প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৭

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৭
তানিশা সুলতানা

পতিতালয়ের চত্তরে দাঁড়িয়ে ইফতিয়ার প্রতিটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করে “তারা এখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় কি না”
কিন্তু কেউ রাজি হয় না। বের হওয়ার কথা শুনেই তাদের মধ্যে আতঙ্ক চলে এসেছে। ভয়ে মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। ইফতিয়ার আশ্চর্য হয়। কেনো তারা এখানে থাকতে চায়? তারা কি কাউকে ভয় পাচ্ছে?

বয়স পনেরো ষোল হবে এমন একটা মেয়েকে ইফতিয়ার সামনে ডাকে। সে সকলের পেছনে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ইফতিয়ারের ডাকে মেয়েটার ভয় বেড়ে যায়। অনবরত ঢোক গিলছে। হাত পায়েও মৃদু কম্পন শুরু হয়। ইফতিয়ার লক্ষ্য করছে। সে পা টেনে টেনে ইফতিয়ারের সামনে দাঁড়ায়। মাথা নুয়িয়ে থেমে থেমে জবাব দেয়

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

”সাহেব আমার শরীর খারাপ। আমাকে আজকে ছেড়ে দিন।
বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে ইফতিয়ারের। সে মেয়েটার দিকে হাত বাড়াতে গেলে মেয়েটা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। ইফতিয়ার মাথায় হাত রাখে এবং মৃদু হেসে বলে
“আমি তোমার ভাইয়ের মতো। ক্ষতি করবো না। শুধু বলো একবার

তুমি এখান থেকে যেতে চাও। আমি নিয়ে যাবো তোমায়। তোমার বাবা মায়ের কাছে দিয়ে আসবো। কাউকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমি আছি।
মেয়েটা অনবরত মাথা ঝাঁকিয়ে না বোঝায়। এখান থেকে সে যেতে চায় না। এতো ভয়, এতো আতঙ্ক, তবুও যেতে চায় না। কি আছে এই পতিতালয়ে? কোনো সবাই বাঁধা পড়েছে।
পাঁচ নং কক্ষ হতে একজন মহিলা বেরিয়ে আসে। মাথায় তার ঘোমটা টানা। পরনে সাদা রংয়ের সুতি শাড়ি। বয়স পঁয়তাল্লিশের উর্ধে। অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়ার দারুণ বয়সের ছাপ বোঝা যাচ্ছে না।
মেয়েটা ইফতিয়ারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে

“বিগত পনেরো বছর যাবত প্রতিদিন অভিরাজ এখানে এসে প্রতিটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করে “ তারা যেতে চায় কি না” সকলেই অসম্মতি প্রকাশ করে।
তাই তুমি পুরোনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন কিছু ভাবো।
চিন্তায় পড়ে যায় ইফতিয়ার। এই মহিলাকে খুঁজতেই সে এখানে এসেছে। অনেক কিছু ভেবেছিলো। কিন্তু মহিলাটির মুখপানে তাকিয়ে গলে যায় ইফতিয়ার। ইতোমধ্যে সে কি বলেছে সেটাও ঢোকে নি ইফতিয়ারের কানে। নিজের মায়ের বয়সী। তাকে কি করে আঘাত করবে?
ইফতিয়ারকে এভাবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মহিলাটি সকল মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলে

“যে যার রুমে যাও।
মুহুর্তেই হল রুম ফাঁকা হয়ে যায়। মহিলাটি ইফতিয়ারের দিকে এগিয়ে এসে বলে
“তোমাকে চিনি আমি। ইফতিয়ার চৌধুরী। ইসমাইল চৌধুরীর একমাত্র পুত্রসন্তান। বিয়ে করতে যাচ্ছো মনোয়ার জমিদারের একমাত্র কন্যা সন্তান মিষ্টিকে।
এবার ইফতিয়ার নরে চরে দাঁড়ায়। চোখে চোখ রেখে বলে।

“হুমম
আপনার নাড়ি ভেড়া ধন মিষ্টিকে বিয়ে করতে যাচ্ছি আমি। তবে আফসোস হচ্ছে নিজের জন্য। পতিতালয়ের এক মহিলার মেয়েকে ঘরে তুলতে হচ্ছে।
মহিলাটি তাচ্ছিল্য হাসে।
“ঘরে তুলতে পারবে কি?
ইফতিয়ারের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। রহস্য ঘেরা এই মহিলা।

“আপনি চাচ্ছেন না? আপনার মেয়ের বিয়ে হোক?
সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“ আমি তো এখানে থাকতেও চাই নি। তবুও তো থাকতে হচ্ছে।
যাইহোক তুমি এখন চলে যাও।
“আমি কথা বলতে এসেছি আপনার সাথে।
“আমি একজন খারাপ মহিলা। এক স্বামীকে দিয়ে চাহিদা মিটছিলো না তাই পতিতালয়ে চলে এসেছি। বর্তমান হাজার পুরুষের সাথে রাত কাটিয়ে অভ্যস্ত আমি। এটাই আমার সুখ। এটাই আমার পরিচয়।
আর কিছু বলবে?
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে ইফতিয়ারের।

“খারাপ মহিলা। আপনার মতো মহিলাদের জন্য সমাজটা বিগড়ে যাচ্ছে।
বলেই ইফতিয়ার চলে যায়।
মহিলাটি ইফতিয়ারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বিরবির করে বলে
“ভালো রেখো আমার মিষ্টিকে। সে ফুলের মতো পবিত্র আর পানির মতো সরল সহজ।

সেইদিন মনির গভীর রাতে বেরিয়ে যেতে নিলে রীমা তার হাত ধরে।
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?
মনির রীমার হাত ছাড়িয়ে নেয় নিজের হাত।
রীমার পানে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
“তোকে বলতে হবে কোথায় যাচ্ছি?
“ আমি তোমার বউ। বলবে না আমায়?

মনির রীমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“যাচ্ছি পূর্ণতার মায়ের কাছে। ওই মা******র তেজ আজকে ভেঙে দিবো আমি।
বলেই রীমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বেরিয়ে যায়। ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে পড়ে রীমা। পঁচিশ বছর সংসার করছে। পঁচিশটা দিন সুখে কাটাতে পারে নি। প্রতিরাতে নতুন নতুন মেয়ে। এখন পূর্ণতার মা।
মা বোন বাচ্চা কেউ রক্ষা পায় না এদের শারীরিক নির্যাতন থেকে। পুরুষ মানুষ এরা?
এদের চরিত্র নিয়ে বোধহয় বলা হয়েছিলো

“নারীর সাধ মেটে না এক শাড়িতে
আর পুরুষের সাধ মেটে না এক নারীতে”
সালাম রাতে দোকানেই থাকে। ছেলেকে নিয়ে সেলিনা ঘুমায়। বরাবরই দরজা জানালা সবটা বন্ধ করেই ঘুমায় সে। বড্ড ভয় তার। মনের মধ্যে সারাক্ষণ খচখচ করতে থাকে। এই বুঝি জমিদার বাড়ির কাপুরুষরা হামলে পড়লে।
তাছাড়া গতকালই মনিরের কুদৃষ্টির জবলে পড়েছিলেন তিনি। কয়েক মুহুর্তের দেখা। যখন সামনে ছিলো ততক্ষণই চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো।

মনির তাড়াহুড়োয় সঙ্গে কাউকে আনে নি। তার কাছে পাক্কা খবর ছিলো সেলিনা ছেলেকে নিয়ে একা ঘুমায়। আজকে মনের সাধ মিটিয়ে নিবে। তারপর বাঁচার একটা সুযোগ দিয়ে পতিতালয়ে রেখে আসবে। ইচ্ছে হলেই যাবে বোগ করবে।

ধান ক্ষেতের আইল ধরে এগোতে থাকে মনির। তখন কোথা থেকে একখানা ছু*ড়ি উড়ে এসে মনিরের বুক বরাবর আ*ঘা*ত করে। ছিঁটকে পড়ে যায় সে। গলগল করে র*ক্ত ঝড়তে থাকে বুক হতে। ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে । ততক্ষণে আঘাতকারী সামনে চলে আসে। পরপর আবারও আঘাত করে বুকে। দ্বিগুণ চিৎকারে আর্তনাদ করে মনির।
আঘাতকারী থেমে থাকে না। চোখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় ছু ড়ি। এবং সব শেষে লুঙ্গি খুলে গোপন অঙ্গ কেটে ফেলে।
ছটফট কমে এসেছে মনিরের। সে গভীর ভাবে শ্বাস টেনে চিরো নিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়ে।

একজন অপরাধী চিরতরে দুনিয়ায় থেকে হারিয়ে যায়।
পূর্ণতা সেদিন সারা রাত ছটফট করে। তাকে কেউ রুমে বন্দি করে রেখেছে। জানালা দরজা সবটা বন্ধ। কোনোক্রমেই রুম হতে বের হতে পারে না। অভিও সেইদিন বাড়িতে ছিলো না।
ভোরের আলো ফুটতেই আপনাআপনি দরজা খুলে যায়। দৌড়াতে দৌড়াতে গ্রামে যায় পূর্ণতা। মাকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এবং কিছু সময় মায়ের সাথে সময় কাটিয়ে আবারও জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

সকল কাজ চুকিয়ে বাড়ির পথে এগোচ্ছিলো অভিরাজ। রাস্তা ঘাট ভর্তি মানুষ। তারা সালাম দিচ্ছে অভিকে। অভিও হেসে সকলের সাথে কথা বলছে। কাউকে কাউকে বুকে টেনে নিচ্ছে। অভির এই ব্যবহারই তাকে মানুষের মনে জায়গা কিনে নিতে সহায়তা করেছে।
নিজ জেলা সহ পাশাপাশি অনেক জেলার মানুষ অভিকে চেনে। সকলেই তাকে ভালোবাসে। একটা আলাদাই নাম ডাক তৈরি হয়েছে তার।

বাজারের পাশে জায়গা কিনেছে অভি। সেখানে মাটি তুলে ভরাট করা হয়েছে। কাল থেকে মিস্ত্রি আসবে। ইট বালু সব কেনা হয়ে গেছে। বাড়ি বানানো হয়ে গেছে এই বাড়িতে উঠবে অভি এবং পূর্ণতা। মিষ্টিকে ইফতিয়ারের হাতে তুলে দিবে বলবে “ইফতিয়ার ভাই আমার। আমার বোনকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাও এই শহরে আর নয়”
তখন অভির কোনো পিছুটান থাকবে না।

“আমার পূর্ণতা
এই জনমেই আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে। তুমি আমি মিলে আমরা হবো। দুজন দুজনকে ভালোবেসে আগলে রাখবো।
ছোট বেলা থেকে মায়ের ভালোবাসা পাই নি। বাবার আদরও পাই নি। অনাদরে, অযত্নে বড় হয়েছি। দুচোখ ভরে শুধু পাপ দেখেছি। এবার ভালোবাসা দেখবো।
আমাদের একটা রাজকন্যা হবে। তাকে ভালোবেসে বড় করবো দুজন মিলে। আমাদের বাড়িটার নাম দিবো “সুখের রাজ্য”

“অভিরাজ
চট করে পেছনে ঘুরে অভি। হাসি মুখে এক রমনীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অভি নিজেও হেসে শুধায়
“ মীরা
কেমন আছো?
“ভালো আছি। তুমি?
“ আমিও ভালো।
“কবে দেশে ফিরলে?
“এই তো আজকেই। শুনলাম বিয়ে করেছো ছোট্ট একটা মেয়ে। বয়স না কও একদমই কম।
“ হ্যাঁ করেছি। একটা ছোট্ট মরিচকে ঘরে তুলেছি।
“মরিচ? তাও আবার ছোট। তাহলে প্রবলেম নেই।
“ছোট মরিচে ঝাল বেশি।

মীরা হো হো করে হেসে ওঠে। অভিও হাসে।
পূর্ণতার চোখে পড়ে সেই হাসি। নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার আগে নিজের বরের পাশে অন্য নারীর অস্তিত্ব দেখে মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে।

“নারী সব সয্য করতে পারে, নারী সব মেনে নিতে পারে
কিন্তু নিজের স্বামীর পাশে অন্য নারীর অস্তিত্ব নারী কখনোই মেনে নিতে পারে না”
বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে আসে পূর্ণতা। পেছন থেকে ধাক্কা দেয় মীরা। মুখ থুবড়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে যায়। চোট পায় ঠোঁটে। খানিকটা ঠোঁট কে টে যায় এবং সামনের একখানা দাঁত ভে ঙে যায়।
অভি বড়বড় দৃষ্টিতে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে থাকে

“এটা কি করলে তুমি?
পূর্ণতা মুখ বাঁকিয়ে বলে
“ আমার বরের পাশ ঘেসে দাঁত কেলাচ্ছিলো তাই দাঁত ভেঙে দিলাম
এবার কাকিমার দিকে চোখ তুলে তাকালে আপনার চোখও গেলে দিবো।
সাথে সাথে অভি চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। পূর্ণতা মুচকি হেসে অভির হাত ধরে এক দৌড় দেয়।
দৌড়াতে দৌড়াতে অভি শুধায়

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৬

“কাকিমা কাকে বললে?
“ পূর্ণতা ছাড়া গোটা দুনিয়ার সকল মেয়েই আপনার কাকি মামি খালা ফুপি বোন। বুঝলে সোনা?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৩৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here