রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৮

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৮
সিমরান মিমি

রৌদ্দ্রজ্জ্বল দিন।মাথার পূর্ব দিকের সূর্যটা নিজস্ব আলো নিয়ে বিস্তার করছে পুরো ধরনীময়।ঘড়ি’র ঘন্টার কাঁটা’টা তখনো দশটা’কে ছোয় নি।গেটের ভেতর পা রেখে খানিক’টা অবাক হলো স্পর্শী।প্রতিদিনের মতো পিয়াশ তার দলবল নিয়ে উপস্থিত নেই সেখানে।

সন্দেহের দানা বাধলো মনে।আরেকটু সামনে এগিয়ে বাম দিকে চাইতেই আরো চমকে উঠলো।মাঠের এই কোনায় গাছের সাথে ঘেঁষে ফোপাচ্ছে এক মেয়ে।পেছন থেকে দেখে মনে হচ্ছে না সে কাঁদছে।তারপরেই মন মানলো না।আলতো পায়ে না চাইতেও চলে গেল সেদিকে।মেয়েটা’র থেকে দু কদম দূরে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,”এই মেয়ে,কাঁদছো কেন তুমি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“মুহুর্তেই চমকে উঠলো সামনের মেয়েটি।নিচু মাথা টাকে খানিক’টা উপরে তুলে দেখে নিলো স্পর্শী’কে।সাথে সাথেই চেহারার মধ্যে ভীতিকর অসস্তি দেখা দিল।স্পর্শী চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো আরেকবার।দেখেই মনে হচ্ছে তার থেকে জুনিয়র।হয়তো ফার্স্ট বা সেকেন্ড ইয়ারের হবে।চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।এখন না কাঁদলেও দেখেই বোঝাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে কেঁদেছে ;যার হেঁচকি এখনো থামেনি।মেয়েটাকে নিরব দেখে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,

“কেউ কিছু বলেছে?আমাকে বলো।”
হঠাৎ এমন স্নিগ্ধ কন্ঠস্বর শুনে হয়তো ভয় কমলো তার।এমনিতে’ই ভার্সিটি লাইফে’র সিনিয়র মানেই এক আতঙ্কের নাম।সেখানে হুট করে এমন গম্ভীর কন্ঠস্বর নিয়ে কথা বললে ভয় পেয়ে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক।কিছুটা নিচু হলো স্পর্শী।হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে তুলে আলতো হেসে বললো,
“ভয় পেয়ো না,আমি থার্ড ইয়ারের।তোমার সিনিয়র’ই হবো।আমাকে নির্ভয়ে বলো।দেখি কোনো সাহায্য করতে পারি কি-না।”

মেয়েটা যেন সাহস পেলো অনেক’টা।ঢোক গিয়ে আশেপাশে চেয়ে আরেকটু কাছে গেল স্পর্শীর।যেন অন্যরা দেখে মনে করে সে এই সিনিয়র আপুর পরিচিত।কিছুটা স্নিগ্ধ কন্ঠে বললো,”আপু,আমি ফার্স্ট ইয়ারের।”
স্পর্শী ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো।কিছুক্ষণ ভেবে বললো,”কেউ কি র‍্যাগ দিয়েছে?”বলতেই সারা মুখে আবারো অন্ধকার বিরাজ করলো মেয়েটার।চোখ দুটো পুনরায় ছলছল করে উঠলো।ভেঙে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠলো,”এক ভাইয়া আর তার দলবল আমাকে বাজে ভাবে র‍্যাগ দিয়েছে।ওরা বলেছে…..

কথা শেষ করার আগেই ফুঁসে উঠলো স্পর্শী।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”সাথে কোনো আপু ছিলো?”
মাথা নাড়িয়ে না বললো মেয়েটা।অবাক হয়ে গেল স্পর্শী।বললো,”আশেপাশের কেউ কিছু বললো না।কোনো স্টুডেন্ট বাধা দেয় নি।আর, কি বলেছে তোমায় ওরা?”

“আমি আমাদের ডিপার্টমেন্টে যাচ্ছিলাম।তখন হুট করে একটা বড় ভাই ডাক দিলো।আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম।ওনাদের সামনে দাঁড়াতেই ফুসে উঠে বললো” সালাম দাও নি কেন?সিনিয়র ভাইদের সালাম দিতে হয় জানো না?”আমি তারপর সালাম দিয়েছি।কিন্তু তাও ওনারা থামেনি।আমার চশমা খুলে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে। আমার নোটস খাতা নিয়ে বললো,’এটা কোনো হাতের লেখার মধ্যে পড়ে?তেলাপোকা হেটে গেছে মনে হয়।”তারপর আমার পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে অনেক অপমান করেছে।আমার নোটস ছিঁড়ে ফেলেছে।এখন বলছে, আমাকে নাকি এখন থেকে দশদিন ওনার এসাইনমেন্ট লিখে দিতে হবে।”

স্পর্শী কিছুটা চিন্তিত হলো।তারপর পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,”আর কিছু বলে নি?এটুকুই।”
অসস্তিতে পড়লো মেয়েটা। নিজের জড়তা কাটিয়ে নিচের তাকিয়ে আস্তে করে বললো,”উনি কথাগুলো বলার পুরোটা সময় আমার ঘাঁড়ে হাত দিয়ে রেখেছিলো।অনেক বাজেভাবে আঙুলগুলো দিয়ে গলায় ছুঁয়েছে।”
বাকরুদ্ধ হয়ে গেল স্পর্শী।শরীরে থাকা রক্তিম বর্ণীয় তরল পদার্থ তরতর করে গরম হতে লাগলো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”আশেপাশে কেউ ছিলো না?কিচ্ছু বলে নি কেউ?”

নাহ,উনারা আমাকে ডেকে ওই জঙ্গলের পাশে নিয়ে গেছিলো।”
আর কিছু শোনার প্রয়াস না করেই মেয়েটার হাত ধরে টেনে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের দিকে এগিয়ে গেল।আজকের ক্লাস চুলোয় যাক,কিন্তু পিয়াসের কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। পিয়াস ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট হলেও সে তৃতীয় বর্ষের।এক্ষেত্রে জুনিয়র হিসেবে একজন সিনিয়রের সাথে বুঝে শুনে লড়াইয়ে নামতে হবে।ডিপার্টমেন্টে’র সামনে যেতেই চোখে পড়লো ফারজানা রুমি আপুকে।

তিনি ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী।বলতে গেলে জুনিয়র মেয়েদের ভরসার স্থান।অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে প্রতিবাদ করে টিকে আছে ক্যাম্পাসে।তাকে সকল ঘটনা বলতেই অবাক হয়ে গেল।কেননা বর্তমান ক্যাম্পাসের নিয়ম অনুসারে কোনো ছেলে জুনিয়র মেয়েদের র‍্যাগ দিতে পারবে না।র‍্যাগ দিতে হলে মেয়েরা মেয়েদের এবং ছেলেরা ছেলেদের’ই দিতে পারবে ;যেটা বর্তমান ভিসির আদেশ।কোনোরকম সময় নষ্ট না করেই স্পর্শীকে সাথে করে মেয়েটাকে নিয়ে গেল উপরমহলে।

দুপুর সাড়ে বারোটা।মাথার উপর সূর্যটা প্রায় এসে পড়েছে।’ল’ ডিপার্টমেন্টের সামনের রাস্তাটায় শ্রেয়সীর সাথে হাটছে স্পর্শী।এরমধ্যে’ই প্রবল বেগে নিজের বাইক থামালো পিয়াস।চমকে দু-পা পেছনে দাঁড়িয়ে গেল দুজন।আরেকটু হলেই চাকার নিচে পা পড়ে যেত স্পর্শীর।

নিজের সমস্ত ক্ষোভ মেটানোর উদ্দেশ্যে’ই যে পিয়াস এমনটা করেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত স্পর্শী।বাইক থেকে নেমে তার সামনে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রেগে পিয়াস বললো,
“তুই সব জায়গায় এমন মাতব্বরি করিস কেন? ওই,তোরে কিছু করছি আমি?তোরে ছুইছিলাম নাকি তোরে রেপ করছিলাম ।তোর এতো জ্বলে কেন?আমার যা খুশি আমি তাই করবো তাতে তোর কি?তোর কত্ত বড় সাহস তুই আমার নামে কমপ্লেইন করেছিস।তোকে তো দেখে নেব আমি।তোর কি অবস্থা করি তুই শুধু দেখিস।”

জনমানব ভর্তি রাস্তার মধ্যে এমন লেইম ওয়ার্ড ইউজ করে স্পর্শীকে কেউ ধমকাচ্ছে ভাবতেই মাথা ফাঁকা হয়ে গেল।ক্ষেপে দু কদম সামনে এগিয়ে ডান হাতের তর্জনী উঁচু করে চিৎকার করে বললো,”এ পিয়াস,তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস?আমার ক্ষতি করবি?ব্যাপারটা ভীষণ হাস্যকর।ওকে ফাইন,চেষ্টা করে দেখিস।খোদার কসম!ফার্স্ট টাইম শুধু কমপ্লেইন করে থেমেছি কিন্তু সেকেন্ড টাইম তোর হাড় গুড়ো গুড়ো করে ছাড়বো।

অসভ্যের বা*চ্চা,কুত্তার মতো চরিত্র বানিয়েছিস।যেখানে যা দেখিস সেটাই চেখে দেখার সাধ ওঠে।তোর জন্য ভার্সিটির জুনিয়র’রা শান্তিতে থাকতে পারে না।একটু চিন্তা করে দেখিস তো ঠিক কতগুলো মেয়েকে এ পর্যন্ত জালিয়েছিস তুই।ওরা যদি একত্র হয়ে একবার প্রতিবাদ করতে নামে না;তাহলে তোর এক টুকরা মাংস ও কেউ ভাগে পাবে না।সাবধান হয়ে যা।সিনিয়র তুই আমার।যেখানে আপনি করে সম্মান করবো সেখানে তোকে তুই ডাকতেও ঘেন্না লাগছে।একটু তো শুধরে যা। বাপ-মায়ের শিক্ষার উপরে অন্তত আঙুল তোলাস না।চরি*ত্র হীন!
থেমে শান্ত হয়ে বললো,”এ ভাই শোন,একটু ভালো হ।যাদের ডিস্টার্ব করতিস তাদের কাছে একটু ক্ষমা/টমা চেয়ে।লেখাপড়ায় মন দে।

বলেই সেখান থেকে সামনে এগিয়ে গেল স্পর্শী।পিয়াস লালসার দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।তারপর বিশ্রীভাবে হেসে উচ্চস্বরে বললো,
“ওকে ডার্লিং,লাস্ট আরেকবার খারাপ হই।পরে একসাথে ক্ষমা চেয়ে নেবো।”
স্পর্শী শুনেও যেন শুনলো না।আশেপাশের অনেকেই শুনেও তেমন রিয়াক্ট করলো না।এর চরিত্রের ব্যাপারে ডিপার্টমেন্টের কম বেশী সবার’ই জানা।অনেকবার উপর মহলে কমপ্লেইন করেও রুখতে পারে নি একে।তার ক্ষমতাধর ভাই সামলে নিয়েছে সব কিছু।

কেটে গেছে সেদিন।সব ভালোভাবে কাটলেও বাধ সাধলো পর দিন সকাল বেলা।এক স্টুডেন্ট বাড়িতে অনুপস্থিত থাকায় বাসায়’ই রয়ে গেছে স্পর্শী।মা তাকে দেখে আগে আগেই চলে গেছে পার্লারে।চেয়ারে বসে সকালের খাবার মুখে দিতেই গেটের উপর ধাক্কার শব্দ হলো।চমকে গেল স্পর্শী।আর্শি তো কলেজে গেছে।কিছুদিন পরেই সেকেন্ড ইয়ারে উঠবে।আসন্ন এক্সামের তোড়ে আগে ভাগেই কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে সে।তাহলে কে এলো এই অসময়ে?ভাবার আগেই পুনরায় ধাক্কা পড়লো প্রবলভাবে।

গেটের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই আরো শিউরে উঠলো। একে একে বিরতিহীন ভাবে ধাক্কা পড়ছে লোহার আস্তরণের উপর।ভেতর থেকে সিটকিনি খুলতেই ঝাপটে পড়লো স্পর্শীর গায়ের উপর।এলোমেলো চুলের এই কলেজ ড্রেস পড়ুয়া বোনকে দেখতেই পিলে চমকে উঠলো।স্পর্শীকে কিছু না বলেই কাঁপা হাতে লাগিয়ে দিলো গেট;যেন ভেতরে সেই দানব ঢুকে পড়বে।ব্যাগের ভার আর শরীর সইতে পারলো না।

কাঁধ ঘেঁষে মাটিতে পড়তেই ধরে ফেললো স্পর্শী।একে একে ‘কি হয়েছে?’বারবার জিজ্ঞেস করতেও সাড়া পেল না আর্শির থেকে।একটা ঘোরের মধ্যে আছে সে।পা গুলো যেন পাথরের ন্যায় ওজন হয়ে গেছে।সামনে মোটেই এগোতে পারছে না।অসহায় হয়েই বসে পড়লো দেয়াল ঘেঁষে। কান্নারত অবস্থায় বললো,
“আপু,আমাকে প্লিজ রুমে নিয়ে চলো।আমার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।”

স্পর্শী হা হয়ে গেল।ভেতরের উত্তেজনায় যেন হার্ট টা বাইরে বের হয়ে আসতে চাইছে।ব্যাগ ফেলে দিলো।দুহাত দিয়ে ঝাপটে ধরলো আর্শিকে।নিজের উপর সমস্ত ভর নিয়ে এগিয়ে গেল রুমের মধ্যে।বিছানার উপর বসাতেই সমস্ত ভর ছেড়ে দিলো আর্শি।ধুপ করে পড়ে গেলো বিছানায়।চিৎ হয়ে শুতেই কাঁধের উপর থেকে এলোমেলো চুল গুলো সরে চলে গেল বিছানার চাঁদরের উপর।সাথে সাথেই দৃশ্যমান হলো ইউনিফর্ম ছিঁড়ে শরীরের আঁচড়ানো কাঁধটা।মাথা শূন্য হয়ে গেল স্পর্শীর।আর্শির দিকে তাকাতেই দেখলো নিথর হয়ে তাকিয়ে আছে জানলার দিকে ওক ধ্যানে।

দুচোখ দিয়ে বের হওয়া নিঃশব্দের অশ্রুগুলো কলিজা’টা কেটে ফেলছে স্পর্শীর।সোজা বেরিয়ে এলো রুম থেকে।তাহলে কি কোনো জানোয়ারের হিংস্রতার কবল হলো তার বোন।কিন্তু বাসা থেকে বের হলোই তো পনেরো মিনিটের মতো।এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে কি হলো?উফফফফ!মাথা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে।জগ থেকে পানি ঢেলে দ্রুতপায়ে চলে এলো আবারো রুমে।আর্শিকে উঠিয়ে বুকের সাথে ঠেস দিয়ে পানি খাওয়ালো।বেশ কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,

“কে ছিলো?”
মুহুর্তেই আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো আর্শি।ঘুরে স্পর্শীকে জড়িয়ে ধরে ফোপাঁতে লাগলো। একটা সময় কান্নার বেগ কমলে হেঁচকি দিতে দিতে বললো,

“আপু বিশ্বাস করো আমার কোনো দোষ নেই।আগে পিছে রাস্তায় কেউ ছিলোও না।বালির মাঠের কাছে যেতেই হুট করে কোত্থেকে যেন বাইক নিয়ে চলে এলো।আমি পাত্তা দেই নি।কিন্তু আমার কাছে আসতেই সেকেন্ডের মধ্যে হাত ধরে টেনে বাইকে ওঠাতে চেয়েছিলো।ওরা দুজন ছিলো বাইকে।আমি ভয় পেয়ে কামড় মেরে দিয়েছিলাম।আর তখন’ই আমার চুল টেনে ধরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় বালির মধ্যে।উঠে যখন পেছন ফিরে দৌড় দিতে গিয়েছি তখন জামা টেনে ধরছিলো।ওই সময় ছিড়ে গেছে।এর মধ্যে ওই পাশের বাড়ি থেকে একটা লোক বের হতেই পালিয়ে যায়।আপু তুমি প্লিজ মা কে কিছু বলো না।মা জানলে উলটো আমাকেই দোষ দিবে।

দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো স্পর্শী।দ্রুত নিজের রাগকে সংবরণ করে বললো,
” ছেলে দুটো কে ছিলো? তুই কি চিনিস এদের?”
“নাহ,এর আগে কখনো দেখিও নি।কিন্তু সামনের টাকে চেনা চেনা লাগছিলো।”
পাশের টেবিল থেকে ফোন নিয়ে দ্রুত ঢুকলো পিয়াসের আইডিতে।প্রোফাইল ফটো বের করে আর্শির সামনে দিয়ে বললো,

“ও ছিলো কি?”
আর্শি সায় দিতেই স্পর্শী বিছানা থেকে উঠে পড়লো।
“দু মিনিটে ড্রেস চেঞ্জ করে চুল আঁচড়ে নিবি।” বলেই ব্যাগ থেকে অনন্দার রুমের চাবি হাতে নিলো।বোনের হাত ধরে টেনে বেরিয়ে এলো বাসার বাইরে।স্ট্যান্ডে গিয়ে বাস ধরার সময় নাই।সোসাইটি গেটের সামনে থেকেই সরাসরি রিকশা ধরলো ক্যাম্পাসে যাওয়ার।ক্যাম্পাসের মধ্যে ঢুকতেই ড্রাইভার’কে বললো প্রীতিলতা হলের দিকে যেতে।রাগে ভেতরের রক্ত টগবগ টগবগ করে ফুটছে।

গতকাল কেই ছাত্রলীগের নেতা রাতুল ভাইকে জানিয়েছিলো পিয়াসের কথা।এর আগেও বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলো।সে ধমকাধমকি করলেও শোনে নি পিয়াস।পরে দলবল নিয়ে পিয়াস কে মারার উদ্দেশ্যে যেতে গেলেই বারণ করেছিলো স্পর্শী।ভেবেছে শুধরে যাবে। কিন্তু ভুল।বিশাল বড় ভুল।আজ যদি ওই বৃদ্ধ লোকটা এসে না পড়তো তাহলে দুজন মিলে আর্শিকে তুলে নিয়ে যাওয়া মোটেও অসম্ভবের কিছু না।পাশেই পরিত্যাক্ত সোয়ামিল ছিলো।এমন না দূরে নেওয়ার কোনো দরকার ছিলো তাদের।উফফফ!ভাবতে পারছে না স্পর্শী।কি হয়ে যেত আজ।বোন টাকে কি আদোও জীবিত পেত সে?

হলের সামনে থামতেই আর্শিকে রিকশায় বসিয়েই ভেতরে গেল স্পর্শী।৬০৭ নং রুমেই অনন্দা থাকে।একটা চাবি স্পর্শীর কাছে ও আছে।রুমে ঢুকে কাঙ্ক্ষিত বেড টার নিচ থেকে ট্রাঙ্ক বের করলো।সেটা খুলতেই ভেতর থেকে বের করলো হকস্টিক।এগুলো রুমি আপু’ই ওকে রাখতে দিয়েছিলো বেশ কয়েকমাস আগে।বাসায় মায়ের জন্য রাখা টা উচিত হবে না বলেই অনন্দার রুমে রেখেছে।স্টিক হাতে পুনরায় রুম বদ্ধ করে এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে। হল থেকে বেরিয়ে রিকশায় উঠতেই ভয় পেয়ে গেল আর্শি।স্পর্শীর হাতে স্টিক দেখে খানিক টা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।যেতে যেতে অনেকেই স্পর্শীকে আড়চোখে দেখে নিলো।কেউ কেউ একে অপরকে ফিসফিস করে বললো,”আজ কিছু একটা হবেই।কার না জানি কপালে শনি নাঁচছে।”

লোকপ্রশাসন ডিপার্টমেন্টের সামনে নামতেই ভাড়া চুকিয়ে দিলো স্পর্শী।আর্শিকে নিয়ে হেটে এলো ভবনের সামনে।গায়ের ওড়না খুলে বুক পেঁচিয়ে বেধে নিলো কোঁমড়ে।মাঠের ওই প্রান্তে দাঁড়িয়ে ফ্রেন্ড দের সাথে আড্ডা দিচ্ছে পিয়াস।দাবানলের মতো এগিয়ে গেল স্পর্শী।

কলার ধরে টেনে নিয়ে এলো সামনের দিকে।আচমকা এমন কান্ডে অবাক হয়ে গেল উপস্থিত সবাই।কেউ কেউ বুঝতে পারলো আগত তাণ্ডব।কেউ আবার জড় হলো তাদের ঘিরে।সেকেন্ড ব্যায় না করে শরীরের সর্বোচ্চ জোরে আঘাত করলো পিয়াসের পায়ে।আচমকা’ই এমন আক্রমণ বুঝে উঠতে পারলো পিয়াস।হাটু ভেঙে বসে পড়লো পা ধরে।নুয়ে পড়তেই দমাদম পিঠের উপরে পেটাতে লাগলো স্পর্শী।

পিয়াসের সঙ্গ দেওয়া বন্ধু’টা পালিয়েছে ইতোমধ্যেই।তাকে পালাতে দেখে আশেপাশের অনেকেই আঁচ করতে পারলো অঘটনকে।একজন মোটাতাজা পুরুষের সামনে স্পর্শী কিছুই নয়। পিয়াস চাইলেই এক মুহুর্তে আক্রমণ করতে পারে তার উপর।কিন্তু স্টিক হাতে অনবরত পিটাতে থাকা স্পর্শী সেকেন্ড ও সময় দিচ্ছে না তাকে উঠে দাঁড়ানোর।এরইমধ্যে সেখানে হাজির হলো ফারজানা রুমি, রাতুল সহ আরো অনেকে।রুমি স্পর্শীকে থামানোর প্রয়াস করতেই তেঁতেঁ উঠলো পুনরায়।চিৎকার করে বললো,

“খবরদার আপু।আমাকে থামানোর চেষ্টাও করবে না।অনেক শুনেছি তোমাদের কথা।বারবার নালিশ করেছি উপমহলে।কিন্তু ফলটা কি হলো?ও আমার বোনের দিকে নজর দিয়েছে।জানোয়ার টা আমার সাথে না পেরে কুকুরের মতো আমার বোনকে কাঁমড়াতে গেছিলো।ওর দাঁ ত উপড়ে নেব আমি।জানি ক্যাম্পাসে এরকম মারপিট করা মোটেও সুবিধার হবে না আমার জন্য।হয়তো বহিস্কার ও করতে পারে এজন্য।কিন্তু তাই বলে বসে থাকবো।একবার তো নয় ;কমপক্ষে একশোবার কমপ্লেইন করেছি কুকুর’টার নামে। কিন্তু তারা ওই ধমক পর্যন্ত দিয়েই বসে থেকেছে।ও আমার বোনকে তুলে নিয়ে যেতে চাইছিলো।

ইতোমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে পিয়াস।ঠোট ফেটে রক্ত গল গল করে পড়ছে।আশেপাশে অসংখ্য শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগের ছেলেপেলে, প্রাত্তন শিক্ষার্থী দেখে সামলে নিলো নিজেকে।এতোকিছুর মধ্যেই বিশ্রীভাবে হেসে দিলো সবার সামনে।এখানে কিছু করতে গেলে উলটো মার খেতে হবে সবার।কিন্তু এই ভুল তো করবে না পিয়াশ।সে তো সুযোগ বুঝে ছোবল মারবে।খোঁড়াতে খোঁড়াতে দু কদম সামনে আগাতেই কিছু ফ্রেন্ড রা এসে ধরলো।মুহুর্তেই গা ঝাড়া মেরে ফেলে দিলো তাদের।মুখ দিয়ে বিশ্রী গালিগালাজ করে বললো,

” এতোক্ষণ যখন আসিস নি। এখনো আসার চেষ্টাও করবি না মা**ী** বা**র দলগুলা।”
ক্ষান্ত হলো না স্পর্শী।রাগকে ঝাড়তে আশেপাশে তাকাতেই নজরে পড়লো পিয়াসের ফোন।হাতে নিতেই দেখলো কিছু বিশ্রী চ্যাটিং।কেটে বের হয়ে ঢুকলো কন্ট্রাক্ট লিস্টে।প্রথম নাম্বার “ভাই” লিখে সেভ করা দেখেই কল লাগালো সেখানে।দু বার রিং হতেই রিসিভড হলো।গম্ভীর স্বরে কেউ বললো,

“হ্যাঁ বল।”
তেতে উঠলো স্পর্শী।ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
“বলাবলা পড়ে।আগে বলুন পিয়াস আপনার নিজের ভাই হয়?”
কপালে ভাঁজ পড়ে গেল ফোনের ওপ্রান্তে থাকা পরশের। চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“কে আপনি?পিয়াসের ফোন আপনার কাছে কেন?ও কি ফোন হারিয়ে ফেলেছে?”
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো স্পর্শী।ব্যাঙ্গাত্মক কন্ঠে বললো,

“না ফোন হারায়নি।তবে নিজেকে হারিয়েছে।শুনুন ভাই,আপনার ভাইকে সামলান।এই কুকুরের মতো স্বভাব টা পাল্টাতে বলুন।নইলে খুব শীঘ্রই আমার হাতে খুন হবে।আমার বোনের পেছনে আর একবার ও যদি ওকে দেখি না তাহলে স্রেফ খুন করে ফেলবো।চরিত্রহী*ন একটা।”
এমন ঝাঝালো কন্ঠস্বর শুনে তড়িৎ গতিতে উঠলো পরশ।ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
“পিয়াস কোথায়?”

“হস্পিটালে আছে আপাতত।হাত ভাঙি নি।ব্যাস পিটিয়েছি।তবে এবারে ও না শুধরালে পরবর্তীতে প্রাণ নিয়ে নিবো।”
বলেই ফোন’টা কেটে বন্ধ করে দিলো স্পর্শী।সে চাইছিলো এটাই।ওই জানোয়ার টার কোনো অভিভাবক আসলে তাকেই বুঝিয়ে বলা যাবে।তা না হলে ওই মেন্টাল জানোয়ার টাকে সারাজীবনেও শুধরানো যাবে না।
অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং রেখেই ব্যস্ত পায়ে গাড়িতে ঢুকলো পরশ।পাভেল দূর থেকে দেখেই ছুটে এলো ভাইয়ের কাছে।জিজ্ঞেস করতেই চিন্তিত কন্ঠে বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৭

“এক্ষুণি ঢাকায় যেতে হবে।পিয়াস আবার কোনো ঝামেলা পাকিয়েছে।একটা মেয়ে ফোন করে বললো পিটিয়ে হস্পিটালে ভর্তি করেছে।না জানি কোন অবস্থায় আছে এখন।ফোন বন্ধ।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৯