প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৬

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৬
তানিশা সুলতানা

জমিদার বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ে পাওয়া গিয়েছে পলি বেগম এর লা শ। ভয়ংকর যন্ত্রণায় দিয়ে খু ন করা হয়েছে তাকে। শরীর থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।
গায়ে এক ফোঁটা কাপড় ছিলো না। খু ন করার আগে তার শরীরের ওপরে পশুদের ছোঁয়া পড়েছে সেটা ঢেড় বোঝা যাচ্ছে। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পূর্ণতা। চোখের পলক ফেলছে না। ভীষণ চমকেছে সে। এবং ভয়ও পেয়েছে বেশ। পলি বেগমকে পূর্ণতা সম্মান করতো। মানুষটা ভালো কিন্তু ভীষণ বোকা।

মনে পড়ে সেইদিনের কথা। যেদিন প্রথমবার জমিদারদের তৈরি প্র তি তা ল য়ে পা রেখেছিলো পূর্ণতা। ইশান এবং ইমনের সহায়তায় পৌঁছে ছিলো পলি বেগমের নিকট।
আলিসান এক রুমে পায়ের ওপর পা তুলে পান চিবুচ্ছিলো পলি। পূর্ণতাকে সে চেনে না তবে ইশান এবং ইমনকে চিনতো। জমিদার নাতি তারা। না চিনে উপায় আছে?
মিতুকেও দেখা গিয়েছিলো সেই গৃহে। আধখোলা কাপড় পড়নে তার। বুড়ো একটা লোককে টেনে নিজ কক্ষে নিয়ে যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘৃণায় গা গুলিয়ে এসেছিলো ইশানের। এই সেই মিতু। যাকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসেছিলো ইশান।
পলি বেগম এদের দেখে সোজা হয়ে বসে। কাঠকাঠ গলায় শুধায়
“এখানে কি চাই?
পূর্ণতা পলি বেগমের অনুমতি ব্যতীত বসে পড়ে তার পাশে।
চোখে চোখ রেখে বলে

“আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
পলি বেগম খানিকটা সরে বসে। যেনো সে চাইছে না তার ছোঁয়া পূর্ণতার শরীরে লাগুক। বিষয়টা বুঝতে পেরে পূর্ণতা মুচকি হাসে
“আমি চাচ্ছি আপনি জমিদারকে বিয়ে করুন। এবং এই প্রতিতালয় ত্যাগ করে জমিদার বাড়িতে পা রাখুন।
তাচ্ছিল্য হাসে পলি।

“এখানেই শান্তি। জমিদার বাড়ি নামক নরকে আমি পা রাখতে চাই না।
“এখানে আপনাকে কেউ সম্মানের চোখে দেখে না। সকলের চোখে আপনি খারাপ। অভিশাপ কুড়চ্ছেন নিষ্পাপ মেয়েগুলোর থেকে।
তাদের ধারণা আপনিই তাদের জীবন নষ্ট করছেন। নারী পাচার কারীর মূল সদস্য আপনিই।
কিন্তু এটা তো সঠিক নয় তাই না?
তাহলে আপনার কি উচিত নয় এখান থেকে বের হওয়া?
পলি বেগম জবাব দেয়। পূর্ণতা ফের বলে

“আপনারও একটা পরিবার ছিলো স্বামী সংসার সন্তান সব ছিলো। যার জন্য আপনি আপনার পরিবার হারালেন তাকে শাস্তি দিবেন না? প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে না?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পলি। অতঃপর শুধায়
“ কি করতে হবে?
খুশি হয় পূর্ণতা। ইশান ইমনও বেশ খুশি হয়।

“কিছু না। শুধু জমিদার যখন আপনার কাছে আসবে। অন্তরঙ্গ অবস্থায় ঘনিষ্ঠ হতেই তার কাছে বায়না ধরবেন বিয়ে করার জন্য। এটা সেটা বোঝাবেন। দেখবেন সে গলে যাবে। বাকিটা আমরা দেখছি।
সেইদিন যদি পূর্ণতা পলি বেগমকে জমিদার বাড়িতে না আনতো তাহলে আজকে পলি বেগমের এই পরিণতি হতো না।

হাঁটু মুরে বসে পড়ে পূর্ণতা। বিরবির করে বলে
“আমার সকল প্রিয় মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে একটু একটু করে ভেঙে দিচ্ছে। আমি কার জন্য লড়াই করবো? কিসের আশায় লড়াই করবো?

জমিদার সাহেব বেশ খোশমেজাজে আছেন। কারু কাজে আবৃত্ত লাঠি ভর দিয়ে সকলকে জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় কবর দেওয়া হবে পলি বেগমকে। জমিদার বাড়ির মহিলারা নিজ নিজ কক্ষ হতে দেখছেন বাড়ির সামনে আয়োজিত ক ব র খোঁদাই এবং লা শকে গোছল করানোর দৃশ্য।
বরাবরের মতো আজকেও পূর্ণতা অভিকে পাশে পায় না। নিজ কক্ষে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। জীবনটা এমন না হলেও পারতো।

“দুইদিনের এই দুনিয়ায় মানুষের কতো চাহিদা। চাহিদা মেটাতে মানুষ নানারকমের পাপকার্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
অথচ একবারও চিন্তা করে না
“আমাদের শেষ ঠিকানা হবে কবর”

একজন রয়েছে যে আমাদের বিচার করবে। সব পাপকার্যের হিসাব তাকে কড়াই গন্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে”
কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পূর্ণতা মুখ তুলে জানালার দিকে তাকায়। তখনই তার নজর পড়ে জানালার পাশে পড়ার টেবিলের ওপর। সেই কালো রঙের ডাইরি। নিশ্চয় কোনো বার্তা রয়েছে তাতে।
ধীরে সুস্থে উঠে দাঁড়ায় পূর্ণতা। এলোমেলো চুল গুলো হাত খোঁপা করে এগিয়ে যায় ডাইরির নিকট। ডাইরিখানা হাতে তুলে কাঙ্ক্ষিত পৃষ্ঠায় নজর বুলায়।
আজকেও গোটা গোটা অক্ষরে লেখা রয়েছে

“বুঝলে পূর্ণতা ওরা তোমাকে দুর্বল করে দিতে চাচ্ছে। ওদের উদ্দেশ্য সফল হতে দিও না। নিজ লক্ষ্যে স্থির থাকো।
মৃত্যুকে ভয় পেয়ো না। জন্ম নিয়েছো মরতে হবেই।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূর্ণতা। ডাইরি খানা বন্ধ করে হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।
“এমপি সাহেব
আপনাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন। কোথায় আপনি?”

“পুরুষ মানুষের হাতিয়ার কোনটা জানো তো?
তার পুরুষত্ব। যে পুরুষ নিজের পুরুষত্ব জাহির করতে পারে তাকেই বীর পুরুষ উপাধি দেওয়া হয়।
আমার তো মাঝেমধ্যে সন্দেহ হয়। তুমি পুরুষ তো?
শান্ত দৃষ্টিতে মনার দিকে তাকায় অভি। খোলামেলা পোষাকে আবেদনময়ী ভঙ্গিমায় অভিরাজকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়ে এখন উসকানি মূলক কথা বলছে। ঢেড় বুঝতে পারে অভি।

“নানুভাইকে দেখো না অভি। বুড়ো বয়সেও দুই চারটা মেয়েকে তৃপ্তি দিতে সক্ষম।
দাঁড়িয়ে পড়ে অভি।
“তাহলে তোমার নানুভাইয়ের থেকে তৃপ্তি মিটিয়ে নাও।
আমি সত্যিই পুরুষ নই।

আমি মহাপুরুষ। বউ ছাড়া অন্য নারীদের দিকে তাকাতেও আমার অস্বস্তি হয়।
আমার পেছনে ঘুর ঘুর করে তোমার তৃপ্তি মিটবে না মনা। তুমি অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করো।
বলেই বেড়িয়ে যায় অভি। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায় মনা।
খুব কায়দা করে জমিদার সাহেব অভির সাথে মনার কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিলো। মনাও আপ্রাণ চেষ্টা করেছে অভিকে আকৃষ্ট করতে। কিন্তু সে ব্যর্থ।
“কি আছে তোমার ওই এক রত্তি বউয়ের মধ্যে যা অন্য নারীর মধ্যে নেই”

ইফাদ বেশ কায়দা করে ঢুকে পড়ে পূর্ণতার কক্ষে। ভেতর থেকে ভালো করে দরজা বন্ধ করে দেয়। পাক্কা খবর আছে তার কাছে অভি বাড়িতে নেই। ফিরতেও বেশ দেরি হবে। ইমন ইশান পলি বেগমকে কবর দিতে ব্যস্ত। তাদের মানসিক অবস্থা ভালো নেই। এটাই সুযোগ পূর্ণতাকে ছুঁয়ে দেওয়ার।
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে ইফাদ একপা এক পা করে এগোতে থাকে। পূর্ণতা জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার দূর আকাশের পানে। জীবনের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সে।

লম্বা চুল গুলো কোমর ছাড়িয়ে হাঁটু পর্যন্ত পড়ে আছে। শাড়ির লম্বা আঁচল খানা ফ্লোর ছুঁয়েছে।
ইফাদ পূর্নতার পেছনে বেশ খানিকটা দাঁড়িয়ে থাকে। ভালো করে দেখে নেয় পূর্ণতাকে। অতঃপর হাত এগিয়ে স্পর্শ করতে যায়।

“আমাকে ছোঁবেন না। আপনার নোংরা হাতের স্পর্শ আমার শরীরে ফোসকা ফেলে দেবে।
চমকায় ইফাদ। হাত গুটিয়ে নেয়। কি করে জানলো পূর্ণতা? ইফাদ তো নিঃশব্দে এসেছিলো।
পূর্ণতা ইফাদের দিকে ঘুরে। দু পা পিছিয়ে যায় ইফাদ। শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে যায় কিন্তু পূর্ণতা ইফাদকে থামিয়ে বলে

“আপনার মৃ ত্যু আমার হাতে লেখা আছে। কিন্তু আমি আপনাকে মারতে চাই না। আপনি মারা গেলে আপনার মা খুব কষ্ট পাবে।
দ্বিতীয় সুযোগ দিলাম আপনাকে। শুধরে যান।
বাঁকা হাসে ইফাদ। ভ্রু কুচকে বলে
“উল্টো বললে কথাটা

তোমার মৃ ত্যু লেখা আছে আমার হাতে। আমি তোমার সুন্দর শরীরটায় হাত বুলিয়ে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিবো তোমায়।
তোমাকে দেখলেই আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ইচ্ছে করে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৫

বলতে বলতে পূর্ণতার কোমরে হাত দিতে যায় আর তখনই এক খানা ধাঁড়ালো ছু ড়ি ইফাদের হাত শরীর থেকে আলাদা করে দেয়।
ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে হাত। ইফাদ যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে। পূর্ণতাও ভয় পেয়ে দু পা পিছিয়ে যায়।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৭