রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫
সিমরান মিমি

দ্রুতপায়ে আশেপাশের জনমানবকে সরিয়ে ফাঁকফোকর এড়িয়ে ছুটে স্পর্শীর কাছে পৌছালো শ্রাবণী।চোখের অশ্রুগুলো বাঁধ মানছে না।সে সত্যিই অপয়া।যার কাছেই আশ্রয় খোঁজে সেই বিপদে পড়ে যায়।একহাত দিয়ে চোখ মুছে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে থাকা স্পর্শীর পাশে বসলো।দুহাত দিয়ে ঝাঁপটে ধরে ডাকতে লাগলো অনবরত।
“দিদি,ও দিদি,ওঠো। কি হলো তোমার?কেউ একটু জল দিন না তাড়াতাড়ি।

আশেপাশে ভিড় জমে গেছে ইতোমধ্যেই। স্পর্শীর গায়ে আঁচ লাগার আগেই দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা বাসের ড্রাইভার’টি ব্রেক কষে নেয়।সম্পুর্ণ ঘটনাতে তার তেমন কোনো দোষ না থাকলেও অকারনে শুনতে হচ্ছে আশেপাশের ক্ষেপে থাকা জনমানুষের ক্ষোভ যুক্ত গালি।কেউ তো কলার চেপে ধরেছে।আবার কেউ কেউ গায়ের উপর হামলে পড়ছে মারার জন্য।এই লোকসমাজ এমনই।কেউ বিপদে পড়লে তাকে যে প্রথমে সে বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করতে হয় সেটা মোটেই ভাবনাতে আনে না তারা।বরং যে ব্যাক্তির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই ব্যক্তিকে আগে ঝাড়ে।এ যেন তাদের গায়ের জোর খাটানোর চিরাচরিত ভাবনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গাড়ির মিররে পেছনে জমে থাকা জনমানবহীন জায়গাটায় এমন লোকসমাগম দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো পরশ।চিৎকার,চেচামেচি, ধমক,ধাক্কাধাক্কি সব মিলিয়ে যেন রণক্ষেত্রের রুপ নিয়েছে জায়গা’টি।ড্রাইভার’কে নির্দেশ দিলো গাড়ি ঘুরিয়ে পেছনে যাওয়ার।সেখানে পৌছাতেই হনহন করে একে একে সবাই নামলো।এমপির গাড়ি ও বডিগার্ড দের দেখতেই লোকজন দুপাশে চেপে গেল।গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে এগিয়ে গেল কাঙ্ক্ষিত স্থানে।এক অষ্টাদশী কন্যা কাঁদছে আর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা অনে এক মেয়েকে দেখলো সেখানে।

“এখানে কি হয়েছে?”গম্ভীর কন্ঠে উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞেস করলো পরশ।
পাশে থাকা এক মধ্যবয়স্ক দোকানদার ক্ষিপ্ত হয়ে ড্রাইভার’কে পরশের সামনে আনলো।চেচিয়ে বললো-
” এমপি সাহেব,এই ড্রাইভার অনেক জোরে বাস চালাইছে।মাইয়াডা ভয় পাইয়া গেছে।আরেকটু হইলেই মাইয়াডা গাড়ির তলে পইড়া যাইতো।”

থতমত খেয়ে গেলো ড্রাইভার।কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।অস্থির হয়ে পরশের উদ্দেশ্যে বললো-
এমপি সাহেব।আমি মানছি জোরে গাড়ি চালাইছি।কিন্তু এই মেয়েডার ক্ষতি হওয়ার আগেই গাড়ি থামাইয়া দিছি।এমন ভুল আর হইবে না।আমার বাস ভরা পেসেঞ্জার।প্রয়োজনে মেয়েডার চিকিৎসার খরচ আমি দিয়া দিমু।কিন্তু আমারে যাইতে দেন।

কোনো কথার সায় দিলো না পরশ।গম্ভীর পায়ে আরেকটু সামনে যেতেই চমকে উঠলো।মাথা কাত করে দেখতে গিয়েও আবার সোজা হলো।গম্ভীর হয়ে শ্রাবণীকে বললো-
” মেয়েটার মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরাও তো।”
শ্রাবণী খানিক’টা থমকে গেল।তারপর আলতো হাতে মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো।থমকে গেল পাভেল।দ্রুতপায়ে পরশের পাশে গিয়ে নিচু স্বরে বললো-

“এইতো এলো মেয়েটা।এর মধ্যে কি হয়ে গেলো?”
পরশ চোখ সরিয়ে নিলো।ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বললো-
“আপনি যান।আমি বুঝতে পারছি, আপনার মোটেও দোষ ছিলো না।”
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ড্রাইভার। দ্রুতপায়ে উঠে গেল গাড়িতে।স্টার্ট দিয়েই একপ্রকার পালিয়ে গেল নিজের গন্তব্যের দিকে।এলাকার লোকজন কিছুটা আড়চোখে দেখলো পরশকে।এই তো কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটাকে তাদের এমপির সাথে দেখে কতকিছু ভেবেছিলো।অথচ সেই মেয়েটাই অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে কিন্তু এমপির মধ্যে ভাবান্তর নেই।তিনি নিশ্চিন্ত হয়ে অবজ্ঞা করে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।

“মেয়েটার চোখেমুখে পানি দিয়ে ওই বেঞ্চে বসাও।ঠিক হয়ে যাবে।আর আপনারা ভিড় কমান।অজ্ঞান হয়ে গেছে।তেমন কিছুই হয়নি।মাঝেমধ্যে মুখকে বিশ্রাম নিতে দেওয়ার জন্য হলেও একটু-আধটু অজ্ঞান হওয়া উচিত।”
উপস্থিত সবাই খানিক’টা অবাক হলেও কেউ দ্বিমত করলো না।ধীরে ধীরে ভীড় কমিয়ে দিলো।দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে আহ করে শব্দ করলো স্পর্শী।এতোক্ষণে কেউ খেয়াল না করলেও স্পর্শীর বেদনাতুর শব্দে সেদিকে চাইলো। আচমকা পিচ ঢালা রাস্তার উপর পড়ায় কপালের উপর’টা না ফাটলেও থেতলে গেছে।যেটা এতক্ষণ চুলের আড়ালে ছিলো।পরশ কিছুটা চমকালো।পরক্ষণেই পাভেল’কে ইশারা দিয়ে কাছে ডাকলো।

ভাইয়ের কথা শুনতেই স্পর্শির দিকে এগিয়ে গেল পাভেল।একটা রিকশা ডেকে উঠিয়ে দিলো তাকে।ভাড়া দিয়ে সদর হস্পিটালে নামিয়ে দেওয়ার জন্য বললো।তাদের পেছনে অন্য একটা রিকশা তে পাঠিয়ে দিলো আরেকজন বডিগার্ড কে।

মাথা তুলতে পারছে না স্পর্শী।গা গুলিয়ে বমি আসছে বারবার।এ আল্লাহ!এটা তো ভালো লক্ষণ নয়।এখন রায়বাড়িতে থাকলে কোনোভাবে ঠাকুরমশাইয়ের কানে এই কথা গেলে কেলেংকারী ঘটে যেত।এতো ব্যাথার মধ্যেও হাসি পেয়ে গেল স্পর্শীর।পেটের উপর হাত রেখে দুষ্টুমির স্বরে বললো-
“এইই,ভেতরে কেউ আছিস টাছিস নাকি?থাকলে তাড়াতাড়ি বাইরে বের হয়ে আয়।তারপর ভালোমতো তোর বংশপরিচয় বল।কোনখান থেকে হুট করে টপকালিরি বাপ।তুই তো ভুল করে চলে আসছিস।তোর বাপের তো এখনো দেখাই নাই।একটু ধীরে সুস্থে আয়।রয়ে সয়ে বাপ।”

এরইমধ্যে নার্স চলে এলো। কপাল ড্রেসিং করে ওষুধ লিখে দিতেই কৌতূহলী হয়ে স্পর্শী বললো-
“হুট করে এমন অজ্ঞান হলাম কেন নার্স?ডাক্তার কি কিছু বলেছে?”
“তুমি কখন থেকে না খেয়ে আছো মা?এমন করলে তো গ্যাস চারপাশ থেকে তোমাকে গ্রাস করবে।কিছু খেয়ে নিয়ে এখানের অষুধ গুলো খেয়ে নিও।”-রুমের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে ডাক্তার বললো।
আলতো হাসলো স্পর্শী।সত্যিই তো।সকাল থেকে কিচ্ছু খাওয়া হয়নি।তার উপর সে এই কড়া রোদের মধ্যে দু ঘন্টা রাস্তায় হেটেছে।

কেটে গেছে অনেক প্রহর।ঘড়ির কাঁটায় প্রায় বারোটা।যেখানে সাড়ে দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছিলো স্পর্শী।সেখানে এখন বারোটার গাড়িতে উঠতে হচ্ছে।তাড়াতাড়ি যেতে চেয়েছিলো। অথচ সৃষ্টিকর্তা এখন আরো দু ঘন্টা দেরী করিয়ে পাঠাচ্ছে তাকে।হেল্পারের সাহায্য নিয়ে বক্সে মালামাল গুলো নিয়ে শ্রাবণী কে ধরে উঠে গেল সিটে।মুহূর্তে’ই ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো ফোন।রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে বললো-

” কিরে?তুই কি আর জীবনেও সাভারে আসবি না?আমার কথা তো মনেই করিস না।ওখানে নতুন বোন পেয়েছিস।নাকি নতুন বর পেয়েছিস?যাকে পেয়ে আমার মতো একটা কিউট মেয়েকে ভুলে গিয়েছিস।এই আপু,তুই আবার বিয়ে টিয়ে করে বসিস নি তো?অনন্দা দির তো বড় ভাই ও নেই। কাকে করলি বিয়ে?এটা কিন্তু মোটেও ঠিক করিস নি। ওমা,,,, শুনছো?আপু নাকি গ্রামের কোন ছেলেকে বিয়ে করেছে।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪

হতাশ হলো স্পর্শী। মাথাটা আবার ধরেছে।আর্শির এই বকবকানি শুনতে একটুও ভাল্লাগছেনা।কোনো রুপ উত্তর না দিয়েই আস্তে করে কেটে দিলো ফোন।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৬