রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৬

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৬
সিমরান মিমি

সময়ের সাথে স্থিতিশীল চাকা ঘুরতে লাগলো ইঞ্জিনের তালে তালে।লাল রঙা বাসটার ডানপাশের তিন নম্বর লাইনে বসেছে শ্রাবণী।তার পাশেই জানালা ঘেঁষে খানিক’টা মাথা হেলিয়ে বসে আছে স্পর্শী।মাথার যন্ত্রনার কাছে হার মেনেছে গায়ে-মাথায় জড়ানো ওড়নাটা।অবহেলায় পড়ে আছে খোপার উপর।

কপালের দু ধার থেকে দুই গোছা চুল বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে কানের দু-পাশ জুড়ে।আর্শি’র ফোন কেটে দেওয়ায় সে বার বার ফোন দিয়ে যাচ্ছে।এই মুহুর্তে অসহ্য লাগছে স্পর্শীর। ব্যাগ হাতরে ফোন বের করে সুইচ অফ করে দিলো।তারপর আলগোছে চোখ দুটো বন্ধ করে সিটে গা হেলিয়ে দিলো।
সময় তার নিজস্ব গতিতেই চলতে লাগলো।গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দের সাথে বাতাসের দমকা স্নিগ্ধতায় ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল স্পর্শী।হুট করেই গানের কাছে বার বার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘দিদি,ও দিদি,ওঠো।দেখো না সবাই চলে যাচ্ছে।”
অনেক কষ্টে বিরক্তি নিয়ে চোখ খুললো স্পর্শী।মুহুর্তেই কপালের আঘাতের জায়গা’টা যেন চিঁড়ে উঠলো।চোখ খুলে চারপাশে তাকাতেই কিছুটা হুশ এলো।গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ।জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলো সামনে ওভারব্রিজ। খানিক’টা অবাক হয়ে গেল স্পর্শী।মাত্র’ই তো ঘুমালো।এর মধ্যেই এসে গেল কিভাবে?হাতের ঘড়িতে টাইম দেখতেই চমকে গেল।ঘড়িতে চার’টা ছাপ্পান্ন বেজে গেছে।দ্রুত শ্রাবণীর হাত ধরে তড়িৎ গতিতে নেমে গেল গাড়ি থেকে।হেল্পার সাথে সাথেই বক্স থেকে ব্যাগ তিন’টা নামিয়ে দিলো তাদের।

এলোমেলো পায়ে ঘুম জড়ানো চোখে ব্যাগ হাতে নিয়ে ওভার ব্রিজের কাছে এলো।শ্রাবণী ও তার পিছু পিছু গুটি গুটি পায়ে চলে এলো।প্রতিটা সিঁড়ি পার হতেই দম বেরিয়ে যাচ্ছে স্পর্শীর।আচমকা’ই ব্যাগ রেখে তার উপর বসে পড়লো।অবুঝের মতো তাকিয়ে রইলো শ্রাবণী।বেশ কিছুক্ষণ পর সাহস নিয়ে আমতা-আমতা করে বললো-
“দিদি,এখানে কেন বসেছো?বাসায় যাবে না?”

বিরক্ত হলো স্পর্শী।চোখ দুটো ছোট ছোট করে শ্রাবণীর উদ্দেশ্যে বললো-
“এটাই আমাদের বাসা।তোমাকে এখানেই থাকতে হবে।বেশী পকপক করলে ফিক্কা মেরে ব্রিজের নিচে ফেলে দিব।”
চমকে উঠলো শ্রাবণী।উঁকি মেরে ব্রিজের নিচে চাইলো।সেকেন্ডের ব্যাবধানে একে একে বাস,ট্যাক্সি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে।খানিক’টা শঙ্কিত হয়ে পুনরায় স্পর্শীর দিকে তাকালো।এলোমেলো পায়ে আবারো উঠে দাঁড়িয়েছে সে।ব্যাগ হাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলছে-

“আমার পিছু পিছু আসো।এদিক সেদিক যাবে না।”
মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় মাথা নাড়িয়ে আবারো হাটতে আরম্ভ করলো শ্রাবণী।ব্রিজের নিচেই রেডিও কলোনীর রিকশার স্ট্যান্ড।আলতো পায়ে হেটে রিকশায় উঠলো তাড়া।তারপর ড্রাইভারে’র উদ্দেশ্যে স্পর্শী বললো-
“সোসাইটি গেট চলুন, মামা।”

মিনিটের ব্যাবধানেই রিক্সা চলতে আরম্ভ করলো।মিনিট দশেকের মধ্যে গেটের সামনে গাড়ি থামালো।এপাশ থেকে সিটকিনি নাড়া দিতেই ভেতর থেকে দৌড়ে আসার শব্দ পাওয়া গেল।গেট খোলা মাত্র’ই চিৎকার করে উঠলো আর্শি।দ্রুতহাতে জড়িয়ে ধরতেই পেছনে গুটিশুটি পাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রাবণীকে নজর এলো। ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।পরিচয় জিজ্ঞেস করার প্রয়াস করে স্পর্শীর দিকে পুনরায় তাকাতেই আঁতকে উঠলো।কপাল সাদা ব্যান্ডেজে ঢাকা।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই স্পর্শী বললো-

“এক্সিডেন্ট করেছি আমি।এবার সামনে দিয়ে সর।ভেতরে যাবো।”
মুহুর্তে’ই পুরো বাড়ির দেয়াল চিৎকারে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।আর্শি চিৎকার করে বললো-
“আপুউউ,আম্মু এক্সিডেন্ট করেছে।”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল স্পর্শী। ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাতেই আর্শি শুধরে নিলো নিজেকে।পুনরায় গলার দামামা বাজিয়ে বললো-

“আম্মুউউ!!!আপু এক্সিডেন্ট করেছে।”
মুহুর্তে’ই খুন্তি হাতে ছুটে এলো পিপাসা।গায়ের ওড়নার এক পাশ ধরে কপাল মুছতে মুছতে স্পর্শীর সামনে দাঁড়ালেন।আড়চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে চোরা কন্ঠে বললো-
“তুমি পার্লারে যাও নি?”
কোনোরকম ভাবান্তর দেখা গেল না পিপাসা’র মধ্যে। চিলের নজরে স্পর্শীর কপালের দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে কঠোর কন্ঠে বললো-

“মাথা ফাঁটিয়েছিস কিভাবে?”
পাত্তা দিলো না স্পর্শী।থুতনি নাচাতে নাঁচাতে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো-
“মাথা ফাটাই নি তো।কপাল ফাটিয়েছি।আই মিন কপাল থেতলে গেছে।সেটাও আমার দোষে নয়।”
চোখ কটমট করে চাইলেন পিপাসা।দু-কদম এগিয়ে এসে স্পর্শীর চুল সরিয়ে কপাল দেখতে দেখতে বললো-
“দেখি,কতটা চুল কাটতে হয়েছে।”

“আউচ!লাগছে মা। মাথা যন্ত্রণা করছে খুব।একটু রুমে যেতে দাও।সরো তো।”
বলেই রুমের দিকে এগিয়ে গেল স্পর্শী।এরইমধ্যে পেছনে গুটিশুটি পাঁকিয়ে থাকা শ্রাবণীর দিকে নজর পড়লো পিপাসার।নিজের চিরচেনা কঠিন সত্তা’কে মুহুর্তের মধ্যে বিলুপ্ত করে কোমল চাহনি’তে তাকালেন।আলতো হেসে বললো-

“তুমি কে?ভুল করে কি আমাদের গেটে ঢুকে পড়েছো?”
অসস্তিতে পড়লো শ্রাবণী।কিছুটা হিমশিম ও খেল।স্পর্শী দিদি ওকে ফেলে একাই চলে গেল।এখন কি পরিচয় দেবে ও।পিপাসা আলতো হাসলো।শ্রাবণী’র অসস্তি বুঝতে পেরে বললো-

“আরে এতে ভয় বা লজ্জা পাওয়ার কোনো দরকার নেই।একসময় এমন ভুল আমি প্রচুর করেছি।যে সময় নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছিলাম,ওইসময় প্রতিদিন অন্যদের বাড়ির গেটে নক করতাম।এখান কার প্রায় গেটগুলোই কিছুটা দেখতে একই রকম।শেষে এই সামনের সাদা গোলাপ গাছ টা দেখে চিনতাম।এটাকেই চিহ্ন মনে করতাম।তুমি বুঝি নতুন ভাড়াটিয়া। তা কোন বাড়িতে উঠেছে তোমার ফ্যামিলি?”

পিপাসা’র কথা শুনে গেটের সামনে এক পলক তাকালো শ্রাবণী।সামনেই কি সুন্দর একটা বড় গোলাপ গাছ।থোকায় থোকায় সাদা ফুলে সবুজ গাছটা এক’টা ভিন্ন নকশায় দৃশ্যমান হয়েছে।পিপাসা’র ডাকে পুনরায় তার দিকে ফিরলো শ্রাবণী। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে নিচু কন্ঠে বললো-

“আমি স্পর্শী দি’র সাথেই এসেছি পিরোজপুর থেকে।উনি’ই নিয়ে এসেছেন।”
পলকহীন ভাবে এক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো পিপাসা।মুহুর্তে’ই জিভে কামড় মেরে বললেন-
“এমা!তুমি এতোক্ষণ ধরে বোকার মতো চেয়েছিলে কেন তাহলে?বললেই তো পারতে।চলো,চলো।ভেতরে আসো।এই আর্শি, ওকে নিয়ে তোর রুমে যা তো।মেয়েটা’কে বাথ্রুম দেখিয়ে দে।হাত মুখ ধুয়ে আসুক।আমি খাবার বাড়ছি।”
খানিক’টা ইতস্তত করে হেসে শ্রাবণী’কে নিয়ে রুমে গেল আর্শি।বাথ্রুম দেখিয়ে দিতেই দ্রুত ঢুকে পড়লো সেখানে।

বিকেল বেলা।ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে চারটা।সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু।নিজের সমস্ত তেজ হারিয়ে সে ঢলে পড়েছে পশ্চিম প্রান্তে।যত বিকেল গড়িয়ে আসছে সাভারে তত’ই মানুষের ভিড় বেশী জমছে।এক হাতে শ্রাবণী’কে ধরে রিকশা স্ট্যান্ডে’র সামনে দাড়ালো স্পর্শী।এখান থেকে লোকাল বাস গুলো ধরতে হয়।টানা তিনদিন নিজের বাড়িতে রাখলেও এখন আর রাখা যাবে না।

মেয়েটার মা-বাবা কে কথা দিয়ে এসেছে শ্রাবণী ভালো ভার্সিটি’তে পড়াবে সে।নিজের বাড়িতে রেখে কোচিং এ ভর্তি করা গেলেও এই মুহুর্তে সায় দিচ্ছে না স্পর্শীর মন।এ -কদিনে আর্শির সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে শ্রাবণী’র।সারাক্ষণ হাসি,মজা,দুষ্টুমিতে কাটিয়ে দেয় দুজন।স্পর্শী এই মুহুর্তে চাইছে না আর্শির সাথে মিশে জীবনের সমচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় টা নষ্ট করুক শ্রাবণী।
হঠাৎ ‘ই বাসের শব্দ পেতেই হাত দিয়ে ইশারায় থামতে বললো স্পর্শী।দ্রুতপায়ে শ্রাবণী’কে নিয়ে বসতেই হেল্পার’কে বললো –

“ডেইরি গেটে নামিয়ে দিবেন।”
এবারে হেল্পার অতিরিক্ত আতিথেয়তা দেখালো।দাঁত দেখিয়ে হেসে সম্মানের সহিত বললো-
“জ্বী আপা।আপনি বসেন।”

এ নতুন কিছু নয়।সাধারণ’ত জাহাঙ্গীর নগরের স্টুডেন্ট দের দেখলেই তারা কিছুটা তটস্থ হয়ে চলে।পাছে যেন কোন ঝামেলায় না জড়িয়ে পড়ে।স্পর্শী বুঝে উঠতে পারে না মানুষ এতটা ভয়কাতুরে কি করে হয়।জাবি’র স্টুডেন্ট রা কি বাঘ নাকি ভালুক।এতো ভয় কেন পেতে হবে তাদের।যদিও রাস্তাঘাটে কিছুসংখ্যক স্টুডেন্ট দের আপত্তিজনক কাজকর্মের কারনে ড্রাইভার’রা তটস্থ থাকে।তাও স্পর্শী মানতে নারাজ।

কেননা, জাবির অধিকাংশ স্টুডেন্ট রা স্বাধীন চেতা।এরা সহজে কারো সাথে ঝামেলায় জড়ায় না।আর নাতো কোনো অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয়।সামনে সামনে এইসব ড্রাইভার ‘রা সম্মান দেখালেও তাদের অনুপস্থিতিতে জঘন্যতম কথা বলতেও পিছু পা হয় না।তাদের মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মেয়েরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।এখানকার স্টুডেন্ট রা ভীষণ অসভ্য,অশালীন,অভদ্র হয়।

ভাবতে ভাবতেই হেসে ফেললো স্পর্শী।পরক্ষণেই হেসে দিয়ে নিজেকে বললো-
“সবার কথা কানে নিলে কি আর জীবন চালানো যায়।লোকে তো বলবেই।”
বাসে ওঠার দশ মিনিটে’র মাথা তেই ডেইরি গেটে বাস থামলো।ব্যাগ থেকে একটা দশ এবং একটা পাঁচ টাকার নোট বের করে হেল্পারের হাতে দিতেই চমকে গেল ছেলেটা।কাঁচুমাচু করে বললো-

“আপা, স্টুডেন্ট তো হাফ ভাড়া।আপনে তো পাঁচ টাকা আরো বেশী দিছেন।”
কোনোরুপ ভাবান্তর দেখা গেল না স্পর্শীর মধ্যে।কঠোর চাহনি’তে শ্রাবণীর দিকে ইশারা করে বললো-
“ও এখান কার স্টুডেন্ট না।”

বলেই নেমে গেল বাস থেকে।গেটের ভেতরে ঢুকে হাটতে শুরু করলো দুজন।এখানে রিকশা নেই।হয়তো কলাবাগান বা সংশপ্তকের ওদিকে আছে।সমাজবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের সামনে আসতে’ই চমকে দু-পা পিছিয়ে গেল স্পর্শী।আর একটু হলেই ধাক্কা লাগতো সামনে দন্ডায়মান বিশালাকৃতির পুরুষালি বুকের সাথে।খুব বেশী ভুল না হলে ছেলেটা ইচ্ছে করেই ধাক্কা লাগাতে চেয়েছে তার সাথে।

মুখের দিকে তাকাতেই দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো স্পর্শী।তার সন্দেহ মোটেও ভুল নয়।পিয়াস কে দেখতে’ই পাশ কাঁটিয়ে চলে যেতে লাগলো।
“ছিলে কোথায় এতোদিন।টিকিটাও তো খুঁজে পাই নি।তিন দিন গিয়েছিলাম তোমার বাড়ির সামনে।সেখানেও পাই নি।ভেবেছি আর্শি কে জিজ্ঞেস করবো।কিন্তু তোমার ওই বাচ্চা বোন তো আমাকে দেখলেই দৌড়ে পালায়।
থেমে,

তবে যাই বলো, আমার শালী টাও কিন্তু অনেক কিউউট।”
থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো স্পর্শী।শ্রাবণী’র হাত ছেড়ে দ্রুতপায়ে চলে এলো পিয়াসের সামনে।তার পাশেই পিয়াসের ডিপার্টমেন্টের আরো তিন’টা ফ্রেন্ড আছে।তোয়াক্কা করলো না স্পর্শী।তেজী চোখে তাকালো পিয়াসের দিকে।রাগের তীব্রতা নিয়ে বললো-

“তোর চোখ দুটো তুলে নিব আমি।আমার বোনের দিকে নজর পড়েছে এখন।”
আশেপাশে হাটতে থাকা কিছু সংখ্যক স্টুডেন্ট কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালো তাদের দিকে।স্পর্শী নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-

“খবরদার!আমাকে রাগানোর চেষ্টা করবি না।তোকে আমি লাস্ট বারের মতো সাবধান করছি পিয়াস।আমার বোন তো দূর,আমার আশেপাশেও যেন আর তোকে ঘেঁষতে না দেখি।”
স্পর্শীর রাগী কথাগুলো যেন আরো জিদ বাড়িয়ে দিলো পিয়াসের মধ্যে।হা হা করে জানোয়ারের ন্যায় হেসে উঠলো।দু কদম এগিয়ে স্পর্শীর গা ঘেঁষে দাড়াতে গেলেই ছিটকে দূরে সরে গেল স্পর্শী।পিয়াস আবারো হেসে উঠলো।ধীর আওয়াজে বললো-

“বাহ!বোনের জন্য এতো টান।আগে কেন জানি নি আমি।আমার’ই ভুল।আরো আগে আমার শালীর খোঁজ নেওয়া উচিত ছিলো।আচ্ছা সাড়ে তিন টার সময়েই তো আর্শি কোচিং এ যায় বালির মাঠের দিকে।আচ্ছা বাদ দে,ওই মেয়েটা কে?কাকে নিয়ে আসছিস আবার।এটাও কিন্তু দেখতে খারাপ না।”
হেসে দিলো স্পর্শী।পিয়াস এই মুহুর্তে স্পর্শীর হাসিটাকে হজম করতে পারছে না।সে তো ভয় দেখাতে চাইছে।অথচ এ মেয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসছে কেন?

“তোর উদ্দেশ্য টা আমি মাত্র বুঝতে পারলাম।আমার দুর্বল জায়গা গুলো খুঁজে খুঁজে আমায় ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করছিস। তাই তো?ওকে ঠিক আছে। চেষ্টা করে দেখতে পারিস।তবে একটা কথা মাথায় রাখিস।তোকে এটাই লাস্ট সুযোগ দিলাম আমি। মানলে ভালো।আর না মানলে আমার মনে হয় না তুই এই ক্যাম্পাসে বেশী দিন টিকতে পারবি।যাই হোক,ভেবে চিনতে কাজ করিস।বেস্ট অফ লাক।”

কথাগুলো বলেই শ্রাবণীর হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।পরিচিত এক ফ্রেন্ডের বোন এখানকার নামকরা এডমিশন কোচিং এ এডমিশন নিয়েছে।ওর মাধ্যমেই শ্রাবণীকে সেখানে রেখে আসবে।কোচিং এর কাছেই বাসা।অন্য ক্যান্ডিডেট দের সাথে ক্লাস করে বাসায় আসতে খুব বেশী প্রবলেম হবে না শ্রাবণীর।ভেবেছিলো সাভারেই রাখবে।কিন্তু নিজস্ব ঝামেলার মধ্যে অন্য আরেকটা মেয়েকে জড়ানো ঠিক হবে না। এর থেকে ফার্মগেটে’ই থাক ও।

রাত এগারোটা।নিত্যদিন সারাবাড়ি তোলপা করে ফেলা মেয়েটা আজ চুপচাপ।যে কিনা প্রতি রাতে এক প্রকার বিশ্বযুদ্ধ ঘটিয়ে ফেলে বোনের সাথে ঘুমাবে বলে সে আজ হঠাৎ’ই একা রুমে শুয়ে থাকবে একথা শুনতেই মাথা ঘুরতে লাগলো স্পর্শীর।বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কালেও কোনো কাজ হয়নি।ভেতর থেকে দরজা আটকিয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে আর্শির সেই একই কথা শুনেছে।

“আমি আজ থেকে একা একা ঘুমাবো।অভ্যাস করতে হবে তো।দু-দিন পরেই তো তোমার বিয়ে হয়ে যাবে।তখন কি তোমার জামাইয়ের মধ্যে শুতে নেবে আমায়।তার থেকে আগে থেকে অভ্যাস করাই ভালো। ”

স্পর্শীর মাথা ঘুরছে।শেষে একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিজের রুমে এসেছে।মাথার ক্ষত টা এখনো পুরোপুরি শুকায় নি তার।রুমের সমস্ত লাইট অফ করে কাঁথামুড়ি দিয়ে আলগোছে মায়ের চুরি করা ফোন ‘টা বের করলো আর্শি।মা ঘুমিয়েছে দশ’টা নাগাদ।সেই সু্যোগেই হাত সাফাই করেছে সে।কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনের লক খুলে ফেসবুকে ঢুকলো।নিজের চিরচেনা আইডি’টা লগইন দিয়ে সার্চ করলো কাঙ্ক্ষিত আইডি’টা।আজ সে ক্রাশ খেয়েছে।

শুধু ক্রাশ না,হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ওই গোল গোল লাড্ডুর মতো চেহারার উপর।বান্ধবীর ক্রাশ কে দেখতে গিয়ে সে নিজেই ফিদা হয়ে গেছে।লোক’টাকে চেনে না তার বান্ধবী।কোনো এক ফেসবুকের পরিচিত ফ্রেন্ড বার্থডে উইশ করেছিলো লোকটি’কে।ব্যস সেই দিন থেকেই সে পাভেল শিকদার নামক এই আইডিটার উপর ক্রাশিত।

আজ খুবই বিশ্বাসের সাথে নিজের বেস্টফ্রেন্ডের সাথে শেয়ার করলো নিজের কল্পনার পুরুষকে।প্রোফাইল দেখা মাত্র’ই সেই একই রোগ বাসা বেধেছে আর্শির শরীরে।এ যেন কোনো সংক্রমণ জনীত রোগ।খুব’ই গোপনীয়তার সাথে আইডি’র নামটা খাতায় লিখে এনেছে।ব্যস সন্ধ্যে থেকেই এই আইডি রাউন্ড দেওয়ার জন্য ছটফট করছিলো আর্শির মন।আর সেই মন শান্ত হলো এই রাত সাড়ে এগারোটায়।

সার্চ অপশনে “Pavel Shikder” নামে আইডি টা ভেসে উঠতেই শ্বাস প্রশ্বাসের গতি আরো তীব্র হলো।হৃৎপিন্ড উদাম গতিতে দামামা বাজিয়ে চলছে।আলগোছে কাঁথাটা সরিয়ে কুমিরের ন্যায় বিশালাকৃতির নিঃশ্বাস নিয়ে নিলো।পুনরায় কাঁথার মধ্যে ঢুকতেই চমকে উঠলো।মন বারবার বলছে কেউ একজন তাকিয়ে আছে তার দিকে।ফোনের স্ক্রিন অফ করে উঠে দাঁড়ালো বিছানায়।দেয়াল হাতড়ে লাইট জ্বালিয়ে নিলো।উঁকি মেরে দরজা,খাটের নিচ,আলমারির পেছন সব দেখে নিলো।নাহ,কেউ নেই।আবারো লাইট অফ করে চলে এলো কাঁথার মধ্যে। ফোনের ব্রাইটনেস পুরোপুরি কমিয়ে নাইট শেইল্ড অন করে নিলো। বুকের মধ্যে হাত চেপে ধরে মেসেজের উপর ক্লিক করলো।জীবনের পুরোপুরি সাহস,উত্তেজনা নিয়ে গুটিগুটি অক্ষরে লিখলো-

“আপনি কি ফ্রি আছেন?”
সাথে সাথেই নেট অফ করে দিলো।কেমন এক ভয় কাজ করছে মনের মধ্যে।ইশশ!কোনোভাবে আপু বা মায়ের কানে যদি এই কথাগুলো যায়। না না,সেটা কিভাবে যাবে।কোথাকার এক ছেলেকে মেসেজ দিয়েছে সে।এটা জানা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।মুহুর্তে’ই আবারো রিপ্লাই এসেছে কি না দেখতে ওয়াইফাই অন করলো। মেসেঞ্জারে ঢুকতেই হতাশ হলো। কোনো রিপ্লাই আসে নি।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫

মেসেজ পড়তেই পুনরায় জিভ কাটলো।ইশশ!আর্শি সত্যিই একটা গর্দভ।তার উচিত ছিলো সুন্দর করে একটা সালাম দেওয়া।ছেলেদের পটাতে হলে তো আগে ভদ্র হতে হবে।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। আবারো ছোট ছোট হাতে লিখলো-
আসসালামু আলাইকুম।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৭