আমার তুমি পর্ব ৩৫

আমার তুমি পর্ব ৩৫
জান্নাত সুলতানা

প্রিয়তার কথা টা শুনে সাদনান হঠাৎ করে প্রিয়তা কে ছেড়ে দিলো।
সরে এসে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।প্রিয়তা উঠে বসলো শাড়ীর আঁচল ঠিক করে সাদনান এর দিকে তাকালো সাদনান চোখ বন্ধ করে আছে।

-“আজকের পর আর আমাদের মাঝে কিছু হবে না।
তুমি সম্পূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত।”
প্রিয়তা সাদনান এর দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে ছিল।এর মধ্যে হঠাৎ সাদনান চোখ বন্ধরত অবস্থায় কথা গুলো বলে উঠে।
প্রিয়তা এবার চমকে উঠলো।
তড়িৎ গতিতে সাদনান কে জড়িয়ে ধরে।
ধরে আসা গলায় বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“আপনি এমন কেন বলছেন?”
-“বাচ্চা হবে তবে আল্লাহ যখন চাইবে।
আর তুমি? আমি যখন বুঝতে পারবো তুমি এন্ড আমার বাচ্চা ক্যারি করার মতো উপযুক্ত তখনি আমি আবারও তোমার ইচ্ছে পূর্ণ করার চেষ্টা করবো।
এর আগে আমি তোমার কাছে যাব না।”
প্রিয়তা কথা গুলোর মানে বুঝতে বেশ অনেক টা সময় লাগলো।

-“আমার কথা টা শুনু,,,
-“কি শুনবো? হ্যাঁ, হ্যাঁ? বলো কি শুনবো?
তোমার বয়স?,,,
সাদনান আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই প্রিয়তা সাদনান কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।সাদনান একটু শান্ত হলো।
জোরে জোরে শ্বাস ফেলে কয়েক বার নিজে কে স্বাভাবিক করতে চাইলো।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে শান্ত হয়ে নিজেও প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে বলল
-“তোমার কিছু হলে।
আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে জান।”

-“আচ্ছা।
আমি আর বলবো না।”
সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে। প্রিয়তার কেন জানি খারাপ লাগলো।সে যদি এসব না বলতো তবে হয়তো আজকের এই রাত টাও তাদের ভালোবাসাময় হতো।
আর সাদনান? ঠিকই তো বলেছে সে নিজেও এখনো একটা বাচ্চার মতোই বিহেভিয়ার করে।আর বয়স সবে তো সতেরো শেষ এর দিকে।আঠারো হোক তার পর না হয় আবার সাদনান এর কাছে কথা টা পাড়বে।
প্রিয়তাও এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে সাদনান এর বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রিয়তার নিশ্বাস ভার শুনতে পেয়ে সাদনান চোখ খুলে।সে ঘুমায় নি অপেক্ষা করছিল বউ ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য।
সাদনান আস্তে করে প্রিয়তার মাথা টা কাঁধ করে নিজের একটা বাহুর উপর রেখে নিজের মুখ টা প্রিয়তার মুখের কাছে নিয়ে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় প্রিয়তার এক গালে।

প্রিয়তা সামন্য কেঁপে উঠে তবে তন্দ্রা ছুটে না।যা দেখে সাদনান শব্দহীন হাসি হাসলো।
দ্বিতীয় বার এর মতো গালে আবারও ওষ্ঠ ছোঁয়া দিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো
-“এই লম্বা চওড়া দেহটা শুধু আমি বয়ে বেড়াই তার প্রাণ টা তো তোমার মধ্যে।সেখানে তোমার কিছু হলে আমার নিজের মৃত্যু, আমার জান।”

সাদনান আর প্রিয়তা রিসোর্ট থেকে সোজা শপিংমলে এসছে।
বাড়ির সবাই আসে নি সব বাড়িতে নেওয়া হয়েছে কিন্তু মাইশার আর সারা’র জোর করাতেই আয়ান,রাহান,রিধি,সারা,মাইশা,কবির,তিন্নি, সাদনান, প্রিয়তা ওদের শপিংমলে এসছে। শুধু এখন ওদের কেনাকাটা বাকি।

সাদনান নিজের সিকিউরিটি আনে নি।নিজেও একদম নরমাল পোশাক পড়ে এসছে। সাদা শার্ট কালো প্যান্ট সাথে কালো মাস্ক এতেই দেখতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। সাথে বোঝার উপায় নেই এটাই পাঞ্জাবি পরিহিত এমপি সাদনান।

শপিং শেষ ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে যার যার গন্তব্য রওনা দিলো।
রাহান রিধি কে কবির আর তিন্নির সাথে পাঠিয়ে দিলো আয়ান সারা,মাইশা,প্রিয়তা কে বাড়ি পৌঁছে দিলো আর রাহান সাদনান নিজেরা আবারও কোথাও মিটিং -এ গিয়েছে।
সাদনান গাড়িতেই বসে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো।রাহান পাশেই বসে আছে।

-“তুই জানতি না?”
হঠাৎই রাহান প্রশ্ন টা করে।সাদনান ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই জিজ্ঞেস করে
-“কি?”
-“আমার পছন্দ করা মেয়ে টা যে তোর বোন?”
-“তোর কি মনে হয়?”
রাহানের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাদনান নিজেও প্রশ্ন করে।
রাহান একটু নড়েচড়ে বসে বলল

-“তবে সে দিন আমার কথা তুই বললি না কেন?”
-“ভালোবাসে কে?”
রাহানের কথা শুনে সাদনান প্রশ্ন করে।
রাহান কথার ভাঁজে আনমনেই জবাব দেয়

-“আমি।”
-“তাহলে আমি কেন বলবো?”
-“বন্ধু হই না।
একটু পক্ষ তো নিতেই পারতি।
তাছাড়া তুই চাইলে আগেই এটা আমাকে জানাতে পারতি।
তা না করে আমাকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে আগুনের দিকে ঠেলে দিলি।”

-“ভালোবাসিস তুই সেটা আমায় কখনো বলেছিস?”
-“তুই জানতি।”
-“তুই তো বলিস নি।”
-“তুই আমার সব বুঝতে পারিস।
তাছাড়া আমি ভয় পেতাম সেটাও জানতি।”
সাদনান আর কিছু বলে না।
খানিক্ষন চুপ থাকে।
নিরবতা কাটিয়ে সাদনান বলে
-“ভালোবাসলে হয় না ভালোবেসে, ভালোবাসার জিনিস গুলো আগলে নিতে হয়।”

-“তোমার বোন কে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো ছোট বউ।”
প্রিয়তা সবে মাত্র খাবার টা মুখে তুলবে ঠিক তক্ষুনি পাশ হতে আম্বিয়া মির্জা কথা টা বলে উঠে।
প্রিয়তা আশেপাশে তাকালো। একটু পর হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হবে।

এখন সাড়ে ছয় টার মতো বাজে।প্রিয়তা এতোক্ষণ শাশুড়ীর সাথে হাতে হাতে কাজ করছিল।আজ সারা দিন শুধু বারো টার দিকে একবার খাবার খেয়ে ছিল তার পর আর সময় পায় নি সাদনান বাসায় নেই সাথে এতো কাজ।বাড়ির কে কখন খাবার খাচ্ছে তার ঠিক নেই বাড়িতে মেহমান, পাড়াপ্রতিবেশি দিয়ে ভর্তি।
সবাই এখন উপর অনুষ্ঠানের ওখানে আর প্রিয়তা খাবার খেয়ে রেডি হয়ে উপর যাবে।
কিন্তু মনে হয়ে না আজ আর খেতে পারবে।এমনিতেই দাদি রেগে আছে আর আজ এতো বড় সুযোগ পেয়েছে ছাড়বে না-কি?

প্রিয়তা এসব ভেবেই কান্না পেলো।
তবে মুখে বলল
-“দাদি আপনার কিছু লাগবে? আপনি বলেন আমি দিচ্ছি।”
-“থাক, থাক।
আমাকে ভুলাতে এসো না।বউ তুমি সেটা ভুলে যেয়েও না যেনো আবার।
বাড়িতে বাহিরের অনেক মানুষ জন আছে।
শাশুড়ীর সাথে সাথে থেকো।”

কথা গুলো বলেই তিনি চলে গেলো।
প্রিয়তার খারাপ লাগলো।সত্যি কি সে বেশি আজেবাজে চলে ফেরা করে?
হয়তো। তা নাহলে দাদি তাকে এভাবে বলতো না।সত্যি তো বউ হয়ে রোজ স্কুল যেতো এখন কলেজ যায়। আর এটা একজন বউয়ের জন্য মোটেও শোভনীয় নয়। বউ তো বউই বউ কেন আবার বাড়ির বাহিরে এমন রংঢং করে ঘুরে বেড়াবে?

কিন্তু সে তো একা যায় না সাথে সারা যায় আর সাদনান নিজেও থাকে।
সাদনান নিজের পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে।
আর ডাইনিং টেবিলে চোখ যেতেই দেখলো প্রিয়তা খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে নিলো আর ঘটনা বুঝতে পেরে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
এগিয়ে এসে শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে

-“এতো লেট করে খাবার?”
-“খেয়েছি।
আবার খাচ্ছি।”
প্রিয়তা হঠাৎ সাদনান কে দেখে চমকে উঠে। তাড়াহুড়ো সহিতে মুখে খাবার নিতে নিতে জানালো।
সাদনান এবার প্রিয়তার দিকে ঝুঁকে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-“মিথ্যা আমার একদম পছন্দ নয়।

তবে কেন বলো?”
প্রিয়তা এবার চুপ করে থাকে।
সাদনান সোজা হয়।রুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে
বলল
-“খাবার রুমে নিয়ে এসো।
আর হ্যাঁ,এই প্লেটে করেই।”
সাদনান কথা টা বলেই চলে গেলো প্রিয়তাও সাদনান এর কথা মতো কাজ করে।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষে সাদনান এর কাছে সারা কিছু বললো।প্রিয়তা সে সব শুনে না রুমে চলে আসে।শরীর এই শাড়ী নিয়ে আর থাকা যাচ্ছে না তাই এসব চেঞ্জ করে হাল্কা কিছু পড়বে বলে রুমে চলে গেলো।
এদিকে মাইশা বসে আছে ফোনের সামনে। ফোনের স্কিনে আয়ানের হলুদ মাঝা মুখ জ্বলজ্বল করছে।
মাইশার নিজেরও একই অবস্থা ফ্রেশ হওয়া দরকার কিন্তু আয়ান যেতে দিচ্ছে না।

ছেলের বাড়ি থেকে কেউ আসে নি।মূলত আসার মতো কেউ নেই তাই আর এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় নি।
আয়ান আসবে বলে ছিল।কিন্তু লুকিয়ে এতো সিকিউরিটি টপকে আসতে মাইশা না করেছে।আর সেই শাস্তিস্বরূপ আয়ান ওকে গত একঘন্টা সময় ধরে ফোনের সামনে বসিয়ে রেখেছে।
বেশ অনেক টা সময় পর আয়ান হুট করেই বলল

আমার তুমি পর্ব ৩৪

-“তোমার ভাই কি করতে এতো সিকিউরিটি রেখেছে?”
-“কি সব বোকা বোকা প্রশ্ন করছেন,আয়ান?
এসব ভাই ইচ্ছে করে রাখে নি বরং ওনার স্থান টাই এমন যে না চাইলেও এগুলো ওনার সাথেই থাকবে।”

আমার তুমি পর্ব ৩৬