আমার তুমি পর্ব ৩২

আমার তুমি পর্ব ৩২
জান্নাত সুলতানা

বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আর তিন্নি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দুই হাত বাইরে দিয়ে সেই বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে।
আজ সারা দিন আকাশ মেঘ জমে ছিল আর সন্ধ্যা হতে না হতে সেই মেঘ বৃষ্টি হয়ে এসছে।

কবির রুমে বসে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কিছু করছে। তিন্নি জানে না কি করছে এতো মনোযোগ দিয়ে কি এমন রাজকার্য করছে।এতো সুন্দর ওয়েদার কোথায় বউয়ের সাথে রোমান্স করবে তা না করে কাজ নিয়ে পড়ে আছে।তিন্নি বিরক্ত হলো।আর ভাববে না কবির এর কথা। তিন্নি অনেক টা সময় হয় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর খুব করে ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু এটা সম্ভব হবে না কবির কখনো দিবে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিন্নি হঠাৎ কোমড়ে একটা শক্ত হাতের স্পর্শ পেলো।তিন্নির সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো না স্পর্শ টা চিনতে। এই স্পর্শ টা এই চার মাসে খুব ভালো করে অনুভব করতে পেরেছে। তবে তিন্নির কাছাকাছি কবির যতবার আসে ঠিক ততবার তিন্নি কেঁপে কেঁপে উঠে।এবারও তার উল্টো হয় না।তিন্নি সারা শরীর অবস হয়ে আসার জোগাড়
তবে মুখে কিছু বলতে পারে না চুপ চাপ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।
কবির বাম হাত টা তিন্নির কোমড়ে রেখে ডান হাত টা দিয়ে তিন্নির বাহিরে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে থাকা ডান হাত টা মুঠোয় পুরো নিলো

হাত টা সেভাবে রেখেই ভেতরে আনে।অতঃপর তিন্নির কোমড়ে রাখে।ঠান্ডা বৃষ্টির পানি তার উপর হাল্কা শীত তিন্নি বরাবর এর মতো এবারও কেঁপে উঠল। তবে নিজে কে ধাতস্থ করে মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো
-“আপনার কাজ শেষ?”
-“হুম।”
কবির মাথা নেড়ে জবাবে বলে।
তিন্নি নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
-“চলুন তবে খাবার খেয়ে নিবেন।”

কবির তিন্নির ঘাড়ে হাল্কা করে কামড়ে ধরে। তিন্নি ব্যাথাতুর শব্দ করে উঠে।
কবির মুচকি হেঁসে ছেড়ে দিয়ে তিন্নি কে নিজের দিকে ফিরে তিন্নির কপালের উপর পড়া থাকা ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল
-“এটুকুতে এই হাল?

কিন্তু আজ এক ফোঁটাও ছাড়াছাড়ি নেই মিসেস কবির খাঁন।”
তিন্নি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
কথা টার মানে বুঝতে পারে নি।
তাই তিন্নি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

-“মানে?”
-“মানে টা একটু পর বুঝিয়ে দেবো।”
কবির রুমে চলে আসে। তিন্নি নিজেও পেছন পেছন আসে।
তিন্নি তখনো কথা টা বুঝতে পারে নি। তাই কবিরের সামনে এসে দুই হাত কোমড়ে রেখে বলল
-“আপনার কি হয়েছিল বলুন তো?”
-“বাবা কোথায়?”
-“হয়তো রুমে।
আপনি বসেন আমি ডেকে নিয়ে আসছি।”

তিন্নি বুঝতে পারছে কবির বিষয় টা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করে না।
রাতে খাবার শেষ সব কিছু গুছিয়ে কাজের লোক কে বুঝিয়ে দিয়ে তিন্নি রুমে এসেই দেখলো পুরো রুম অন্ধকার সাথে গোলাপ ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে রুম জুড়ে।
তিন্নি ডান পাশে দেওয়ালে সুইচ টিপে লাইট অন করতেই

দেখে কবির এর হাতে একটা গোলাপ ফুল আর সেই ফুল থেকে পাপড়ি গুলো ছাড়িয়ে বিছানায় ফেলছে পাশেই সেন্টার টেবিলে আরও তিন চার টার মতো পরে আছে। সাদা চাদর এর উপর গোলাপের পাপড়ি গুলো কি সুন্দর লাগছে।
কিন্তু তিন্নির হঠাৎ মনে হলো কবির ফুল কোথা থেকে আনলো? বাহিরে তো বৃষ্টি? তবে কি,,,,

-“ফুল গুলো ছিঁড়ে নিলেন?”
-“হুম।”
তিন্নির প্রশ্নে খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয় কবির।
সব গুলো ফুল ততক্ষণে কবির বিছানায় ছড়িয়ে ফেলেছে।
-“আপনার প্রিয় ছিল?
তাছাড়া ফুল গুলো তো কখন ছুঁতেও দেন নি?”
তিন্নি আবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
কবির তিন্নির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা টা বন্ধ করে ফিরে এসে ঝুঁকে এক ঝটকায় তিন্নি কে কোলে তুলে নেয়।
তিন্নি হকচকিয়ে উঠে চমকে কবিরের গলা জড়িয়ে ধরে।

-“ফুল ছাড়া বাসর কি করে হবে?
তাই প্রিয় জিনিস দিয়ে আজ আমার প্রিয় মানুষ টাকে আপন করে নিতে চাই!”
কথা গুলো বলতে বলতে কবির তিন্নি কে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের সম্পূর্ণ ভর ছাড়ে তিন্নির শরীর এর উপর।
গলায় মুখ গুঁজে অধর ছুঁয়ে দেয় সেখানে।

তিন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর সারা শরীর কাঁপছে থরথর করে। কবিরের হুটহাট জড়িয়ে ধরা চুমু খাওয়া এ-সব করে কিন্তু এতোটা গভীর স্পর্শ কবির কখনো করে নি।তিন্নি গলা শুকিয়ে আসছে। এতো দিন তো এটাই চাইতো তবে আজ কেন সম্মতির জবাব দিতে পারছে না।
তিন্নি কাঁপতে থাকা ডান হাত টা কোনো রকম কবির এর পিঠের ওপর রেখে ধরে আসা গলায় প্রশ্ন করে

-“ভালোবাসেন?”
-“প্রমাণ দিয়ে দেই?”
কবির উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে।
তিন্নির ঠোঁটের কোণায় হাসি দেখা দিলো।কি অদ্ভুত এই কবির খাঁন। ভালোবাসে অথচ মুখে কখনো শিকার করে না সব সময় এড়িয়ে চলে এই বিষয় টা।না শুধু এটা না কবির খাঁন মানুষ টা সব কিছুতেই এমন বেশি বাড়াবাড়ি একদম পছন্দ করে না।

তিন্নি দ্বিতীয় বারের মতো আবার বাম হাত টা কবিরের পিঠে রাখে।
দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জানায়
-“ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি।”
কবির আর সেকেন্ড দেরী করে না শক্ত করে নিজের অধরের ভাঁজে বউয়ের অধর চেপে ধরে।
সাথে নিজের হাতের এলোমেলো স্পর্শ তো আছেই।তিন্নি যেনো দিশেহারা হলো।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্বামী কে।
আর কবির ব্যস্ত বউ কে ভালোবাসতে।সেই ভালোবাসার সাক্ষী সরূপ থাকলো আজ বৃষ্টির রাতে আকাশ থেকে জমিনে লুটিয়ে পড়তে থাকা বৃষ্টির পানি গুলো।

রিধি সুন্দর করে একটা খয়েরী রঙের শাড়ী পড়ে রেডি হচ্ছে।
পাশেই সারা,মাইশা বসে আছে।আয়না আর আম্বিয়া মির্জা আসে নি। আয়না কনসিভ করেছে। তাই আম্বিয়া মির্জা নড়চড়া করতে দেয় নি।তাই আয়না আর আম্বিয়া মির্জা ছাড়া মির্জা বাড়ির সবাই আজ রাহানদের বাড়ি এসছে। তার কারণ রিধি কে আজ দেখতে আসবে।ছেলে কি করে রিধি জানে না। ছেলের সম্পর্কে কিছু জানে না রিধি। জানে বললে ভুল হবে সবাই জানাতে চেয়েছে কিন্তু রিধি শুনে নি।

ওর ভীষণ অভিমান হচ্ছে। কিন্তু কার উপর? যে আজ দুই মাসে একবারও রিধির খুঁজ নেয়নি তার উপর?
রিধি খুব করে চাইছে ওয়াজিদ যেনো আজ একটা বার ফোন করে। কিন্তু না রিধির ভাবনা চাওয়া সব ভুল ওয়াজিদ একবারও ফোন বা খুঁজ নেয়নি।

রিধির সাজানো শেষ প্রিয়তা গিয়ে তাগাদা দেয়।ছেলের বাড়ির সবাই এসেছে অনেক্ক্ষণ হয়।খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে এখন তারা মেয়ে দেখার জন্য তাঁরা দিচ্ছে।
প্রিয়তা রিধি কে নিচে নিয়ে যেতে বলে তড়িঘড়ি করে ছুটে গেস্ট রুমের উদ্দেশ্য।
সাদনান এসছে মিনিট পাঁচ এর মতো সময় হবে।তাকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য প্রিয়তা গেস্ট রুমে দিয়ে এখানে চলে এসছে।

বউ পাগল সাদনান না জানি ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে বউ কে রুমে না পেলে কি করে বসে তার ঠিক নেই।
তাই তো প্রিয়তা তাড়াতাড়ি করে রুমে আসতে নিয়ে ধাক্কা খেলে শক্ত একটা কিছুর সাথে।
বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো সামনের বস্তু টা কি।
-“আসছিলাম আমি।
প্রয়োজন ছিল না আসার।”

সাদনান কিছু না বলে টেনে নিয়ে রুমে ঢুকে পরে।
প্রিয়তা কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজের মাথা প্রিয়তার কোলে তুলে দিয়ে পেটে মুখ গুঁজে হুকুমের স্বরে বলে উঠে
-“আধঘন্টা ঘুমুতে হবে।
চুপ চাপ বসে থাকবে।ঘুম থেকে উঠে যেনো পাশে পাই।”
-“কি বলছেন আপনি?

আমার তুমি পর্ব ৩১

বিয়ের কথা হবে একটু পর!”
প্রিয়তা সাদনানের কথা শুনে অবাক হয়ে জানায়।সাদনান সেসব পাত্তা না দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল
-“এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
আমি গেলেই কথা হবে।আর এখন দেখাদেখির পালা।
সো চুপ চাপ বসে থাকো।”

আমার তুমি পর্ব ৩৩