তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৪

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৪
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

মেঘের কথায় মেহতাব চাঁদের আলো মিশ্রিত একটি হাসি দিয়ে বললো , “কেনো পারবে না অবশ্যই পারবে”।
মেহতাবের কথায় মেঘ যেনো চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো । খুশিতে গদগদ হয়ে মেহতাব কে জড়িয়ে ধরলো আর বললো , ” আই লাভ ইউ মেহতাব ”

এই কথা বলার পর মেঘ নিজেই থতমত খেয়ে গেলো । ইতস্ত বোধ করে বললো ,
মেঘ : আসলে মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে । মা আমায় ডেকেছিলেন ডিনার সার্ভ করার জন্য আমি নিচে যাই আপনিও নিচে খেতে আসুন ।
এই বলে মেঘ মেহতাবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে এলো । তারাহুড়া করতে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হচোট খেয়ে পরতে পরতে বেচে গেলো । সৌরভ , সিয়াম , রৌফ আর সামির নিজেদের রুমে বসে কথা বলছিলো । মেঘকে এভাবে নামতে দেখে রৌফ বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রৌফ : মেঘের আবার কি হইলো?
সিয়াম : দেখার বিষয় নয় কি ?
সৌরভ : দেরি কিসের ?
এই বলে তিনজন ছাদের উদ্দেশ্যে দৌড় দিলো। তা দেখে সামির উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো ,
সামির : আমার জন্য কেউ দ্বারা বুনো হাতির বংশধোর দেখবি তোগো একটারো বিয়া হইব না হইলেও আমি তোগো ডিভোর্স এর কেস লরমু ।

এই বলে সামিরও ছাদের উদ্দেশ্যে দৌড় দিলো।
ছাদে বসে মেঘকে এভাবে ঘাবড়াতে দেখে মেহতাব একটা মুচকি হাসি দিয়ে কফিতে একটা চুমুক দিলো । কফিতে চিনি দেওয়া নেই তবুও কফি টা মিষ্টি লাগছে । তা দেখে নিজের অজান্তেই হেসে দিলো । সৌরভ মেহতাবের হাসি মুখ দেখে বলে উঠলো ,

সৌরভ : চাঁদও তোকে দেখে হেসে দেবে । তো আমার দোস্তোর হাসির কারন টা কি জানতে পারি?
সৌরভকে দেখে মেহতাব বললো ,
মেহতাব : তোদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করছি না ।
এই বলে মেহতাব সৌরভের হাতে কফির মগ টা দিয়ে নিচে চলে এলো । তা দেখে সিয়াম মেহতাবকে উদ্দেশ্য করে বললো ” হাসিয়া গেলাম ফাসিয়া যামু এখন পাশ কাটিয়া ” । ( হেসে ) সৌরভ কফির মগে এক চুমু দিয়ে বলে উঠলো ,

সৌরভ : এতো তিতা কফি । মেহতাব এই কফিতে চুমুক দেওয়ার পর হাসির কারন টা কি ছিলো ? ( অবাক হয়ে )
রৌফ : তুই বাম হাত ডুকানো কবে ছাড়বি ?
সৌরভ : যেদিন তুই টয়লেট করার পর সাবান বা হেন্ডওয়াশ দিয়া হাত ধুবি । ( মজা করে )
সিয়াম : ছি রৌফ ওয়াক। তাই তো কই তোর সাথে ঘুমানোর সময় তোর হাতের থেইকা বজ্র পদার্থের গন্ধ আসে কই থেইকা ।

রৌফ : আরো শুকবি নে । ( এই বলে হাত টা সিয়ামের দিকে এগিয়ে দিলো )
সিয়াম তা দেখে দৌড় দিলো আর রৌফ তাকে ধাওয়া করতে শুরু করলো । তা দেখে সামির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দোলনায় বসে পরলো সৌরভের হাত থেকে কফি মগ টা নিয়ে বলে উঠলো ,
সামির : যার হাতে গন্ধ তার মুখ বন্ধ ।

এই বলে কফি মগে একটা চুমুক দিলো আর থু ফেলে বলে উঠলো ,
সামির : এই ব্ল্যাক কফির জাতও ব্ল্যাক আমার এতো সুন্দর সাদা মনটা কাদা করে দিলো । এতে তো কোনো মিষ্টাত্তর চিহ্নও নেই । আমায় ছেকা দেওয়া দ্বারা বেডা দেখবি এই কফিরও বিয়া হইব না ।
সামির এর পাগল পাগল কথা শুনে সৌরভ একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললো ,
সৌরভ : দোস্ত তুই ঠিক আছিস ?

সামির : পা থেকে গলা ঠিক আছে মাথাটা গরম ফিল হইতাছে । ( দোলনায় হেলান দিয়ে )
সৌরভ : ওহ বুঝছি তোর খিদা লাগছে । তুই তো কোও খাইলে মাথা ঠান্ডা থাকে ।
সামির : আমারও মনে হয় ।
সৌরভ : চল নিচে যাই ডিনার সারতে ।
এই বলে দুজনে নিচে খেতে চলে গেলো ।

ভোর বেলায় সবাই রেডি হয়ে ড্রইং রুমে উপস্থিত হয়েছে ঘুরতে যাবে বলে । কেউ দুলছে তো কেউ সোফায় ঘুমাচ্ছে । তখনি অরিন বেগম আর মেহতাবের দাদী মারজা বেগম সেখানে উপস্থিত হোন । অরিন বেগম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে ,

অরিন বেগম : তোরা সবাই এখানে বসে দুলছিস কেনো ?
সিমরান : এই ঠান্ডা ওয়েদার ঘুমনোর জন্য বেস্ট । I’m so sleepy .( মুখ দিয়ে হাই টেনে )
এই বলে হুল্লোড় গ্যাং এর সবাই সোফায় বসে পরলো ।
মারজা বেগম : আমারে দেখো বুড়া হইছে তবুও কেমন ফিট । তোমাগো জেনারেশন বোঝা মুস্কিল।
তখনি মেহতাব , মেঘ আর আহতাব , অহনা নিচে চলে আসে ।
অরিন বেগম : সবাই চলে এসেছে । শুধু মেহসান আর টিনা ছাড়া । ওরা কোথায় ?
শাম্মি : খালামনি মেহসানের কষ্টকাঠিন্য হয়েছে । মিথিলা ওকে রেডি করে আনবে বলেছে । আর টিনা মেকআপ করছে ।

অরিন বেগম : এই ছেলের কয়দিন আগে ডাইরিয়া। এখন আরেক ঝামেলা । ও যে সারাদিন কি করে জানি না বাবা ? আমি ওদের নিয়ে আসি ।
এই বলে অরিন বেগম মেহসান আর টিনার রুমের দিকে রওনা হয় । সিমরান শাম্মি কে বলে উঠে ,
সিমরান : এই আমাদের কথার প্রভাব মেহসানের উপর সত্তি সত্তি প্রভাব ফেলছে না তো ?
শাম্মি : হলেও হতে পারে ।

এই বলে শাম্মি হেসে দেয় । সিমরান শাম্মির মাথায় টোকা দেয় আর বলে উঠে ,
সিমরান : সৌরভ ভাইয়া ঠিকি বলে আস্ত একটা আসামি ।
শাম্মি : Yes , I am . ( ভাব নিয়ে )
অরিন বেগম তখন মেহসান , মিথিলা আর টিনাকে নিয়ে আসে । আর সবার উদ্দেশ্যে বলে ,
অরিন বেগম : চলো সবাই গাড়িতে গিয়ে ঘুমাবে এখন ওঠো ।
অরিন বেগমের কথা মতো সবাই যার যার সুটকেস নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হয় । সৌরভ মিথিলার উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বলে ,

সৌরভ : জান পাখি তোমার সুটকেসটা আমি নেই আমাকে দেও ।
মিথিলা : সৌরভ কেউ শুনে ফেলবে ।
সৌরভ : শুনলে শুনুক কি হবে ?
তখনি শাম্মি বলে উঠে ,

শাম্মি : ভাইয়া তোমরা কি এতো কথা বলছো । গাড়িতে উঠো ।
এই বলে শাম্মি গাড়িতে উঠে পরে । আস্তে আস্তে সবাই গাড়িতে উঠে পরে । অরিন বেগম , মারজা বেগম , অহনা আর আহতাব এক গাড়িতে উঠে পরে । আর বাকী ছোটো সদস্যরা এক গাড়িতে এখন শুধু মেঘ , টিনা আর মেহতাব বাকী তাই তারা কি করবে । তখনি সৌরভ বলে উঠে ,

সৌরভ : এখানে কাপল এলাও না । তুই আর মেঘ বরং তোর জিপ এ করে আয় ।
মেহতাব : Ok . আমি আর মেঘ তাহলে জিপ এ করে আসছি ।
এই বলে মেঘ আর মেহতাব জিপে উঠে পরে। তখনি টিনা বলে উঠে ” আমিও বরং মেহতাবদের সাথে যাই “।
এই বলে জিপে উঠতে যাবে। তখনি সিমরান টিনার হাত ধরে বলে উঠে ,
সিমরান : এখানে সিঙ্গেল দের এলাও নেই তুমি বরং আমাদের গাড়িতে ওঠো ওখানে সিঙ্গেল এলাও আছে ।
সিমরানের কাজে মেহতাব সহ সবাই বেশ খুশী হয় । টিনা রাগ করে সৌরভদের গাড়িতে উঠে পরে । মেহতাব সিমরান কে উদ্দেশ্য করে বলে ,

মেহতাব : থ্যাংক ইউ মাই সিস ।
সিমরান : নোট মেনশন । ( ভাব নিয়ে )
তারপর সবাই গাড়িতে উঠে পরে । সবার গাড়ি আগে চলে যায় । মেহতাব জিপ আস্তে করে চালাতে থাকে । তা দেখে মেঘ বলে উঠে ,

মেঘ : গাড়ি এতো আস্তে চালালে আমাদের পৌছাতে দুই দিন লেগে যাবে ।
মেহতাব : তুমি চাইলে সারাজীবন এই গাড়িতেই কাটিয়ে দেবো । ( মুচকি হেসে )
মেঘ : আপনার থেকে এটা আশা করা বাকী ছিলো ।
মেঘের কথার প্রতিউত্তরে মেহতাব একটা হাসি দিয়ে গাড়িটা থামিয়ে দিলো ।
মেঘ : গাড়ি থামালেন কেনো ?

মেঘের কথার কোনো জবাব না দিয়ে মেঘ নিজের ব্লাক জ্যাকেট টা খুলে মেঘের হাতে দিয়ে বললো ,
মেহতাব : এটা পরে নেও গাড়ি জোরে চালালে ঠান্ডা লাগবে ।
মেঘ মেহতাবকে জ্যাকেট টা ফেরত দিয়ে বললো ,
মেঘ : আমার ঠান্ডা লাগবে না আপনি পরে নিন । আমার ঠান্ডা সয্য করার ক্ষমতা আছে ।
মেহতাব : As you wish .

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৩

এই বলে মেহতাব গাড়ি স্টার্ট দিলো আর স্পিড বাড়িয়ে দিলো । এর কারনে মেঘ এর খুব ঠান্ডা লাগা শুরু করলো । মেঘ মেহতাবের থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে নিজে পরে নিলো আর বললো ,
মেঘ : আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিলাম।
মেঘের কান্ড দেখে মেহতাব মুচকি একটি হাসি দিলো ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৫