প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৫

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৫
তানিশা সুলতানা

শিউলি বেগম চমকে ওঠে। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকায় পূর্ণতার মুখ পানে। হাসে পূর্ণ। হাত ধুয়ে হাত মুছে শিউলি বেগম এর আঁচলে। সাথে মুখটাও মুছে নেয়। অতঃপর দুই হাতে জাপ্টে জড়িয়ে পিঠে মাথা এগিয়ে জোরে শ্বাস নেয়।
“আহহহহা

তোমার শরীরে মা মা একটা গন্ধ আছে। যেটা আমার মায়ের শরীরে পাই আমি।
শিউলি জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছে না।
পূর্ণতা চুমু খায় শিউলির পিঠে।
” মা জানো ওরা না আমার মায়ের দিকে নজর দিয়েছে। আমার মাকে তুলে এনেছিলো। আমার বোনের মতো মায়ের পরিনতি করতে চাচ্ছে।
মা তুমি বলো না?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কি করে আমার মাকে বাঁচাবো আমি?
চোখের কোণে পানি আসে পূর্ণতার। শিউলি নিজের থেকে পূর্ণতাকে ছাড়িয়ে পূর্ণতার দিকে ঘুরে। জলভরা দৃষ্টি দেখে একটু মায়া হয় শিউলির। সে পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়
“তোমার মতো মেয়ে থাকতে তোমার মায়ের শরীরে হাত দেবে এমন স্পর্ধা কারোর নেই।
পূর্ণতা তাচ্ছিল্য হাসে
“ঠিকই বলেছো। আমিই বাঁচাবো আমার মাকে।
শিউলি প্রতিত্তোরে শুধু একটু হাসে।

স্কুলের গেইটে পা রাখতেই পূর্ণতার কানে আসে ” পঁচিশজন মেয়ে গায়েব”
তাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাথা গরম হয়ে যায় পূর্ণতার। ঠিক বুঝতে পেরেছে এসব কার কারসাজি। ক্লাস রুমে ঢুকে না পূর্ণতা। গেইট থেকেই উল্টো রাস্তায় পা বাড়ায়। উদ্দেশ্য ইফতিয়ারের বাড়িতে যাওয়া।
আজকে এর একটা বিহিত পূর্ণতা চায়। সব গুলো মেয়েকে সহিসালামতে বাড়িতে পৌঁছে দেবে এটাই পূর্ণতার প্রতিজ্ঞা। তার জন্য ইফতিয়ারের বাড়িতে কেনো? তবে কি পূর্ণতা ইফতিয়ারকে ভরসা করছে? ইফতিয়ারের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে?

ইফতিয়ার এবং অভি মুখোমুখি বসে আছে। ইফতিয়ারের চোখ দুটো টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। এটা অবশ্য জ্বরের প্রভাবে।
মিষ্টি এক কোণায় জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে থাকতে চায় নি এদের কথার মধ্যে। কিন্তু অভির কড়া নির্দেশ এখানে থাকতে হবে।

অভি ইফতিয়ারকে দেখে বরাবরই মুগ্ধ হয়। পুরুষ মানুষ এতো সুন্দর হয় না কি? ছেলে হয়েও অন্য ছেলের প্রশংসা করতে পিছুপা হয় না অভি।
নিঃসন্দেহে অভির থেকে ইফতিয়ার শতগুণে বেশি সুন্দর। অভি এবং ইফতিয়ার এক জায়গায় দাঁড়ালে সকলের দৃষ্টি ইফতিয়ার দিকে থাকবে।
অভির নিশ্চুপতা দেখে ইফতিয়ার বলে

“বাবা মা বোন পরিবার ফেলে আমি এখানে পড়ে আছি পূর্ণতার নিরাপত্তা দিতে। যতবার পূর্ণতা বিপদে পড়েছে ততবারই তাকে আমি বাঁচিয়েছি। তাহলে স্বামী হিসেবে আপনি কি করলেন?
বউয়ের নিরাপত্তা দিতে পারেন না তাহলে আপনি কেমন স্বামী?
অভি জবাব দেয় না। মাথা নিচু করে ফেলে।

” ভালোবাসলে আগলে রাখতে জানতে হয়। ভালোবাসলে ভালো রাখতে জানতে হয়।
অভি অকপটে জবাব দেয়
“তুমি আমার পূর্ণতার থেকে দূরে থাকবে। তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা একদম করবে না।
হো হো করে হেসে ওঠে ইফতিয়ার। টোল পড়া গালের প্রাণ খোলা হাসিতে বোধহয় ইফতিয়ারের সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেলো।

হাসি নিয়ন্ত্রণে আনে ইফতিয়ার। চোখের কোণে পানি জমেছে হাসতে হাসতে
” আপনি আসলে পূর্ণতাকে ভালোই বাসেন নি মিস্টার অভিরাজ। চিনতেই পারেন নি তাকে।
আর চিনতে পারেন নি আমাকে।
আমি আপনার বিপক্ষে ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম ক্ষমতার লোভে নয়। শুধুমাত্র আপনাকে ভালো পথে আনতে। ক্ষমতা হারালে আপনি একটা চাকরি খুঁজতেন। সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে পূর্ণতার হাসি মুখটা দেখে প্রাণ জুড়াতেন। সুন্দর একটা জীবন হতো আপনাদের।
মারামারি কাটাকাটি নারী পাচার এসব মাথায় আসতো না।

আর পূর্ণতা?
যার প্রতিটা নিঃশ্বাসে এমপি সাহেব নামটা জড়িয়ে থাকে। তাকে কি করে ইমপ্রেস করবো আমি? অভি নামক পুরুষটার বা পাঁজরের হাড় দ্বারা যাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে কি করে ফিরিয়ে আনবো?
উপায় জানা থাকলে এই ইফতিয়ার চৌধুরীকে কেউ আটকে রাখতে পারতো না।
অভি নিজেও কথাটা মানে। তারপরও নিজের বউয়ের প্রতি অন্য একটা পুরুষের দুর্বলতা সে মানতে পারে না।
অভি দাঁড়িয়ে যায়। মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে

“বাড়ি চল বোনু
তারপর নজর ঘুরিয়ে ইফতিয়ারের দিকে তাকায়।
“ এই সপ্তাহের মধ্যেই পরিবার নিয়ে আমার বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ রইলো। মিষ্টিকে অতিদ্রুত আপনার হাতে তুলে দিতে চাচ্ছি।
মিষ্টি চমকালেও ইফতিয়ার শান্ত ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে পড়ে। মাথা চুলকে বলে

“নিজের ভালোবাসাকে পাই নি তাই বলে মিষ্টির ভালোবাসা অবহেলা করবো এতোটা পাষাণ আমি নই।
অবশ্যই মিষ্টিকে বউ বানিয়ে স্ব-সম্মানে ঘরে তুলবো। তার আগে জমিদার বাড়িটাকে ধ্বংস করবো। পাপের রাজ্যে আগুন লাগিয়ে পূর্ণতাকে নিশ্চিত সুন্দর একটা সংসার দিয়ে তারপরই নিজে সংসার শুরু করবো।
তার আগে নয়

ইফতিয়ারের কথা অভির ভালো লাগে না। তাই সে বড়বড় পা ফেলে বেড়িয়ে যায় আলিশান প্রাসাদ হতে। অভির পেছনে ছুঁটে মিষ্টি। অবশ্যই ইফতিয়ারকে “সাবধানে” থাকতে বলতে ভুলে না।
পূর্ণতা ইফতিয়ারের কালো বাগান ছাড়িয়ে মেইন রোডে উঠতে উঠতেই দেখতে পায় অভির কালো রংয়ের জীব গাড়ি খানা ছুঁটে চলেছে।

হতাশ হয় পূর্ণতা। যাহহ বাবা লোকটা চলে গেলো?
এবার পূর্ণতাকে এতোটা রাস্তা হেঁটে যেতে হবে?
ব্যাপারখানা হলো পূর্ণতা জানতো অভি ইফতিয়ারের বাড়িতে এসেছে মিষ্টিকে নিতে। তাই সে ইফতিয়ারের বাড়িতে এসেছিলো।

অগত্য পূর্ণতা মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে। কাছে পয়সা নেই যে রিকশা অটো নিবে।
তবে পূর্ণতা ক্লান্ত হয় না। বিচলিতও হয় না। বরং রেগে নিজের মনটাকে শক্ত করে। মেয়েদের সে উদ্ধার করবে। যে করেই হোক। নিজের জীবন দিয়ে হলেও ওই মেয়েগুলোর প্রাণ সে বাঁচাবে৷ দেশের বাইরে মেয়েগুলোকে যেতে দিবে না।

মনে মনে কঠোর পরিকল্পনা এঁটে ফেলে পূর্ণতা। এবার শুধু অভির দেখা পাওয়ার অপেক্ষা। কিন্তু কখন দেখা পাবে এমপি সাহেবের সাথে?
সে কখন বাসায় ফিরবে পূর্ণতা জানে না। বা আজকে ফিরবে কি না এটাও সে জানে না।
নানান কথা ভাবতে ভাবতে পূর্ণতা পৌঁছে যায় জমিদার বাড়িতে। দারোয়ান গেইটে নেই। মনে মনে পূর্ণতা আওড়ায় “জমিদারের মতোই ধোঁকাবাজ দারোয়ান দুটো”

অতঃপর পূর্ণতা পা বাড়ায় জমিদারের প্রতিতালয়ের দিকে৷
কিন্তু আজকে প্রতিতালয়ের কাছাকাছি যেতেই চমকায় পূর্ণতা। কেনোনা সেখান থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না৷ কিন্তু কেনো?
ললাটে চিন্তার ভাজ ফেলে পা এগোতে থাকে। কিন্তু হায়য়
একটা মানুষও সেখানে নেই। ঘর গুলোর দরজা খোলা।

চিন্তিত অভিরাজ। তার গম্ভীর মুখশ্রী আজকে একটু বেশিই গম্ভীর দেখাচ্ছে। ললাট কুঁচকে রেখেছে৷ পড়নের সাদা রংয়ের টিশার্টে লাল তরল পদার্থের দাগ লেগে আছে। কপালের বাম সাইডেও আড়াআড়ি ভাবে একখানা দাগ টানা। খুব গভীর নয়। তবে তাতে বিন্দু বিন্দু রক্ত জমে আছে।
গাল ভর্তি চাপ দাঁড়িতে নতুন নকশা আঁকা। বাঁকানো মুছটা পরিপার্টি করে ছোট করা হয়েছে। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল গুলোও ছোট করা হয়েছে। তাতে আহামরি কোনো নকশা আঁকা না হলেও দারুণ মানিয়েছে অভিরাজকে।
যেনো নতুন সাজে সেজেছে মানুষটা।

পূর্ণতা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে গম্ভীর মুখী লম্বা মানবটিকে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। শ্যামলা বর্ণের সুদর্শন মানবটিকে পুর্ণতার এক টুকরো চাঁদের মতো মনে হয়।
হঠাৎ কিছু মনে হতে পূর্ণতার ঠোঁটের কোণের হাসি মিলিয়ে যায়। গভীর চিন্তিত হয়ে পড়ে সে। সন্দেহ দানা বাঁধে মনের মধ্যে।
মনে মনে আওড়ায়

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৪

“দুনিয়ার সব থেকে সুদ্ধ পুরুষটিকে পেয়েছি আমি। চাঁদের গায়ে কলঙ্ক থাকতে পারে আমার স্বামীর গায়ে নেই”
ঠিক সেই মুহুর্তে অভি হোঁচট খায়। বসে পড়ে খাটে। পায়চারি করতে করতে
শুকনো মাটিতে হোঁচট?
চমকায় পূর্ণতা। বুক কাঁপতে থাকে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৬