তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৬

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৬
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

মেঘ : আপনি তো খুব গুনী মানুষ। আমি তো আমার চোখ সরাতেই পারছিনা এই অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্য থেকে ।
মেহতাব : থাঙ্কস ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট । বাট আরো খুশী হতাম যদি তুমি এই ডিজাইন কে না বলে আমাকে বলতে । ( মেঘের দিকে চোখ মেরে )

মেঘ মেহতাবের এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলতে যাবে । তখনি মেহসান সেখানে উপস্থিত হলো । আর মেঘ আর মেহতাব কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,
মেহসান : কি করছো তোমরা ? ( মুচকি হেসে )
মেহসান কে দেখে দুজনে চমকে উঠলো । আর মেহতাব মেঘের থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো আর মেহসানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো ,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহতাব : আমরা কিছু করি বা না করি তুই নিশ্চয়ই কিছু একটার ব্যাঘাত ঘটিয়েছিস । ( রাগ দেখিয়ে )
মেহতাব এই কথা বলে নিজের সানগ্লাস টা খুলে হাতে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো । এবার মেহসান সহ সেখানে উপস্থিত সবাই মেঘের দিকে প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে তাকালো । মেঘ পরিস্থিতি সামাল দিতে একটি মুচকি হাসি দিলো । আর মেহসানকে বলে উঠলো ,

মেঘ : তো মেহসান আমার ছোটো দেওর চলো তোমায় রুমে দিয়ে আসি । ( মেহসানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে )
মেহসান : আমি মোটেও ছোট নই ভাবী । আমার শুধু একটু অভিজ্ঞতা কম এই আর কি । ( লজ্জামাখা হাসি দিয়ে )
মেঘ : তাই বুঝি । ( মুচকি হেসে )
তখনি হুল্লোড় পার্টি সেখানে উপস্থিত হলো আর সিমরান মেঘের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ,

সিমরান : তোমায় দিয়ে আসতে হবে না মেঘ ভাবী । মেহসান আর সৌরভ ভাইয়াদের রুম তো একই । তারা একসাথে যাবে । তুমি বরং মেহতাব ভাইয়ার কাছে যাও । ভাইয়া তো আবার চলে গেলো । ( মুচকি হেসে )
মেঘ : ঠিকাছে তাহলে আমি আসছি । তোমরা সবাইও রুমে চলে যাও দেরি করো না ।
শাম্মী : ওকে ভাবী আমরা তাড়াতাড়ি চলে যাবো । তুমি ফ্রিলি যাও বাই ।
শাম্মীর কথা শুনে মেঘ সবাইকে বিদায় জানিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো । তখনি হুল্লোড় পার্টির সবাই মেহসানের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আর বলে উঠলো ,

সৌরভ : তুই সুধরাবি না ? কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হওয়ার সখ । ঘর শত্রু বিবিশন ।
মেহসান : চিন্তা করো না শুধরিয়ে যাবো একদিন । শুধরাতে তো আর টাকা লাগে না । আর সেটা ঘর শত্রু মেহসান হবে ।( জামার কলার উচিয়ে ভাব নিয়ে )
কেউ আর মেহসানের কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না । সবাই জানে গরুকে যতই বলুক অন্যের খেতে না যেতে সে তো যাবেই । বোধবুদ্ধি কম কিনা । সবাই এই ভেবে মন কে শান্ত করে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেদের রুমের উদ্দেশ্যে রওনা হলো ।

( মেহতাবদের রুমে )
মেহতাব রুমে ঢুকেই দেখলো বড় পর্দা দিয়ে বড় বড় জানাল গুলো ঢাকা তাই সে সেগুলো সরিয়ে দিলো যাতে রুমে আলো আসে । তখনি মেঘ রুমে ডুকলো । সে মেহতাবের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । এক চিলতে রোদ পড়েছে মেহতাবের মুখে তাতে তাকে একদম স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে । অল্প তেই তাকে বেশ সুন্দর লাগে । তখনি মেঘের দৃষ্টি রুমের দিকে গেলো । দুইজনের রুম অথচ ১০ জনের থাকার মতো জায়গা আছে‌ । মেহতাবদের বাড়ির রুম অবশ্য অনেক বড় ছিলো । সে এইসব আর না ভেবে এবার মেহতাবের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আর মেহতাব কে উদ্দেশ্যও করে বলে উঠলো ,

মেঘ : আপনি কি রাগ করেছেন কোনো কারণে ?
মেহতাব : কেনো আমায় দেখে কী তোমার মনে হচ্ছে আমি রাগ করেছি ? ( ভ্রু কুচকে )
মেঘ মনে মনে বিড়বিড় করে বললো ” তখন তো রাগে বরফের মতো ফুলে গিয়েছিল । যাই হোক উনি রাগলেও ওনাকে সুন্দর লাগে ” ( মুচকি হেসে )

মেহতাব : কিছু যদি বলার থাকে জোরে বলো ? ( মেঘের দিকে তাকিয়ে )
মেহতাবের কথায় মেঘের হুশ ফিরল । সে একটা ছোট হাসি দিয়ে বলে উঠলো ,
মেঘ : না তেমন কিছু না । ( প্রকাশ্য হাসি দিয়ে )
আর মনে মনে আবার বললো , ” আপনাকে নিয়ে কিসব ভাবছি ইচ্ছে তো করছে নিজের মাথায় চাটি দিতে ”
মেহতাব : ওকে তাহলে তোমার মনে মনে কথা বলা শেষ হলে তুমি শাওয়ার সেরে নেও । আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে ।

এই বলে মেহতাব রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় আবার কিছু একটা মনে পড়ায় ফিরে এলো । আর মেঘকে বলে উঠলো ” ওয়াশরুম লক করে নিও ”
এই বলে সে আর সময় নষ্ট না করে রুম থেকে চলে গেলো । মেঘ মেহতাবের কথা শুনে একটা স্নিগ্ধকর মিষ্টি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ।

অন্যদিকে সৌরভ , রৌফ , সিয়াম আর সামির তাদের রুমে কে ওয়াশরুমে আগে যাবে সেটা নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে । সৌরভ ওয়াশরুমের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে । আর সবাই তাকে সরানোর চেষ্টা করছে । তা দেখে সৌরভ বলে উঠলো ,
সৌরভ : ও শুধু আমার ওর গায়ে হাত লাগানোর চেষ্টা টুকু যদি তোগো মধ্যে কেউ করে ভালো হইবো না । ( রাগ দেখিয়ে )

একদিকে সৌরভ আর বাকিরা ঝগড়া করছে আর মেহসান আর সৌম সোফায় বসে মজা দেখছে আর বাজী ধরছে । সৌম মেহসান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,
সৌম : তোর কি মনে হয় কে জিতবে ?
মেহসান একটা হাই তুলে বলে উঠলো , “সৌরভ ভাইয়ার উপরে ২০ টাকা , রৌফ ভাইয়ার উপরে ৫০ টাকা , সিয়াম ভাইয়ার উপরে ১৫ টাকা আর সামির ভাইয়ার উপরে ২ টাকা ।
এই কথা সৌরভদের কানে যেতে দেরি কিন্তু তাদের অগ্নিদৃষ্টি মেহসানের উপর পড়তে দেরি নেই । মেহসানকে তারা ৪ জন যেনো চোখ দিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে । মেহসান একটা ঢোক গিললো আর রুম থেকে যেতে যেতে সুর দিয়ে বলে উঠলো ,

মেহসান : টয়লেট তুমি বলে দেও তুমি কার ৪ জন মানুষ একটি টয়লেটের দাবিদার । ( সুর দিয়ে )
এই কথা বলে মেহসান যাওয়ার সময় সবাই পা থেকে জুতা খুলে ছুঁড়ে মারলো মেহসানের দিকে । মেহসান জুতোগুলো এড়িয়ে রুমে থেকে দৌড়ে বাইরে চলে গেলো । মেহসান যাওয়ার সময় সবার প্রতিজোড়া জুতো থেকে একটি জুতো নিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো । এবার সৌমিক বলে উঠলো ,

সৌম : তোমরা থামবে না নাকি ? বাচ্চাদের মতো করছো । ওয়াশরুম টার উপর কি অত্যাচার টাই না চালাচ্ছো তোমরা । আমি বরং চলে যাই আমার দ্বারা আর দেখা সম্ভবপর নয় । আমি প্রস্থান করিলাম তোমাদিগ গণকে পানি শুভেচ্ছা ।(গ্লাস থেকে পানি ছিটিয়ে)
এই বলে সৌম চলে গেলো । সবাই সেইদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই সেই সুযোগে রৌফ ওয়াশরুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলো । আর বাকিরা রাগ করলেও আর দাড়ানোর ক্ষমতা না থাকায় নিচে পাবলিক ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য একসাথে দৌড় দিলো ।

( মেহতাবদের রুমে )
মেঘ শাওয়ার শেষ করে শাড়ি গায়ে প্যাঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে । ওয়াশরুমে শাড়ি ঠিক ভাবে পড়তে পারেনি । তাই সে কিছু না ভেবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করতে থাকলো । হঠাৎ সেই সময় মেহতাব রুমে প্রবেশ করলো আর মেঘকে শাড়ি ঠিক করতে দেখে পিছনে ঘুরে দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে মেঘ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,

মেহতাব : I’m sorry . I didn’t notice you . ( আমি দুঃখিত । আমি তোমাকে খেয়াল করি নি )
মেহতাবের কণ্ঠস্বর পেয়ে মেঘ নিজের শাড়ি গায়ে দিয়ে যেই ওয়াশরুমে প্রবেশ করবে তখনি শাড়ির সাথে পা প্যাচিয়ে ঠাস করে পরে গেলো । মেহতাব শব্দ পেয়েই পিছনে ফিরে তাকালো আর দেখলো মেঘ নিচে পরে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে রেখেছে । সে মেঘকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো আর বলে উঠলো ,

মেহতাব : দরজা লক করো নি কেনো ?
মেঘ : আমি বুঝতে পারি নি আপনি এসে পরবেন । আমি দুঃখিত ।
মেহতাব : যাই হোক । কোমরে কি ব্যাথা করছে ?
মেঘ : না অতো ব্যাথা করছে না সামান্য একটু ।

মেহতাব : ব্যাথা করছে বললেই পারো । এতো লজ্জার কী আছে ? ( ভ্রু কুচকে )
তখনি মিথিলা , শাম্মী আর সিমরান রুমে প্রবেশ করলো আর সিমরান বলে উঠলো ,
সিমরান : কে ব্যাথা পেয়েছে ?
মেহতাব : তোর ভাবী আর কে ।
শাম্মী : এখন কেমন আছো ভাবী ?
মেঘ : তেমন কিছু হয় নি ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৫

মিথিলা : আমার রুমে একটা ক্রিম আছে । কোমড়ের ব্যাথা এক ঝোটকায় শেষ করে দিবে । আমি এনে দিচ্ছি ভাইয়া লাগিয়ে দিবে ঠিকাছে ।
এই বলে তারা মেহতাব আর মেঘ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি রুম থেকে চলে এলো । আর শাম্মী বলে উঠলো ,
শাম্মী : ভাইয়া ভাবির কোমরে ক্রিম লাগিয়ে দিবে । How romantic ! ভাবতেও লজ্জা লজ্জা লাগে । ( লজ্জামাখা হাসি দিয়ে )

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৭