আমার তুমি পর্ব ৩৭

আমার তুমি পর্ব ৩৭
জান্নাত সুলতানা

রিধি হলুদের সাজে বসে আছে স্টেজে। সামনে পেছনে মানুষ গিজগিজ করছে।
রিধির হাসি-হাসি মুখ করে বসে আছে।অথচ বুকের ভেতর এক তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। কেন এমন হলো তার জীবন টা? এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।আচ্ছা সে নাহয় তখন ছোট ছিল। কিন্তু ওয়াজিদ? সে কি ঠিক ঠাক একজন প্রেমিক যা করে তা ছিটেফোঁটাও করতো রিধির জন্য?

সব টাই কি রিধি ইচ্ছে করে করেছে?ওয়াজিদ এর বুঝি ভুল ছিল না?ভুল টা রিধি করেছে কিন্তু তার কারণ টা তো ওয়াজিদ ছিল।সে কি সময় দিতো রিধি কে?রিধির আজ খুব করে মনে হচ্ছে তখনকার সব টার জন্য ওয়াজিদ দায়ী। কখনো কি রিধি কে সময় দিয়েছে হাতে হাত রেখে এক সাথে হেঁটেছে?না সে শুধু ভালোই বেসে গেছে কিন্তু ভালোবাসলে হয় না ভালোবাসার মানুষ টার জন্য সত ব্যাস্ততার মাঝেও একটু সময় বেড় করে ভালো মন্দ জিগ্যেস করতে হয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সে কি করেছে তেমন কিছু সে তো তখন নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত ছিল। আর যখন রিধি ভুল টা করে ছিল তখন কি একবারও রিধির পাশে থেকে সেই ভুল টা কে শোধরে দেওয়ার চেষ্টা করেছে? উল্টো নিজে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে দূর দেশে পাড়ি জমিয়ে ছিল।
রিধি আর ভাবে না।আর আজকের পর আর ভাববেয়েও না ভুলে যাবে সব। তার জীবনের সাথে যেই নতুন জীবন টা জুড়তে যাচ্ছে তাকে নিয়ে ভাববে।

শুনেছে সেও ডক্টর দেখতেও না-কি সুদর্শন।আর তাছাড়া একটু পর তো আসবেই তখন না হয় দেখে নিবে।
কিন্তু রিধির ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সারা এসে জানালো ছেলে আসে নি। ছেলর না-কি ইমারজেন্সী কেস পড়ে গিয়েছে। ছেলের কাজিন আর বন্ধুরা এসছে হলুদ নিয়ে।

এতে অবশ্য রিধির কিছু এসে গেলো না কারণ হলুদের সময় ছেলেও মেয়ের বাড়ি আসে এটা জানতো না। তাছাড়া বিষয় টা ভালো দেখায় না। কিন্তু ছেলে না-কি নিজে থেকে আসবে বলেছে তাই কেউ আর না করে নি।
রিধি ভাবে মাত্র তো আর কয়েক ঘণ্টা ব্যবধান তার পর তো সরাসরি দেখতে পারবে।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ রিধি ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে।কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।কেমন জানি সব এলোমেলো লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে। রিধির আর ঘুম আসে না ওঠে বসে ফোন হাতে ওয়াজিদ এর পিক গুলো দেখতে দেখতে চোখ হতে জল গড়িয়ে পড়ে। কেন একটু বিশ্বাস করলো না তাকে?কেন সব টা না জেনে তাকে ভুল বুঝলো?

রিধি ভাবনার মাঝেই রিধির হাতে থাকা ফোন টা সশব্দে বেজে ওঠে।
অপরিচিত নাম্বার থেকে ভ্রু কুঁচকে আসে।ধরবে কি ধরবে না দ্বিধা করতে করতে ফোন টা কেটে গেলো।
রিধি যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। তার কারণ রিধি ভাবছে যদি যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে হয়?
রিধি ফোন টা হাত থেকে বালিশের তলায় রাখতে যাবে ঠিক তখুনি আবার ফোন টা বেজে উঠল।
রিধি ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে রাশভারী কণ্ঠে ওয়াজিদ জিজ্ঞেস করলো

-“ঘুমিয়ে ছিলে?”
রিধি কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না।এতো কিছুর পরেও এতো টা স্বাভাবিক কি করে ওয়াজিদ?
-“শুয়েছি মাত্র।”
-“আসতে পারি নি বলে রাগ হয়েছে?
আসলে জরুরি একটা কেস পড়ে গিয়ে ছিল।”
-“এসব কেন আমাকে বলছেন?
তাছাড়া আপনার আসার না আসায় আমার কি আসে যায়?”
ওয়াজিদ এর কথা শুনে রিধি অবাক হয়ে বলল।
ওয়াজিদ আবারও খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠে

-“আসে যায়।
নিজ ইচ্ছে আসতে চেয়েছিলাম।”
-“আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।”
রিধি ওয়াজিদ এর কথা কিছু বুঝতে পারছে না তাই আগের ন্যায় আবার অবাক হয়ে বলে।
ওয়াজিদ রিধির কথা মুচকি হাসে যা রিধি ফোনের মাঝেও বুঝতে পারে।
ওয়াজিদ ফিসফিস করে ফোন টা মুখের সামনে ধরে বলল

-“বুঝতে হবে না সুইটহার্ট।
কাল সারপ্রাইজ আছে।”
কথা টা শেষ ওয়াজিদ খট করে ফোন কেটে দেয়।
আর রিধি এদিকে সারা রাত ভাবতে থাকে ওয়াজিদ কিসের কথা বলল?কি সারপ্রাইজ আছে?

বিয়ে বাড়ি মানুষ জন অভাব নেই। পাড়াপ্রতিবেশি থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনের।
রিধির নানা নানি নেই শুধু এক মামা আছে। ওনি ওনার পরিবার সমতে এসছে বিয়েতে।খুব কাছের আত্মীয় বলতেই এই ওনারাই।
তবে সমস্যা হলো রিধির মামি প্রিয়তা কে ওনার ছেলের জন্য চাইছে।
তিনি জানতো না সাদনানের বউ প্রিয়তা।এটা আম্বিয়া মির্জার কানে যাওয়া মাত্র তিনি মির্জা বাড়ির সবাই কে একটা রুমে ডাকে।

সাদনান দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশেই রাহাত। জাফর মির্জা আম্বিয়া মির্জা পাশে বিছানায় বসে আছে। রুমে থাকা দুই টা সিঙ্গেল সোফায় আজ্জম মির্জা সাথে মফিজুর মির্জা। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে সালেহা বেগম, সুফিয়া বেগম। আর সালেহা বেগম এর আঁচল ধরে প্রিয়তা চুপটি করে ওনার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তার কি দোষ ওই মহিলা তাকে সারার সাথে দেখেছে আর সারা কে প্রিয়তার পরিচয় জিগ্যেস করার মাত্র সারা জবাবে বলে ছিল তালতো বোন সাথে বান্ধবী।
ব্যস সেই থেকে ওনি প্রিয়তার পেছনে পড়ে আছে।

-“বাড়ির বউ হয়ে এমন রংঢং করলে তো এমনি হবে।
আছে কোনো বউয়ের চিহ্ন।”
-“আমার চোখে তো এমন কিছু পড়েনি।”
আম্বিয়া মির্জার কথার বিপরীতে বলল জাফর মির্জা।
-“আমি বলি আবার বিয়ে দিয়ে,,,
-“আচ্ছা?

চলো তবে তোমাকেও দিয়ে দেই।”
সাদনান এর কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। জাফর মির্জা না পেড়ে শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আম্বিয়া মির্জা মুখ বিরক্ত মুখে করে বলল
-“আপনি হাসছেন?”
-“তো কি করবো?

মেয়ে মানুষ এমন একটু আধটু এসব ঘটনা হবেই।
তাছাড়া বয়স টা এখন এমন পর্যায়ে এসব বিয়েসাদী সম্বন্ধ আসবেই।
এতে অবশ্য আমার প্রিয়তা দাদু ভাইয়ের কোনো দোষ নেই।”
জাফর মির্জা কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সবাই মোটামুটি ভ্রু কুঁচকে নেয়।
এখানে তো কারোর আসার কথা নয়।

-“ভাবি দরজা টা একটু খোলেন?”
রিধির মামি ভদ্রমহিলার কণ্ঠ।
সালেহা বেগম শ্বশুর শ্বাশুড়ি দিকে তাকালো।জাফর মির্জা ইশারায় দরজা খুলতে বলল।
রাহাত গিয়ে দরজা টা খোলে।রিধির মামি সহ ওনার স্বামী, রাহান, রাহানের, বাবা মাও রুমে আসে।
রাহানের বাবা ভদ্রলোক এসেই রাহাত এর পাশে একবার দাঁড়িয়ে নিজের স্ত্রী দিকে চোখ কটমট করে তাকালো। রাহানের মা তৎক্ষনাৎ ভাবির দিকে তাকালো।
ভদ্রমহিলা আমতা আমতা করে বলল

-“আমি জানতাম এসব।
আপনারা দয়া করে ব্যাপার টা নিয়ে কেউ রাগ করবেন না।”
-“না, না আপা এভাবে বলবেন না।
এটা তো একটা ভুল বোঝাবুঝি মাত্র।”
সালেহা বেগম বলল।
সাথে সবাই সায় দিলো।ব্যাপার টা এখানে মিটমাট করে সবাই আবার যে যার বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো।

সাদনান প্রিয়তা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।প্রিয়তা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
-“ভাবা যায় মির্জা সাদনান শাহরিয়ার বউ এর জন্য আবার বিয়ের প্রপোজাল আসে!”
সাদনান টেনে টেনে বলল।
প্রিয়তা সাদনান এর এমন খামখেয়ালি কথায় অবাক হয়ে বলল

-“আপনি মজা নিচ্ছেন?”
-“নাহ একদমই না।”
কিন্তু প্রচুর রাগ হচ্ছে।”
প্রিয়তা ওঠে বসে শোয়া থেকে সাদনান নিজেও ওঠে বসে।
-“আপনাদের একদম উচিত হয় নি দাদি কে ওঠা বলা।”
-“কোন টা উচিত কোন টা অনুচিত সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।”

আমার তুমি পর্ব ৩৬

সাদনান নিজের বক্তব্যে শেষ নিজেও শুয়ে বউ কে আবারও নিজের উপর টেনে নেয়।
শক্ত দানবীয় হাতের লাগাম ক্রমেই ছাড়িয়ে যায়। সেই হাতের স্পর্শে কাবু হয় ছোট প্রিয়তা।
প্রিয়তা চুপচাপ সাদনান এর সঙ্গ দেয়।

আমার তুমি পর্ব ৩৮