আমার তুমি পর্ব ৩৩

আমার তুমি পর্ব ৩৩
জান্নাত সুলতানা

মেয়ে কে দেখতে ছেলে আসে নি। আর ছেলে ছাড়াই বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়ে গেছে। ছেলের বাবা আর ফুফি এসছে আর ছেলের ফুফি মেয়ে কে পছন্দ করে এক জোড়া বালা পড়িয়ে রেখে গিয়েছে।
রিধি ছেলের বাবা কে একবারও দেখে নি।দেখবে কি করে ওর মন এখানে ছিল কি? ওর মন তো অন্য কোথাও।
রিধির বিয়ের দিন সারা আর রাহান এর এনগেজমেন্ট হবে বলে জানিয়েছেন জাফর মির্জা।

রাহানের পরিবার এর কেউ অমত পোষণ করে নি।অবশ্য করবে কি? করার মতো কিছু থাকলে তো করবে।জাত গোষ্ঠী নাম দাম সব ভালো মেয়ের দাদা এলাকার চেয়ারম্যান, বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান,চাচা, বড় ভাই ব্যবসায়ি ছোট ভাই এমপি। মেয়েও দেখতে শুনতে মাশা-আল্লাহ। আর কি লাগে।রাহানের বাবা বিজনেসম্যান সেখানে রাহানদের তুলনায় সারা’র পরিবার বহুত এগিয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পাত্র পক্ষ যাওয়ার পর মির্জা বাড়ির সবাই আবার বাড়ি ফিরে আসে।
কতশত কাজ বাকি রিধির বিয়ের আগে মাইশার আর আয়ানের বিয়ে টাও সেরে ফেলতে চায় শফিক সওদাগর জানিয়েছেন। এতে অবশ্য কেউ অমত করে নি তবে কাজের দখল টা বেশি হবে এই যা।নয়তো সব দিক দিয়ে ঠিক আছে । এমনিতেও রিধির বিয়ে তো এক মাস পর তাই বেশি ঝামেলা হবে না।

আর সওদাগর বাড়িতেও মানুষ নেই।মিতা সওদাগর সব সময় বাড়িতে একাই থাকে সেই সাথে ছেলের বয়স তো আর কম হলো না দেখতে দেখতে। এখন ছেলে কে বিয়ে দেওয়া দরকার।
দুই মেয়ে? হ্যাঁ দুই মেয়েই তো তাদেরও তো বিয়ে দিয়ে এখন ভালো আছে। তিনিও এখন একটু ভালো থাকতে চায়।

সেটা যদি হয় দূরে কোথাও গিয়ে?
হ্যাঁ দূরে চলে যাবে অনেক দূরে যেখানে চাইলেও শফিক ওনার খুঁজ পাবে না ফিরিয়ে আনতে পারবে না।

সারা প্রিয়তা কলেজে ভর্তি হয়েছে আগের প্রতিষ্ঠানেই তাই এখানে চিনার মতো নতুন কিছু নেই তবে সৃতি হিসেবে আবারও অনেক কিছু রয়েছে। এই যে রাত বিরাতে সাদনান এর সাথে এই দিকের বট গাছের পাশে চিকন রাস্তা টায় হাতে হাত রেখে হাটা পাশেই একটু দূরে চায়ের দোকান হতে চা খাওয়া।
আহ কি সুন্দর সুন্দর মূহুর্ত ছিল সে সব।

কিন্তু এখন শুধুই সৃতি এখন আর আগের মতো সাদনান তাকে সময় দেয় না। রাতে বাড়ি ফিরে লেট করে।
অবশ্য সে তো আর এখন আগের মতো আর সাধারণ জণগণ নয় সে এখন এমপি কতশত দায়িত্ব।
এই যে আজ বাদে দুই দিন পর বাড়িতে বিয়ে অথচ সাদনান এর খবর নেই। কাল সবাই আবারও শপিং করতে যাবে।প্রিয়তা ব্যালকনিতে মেঝেতে বসে এক দৃষ্টিতে হাল্কা মেঘাচ্ছন্ন করে থাকা আকাশ এর দিকে তাকিয়ে আছে। দূর আকাশে চাঁদ টা যেমন একটু পর পর এক টুকরো মেঘ এসে যেমন চাঁদ টাকে ঢেকে দেয় আবার খানিকক্ষণ সময় পর আবারও ভেসে উঠে ঠিক তেমন সাদনান এর দেখা পাওয়াটাও এমন হয়ে গিয়েছে।

দেখা হয় কখনো বা প্রিয়তা ঘুমিয়ে থাকে সাদনান বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রিয়তা তখন সজাগ পায়,আর মন টা খুব করে অভিযোগ করতে মন চায়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে মনের কষ্ট গুলো ধুয়েমুছে ছাফ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। তবে সে টার করা হয় না।ইচ্ছে করে না সাদনান এর ক্লান্ত ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে সে সব করতে। থাক না সে সব, চলুক না জীবন যেভাবে চলছে।কোনো কিছুর অভাব তো আর হচ্ছে না শুধু এই স্বামী নামক প্রিয় মানুষ টার সময় টা একটু কম দেয়।

হয়তো সামনে থেকে আরও কম দিবে।আর সেটা না হয় এখন থেকে অভ্যাস করে নেওয়া যাক।
রুমে দেওয়ালে থাকা বড় দেওয়াল ঘড়ি টা জোরে তিন বার শব্দ করে ওঠায় প্রিয়তার ধ্যান ফিরে আসে। বারো টা বেজে গিয়েছে। রুমে যাওয়া প্রয়োজন।প্রিয়তা রুমে এসে বিছানার পাশে থাকা সেন্টার টেবিলের উপর হতে বিয়ের রাতে তুলা ফটো ফ্রেম টা হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আজ ছয় মাস হলো সাদনান প্রিয়তার বিয়ের।

প্রিয়তার কেন জানি ডান চোখ হতে গড়িয়ে এক ফোঁটা জল পড়ে?
প্রিয়তা চোখের পানি টা মুছে নেয়।
ওড়না পাশে রেখে বিছানা গুছিয়ে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
আর ঠিক তক্ষুনি দরজায় নক পড়ে।প্রিয়তার ভ্রু কুঁচকে আসে। এই রাতে কে নক করে? সাদনান তো রুমে নক করে ঢুকে না।

প্রিয়তা কিছু বলবে তার আগেই সারা হড়হড় করে রুমে এসে প্রিয়তা কে নিজের হাতে থাকা ফোন টা এগিয়ে দিলো।
প্রিয়তা প্রশ্নবোধক চাহনি তাকিয়ে থাকে সারা’র দিকে।
সারা ইশারা করে ফোন কানে নিতে বলে।
প্রিয়তা এক বার ফোন টার দিকে তাকিয়ে ফোন টা কানে তুলতেই ওপাশ হতে সাদনান এর গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো

-“ফোন কোথায় তোমার?”
-“সাথে, সাথেই ছিল,,,,
প্রিয়তা সাদনান এর কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে সাদনান রেগে আছে।
তাই নিজের রাগের কথা ভুলে সাথে ভয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিল।
তবে সাদনান শুনে না সবা টা তার আগেই হুকুমের স্বরে বলল
-“দশ মিনিট সময়।

আলমারি খোলে ডান পাশের ড্রয়ারে সেখান একটা প্যাকেট পাবে।
ওটা পড়ে রেডি হয়ে নিচে এসো।
আমি অপেক্ষা করছি।
আর হ্যাঁ,শাল গায়ে দিয়ে আসবে।”
প্রিয়তা কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পায় না।তার আগেই সাদনান ফোন কাটে।
সারা বিরক্তে চোখ মুখ কুঁচকে ফোন টা নিজের হাতে নিতে নিতে বলল

-“তোর ফোন চালানোর কি দরকার?
কে দিয়েছে তোকে ফোন?”
প্রিয়তার মন টা হটাৎ কেন জানি বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো। সারা কে খুঁচা তে ইচ্ছুক করলো।
তবে হাতে সময় নেই তাই শর্ট কার্ট টিপুনি কেটে বলে
-“প্রেম করছিলি বুঝি?”

যদিও প্রিয়তা জানে সারা ঘুমিয়ে ছিল হয়তো সাদনান এর ফোন পেয়ে উঠে এসছে।
তবুও একটু রাগীয়ে দিলো।
সারা কটমট করে তাকালো প্রিয়তার দিকে ততক্ষণে প্রিয়তা আলমারি খুলে সেখান থেকে সাদনান এর কথা মতো কাজ করে ওয়াশ রুম চলে গিয়েছে। তাই সারা আর কিছু বলতে পারে না শুধু বিরবির করে বলল
-“অসভ্য মেয়ে মানুষ।
সবাই কে নিজের মতো ভাবে, হু।”

সারা রুমে থেকে বেড়িয়ে এলো। কিন্তু হাতে থাকা ফোন টা আবারও সশব্দে বেজে উঠে।
সারা ভাবে হয়তো আবার সাদনান ভাই ফোন দিয়েছে। তাই নাম্বার ভালো করে না দেখে রিসিভ করে ফোন কানে নিতেই ওপাশ হতে রাহান ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
-“ঘুমিয়ে ছিলে?”
-“হ্যাঁ।
ভাইয়া ফোন দিয়ে বলল প্রিয়তার ফোন বন্ধ তাই ওর কাছে আসলাম।”

-“রেখে দেবো।”
-“না,,হ্যাঁ মানে আপনার খারাপ লাগলে রেখে দিন।”
সারা মলিন কণ্ঠে বলে।রাহান মুচকি হাসলো।
তার খারাপ লাগা তো এই মেয়ের কণ্ঠ শোনা মাত্র চলে যায়।
তা কি জানে এই মেয়ে?
জানলে কখনো বলতো না রেখে দেওয়ার কথা।
তবে রাহান মুখে বলল

-“খাবার খেয়েছো?”
-“হুম।
আপনি?”
-“মাত্র ফ্রেশ হয়ে এলাম।
মা খাবার রেখে গিয়েছে।”
এভাবে তাদের কথোপকথন চলতে থাকে।

এদিকে প্রিয়তা শাড়ী পড়ে রেডি হয়ে চুল গুলো হাত খোঁপা করে নেয়।
অতঃপর গায়ে একটা শাল জড়িয়ে রুম হতে বেড়িয়ে আসে।
নিচে আসতেই দেখলো সে দিনের কাজের মহিলা টা লিভিং রুমে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা বুঝতে পারে সে বেরুলে সে দিনের মতোই আজও তিনি দরজা বন্ধ করে রাখবে।
প্রিয়তা ওনার দিকে তাকিয়ে হাল্কা লজ্জা পেলো।
মহিলা টা এগিয়ে এলো।
মুচকি হেঁসে বলল

আমার তুমি পর্ব ৩২

-“ছোট বউ সাবধানে, আর জলদি আইবার চেষ্টা কইরো।
হেই দিন কিন্তু দাদি তোমারে আর ছোট সাহেবরে এক লগে রাইতে বাড়ি ফিরতে দেখছে।”

আমার তুমি পর্ব ৩৪