তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১২

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১২
নাদিয়া আক্তার সিয়া

মেঘের কথা শুনে মেহতাব মেঘের মাথা উচু করে চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে মেঘের হাত তার বুকের বাম দিকে ধরে বললো ,

মেহতাব : তুমি কি জানো তুমি আমার জীবনে না এলে এই জীবনের মূল্য আমি কোনোদিনই বুঝতেই পারতাম না । রোজ সকালে তোমার সেই মায়া ভরা চেহারা না দেখলে আমার দিনই কাটতে চায় না । তোমার মুখের মায়া আমায় প্রতিদিন তোমার দিকে আকর্ষিত করে । তোমাকে নতুন করে পাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত করে । তুমি আমার জীবনের সাথে মিশে গেছো । তোমাকে ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না । তুমি আমার আদুরে মায়াবিনী । ( মুচকি হাসি দিয়ে )
মেহতাবের এমন কথায় মেঘ কিছুটা ঘাবড়ে যায় । সেটা লক্ষ্য করে মেহতাব পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার বলে উঠে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহতাব : রিল্যাক্স ঘাবড়ে যাবার কি হলো ? We are married and it’s normal . তোমার কি আমার কমপ্লিমেন্ট পছন্দ হয় নি ? ( ভ্রু কুচকে )
মেহতাবের কথা শুনে মেঘ বললো , “তেমন কিছু না এই প্রথমবার আপনার মুখে আমার প্রশংসা শুনেছি তাই হজম করতে একটু কষ্ট হয়ে গেলো ” (ইতস্ত করে)

“এটা জাস্ট ট্রেলার ছিলো এখনও অনেক কিছু বাকী । আমি তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা বলিয়ে ছাড়বো মিসেস মেহতাব চৌধুরি ” মনে মনে বললো মেহতাব ।
এতক্ষণ এই কথাগুলো সৌরভ আর মিথিলা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলো ।
“মিথু পাখি , এতো মেঘ না চাইতে তুফান” সৌরভ মিথিলা কে বললো ।
“সৌরভ তুমি ঠিক বলেছো । কিন্তু হঠাৎ কি এমন হলো মেহতাব ভাইয়া কাহিনি টা উল্টে দিলো । আই থিঙ্ক মেবি টিনা ওই মেহতাব ভাইয়া কে কিছু বলেছে ” মিথিলা বললো ।
“যাই বলুক না কেনো ভালোই হয়েছে, চলো যাই ।”
এই বলে সৌরভ মাইক নিয়ে মেহতাব , মেঘ আর আহতাব আর অহনা কে কাপল ডান্স এর জন্য স্টেজ এ ডাকলো

মেঘ যেতে না চাইলেও মেহতাবের মান রাখতে তাকে যেতে হয় । তখনি গান চালু করে দেয় সৌরভ । মেহতাবদের সাথে আরো কিছু কাপল যোগ দেয় । সুযোগ বুঝে মিথিলা আর সৌরভ ও ডান্স ফ্লর এ নেমে যায় । সবাই ইঞ্জয় করতে থাকে। গানের সাথে তাল মিলিয়ে।

ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই ,
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল ,
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল ।
কে আছে বল তোরি মতো এমন ,
কে বোঝে বল , বোঝে আমার এ মন ,,
ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই ,
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল ,
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল ।
( বাকীটুকু নিজ দায়িত্বে দেখে নেবেন )

মেহতাব মেঘের সাথে ডান্স করার পুরোটা সময় মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলো । এতে মেঘ অবশ্য লজ্জা পেয়েছে । কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । এটি একটি আলাদা অনুভতি । এইসব যখন মেঘ ভাবছিলো তখন হঠাৎ মেহতাব বলে উঠলো ,
মেহতাব : লজ্জা পাচ্ছ নাকি? ( মুচকি হেসে )
মেহতাবের কথায় মেঘ লজ্জায় যেন কুকরে যায় । কিন্তু নিজেকে সামলে বলে উঠে ,
মেঘ : অনেক লোক তো তাই একটু প্রবলেম হচ্ছে।
মেহতাব : তোমার অসুবিধা হলে থেমে যাই ?
মেঘ : প্রথম একটু সমস্যা হয়েছিলো এখন ঠিক আছি ।
এই বলে মেহতাব আর মেঘ পুরো ডান্স শেষ করে।

তারপর সবাই মিলে কথা বার্তা বলে । মেহতাব আর আহতাব গেস্টদের সাথে মেঘ আর অহনাকে পরিচয় করিয়ে দেয় । সবাই মিলে আনন্দ ফুর্তি করে রিসিপশন পার্টি শেষ করে । তারপর সব গেস্টরা চলে যায় । মেঘ আর অহনাদের পরিবারও চলে যায় । অরিন বেগম আর মিনহাজ চৌধুরি তাদের অনেক জোর করেছিলো থাকার জন্য কিন্তু তারা থাকে না । সবাই চলে যাবার পর। যে যে যার যার রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায় ।

মেহতাব রুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে । কিন্তু মেঘের দেখা নেই । তাই সে মেঘকে ঘুজতে বের হতেই যাবে। তখনি টিনা হুট করে রুম এ ডুকে পরে । আর মেহতাব কে জড়িয়ে ধরে বলে ,
টিনা ( মেহতাবের ফুপাতো বোন ): আই মিস ইউ বেবি ।
টিনা কে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে মেহতাব ভীষণ রেগে যায় । সে এক ধাক্কায় টিনাকে দূরে সরিয়ে দেয় । টিনা তখনি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ,

টিনা : আর কতো দূরে থাকবে আমার থেকে । সারাজীবন তো আমার সাথেই কাটাতে হবে । যেদিন ফার্স্ট তোমাকে লান্ডানে দেখে ছিলাম । তোমার প্রেমে পরে গিয়ে ছিলাম । Believe me baby i love you so much .
টিনার কথা শুনে মেহতাব নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে বলে ,
মেহতাব : টিনা আমি কি কোনোদিনও বলেছি আমিও সেম ফিল করি? তুমি আমার ফুপির মেয়ে তাই তোমাকে এতো দিন সয্য করেছি । কিন্তু তুমি সুধরাবার নোও ।
টিনা : এভাবে কেনো বলছো মেহতাব ওই মেয়েটার জন্য তাই না। ওই মেয়েটা তোমাকে ভুংভাং বুঝিয়েছে । I’ll kill her bloody bi*tch .

মেহতাব এবার আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না । আর টিনার গালে সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় । আর টিনাকে উদ্দেশ্যে করে বলে ,
মেহতাব : নেক্সট টাইম বলার আগে সেকেন্ড বার ভাববে কার সম্পর্কে বলছো । আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলিনি কোনোদিন । বাট তোমার বুঝার মতো সেন্স নেই তুমি তো নির্বোধ । Get lost from here . ( রাগ দেখিয়ে )
মেহতাবের কথা শুনে টিনা বেরতেই যাবে তখনি তার মেঘের সাথে ধাক্কা লাগে । সে মেঘের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে যায় । কিন্তু মেঘের মাথাতেই ঢোকে না কি এমন করলো সে । সে রুম এ ডুকে মেহতাবকে রুমের কোথাও দেখতে পায় না । বারান্দায় গিয়ে দেখেতেই মেহতাবকে দোলনায় বসে থাকতে দেখতে পায় । তাই সেও মেহতাবের পাশে বসে পরে । আর বলে ওঠে ,

মেঘ : কিছু কি হয়েছে ?
মেঘের গলা শুনে সে পাশে মেঘকে বসে থাকতে দেখে মেঘকে জড়িয়ে ধরে । আর বলে উঠে ,
মেহতাব : একটা কথা বলবো ?
মেঘ : হুম বলুন ।
মেহতাব : তুমি কোনোদিনও আমায় ছেড়ে চলে যাবে না তো ?
মেহতাবের এমন প্রশ্নে মেঘ কিছুটা অবাক হয় । কিন্তু নিজেকে সামাল দিয়ে বলে ,
মেঘ : হঠাৎ এই প্রশ্ন ?

মেহতাব : আগে জবাব দেও । যাবেনা তো আমায় ছেড়ে ?
মেঘ : ঠিকাছে যাবো না ।
এবার মেহতাব একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলে । মেঘকে ছেড়ে দিয়ে মেঘের কোলে হেলান দিয়ে পা দুটো দোলনায় তুলে আকাশের দিকে তাকায় ।

মেহতাব কে এমন করতে দেখে মেঘ একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় । আর তারা দুজনেই কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় কেউ টেরও পায় না । ভোরের আলো চোখে পরতেই মেহতাব আর মেঘ দুজনেরিই ঘুম ভেঙে যায় । মেঘ ভাবে মেহতাব এখনও ঘুমাচ্ছে তাই সে মেহতাবের কপালে আলতো করে একটা চুমু এঁকে দেয় । মেহতাব টের পেলেও বুঝতে দেয় না । মেঘ মেহতাবকে ডাকতে যাবে । তখনি মেহতাব মেঘকে আরো আস্টেপৃস্টে জড়িয়ে ধরে । এবার দরজায় ঠোক ঠোক আওয়াজে দরজা খুলতে মেঘ উঠতেই যাবে । তখনি মেহতাব মেঘের হাত ধরে তাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় । মেহতাবের এমন আচমকা টান দেওয়াতে মেঘ কিছুটা ভয় পেয়ে যায় ।

মেঘকে এমন ভয় পেতে দেখে মেহতাব মুচকি হেসে দেয় । এতে মেঘ আরো বেশি রেগে যায় । আর বলে ,
মেঘ : ছাড়ুন আমায় দরজা খুলতে হবে । ( রাগ করে )
মেহতাব : বাবা তুমি রাগ করতে পারো নাকি আমি তো ভেবেছিলাম তুমি শুধু লজ্জা পেতে পারো । ( দুষ্টু হাসি দিয়ে )
মেহতাবের এমন কথার প্রতিউত্তরে মেঘ বলে উঠে,

মেঘ : আপনি লজ্জায় ফেলে দেন তাই ।
মেহতাব : ওহ তাই বুঝি তাহলে আরেকটু ফেলি ।
এই বলে মেহতাব মেঘের কাছাকাছি আসতে থাকে । তখনি মেহতাবের ফোন আসে । এই সুযোগে মেঘ নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় দেয় । তা দেখে মেহতাব একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোন রিসিভ করে ।

নিচে সবাই বসে নাশতা করছিলো । মেঘ আর মেহতাব ও সেখানে উপস্থিত হয় । অরিন বেগম ওদের বসতে বলেন । কিন্তু মেঘ অরিন বেগমকে নিজের জায়গায় বসিয়ে দিয়ে নিজে আর অহনা মিলে সবাইকে সার্ভ করে দিতে থাকে । তা দেখে অরিন বেগম খুব খুশি হন । যে তারা নিজেদের সংসারের হাল ধরতে শিখেছে ।
সবাই নাশতা খেয়ে উঠতেই । মেহতাবের বন্ধুরা অরিন বেগম আর মিনহাজ চৌধুরি কে বলে ,
সৌরভ : আন্টি আজকেই আমরা ফিরা যামু । মেহতাবের বিয়ার সব অনুষ্ঠান ও শেষ । আর থাকা পসিবেল না ।
সৌরভের কথা শুনে অরিন বেগম বলে ,

অরিন বেগম : সে কি বাবা । না আজ না আরো দুই দিন থাকবে তারপর। তোমাদের ভালো করে দেখার সুযোগ পাই নি । আজ যেও না বাবা। মেহতাব ওদের থাকতে বল ।
মেহতাব অরিন বেগমের কথা শুনে সৌরভদের বলে ,
মেহতাব : তোদের তো কোনো কাজ নেই যে ছুটি নিয়ে প্রবলেম । সো ফিরে গিয়ে কি করবি আর কয়দিন থেকে যা আমি আর তোরা একসাথে লন্ডন এ ব্যাক করবো । ( সৌরভ এবং মেহতাব লন্ডনে বিজনেস হোল্ডারস আর বাকিরা ওই কোম্পানি তে উচ্চ পদে জব করে )

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১১

সৌরভ : ঠিকাছে আন্টি যেহুতু ভালো কইরা দেখেন নাই । তাই থাইকা গেলাম ।
সামির সৌরভের কথা শুনে কানে ফিসফিস করে বলে ,
সামির : সৌরভ যাচ্ছে না তার মিঠু পাখির টানে । প্রমান করা লাগবে না নিশ্চই সৌরভ ডার্লিং ।
এই কথা বলে সামির হেসে দেয় । সামিরের কথা শুনে সবাই না জেনেই মজা করে হেসে দেয় । কিন্তু সৌরভ আর সামির তা দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে আরো জোরে হেসে উড়িয়ে দেয়।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১৩