তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৩

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৩
নাদিয়া আক্তার সিয়া 

মেহতাব : তোদের তো কোনো কাজ নেই যে ছুটি নিয়ে প্রবলেম । সো ফিরে গিয়ে কি করবি আর কয়েকদিন থেকে যা আমি আর তোরা একসাথে লন্ডন এ ব্যাক করবো । ( সৌরভ এবং মেহতাব লন্ডনে বিজনেস হোল্ডারস আর তার বাকী সব বন্ধুরা ওই কোম্পানি তে উচ্চ পদে জব করে )
সৌরভ : ঠিকাছে আন্টি যেহুতু ভালো কইরা দেখেন নাই । তাই থাইকা গেলাম ।
সামির সৌরভের কথা শুনে কানে ফিসফিস করে বলে ,

সামির : সৌরভ যাচ্ছে না তার মিঠু পাখির টানে । প্রমান করা লাগবে না নিশ্চই সৌরভ ডার্লিং ।
এই কথা বলে সামির হেসে দেয় । সামিরের হাসি দেখে সবাই না জেনেই মজা করে হেসে দেয় । কিন্তু সৌরভ আর সামির তা দেখে ভড়কে যায় তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে আরো জোরে হেসে উড়িয়ে দেয় ।
অরিন বেগম বলে ওঠে ,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অরিন বেগম : হয়েছে অনেক হাসি ঠাট্টা । সবাই গিয়ে বেগ গুছাও কালকে ভোর ভোর বের হতে হবে ।
অরিন বেগমের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকায় আর মেহসান বলে উঠে ,
মেহসান : কেনো মা আমরা কি কোথাও যাচ্ছি ? ( কৌতূহলী হয়ে )
ওই সময় তার দাদী সেখানে উপস্থিত হয় আর বলে উঠে ,

মারজা বেগম : আসলে দাদুভাই আমরা সবাই তোমার দাদুবাড়ি যাচ্ছি । মেহতাব দাদুভাই আর তার বন্ধুরা তো চইলাই যাইব আর মিথিলা , শাম্মি , সিমরান আর সৌম ওগো পরিবারও চইলা গেছে ওরাও তো যাইবো গা । আবার কবে আসে না আসে তাই সবাই একলগে তোমার দাদুর পৈতিক ভিটায় যামু ঘুরতে । কি বলো দাদুভাই আর দিদুমনিরা ?

মারজা বেগমের কথা শুনে সবাই খুব খুশি হয় আর সম্মতি জানায় । তারপর সবাই নিজেদের রুমে গুছ- গাছ করতে চলে যায় । শুধু টিনা থেকে যায় সে মারজা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে ,
টিনা : আমিও কি যাবো নানুমনি ?
টিনার কথায় মারজা বেগম বলে উঠে ,
মারজা বেগম : তোরে কি আলাদা কইরা নিমন্ত্রণ পাঠানো লাগবো ?
টিনা : থ্যাংক ইউ নানুমনি ইউ আর বেস্ট ।

( এই বলে মারজা বেগমকে জড়িয়ে ধরে )
মারজা বেগম : হইছে আর ঢঙ করোন লাগতো না গিয়া বেগ গুছাও আর তোমার ভাবী গো কিছু লাগে নাকি দেহো যাও ।
এই বলে মারজা বেগম চলে যায়। আর টিনা সয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠে ,

টিনা : এখন দেখবো না শুধু দেখাবো যে এই টিনা কি কি করতে পারে । ( এই বলে সে নিজের রুম এ চলে যায় )
সবাই নিজেদের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে প্লান করছে ওখানে গিয়ে কি কি করবে । সবাই গোল বৈঠক করে বসেছে । সবাই উপস্থিত শুধু বড় রা ছাড়া ।

সৌরভ : শোনো ভাইয়েরা আর বোনেরা আমরা যাইতাছি মজা আনন্দ করতে তাই কিছু রুলস ফলো করতে হইবো : যেমন বলা যায় কেউ তার পারসোনাল ইসু সেখানে আনতে পারবা না। বিজনেস বা ফোন নিয়ে পরে থাকা এইসব চলবো না । ওখানে আমরা প্রকৃতি ইনজয় করবো। সো কেউ ফোন নিয়া যাইতে পারবা না। যদি জরুরী কল দেওয়ার থাকে তাইলে অরিন আন্টির কাছ থেকে ফোন নিয়া দিবা । সবাই একমত । ( এই বলে সৌরভ উপরে এক হাত জাগায় )

সবাই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে । তারপর সবাই সৌরভের কথায় সহমত পোষন করে ।
রৌফ বলে উঠে ,
রৌফ : ভাই আবার এইটা কইস না যে হাগতে পারমু না বা বজ্র পদার্থ বাড়িতে রেখে আসুন। ( মজা করে )
রৌফের কথা শুনে সিয়াম হেসে বলে উঠে , “এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষেধ । তোর মুখ থেইকা যেই কথা বাইরাইতাছে তা বজ্র পদার্থের থেইকা কম না ”
সিয়ামের কথা শুনে সৌমিক সাবধান করে বলে ,

সৌম : মেঘ আর অহনা ভাবী আইতাছে তাদের সামনে অন্তত নিজেদের মান সম্মান রাখো ।
সৌমের কথা শুনে মেহতাব আর আহতাব সামনে তাকায়।
মেঘ আর অহনা সবার জন্য চা আর কফি নিয়ে এসেছে । সবাইকে দেওয়া শেষ করে তারা মিথিলার পাশে বসে পরে । মিথিলা তা দেখে বলে ওঠে ,

মিথিলা : আরে ভাবীরা এতো লজ্জার কি আছে নিজেদের হাসব্যেন্ড দের কাছে বসতে অনুমতি লাগে নাকি ।
মিথিলার কথায় অহনা আর মেঘ কিছুটা ভড়কে যায়। মেঘ মনে মনে বলে ” আমি আবার কখন লজ্জা পেলাম ”
শাম্মি : তাই নাকি ।

এই বলে শাম্মি তাদের দুজন কে নিয়ে মেহতাবের পাশে মেঘকে আর আহতাবের পাশে অহনাকে বসিয়ে দেয় আর মেঘকে পাশে বসাতে গিয়ে মজা করে কোলেই বসিয়ে দেয় । তা দেখে ঠাট্টা করে তৌফ বলে উঠে ,
রৌফ : মিথিলার এক কথায় মেঘ ভাবী আপডেট হয়ে সোজা কোলে । ( মুচকি হেসে )
তৌফের কথায় কেউ হাসি থামাতে না পেরে হেসে দেয় । অহনা , আহতাব আর মেহতাবও হেসে দেয়।এবার মেঘ ভীষণ লজ্জা পায় আর মেহতাবের কোল থেকে নেমে পাশে বসে পরে । মেঘকে লজ্জার হাত থেকে বাচাতে মেহতাব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে ,

মেহতাব : এতে লজ্জার কি আছে আমরা দুজন বিবাহিত ।
মেহতাবের কথা শুনে সবাই মুখ দিয়ে শিস বাজতে শুরু করে আর কেউ তো হাত তালি দেওয়া শুরু করে।
এতে মেঘ আগের থেকে তিনগুন বেশি লজ্জা পেয়ে যায় । মেঘ মেহতাবের দিকে তাকায় তার রিয়েকশন দেখতে মেহতাব কিছু হয় নি এমন ভাব নিয়ে ফোন এ বিজি হয়ে আছে। মেঘ আর কিছু বলে না।

সবাই অনেক প্লান করে। তারপর যে যার রুম এ চলে যায়। মেঘ রুমে ঢুকতেই অনেক গুলো পেকেট দেখতে পায়। এগুলো কিসের পেকেট সে বুঝতে পারে না। তাই সে একটি পেকেট হাতে নিয়ে দেখার চেষ্টা করে এগুলো কি। তখনি সে দেখতে পায় এতে স্পষ্ট ভাবে তার নাম লেখা আছে । সে কৌতূহলবশত পেকেট টি খুলে দেখে । সেখানে একটি লাল রঙের শাড়ি

। এমন করে মেঘ প্রতিটি পেকেট খুলে দেখে । প্রতিটি পেকেটে ভিন্ন ভিন্ন রঙের ১০ টি শাড়ি । সে বুঝতে পারে এগুলো মেহতাবের কাজ । সেই হয়ত তার জন্য কিনেছে । তাই সে মেহতাবকে খুজতে যাবার জন্য বেরতে যাবে তখনি কারো বুকের সাথে তার পিঠ ধাক্কা খায় । সে পেছনে তাকিয়ে দেখতে পায় মেহতাব দাড়িয়ে আছে । সে মেহতাবকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে ,

মেঘ : এগুলো কি ?
মেহতাব : তোমার চোখে প্রবলেম হলো নাকি দেখতে পারছো না ? ( ভ্রু কুচকে )
মেঘ : আপনি ভনিতা না করে আগে বলুন এগুলো এখানে কি করছে ? ( রাগ দেখিয়ে )
মেহতাব : আমি কি করে জানবো আমিও তো রীতিমতো অবাক। (অবাক হওয়ার ভান করে)
মেঘ : আপনাকে এতোগুলো শাড়ি কে কিনতে বলেছে । আমার এখনো কতোগুলো শাড়ি পরে রয়েছে । ওগুলো পরতে পরতে বছর পেরিয়ে যাবে।

মেহতাব : তো কি হয়েছে তাই বলে আমি নিজের ওয়াইফ কি কিছু দিতে পারব না । এরকম কথা কোন ইতিহাস এ লেখা আছে মাই ডেয়ার ওয়াইফ। ( মুচকি হেসে )
মেঘ : দিয়েছেন ঠিকাছে তাই বলে এতোগুলো শাড়ি ।
মেহতাব : আসলে আমি জানতাম না তোমার কোন রঙ ফেভারিট । সো বুঝতেই পারছো তাই দুই একটা বেশি এনেছি । যদি পছন্দ না হয় বলো তোমায় নিয়ে আবার শপিং মলে গিয়ে নিউ কালেকশন দেখিয়ে আনি । (সুন্দর হাসি দিয়ে)

মেঘ : হয়েছে আর লাগবে না । আপনি বসুন আমি কফি আনছি আর বাবা-মা এর ঘরে চা দিতে হবে ।
মেহতাব : ঠিকাছে । কিন্তু ছাদে এসো আমার কফি নিয়ে আর তোমার জন্যও এক কাপ এনো দুজনে একটু বসে আড্ডা দেওয়া যাবে । কোনো সমস্যা নেই তো ? ( মেঘের দিকে চোখ মেরে )
মেঘ : ঠিকাছে নিয়ে আসবো ।

এই বলে মেঘ নিচে চলে যায় । মেহতাব ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম এ চলে যায় । ফ্রেশ হয়ে এসে সে ছাদে চলে যায় । তাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো বিল্ডিং বা দালান নেই । তাদের বাড়ির আসে পাশে বিভিন্ন ফল, ফুলের গাছ আছে ফাকা মাঠ । আর কিছু দুরে অনেক সুন্দর একটি পার্ক আছে । তাদের বাড়ির ছাদ দেখে দূরদূরান্ত দেখা যায় । মেহতাব ছাদে গিয়ে ছাদের দোলনার উপর বসে পরে । কিছুক্ষণ পর কেউ তার চোখ হাত দিয়ে বন্ধ করে দেয় । সে ভাবে হয়ত মেঘ এসেছে তাই সে হাত টা চোখ থেকে সরিয়ে জড়িয়ে ধরতে যাবে । তখনি খেয়াল করে এটা মেঘ নয় বরং টিনা । টিনাকে দেখে মেহতাব বলে উঠে ,

মেহতাব : What are you doing here ? ( তুমি এখানে কি করছো )
টিনা : চিল এখানে আমি এমনি এসেছি । আসলে আগের দিনের জন্য আমি সরি বলতে এসেছি । প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দেও । আমি ভীষণ অনুতপ্ত ।
মেহতাব : Ok but this is your last chance . এরকম বিহেভ আরেকবার করলে তুমি তোমার লাস্ট চান্সও হারিয়ে ফেলবে। Now go from here .

টিনা : থাঙ্কস আমায় ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য বাই।
এই বলে টিনা সেখান থেকে চলে যায় । যাবার পথে মেঘের সাথে দেখা হয় । টিনা মেঘকে দেখে একটি হাসি দেখিয়ে চলে যায় । মেঘ তার দিকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ছাদে চলে যায় । আজ ছাদ আলোয় পরিপূর্ণ আজ পূর্ণিমা । ছাদে উঠেই মেঘ মেহতাব কে স্পষ্ট দেখতে পায় সে কফির মগ নিয়ে একটা মগ মেহতাব এর দিকে এগিয়ে দিলো ।মেহতাব মগ টা নিয়ে মেঘকে ইশারায় বসতে বললো । তাই মেঘও দাড়িয়ে না থেকে মেহতাবের পাশে বসে পরলো । মেহতাব কফির মগ এ একটা চুমুক দিয়ে বলে উঠলো ,

মেহতাব : মেঘ তোমার তো পড়াশোনা শেষ তো কি হতে চাও বা সপ্ন কি ?
মেহতাবের কথায় মেঘ কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলে উঠলো ,
মেঘ : এখনো কি আমি আমার সপ্ন পুরণ করতে পারব মানে চান্স আছে । ( এই কথাটা বলার সময় মেঘের চোখ খুশীতে জল জল করে উঠলো )

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১২

মেঘের কথায় মেহতাব চাঁদের আলো মিশ্রিত একটি হাসি দিয়ে বললো , “কেনো পারবে না অবশ্যই পারবে”।
মেহতাবের কথায় মেঘ যেনো চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো । খুশিতে গদগদ হয়ে মেহতাব কে জড়িয়ে ধরলো আর বলে উঠলো , ” আই লাভ ইউ মেহতাব ”

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৪