প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৪

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৪
তানিশা সুলতানা

“আমার দায়িত্ব পালন করার বয়স ছিলো না। একটা প্রভাবশালী পরিবারের নিকৃষ্ট দৃষ্টি আমাকে দায়িত্বের বেড়াজালে আটকে দিয়েছিলো।
আমার সংসার করার বয়স ছিলো না। কিন্তু ভাগ্য আমাকে সংসারের টানাপোড়েনে বেঁধে দিয়েছে। প্রেমে পড়ার বয়স ছিলো না আমার। কিন্তু একজোড়া দৃষ্টি আমাকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছিলো। স্কুলে যাওয়ার বয়সে আমি শশুর বাড়িতে পড়ে আছি। পড়াশোনা নিয়ে চিন্তা করার বয়সে আমি স্বামীর বুকে মাথা রেখে নিজেকে বাঁচানোর চিন্তায় বিভোর থাকি।

আমি এমন জীবন চাই নি।
স্বপ্ন দেখেছিলাম বড় হবো বাবা মায়ের দুঃখ ঘুচাবো। ভাইবোনকে একটা সুন্দর জীবন দিবো। কিন্তু কিছু নরপিশাচ আমার নিষ্পাপ বোনটাকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছে। শেষ করে দিয়েছে তাকে। আমার বুকটা খালি করে দিয়েছে। বোনের মুখটা যখনই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমি বেপরোয়া হয়ে যাই। প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে আমার শরীরে। ছয় জন মিলে ধর্ষণ করেছিলো আমার বোনকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তারপর সেই নরপিশাচ গুলো দৃষ্টি দিয়েছে আমার মায়ের দিকে। আমার মা আমার জান্নাত। সেই জান্নাতের গায়ে নরপিশাচের ছোঁয়া লাগতে দিতাম কি করে আমি?
এতোদিনে প্রাণ জুরিয়েছে আমার। কলিজা ঠান্ডা হয়েছে। আমি নির্মম ভাবে খুন করে নরপিশাচের মধ্যে একজনকে।
মুন্ডু আলাদা করে দিয়েছি তার। যে হাত দিয়ে আমার বোনের শরীরের কাপড় খুলেছিলো সেই হাত আমি ৪ টুকরো করে ফেলেছি। যে চোখ দিয়ে আমার বোনের দিকে তাকিয়েছিলো সেই চোখ তুলে ফেলেছি আমি। যে ঠোঁট দিয়ে আমার বোনকে চুমু খেয়েছিলো সেই ঠোঁটও আমি কেটে নিয়েছি।

যে লিঙ্গের জোরে এতোটা উতলা। সেই লিঙ্গ থেতলে দিয়েছি।
আমি শান্তি পাচ্ছি এবার। ভীষণ শান্তি পাচ্ছি।
অশ্র হাতে নেওয়ার বয়স ছিলো না আমার। কিন্তু পরিবেশ বা পরিস্থিতির চাপে হাতে অশ্র তুলে নিয়েছি।
এবার আমি কাউকে বাঁচতে দিবো না। শেষ করে দিবো সবাইকে।
পাপের রাজ্য ধ্বংস করবো আমি।

হাতে থাকা লম্বা চিঠিখানা পড়ে আতঙ্কে ওঠে ইফতিয়ার। ১০২° জ্বর তার। চিঠিখানা পড়াতে বোধহয় জ্বর পালিয়ে গেলো। এক লাফে উঠে বসে সে। তার পাশে বসে ছিলো মিষ্টি।
গতকাল মিষ্টির কানে খবর পৌঁছেছে যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ইফতিয়ার। ঠিক সেই মুহুর্তেই বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে এসেছে ইফতিয়ারের নিকটে। তিন কিলো রাস্তা দৌড়ে হাসপাতালে পৌঁছেছে।
রাতেও ফিরে নি বাড়িতে। পূর্ণতা এবং অভিরাজ এসেছিলো ইফতিয়ারকে দেখতে এবং তারা মিষ্টিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো তবুও মিষ্টি যায় নি।

অভির হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে থেকে গিয়েছে।
মিষ্টির পাগলামি দেখে ইফতিয়ার ঠোঁট বাঁকিয়ে মলিন হেসে বলেছিলো
“দুনিয়াটা এমন কেন আল্লাহ্?
যে যারে চায় সে তারে পায় না।
যারে কপালেই রাখেন নাই তার সাথে দেখা কেন করিয়েছিলেন?
যারে ছুঁয়ে দেখার সাধ্য নাই
তার জন্য হৃদয় কেন পোঁরে?
ইফতিয়ারকে বসে যেতে দেখে চমকায় মিষ্টি। সে ইফতিয়ারের পাশে মোড়া টেনে বসে ছিলো। দাঁড়িয়ে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে

“কি হয়েছে আপনার? বেশি খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো?
ইফতিয়ার শান্ত দৃষ্টিতে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলে
“আমি ঠিক আছি। বিচলিত হইয়ো না। আমার বাবা আপু ওনারা কোথায়?
মিষ্টি মাথা নিচু করে জবাব দেয়।

“ ইরিন আপু খাবার আনতে গিয়েছে। আর চাচা বাসায় গিয়েছে।
“ঠিক আছে তুমি বসো গিয়ে। ঠিক আছি আমি।
মিষ্টি মাথা নারিয়ে বসে। ইফতিয়ার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে বলে
“আমার পবিত্র পূর্ণতার হাতে খুন মানায় না। ফুল মানায়। আমি তোমাকে আর একটাও খুন করতে দিবো না পূর্ণতা। তোমার প্রতিশোধ আমি নিবো। খুনের তকমা আমার গায়ে লাগুক। তোমার গায়ে না।

তুমি পবিত্র।
তুমি উপমা।
তুমি সুহাসীনি।
তুমি ভালোবাসা
তুমি সুখ
তুমিই শান্তি

জমিদার বাড়িতে আতঙ্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রতিটা মানুষ ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। কেনোনা নিকৃষ্ট ভাবে খুন করা হয়েছে আলতাফ নামের জমিদারের ডান হাতকে। আলতাফের মাথা পাওয়া গিয়েছে বাড়ির মূল ফটকে। চোখ দুটো পড়ে ছিলো তারই খানিকটা দূরে।
দুটো পা পাওয়া গিয়েছে জমিদার সাহেব এর কক্ষের সামনে।
হাত পাওয়া গিয়েছে ইফাদ এর কক্ষের সামনে।

চিন্তিত সকলে। সাহেব তার তিন ছেলে এবং পাঁচ নাতীদের নিয়ে বৈঠক বসেছে। পলি এবং মমতাকে বৈঠকে থাকার অনুমতি দিলেও বাড়ির বউদের এবং পূর্ণতাকে অনুমতি দেওয়া হয় নি।
এতে অবশ্যই পূর্ণতার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সে রান্না ঘরের এক কোণে মোড়া টেনে বসে গরুর মাংস খাচ্ছে।
সাহেব গম্ভীর স্বরে বলে

“এইরকম খুন কে করতে পারে?
ইশান এবং ইমন মাথা নিচু করে আছে। ভয়ে তারা কাঁপছে। কিসের ভয় তাদের? এরকম লাশ দেখেই কি ভয় তাদের? হয়ত তাই।
অভিও সাহেব এর মতো গম্ভীর সুরে বলে
“যাদের সাথে অন্যায় করেছে তাদের মধ্যে থেকেই কেউ করেছে। অস্বাভাবিক কিছু নয়৷
বিরক্ত হয় সকলে। মামুন দাঁতে দাঁত চেপে বলে

“তুই সাধু পুরুষ নয় যে বড়বড় কথা বলবি।
“অসাধু পুরুষও আমি নই৷ তোমাদের মতো আমার জিভ বেরিয়ে থাকে না। মেয়ে দেখলেই শরীর জ্বারায় না।
ইশান সাথে সাথে বলে
“তা বেরোবে কেনো? পেয়েছিস তো কচি বউ। যখন তখন মধু
বাকিটা শেষ করার আগে অভি ইফাদের নাক বরাবর ঘুষি মারে। ছিঁটকে খানিকটা দূরে সরে যায় ইফাদ৷ ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে।
চমকে ওঠে সকলে।
মনির রেগে বলে

“অভি ওর গায়ে হাত কেনো তুললি?
অভি ইফাদের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়
“ আমার বউয়ের নাম দ্বিতীয় বার মুখে আনলে ওর জীভ টেনে ছিঁড়ে দিবো আমি।
চুপসে যায় সকলে। সাহেব বলে
“মেয়েটা তোমায় তাবিজ করেছে না কি?
“ হ্যাঁ করেছে। তাবিজ করেছে আমার।
আর দাদুভাই তোমাকেও বলছি

পূর্ণতার দিকে তাকালে ভয়ংকর মৃত্যু উপহার পাবে তুমি।
আমি তোমার গায়ে হাত তুলতে পারবো না বলে কিন্তু বেঁচে যাবে না।
বলেই অভি বেরিয়ে যায়। সাহেব নিজের ফকফকে সাদা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে তাকায় পলির পানে। মমতা বেগম চুপসে আছেন।

“তুমি কিছু করতে পারলে না?
পলি তাচ্ছিল্য হেসে বলে
“ আমাকে পতিতালয়ে দিয়ে আসুন। পূর্ণতার ক্ষতি আমি করতে পারবো না। ক্ষমা করবেন।
পলিও বেরিয়ে যায়। মমতা বিশ্ব জয়ের হাসি হেসে বলে
“ভুল মানুষের ওপর ভরসা করলে দিন শেষে এভাবেই ঠকতে হবে।

শিউলি একটু পরপর তাকাচ্ছে পূর্ণতার দিকে। ইতোমধ্যে ছয় পিচ গোস্ত পেটে চালান করেছে সে। সব খেয়ে ফেলবে না কি?
পূর্ণতার শাশুড়ীর নজর খেয়াল করে একটু এগিয়ে বসে। শিউলি রুটি বেলছিলো।
পূর্ণতা এগিয়ে বসে বলে
“মা আপনি আমায় ভালোবাসেন?
শিউলি চমকায়। সাথে সাথে জবাব দিতে পারে না। শুকনো ঢোক গিয়ে একটু সময় নিয়ে বলে
“ হ্যাঁ বাসি তো।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৩

“হুমমম আমিও জানি তো
মা আমিও আপনাকে ভালোবাসি।
শিউলি মলিন হাসে।
পূণতা গোস্তের টুকরায় কামড় দিয়ে বলে
“মা আপনার বুকে চাকু চালালে আমায় ক্ষমা করবেন তো?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৫