তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৫

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৫
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

মেহতাব : As you wish .
এই বলে মেহতাব গাড়ি স্টার্ট দিলো আর স্পিড বাড়িয়ে দিলো । এর কারনে মেঘ এর খুব ঠান্ডা লাগা শুরু করলো । মেঘ মেহতাবের থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে নিজে পরে নিলো আর বললো ,

মেঘ : আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিলাম।
মেঘের কান্ড দেখে মেহতাব মুচকি একটি হাসি দিলো আর জিপ চালানো তে মনোযোগ দিলো। বেশ অনেকটা পথ চলার পর মেহতাব লুকিং মিরোরে মেঘের দিকে তাকালো । সে জিপের জানলার পাশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । মেহতাব গাড়িটা ব্রেক করে এক সাইডে পার্ক করলো । আর মেঘের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । সে ঘুমে মগ্ন হয়ে আছে । একজোড়া চোখ যে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই । মেহতাব মেঘের মুখে পরে থাকা চুল গুলো পরম যত্নে সরিয়ে দিলো । তারপর মেঘের মাথা তার ঘাড়ে রেখে তার বাম হাত মেঘের কোমরে রেখে গাড়ি চালানো শুরু করলো ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সৌরভদের গাড়িতে সবাই বেশ মজা করছিলো শুধু টিনা বাদে । তা গাড়ির সবাই লক্ষ্য করছিলো । তারা টিনাকে সয্য করতে না পারলেও তাদের মেহতাব আর মেঘের ভালোর জন্য টিনাকে বোঝানো উচিত । সবাই তাদের মেসেঞ্জার গ্রুপে এই নিয়ে আলোচনা করছিলো । সব শেষে মিথিলা কোনো কিছু না ভেবে টিনার উদ্দেশ্যে বলা শুরু করলো ,

মিথিলা : টিনা আমি জানি তুমি মেহতাব ভাইয়াকে ভীষণ ভালোবাসো । এটা ঠিক তোমার সাথে আমাদের অতো মেলা-মেশা নেই । কিন্তু তার মানে এই নয় তোমাকে আমরা অপছন্দ করি । দেখো মেহতাব ভাইয়া আর মেঘ ভাবী নতুন বিয়ে করেছে। তাদের মধ্যে অশান্তি হোক তা কেউ আমরা চাই না । তুমি মেহতাব ভাইয়া কে সত্বি ভালোবাসো সেটা আমরা কেউ অবিশ্বাস করি না ।

তুমি যদি মেহতাব ভাইয়াকে সত্তিকারের এক বিন্দু ভালোবেসে থাকো তাহলে তুমি তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা ক্রিয়েট করবে না । আমি তোমাকে হুমকি দিচ্ছি না এটা আমার অনুরোধ । প্রকৃত ভালোবাসা এটাই যেই ভালবাসায় তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে না পেলেও তার খুশিতে খুশী থাকবে । তার দুঃখে কষ্ট পাবে । তুমি হয়তো আরো ভালো কিছু ডিসার্ব করো ।

তুমিও একদিন তোমার মনের মতো মানুষ পাবে যে সবসময় তোমাকে ভালোবাসবে , তোমার পাশে থাকবে , তোমার অনুভুতি বোঝার চেষ্টা করবে , তোমার সুখ-দুঃখের সাথি হবে , নিজের সবটুকু দিয়ে তোমাকে আগলে রাখবে । আমি চাই তুমি তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাও। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি ।
মিথিলার এতোগুলো কথা শোনার পর সবাই তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । সৌরভ সামির কে একটা চিমটি কেটে বলে উঠলো ,

সৌরভ : আমি সপ্ন দেখছি না তো ।
সামির : আউউউউ। ভাই তুই আমারে মারবি নাকি । আমি এহনও কারো হাসির কারন হইতে পারি নাই । অন্তত কারো দুঃখের কারন হতে চাই। ( আফসোসের সুরে )
সিয়াম : ভাই আমি এইডা বুঝতাছি না । মিথিলারে কোনো রোম্যান্টিক শাকচুন্নি ধরলো নাকি ।
সৌরভ : মুখ শামলা সিয়াম নাইলে এতিমখানায় দিয়াম ।

সিয়াম : দোস্ত তোর বাজে কবিতার থেকে ঐ জায়গা হাজার গুন ভালো ।
মেহসান : ভাইয়েরা বোনেরা মিথু আপু কোনো রোমান্টিক রোগে আক্রান্ত হইছে ।
সিমরান : হুম তাই হবে হয়ত ।
শাম্মি : যাই হোক মিথিলা আপু আর রোম্যান্টিক অসম্ভব ।
সৌম : দেখ ওরে আমরা ছোটোবেলা থেকে দেখতাছি এই প্রথম ও কোনো ভাষণ দিলো তাও আবার ভালোবাসা নিয়া । সবাই হাত তালি দেও ।

এই বলে সবাই মিথিলার উদ্দেশ্যে হাত তালি দিলো টিনাও মিথিলা কে জড়িয়ে ধরলো । টিনা যেমনি হোক সে মেহতাবকে মন থেকে ভালোবেসেছে । সে এটা মানতে পারে নি মেহতাবকে সে নিজের করে পাবে না । সে কিছুক্ষণ আগেও মেঘ এর ক্ষতি চাইতো । কিন্তু মেঘ যদি মেহতাবের জীবনে নাও থাকতো তবুও মেহতাব তাঁকে ভালোবাসতো না ।

ভালোবাসা জোর করে আদায় করা যায় না ভালোবাসা অর্জন করতে হয় এটা টিনা বুঝে গেছে । সে আর মেহতাব আর মেঘের মাঝে কাটা হয়ে থাকবে না বরং তাদের এক করতে হেল্প করবে । এই ভেবে সে একটা প্রশান্তির হাসি দিলো আর বললো ” থ্যাংক ইউ মিথিলা আমি আমার বেস্ট দিবো মেহতাব আর মেঘকে এক করতে । আই প্রমিস ” । এই কথা শুনে সবাই টিনার উদ্দেশ্যে হাত তালি দিয়ে বলে উঠলো , ” তো হুল্লোড় গ্যাং এর নিউ মেম্বার টিনা খান ”
এই বলে সবাই হইচই আনন্দ ফুর্তি করতে করতে গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো ।

মারজা বেগমরা গন্তব্যস্থলে পৌছে সবার জন্য অপেক্ষা করছিলো । আস্তে আস্তে সৌরভ আর মেহতাবদের গাড়ি এসে উপস্থিত হলো । তখনি মেঘ এর ঘুম ভেঙে গেলো । সে নিজের মাথা কারো ঘাড়ে আর কোমরে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই একঝোটকায় উঠে পরলো । সে কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করতেই মেহতাবের হাত ঘড়ির সাথে তার শাড়ির আচল আটকে গেলো । সেটা দেখে মেঘ পিছনে মেহতাবের দিকে না তাকিয়েই ছারানোর চেষ্টা করতে লাগলো । তা দেখে মেহতাব মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,

মেহতাব : এতো লজ্জার কি আছে ? আমিতো শুধু তোমার কোমর টাচ করেছি তাও আবার শাড়ির উপর দিয়ে ।
এই কথা পিছন থেকে সৌরভদের গ্যাং রা শুনতে পেলো । তারা তড়িঘড়ি করে গাড়ির পিছন থেকে কি হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো । মেহতাব তাদের দেখতে পেয়ে বললো ,
মেহতাব : এখানে কোনো রোম্যান্টিক সিনের সুটিং হচ্ছে না । তোরা সামনে আয় ।
এই কথা শুনে সবাই না শোনার ভান করে মারজা বেগমের কাছে চলে গেলো । সৌরভ বলে উঠলো ,

সৌরভ : কি চোখ রে বাবা!
সিয়াম : ঠিক পুরো এনাকোন্ডার চোখ ।
শাম্মি : আমি শুনেছি সাপের নাকি চোখ থাকে না।
সিয়াম : আরে গাধা আমরা এনাকোন্ডার কথা বলছি সাপের না । ( ভাব নিয়ে )
শাম্মি : এনাকোন্ডাও সাপ । আর হ্যাঁ আমি গাধী হতে পারি কিন্তু গাধা না ।
এই কথা শুনে সৌরভ ঠাট্টা করে বলে উঠলো ,
সৌরভ : চলুন গাধীরানি কৃপা হবে আমার ।
শাম্মি : ঠিকাছে ভাইয়া আপনাকে ধন্য করে দিই ।
এই বলে সবাই একজোট হয়ে এক স্থানে জোড়ো হলো । মেহতাব আর মেঘ ও উপস্থিত হলো । মারজা বেগম সকল কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,

মারজা বেগম : এই হইলো তোমাগো দাদুর পৈতিক ভিটা ।
রৌফ : কি কোন দাদীজান এইডা দেখতাছি রিসর্ট ।
মারজা বেগম : হো । এই জায়গায় এহন রিসর্ট বানাইছে । তোমার দাদু এই জায়গা মেহতাব এর বাবা মানে আমার পোলার নামে কইরা দিছিলো ওয় এইডা আহতাব , মেহতাব আর মেহসানের নামে কইরা দিছে । আমার দাদু ভাইরা এইডা এতিম,অনাথ পোলাপান গো দিয়া দিছে । এই রিসর্ট থেইকা যেই টাকা আয় হয় । সব ওই বাচ্চাগুলারে দেওয়া হয় যাতে ওগো ভবিষ্যত সুন্দর হয় । আরেকটা কথা এই রিসর্টের ডিজাইন মেহতাব দাদুভাই করছে ।
সবাই এই কথা শুনে ভীষণ অবাক হয় তবে খুব খুশীও হয় । সিমরান বলে উঠে ,

সিমরান : দাদাভাই তোমরা টু গুড । এন্ড মেহতাব ভাইয়ার ডিজাইন জাস্ট ওয়াও আই এম ইম্প্রেস্ড ।
সবাই সিমরানের কথা শুনে মেহতাবের উদ্দেশ্যে হাত তালি দেয় । তা দেখে মেহতাব বলে উঠে ,
মেহতাব : ওকে হয়েছে অনেক কমপ্লিমেন্ট । Now let’s go .
মেহতাবের কথায় সবাই সম্মতি জানায় । আর ভিতরে ডুকে পড়ে । বিশাল বড় মেনশন এর মতো ডিজাইন । সবাই হা হয়ে দেখতে থাকে । টিনা সৌরভদের বলে উঠে ,

টিনা : So Wonderful . আমি তো আবার মেহতাবের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি ।
টিনার কথা শুনে সবাই রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে টিনার দিকে । তা দেখে টিনা মুচকি হেসে বলে উঠে ,
টিনা : আমি তো সাতার কাটতেই পারি না । হাবুডুবু খাবার প্রশ্নই ওঠে না ?
টিনার কথায় সবাই হেসে দেয় । অন্যদিকে মেঘ তো পুরো মুগ্ধ হয়ে গেছে । মেঘ মেহতাবকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে ,

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৪

মেঘ : আপনি তো খুব গুনী মানুষ। আমি তো আমার চোখ সরাতেই পারছিনা এই অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্য থেকে ।
মেহতাব : থাঙ্কস ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট । বাট আরো খুশী হতাম যদি তুমি এই ডিজাইন কে না বলে আমাকে বলতে । ( মেঘের দিকে চোখ মেরে )

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৬