আমার তুমি পর্ব ৩১

আমার তুমি পর্ব ৩১
জান্নাত সুলতানা

মাইশার আজ শেষ পরীক্ষা।তিন্নি আর ও দু’জনে পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে দু’দিকে চলে গেলো তিন্নি কবির এর গাড়ির দিকে মাইশা আয়ানের বাইকের দিকে এগিয়ে এলো।
আয়ান বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে স্ক্রল করছিল।
মাইশা কে দেখে ফোন পকেটে নিয়ে নিজে বাইকে বসতে বসতে তাগাদা দিয়ে বলল

-“তাড়াতাড়ি উঠে বসো।
আমার একটা জরুরি কাজ আছে।”
মাইশার একটু অভিমান হলো।তার কারণ আজ পরীক্ষা শেষ কই ভেবেছে আয়ান তাকে নিয়ে আজ ঘুরাঘুরি করবে। এখন তো সবাই জানে সব টেনশন করবে না
ওরা এক সাথে থাকলে কেউ কিছু বলবেও না। তবে মুখে কিছু বলে না চুপ চাপ ওঠে বসে বাইকে আয়ান বাইক স্টার্ট দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ওয়াসিফ দেওয়ান বসে আছে মির্জা বাড়ির লিভিং রুমের সোফায়। সামনে হরেক রকমের নাস্তা। পাশেই বসে আছে জাফর মির্জা তার উল্টো দিকের সোফায় আজ্জম মির্জা, মফিজুর মির্জা, রাহাত দাদির পাশে।
সারা আর প্রিয়তার রেজাল্ট দিয়েছে আজ তিন দিন হলো।
দু’জনেই ভালো রেজাল্ট করেছে।

ওয়াসিফ দেওয়ান এর এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য হলো আজ এনগেজমেন্ট এর তারিখ ঠিক করে যাবে।প্রিয়তা সাদনান কে ফোনে এসব বলা মাত্রই সাদনান রাহান কে নিয়ে বাড়ির পথে গাড়ি ঘোরাতে বলে ড্রাইভার কে।
ওরা যাচ্ছিল রিধি কে রিসিভ করতে। রিধি আজ বাংলাদেশ আসছে।
রাহান ওর বাবা কে ফোন দিয়ে রিধি কে রিসিভ করতে বলে দেয়।
রাহান আর সাদনান বাড়িতে প্রবেশ করতেই ওয়াসিফ দেওয়ান লম্বা চওড়া হেঁসে সাদনান কে জড়িয়ে ধরে। রাহানের মাথায় কিছু ঢুকছে না।

বাড়ির মহিলারাও আছে এখানে।
আম্বিয়া মির্জার পেছনে মাইশা চুপটি করে দাঁড়িয়ে। সারা আর প্রিয়তা রুমে।
-“তা আমি চাইছিলাম এনগেজমেন্ট টা সেরে ফেলতে।
এমপি মহোদয় কি বলেন?”
-“আপনার ছেলে?”
সাদনান ওয়াসিফ দেওয়ান কে জিজ্ঞেস করলো। ওয়াসিফ দেওয়ান মুচকি হেসে বলল
-“আমার কথা শেষ কথা।”
-“আমি এটা বলি নি।

যদি আপনার ছেলের কোনো পছন্দ থাকে?”
ওয়াসিফ দেওয়ান কিছু টা থমথমে হলেন।
আশে পাশে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল
-“থাকলে বলতো।”
-“আপনি কি কখনো জিজ্ঞেস করেছেন? ”
ওয়াসিফ দেওয়ান সাদনান এর প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগেই ওয়াজিদ সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
জাফর মির্জা সহ আজ্জম মির্জা ওয়াজিদ কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
ওয়াজিদ সবাই কে শান্ত হতে বলে। অতঃপর বাবার পাশে গিয়ে বসে বলল

-“একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলে না?”
-“তোমার পছন্দ আছে?”
-“না।
তবে তুমি কি জানো তুমি তোমার অজান্তেই ভুল করতে যাচ্ছিলে?”
-“মানে?”
-“তুমি কি এখনো চুপ থাকে থাকবে রাহান?”

ওয়াসিফ দেওয়ান এর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওয়াজিদ রাহান কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে।
রাহান হকচকিয়ে উঠে। সবার দৃষ্টি তখন রাহানের উপর কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।
এ-র মধ্যে জাফর মির্জা আশ্চর্য হলেন।তিনি কিছু টা আন্দাম করতে পারছেন।
কিন্তু এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না। একবার সাদনান এর দিকে তাকালো সাদনান কিছু ইশারা করলে তিনি চুপ থাকেন।নাতির উপর ওনার বিশ্বাস আছে।

আর এটাও শিওর নাতি তার আগে থেকে সব জানতো।
আজ্জম মির্জা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
-“রাহান কি বলবে?
আমরা তো তোমার সম্পর্কে জানতে চাইছি।”
ওয়াজিদ উত্তর দেয় না।

শুধু একবার আঁড়চোখে সাদনান এর দিকে তাকালো। রাহানও তাকিয়ে অসহায় চোখে সাদনান এর দিকে। তার যে আজ অগ্নি পরীক্ষা দিতে হবে এখানে এসে তাহলে সে কিছুতেই এখানে আসতো না।
তবে কতদিন আর পালিয়ে বেড়াবে একদিকে না একদিন এটা সবার সামনে আসতো তাই মনের শক্তি আর ভালোবাসার জোরে গম্ভীর কণ্ঠে জানালো

-“আমি সারা কে ভালোবাসি।
সারা নিজেও আমাকে ভালোবাসে।বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করে নিন।”
আহ কি সুন্দর নিরদ্বিধায় বলে দিলো কথা টা।সাদনান এর মনে ধরলো কথা টা। সে তো বোধহয় এতো টা সাহস করে শফিক সওদাগরের নিকট বলতে পারে নি।
আচ্ছা সে কি করে চেয়ে ছিল তার ভালোবাসা?

এই তো এখনো মনে পড়ে কি ধমক টায় না আয়ান কে দিয়ে ছিল আর শফিক সওদাগরের কে হুমকি। তবে যা-ই হোক ক’জন পারে এভাবে মেয়ের বাবা কে হুমকি দিয়ে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিতে?
সাদনান এর মনে পড়ে গেলো সে দিনের কথা হোটেলের ভেতর ঢুকেই সোজা শফিক সওদাগরের রুমে চলে গিয়ে ছিল।

অতঃপর ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। বলে ছিল আপনার মেয়ে কে বিয়ে করতে চাই আমি।শফিক সওদাগর আমতা আমতা করে বলে ছিল মেয়ে তো এখনো ছোট।
ব্যস সাদনান এতেই ক্ষেপে গিয়ে ছিল।ততক্ষণে আয়ানও এসে উপস্থিত হয়ে ছিল।
বন্ধুর এমন কথা শুনে বলে ছিল দেখ এটা কি করে হয় ওতো ছোট। সাদনান সে দিন আয়ান কে এক ধমক দিয়ে বলে ছিল তোকে কিছু জিজ্ঞেস করি নি।আয়ান দ্বিতীয় বার আর কিছু বলার সাহস পায় নি।

সাদনান এর এই রূপ ততক্ষণে শফিক সওদাগর বুঝতে পেরেছে আর কিছু বলে লাভ হবে না।
তাইতো বিনাবাক্য রাজি হয়ে হয়ে গেলেন এটা নিয়ে তিনি অবশ্য আজ্জম মির্জা সাথে কথা বলে ছিল। সবাই রাজি ছিল সাথে পুরনো সম্পর্ক আবার বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তাই বেশি ঘাটে নি।
আর সাদনান সে বা কোন দিক দিয়ে কম।
এমন ছেলে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।

-“সারা?”
জাফর মির্জা জোরে ডেকে উঠে সারা কে।
সারা প্রিয়তার হাত চেপে ধরে।
ভয়ে মেয়ে টা একদম চুপসে গিয়েছে। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে।
প্রিয়তা সারা কে আশ্বাস দিয়ে বলল
-“যা কিচ্ছু হবে না।
আর তুই না রাহান ভাই কে এতো ভালোবাসি?

তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন?
যদি রাহান ভাই সবার সামনে বলতে পারে তবে তুই কেন না?
তাছাড়া তোর ভাইয়া তো আছে।”
সারা কিছু টা সাহস পেলো যেনো।
গেস্ট রুম হতে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো লিভিং রুমে।

প্রয়িতাও পেছন পেছন বেড়িয়ে এসে সুফিয়া বেগম এর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ে।
সবাই চুপচাপ নিরবতা পালন করছে।
মূলত সামনে কি হতে পারে তা সেটা ভাবছে।
সারা গিয়ে জাফর মির্জা আর সাদনান এর পেছনে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে ডাকে
-“দাদু।”

সাদনান টেবিলের উপর রাখা নাস্তার ট্টে হতে একটা কাবাব তুলে সেটা মুখে পুরো নিনো।
জাফর মির্জা সে দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে সারা কে নিজের সামনে আসতে বলে।সারা কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনে এসে দাঁড়াল।
জাফর মির্জা গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
-“রাহান যা বলছে সব সত্যি?”

সারা জাফর মির্জা প্রশ্নে চট করে একবার রাহান এর দিকে তাকিয়ে আবার বাবা বড় ভাই,এক এক করে সবার দিকে তাকিয়ে শেষ সাদনান এর দিকে তাকালো।
সাদনান বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছু ইশারা করতেই সারা বলে উঠলো

-“হ্যাঁ।”
-“যাও।”
জাফর মির্জা সহজ সরল কণ্ঠে আদেশ দেন।
সারা আবারও চার দিকে দৃষ্টি বুলালো।
অতঃপর এগিয়ে গিয়ে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে পড়ে।আজ্জম মির্জা বাবার উপর দিয়ে কোনো কথা বলবে না এটা সাদনান খুব ভালো করে জানা আছে।
সাদনান দাদার দিকে তাকিয়ে নরম কণ্ঠে বলল
-“তুমি যা বলবে তাই হবে।

আর আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না অন্য কারোর ভালোবাসা কেঁড়ে নিতে? ”
সাদনান ওয়াজিদ কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন টা করে।
ওয়াজিদ মুচকি হাসলো।সাদনান যে ভীষণ চালাক সাথে প্রচন্ড ভালো সেটা তার এই তিন মাসের ব্যবহার দেখে বুঝে গিয়েছে।

অবশ্য না বোঝার কোনো উপায় আছে?
সাদনান এর জন্যই তো তার চোখ সত্যি মিথ্যা চিনতে পারলো।
যদি সাদনান এর সাথে সে দিন কথা না হতো? তবে সে এতো টা খুঁজ নিতো বুঝি?
সাদনান বলেছে বলেই তো সে খুঁজ নিয়ে সত্যি টা জানতে পারলো।
এখন নিজের প্রেয়সী কে সে নিজের করে নিবে।

আমার তুমি পর্ব ৩০

ওয়াজিদ এর ভাবনার মাঝেই জাফর মির্জা রাহান কে বলল
-“কাল বাবা মা নিয়ে আসবে।
বাকি কথা আমি ওনাদের সাথে বলতে চাই।”

আমার তুমি পর্ব ৩২