন আচরণের কারণ কিন্তু ভয়ে সে চুপ হয়ে আছে । মেহতাব গাড়ির মিরোর গ্লাস দিয়ে সকলের ভয়ার্ত মুখ দেখে স্মিত হাসলো । নিরবতা ভেঙে শুধালো ,

“কে করেছে এই কাজ”?
কেউ কিছু বুঝতে পারলো না সামির ছাড়া । মেহতাব আবার শুধালো ,
“আমাদের ড্রিংকসে আ্যলকোহল আসলো কিভাবে? আই নিড এন্সার হারি আপ”
সৌরভ বলে উঠলো ,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“দোস্ত আমার ভালোবাসার কসম আমি কিছুই জানি না এই বিষয়ে”
রৌফ বলে উঠলো ,
“দোস্ত আমার পাঁচ বংশের কসম আমি কিছুই জানি না এই বিষয়ে আমার কোনো হাত নাই”
সিয়াম বলে উঠলো ,

“আমার বাবার তৈরি এতিমখানার কসম আমিও জানি না । মনে হয় রৌফ করছে জলজ্যান্ত প্রমান ওর দুটো হাত”
সবাই সিরিয়াস ভাবে সিয়ামের দিকে তাকালো । সিয়াম ইতস্তত হেসে চুপ হয়ে গেলো । সবার কথা শেষে সামিরকে কিছু বলতে না দেখে সবাই সামিরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ।সামির ইতস্তত করে মুখ ফুটে বলে উঠলো ,

“যাহা বলিব সত্য বলিব সত্য ছাড়া কিছু বলবো না । দোস্ত মাফ কইরা দে । এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে আশা করি নাই । আসলে আমি কালকে এলকোহল মিশ্রিত ড্রিঙ্কস এর মধ্যে টিনার কথা মতো নেশার ট্যাবলেট মেশানোর বদলে টিনার ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছি । আই ছোয়্যার তোদের মধ্যে কিছু হয় নাই । আমরা যখন নিচে এসেছিলাম স্টাফকে নিয়ে তখন অলরেডি তোরা ঘুমাচ্ছিলি । আর টিনা মেঘের শাড়ি চেঞ্জ করে দিয়েছে কমফোর্টেবল এর জন্য । তোরা সাক্ষী আমি যদি মিথ্যে বলে থাকি আমার জীবনেও বিয়ে হবে না”

সামিরের কথা শেষ হতেই মেহতাব তপ্ত শ্বাস ফেলে গাড়িতে জোড়ে ব্রেক কষলো । সবাই পড়তে পড়তে বেচেঁ গেলো । মেহতাব বলে উঠলো ,
“আমাদের মধ্যে কিছু হয়ছে কী হয় নি এই নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই । মেঘ আমায় ভুল বুঝুক আই কান্ট একসেপ্ট দিস । বাই চান্স ও যদি ভুল বুঝে তোকে আমি বিক্রি করে দিবো সামির গড প্রমিস । গাড়ি থেকে নাম তোরা”

সবাই ভদ্র বাচ্চাদের মতো নেমে পড়লো । মেহতাব বলে উঠলো ,
“শুরু কর”
সবাই জানে মেহতাব তাদেরকে দিয়ে কী করাতে চাইছে । সৌরভ আশেপাশে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ,
“দোস্ত এইটা তো পার্ক মান সম্মান সমুদ্রে মিশা যাইবো । অন্য কোনো শাস্তি… আর এমনিতেও সামিরের সব দোষ আমরা কিছু করছি নাকি”?

মেহতাব শয়তানি হাসি দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে যাবে । সবাই কান ধরে উঠবস করতে শুরু করলো । মেহতাব ছোট একটা হাঁসি দিয়ে কাউন্ট করতে শুরু করলো । শাস্তি শেষে সবাই কোমরে হাত দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো । রৌফ বলে উঠলো ,

“আমি মেঘের কাছে বিচার দিমু”
“মনে হয় ডোস টা কম পড়েছে । আরেকবার হয়ে যাক কি বলিস”? (মেহতাব)
রৌফ সবার দিকে আঙুল তাক করে বলে উঠলো ,
“এই কে কইলি মেঘের কাছে বিচার দিবি । হেরে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওই কূলে পাঠাইয়া দিমু”
মেহতাব স্মিত হেসে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো ।

মেঘ রুমের বারান্দার দোলনার উপরে মুখ গোমড়া করে বসে আছে । এক তার কালকে রাতের কোনো ঘটনাই মনে নেই , দুই মেহতাব তাকে না বলে কয়ে সামান্য একটা বিদায় না জানিয়ে আচমকা চলে গেছে । টেবিলে লেম্পের পাশে রেখে গেছে ১ হাজার টাকার ৮ টা নোট আর একটা ক্রেডিট কার্ড । সঙ্গে চিরকুট স্পষ্ট লেখা ।

“আমি লান্ডান ফিরে যাচ্ছি একটা আর্জেন্ট কাজ এসে পড়েছে । গিয়েই মিটিং এর ব্যাবস্থা করতে হবে । আর তোমার যদি কোনো জিনিসের দরকার পড়ে কন্টাক্ট মি ওকে । আমায় বলতে প্রবলেম হলে সমস্যা নেই আমি আম্মুকে বলে দিবো । টেক কেয়ার”

ব্যাস এই কথা ভাবতে ভাবতে মেঘ এক ধ্যাঁনে দোলনায় বসে আছে । তার মনে বিষণ্ণতার মেঘ ছেয়ে গেছে । সকালে নাস্তার টেবিলেও যায় নি । কারো পায়ের শব্দ পেতেই মেঘ সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো । অহনা , শাম্মী , সিমরান আর মিথিলা এসেছে । অহনার হাতে খাবারের প্লেট । মেঘকে মনমরা দেখে অহনা বলে উঠলো ,
“কী হয়েছে তোর? নাস্তা করতে আসলি না কেনো ? মেহতাব আর সৌরভদেরও দেখতে পেলাম না”

মেঘ ওই চিরকুট কার্ড আর টাকা অহনার দিকে এগিয়ে দিলো । অহনা চিরকুট টা হাতে নিলো তার ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো । বলে উঠলো ,
“কী এগুলো”?
“ভাবী চিরকুটে কিছু লেখা আছে”

অহনা চিরকুট আওয়াজ করে পড়লো । মেঘের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ,
“কী এমন আর্জেন্ট কাজ পড়েছে ? যে ও আমাদের কাউকে বিশেষ করে তোকে কিছু না বলে লন্ডনে চলে গেলো”
মেঘের মেহতাবের কথা আবার মনে পড়তেই চোখ ছলছল করে উঠলো ,
“শেষ কথা তো দূর দু চোখ ভরে দেখতেও পেলো না । বলতে পারলো না তার ভালোবাসার কথা গোপনেই রয়ে গেলো”

সকাল গড়িয়ে বিকেল । সবাই ব্যাগ প্যাক করে নিয়েছে । আজই রওনা দিবে । মিথিলা , শাম্মী , সিমরান আর সৌম এখান থেকে বাসায় যেতে চেয়েছিল । অহনা , মেঘের জোরাজোরিতে একদিন থেকে যাবে তারা । সৌম , মেহসান ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করছে মেহতাব বা সৌরভদের আপডেট স্ট্যাটাস দেখার জন্য । টিনা এখান থেকে এয়ারপোর্টে গিয়ে লন্ডনে যাবে কোম্পানিতে জয়েন করতে আর মেহতাবকে বলে তার ভালো কাজের ক্রেডিট নিয়েই ছাড়বে সামিরকে একা ভোগ করতে দিবে না কিছুতেই না । সবাই টিনাকে আর কয়দিন থাকতে বলেছে সে শোনেনি ।

আহতাব সব ব্যাগ, সুইটকেস গাড়িতে তুলে সবাইকে ডাকতে এসেছে । সবাইকে এভাবে মনমরা দেখে শুধালো ,
“বধূ , শালীকা আর আমার ভাই-বোনেরা তোমরা এতো মন খারাপ কেনো করছো । মেহতাবরা আবার আসলে আমার তরফ থেকে ককটেল পার্টির অ্যারেঞ্জ করবো । সবাই খুশি তো” ?

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৪

সবার মুখে আহতাবের কথা শুনে একটু হাসি ফিরলো । অহনা মেঘকে সামলে নিয়েছে । আহতাবের কথা মতো সবাই গাড়িতে উঠে পড়লো ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ২৬