আমার তুমি পর্ব ৩৪

আমার তুমি পর্ব ৩৪
জান্নাত সুলতানা

গাড়ী চলছে আপন গতিতে। সাদনান ড্রাইভ করছে। প্রিয়তা পাশেই বসে একটু পর পর আঁড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সাদনান কে।
সফেদা পাঞ্জাবি গায়ে তার উপর কালো একটা কটি সাদনান কে দেখতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে প্রিয়তার নিকট।
আচ্ছা সারা দিন বাহিরে বাহিরে থাকে।কতশত মিটিং,সমাবেশ, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির অনুষ্ঠানে যায় সেখানে তো অনেক মেয়ে থাকে তারা কি সাদনান এর দিকে ঠিক এভাবে তাকায় না-কি সরাসরি তাকিয়ে থাকে?

প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান হঠাৎ গাড়ী ব্রেক কষে। প্রিয়তা সামন্য ঝুঁকে পড়ে সামনের দিকে।
তবে সিট বেল্ট লাগানো ছিল বলে কোনো ক্ষতি হয় নি।
সাদনান ততক্ষণে নিজের সিট বেল্ট খোলে প্রিয়তার টাও খুলতে হাত লাগিয়েছে।
প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকালো। কি হচ্ছে বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগে ততক্ষণে সাদনান এর বলিষ্ঠ শরীরে এর উপর প্রিয়তার অর্ধেক শরীর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আর প্রিয়তা কিছু বলার আগেই সাদনান প্রিয়তা কে নিজের উরুর উপর বসিয়ে দুই গালে হাত রেখে বলল
-“লুকিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই।
পুরো মানুষ টা তোমার, জান।”
প্রিয়তা লজ্জা পেলো।
চোরা চোখে এদিক সেদিক এলোমেলো দৃষ্টি ঘুরালো। অবস্থা এমন যেনো চুরি করতে এসে ধরা পড়ে গিয়েছে। হ্যাঁ, চুরিই তো।না চুরি কেন হবে? ভালোবাসার মানুষ,স্বামী তার সেখানে এটা চুরি কেন হবে? ভালোবাসা হবে এটা হালাল ভালোবাসা।

প্রিয়তা অনেক কিছু ভাবলো।সাদনান এর দাঁড়ি ভর্তি দুই গালে নিজের ছোট নরম তুলতুলে হাত গুলো রাখে।মুখ টা এগিয়ে এনে সাদনান এর কপালে নিজের গোলাপি রঙের হাল্কা লিপস্টিক রাঙানো অধর জোড়া ছুঁয়ে দিলো।
সাদনান চোখ বন্ধ করে নিলো।

বউ তার ভীষণ আদুরে। একটু সময় এই কয় দিন কম দিয়েছে বলে কি অভিমান টাই না করে ছিল। সাথে রাগও ছিল। আর সাদনান এর একটু আদুরে কণ্ঠে সেটা গলে পানি আর অভিমান তো একটু ছোঁয়া পাওয়ার পর পরই ভেঙেছে। যখন গাড়ী তে সাদনান বসে ছিল আর প্রিয়তা শাল টা গায়ে দিয়ে ছোট ছোট কদম ফেলে গাড়িতে এসে বসার পর সাদনান জড়িয়ে ধরে বলেছি “দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের আজ ছয় মাস হলো।এতো টা সময় কখন শেষ হলো? বুঝতেই পারি নি।”প্রিয়তা নিজে তখন কিছু বলে নি।চুপচাপ অনুভব করে।
প্রিয়তা আর ভাবে না। অতঃপর মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে

-“আমার কোথায় যাচ্ছি?”
-“একটা নতুন রিসোর্ট হয়েছে পাশে।
তুমি বলে ছিলে, মনে আছে?”
-“হুম।তার মানে
আমরা সেখানে যাচ্ছি?”
-“ইয়েস।”
প্রিয়তা অবাক সাথে খুশি হয়ে প্রশ্ন করে সাদনান মুচকি হেঁসে জবাবে বলে।
প্রিয়তা কে আগের স্থানে বসিয়ে দিয়ে সাদনান আবার গাড়ী স্টার্ট দেয়।
ওদের রিসোর্টে পৌঁছাতে আর পাঁচ সাত মিনিট এর মতো লাগবে।

রিধি ওয়াজিদ কে একটা মেসেজ লিখে সেটা হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়ে দিলো। রিধি ভাবছে ওয়াজিদ ফোন দিবে।আর দিলেও ওয়াজিদ ফোন তবে রিধি যা আশা করে ছিল ওয়াজিদ সেরকম কিছু বলে না খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-“বিয়ে ঠিক হয়েছে ভালো কথা।
আমাকে এভাবে বলার কি আছে?”

রিধি ওয়াজিদ এর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ও মোটেও এমন টা আশা করি নি।
ও তো ভেবেছে ওয়াজিদ হয়তো আগের মতোই করে ভালোবাসার কথা বলবে।
বহু কষ্টে রিধি নিজে কে সামলে নিলো।
ধরে আসা গলায় ওয়াজিদ কে প্রশ্ন করে
-“আপনি কিছু বলবেন না?”
-“কি বলবো?”
রিধি জবাব দেয় না ফট করে ফোন টা কেটে দেয়।
অতঃপর মেঝেতে বসে কান্না করতে লাগলো। আর বিরবির করে বলতে লাগলো

-“এটাই আমার প্রাপ্য।
আমি আগে ভুল করে ছি বলেই তো ওয়াজিদ এখন আমাকে আর বিশ্বাস করে না।”
বয়স টা তখন রঙিন। যা দেখে তাই ভালো লাগতো রিধির। অবশ্য শুধু রিধির না ষোল, সতেরো বছর বয়স টাই এমন।ভুল ঠিক, ভালো খারাপ যাচাই করে না।
রিধি তখন সবে সতেরো বছরে পা দিয়েছে। কলেজে ভর্তি হয় তখন নতুন বন্ধু বান্ধবী আর ঠিক সেই সময় মস্ত বড় এক ভুল করে বসে।

রিধি যেই কলেজে পড়তো সেখানের ভার্সিটির এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে ওর কথা হতো।
মূলত ছেলে টা রিধি কে প্রথম প্রথম ডিসটার্ব করতো।এতে রিধির ভালোই লাগতো আর এক সময় তাদের মাঝে সাময়িক একটা প্রেম হয়ে যায়।
ওয়াজিদ তখন মেডিকেলের দ্বিতীয় বৎসর ছাত্র।

তাই রিধি কে বেশি সময় দিতে পারতো না।আর রিধি তখন ওয়াজিদ কে লুকিয়ে ওই ছেলে টার সাথে প্রেম করতো।কিন্তু প্রেম টা বেশি দিন ছিল না। তার কারণ সিনিয়র ভাই টা ভালো ছিল না আর এটা রিধি যেনে গিয়ে ছিল বারো দিন প্রেম করার পর।
কিন্তু ততদিনে ওয়াজিদ সব টা জানতে পেরে যায়।

আর রিধির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।আর তার এক বছর পর ওয়াজিদ ইতালি চলে যায়। এটা জানতে পেরে রিধিও ইন্টার পরীক্ষা দেওয়ার পর ইতালি চলে যায় কিন্তু সেখানে গিয়ে ওয়াজিদ কে খোঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আর যখন পেলো তখন ওয়াজিদ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে সে রিধি কে কিছুতেই ক্ষমা করে রিধি কি আরেক টা সুযোগ দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু রিধি অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে।
সে ভুল করেছে মেনে নিয়েছে।
এর পর ভালোই চলছিল। তবে হঠাৎ করেই সব আবার এলোমেলো হয়ে গেলো।

সাদনান ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলো। প্রিয়তা তখন ফুল দিয়ে আর মোম বাতি দিয়ে সাজানো রুম টা খুঁটি খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত।
সাদনান হাতে থাকা সফেদা রঙের টাওয়াল টা আস্তে করে ঝুরিতে ফেলে দিয়ে এগিয়ে এলো প্রিয়তা দিকে।
প্রিয়তা রুম টার ব্যালকনিতে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরতেই সাদনান এর বুকের সাথে ধাক্কা খেলো।
প্রিয়তা একটু চমকে উঠে পিছিয়ে যাবার জন্য পা বারাতেই সাদনান শক্ত হাতে টেনে ধরে প্রিয়তার কোমড়।
প্রিয়তা সাদনান এর কাঁধের কাছে সাদা টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে বলল

-“ধন্যবাদ।”
-“কেন?”
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে সাদনান।
প্রিয়তা মুচকি হেঁসে বলল
-“এতো সুন্দর সারপ্রাইজ।”
সাদনান হাসলো একটু ঝুঁকে এলো প্রিয়তার দিকে অতঃপর ফিসফিস করে বলে উঠে
-“ভালো লেগেছে?”
-“ভীষণ।”

প্রিয়তা উৎফুল্লতা নিয়ে জানায়।
সাদনান প্রিয়তা কে আরও একটু নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
ডান হাতে প্রিয়তার উন্মুক্ত কোমড়ে রেখে শক্ত করে চেপে ধরে।
সেভাবে রেখেই সামন্য উঁচু করে নিলো প্রিয়তা কে।
প্রিয়তার পা তখন শুন্যে ঝুলে।
প্রিয়তা নিজেও শক্ত করে সাদনান এর গলা জড়িয়ে ধরে। সাদনান প্রিয়তার কাঁধে নিজের অধর ছুঁয়ে দিলো।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল চোখ গুলো খিঁচে বন্ধ করে
নিলো।

সাদনান গভীর ভাবে ওষ্ঠ জোড়া ছুঁয়ে বেশ অনেক্ক্ষণ থাকলো।
ততক্ষণে প্রিয়তা চোখ খোলে সাদনান এর মাথার পেছনে হাত রাখে।
সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিলো।
ছেড়ে দিয়ে নিচে নামাল। তার পর প্রিয়তার চোখে চোখ রেখে বলল
-“তবে আমার উপহার?”

প্রিয়তা একটু লজ্জা পেলো ইশ এতো এতো অভিমান করে ছিল সাদনান এর উপর কিন্তু নিজেই তো কিছু করে নি।
এখন কি দেবে কিছুই তো নেই।
প্রিয়তার অবস্থা থেকে সাদনান বাঁকা হাসে বলল
-“আছে তো অনেক কিছু।”
-“কিছু নেই।”

প্রিয়তা অবাক হয়ে জানায়।সাদনান আবারও হাসে। প্রিয়তা সে দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।সাদনান সে সব পাত্তা না দিয়ে নেশাতুর কণ্ঠে জানালো
-“আমার যা চাই।
তা নাহয় আমি নিজেই নিয়ে নিলাম।”
প্রিয়তার বিষয় টা বুঝতে একটু সময় লাগে। বুঝতে পেরে এক ধাক্কা সাদনান কে সড়িয়ে দিয়ে নিজে পিছিয়ে যেতে চায়।

কিন্তু প্রিয়তা সাদনান কে একটুও নড়াতে পারে না।
উল্টো সাদনান এক ঝটকায় বউ কে কোলে তুলে নেয়। বিছানার দিকে যেতে যেতে বলল
-“বিয়ের এতো মাস হলো,আর এখনো এতো লজ্জা মোটেও কাম্য নয় মিসেস সাদনান।”

আমার তুমি পর্ব ৩৩

প্রিয়তা আরও দিগুণ লজ্জা পেলো সাদনান এর বুকে মুখ গুঁজে সেই লজ্জা আড়াল করতে চাইলো যা দেখে সাদনান আরও একদফা হেঁসে নিলো।
সাদনান এর হাসির দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা আনমনেই বলে উঠে
-“আমার আপনার মতো আরও একটা সাদনান চাই।
দিবেন?”

আমার তুমি পর্ব ৩৫