বুকে যে শ্রাবণ তার সিজন ২ শেষ পর্ব 

বুকে যে শ্রাবণ তার সিজন ২ শেষ পর্ব 
নিশাত জাহান নিশি

হেই লিসেন? আজই তোকে আমি বিয়ে করব। মসজিদে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করব। সবাইকে বাতাসা খাইয়ে শুভ কাজ সেরে ফেলব! তোর ড্রিম ওয়েডিংয়ের বারোটা বাজিয়ে দিব।”
একরত্তি আপত্তিবোধ করলনা সামান্তা। বরঞ্চ সেও মিশালের জেদের সাথে সমানভাবে তাল মিলালো। একরোঁখা গলায় বলল,

“এখনি বিয়ে করবে তুমি আমায়! এই মুহূর্তে! প্রমাণ করে দাও তুমি এক কথার মানুষ। তোমার কথাই শেষ কথা।”
তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় মিশাল বলল,
“প্রমাণ চাইছিস তুই হ্যাঁ? প্রমাণ চাইছিস? তুই আমাকে রাগিয়ে ভুল করলি সামান্তা! একবার ঘরোয়াভাবে বিয়েটা হয়ে গেলে কিন্তু আমি দ্বিতীয়বার বিয়ের কোনো অনুষ্ঠান করবনা! যা হবে একবারই হবে। সো ভেবেচিন্তে কথা বল। দ্বিতীয় বার কোনো সুযোগ দেওয়া হবেনা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমিতো বলিনি তুমি দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠান করে আমাকে আবার জাঁকজমকভাবে বিয়ে করো! তুমি আজই আমাকে বিয়ে করবে এবং তুমি ইতালি যাওয়ার আগেই যেন আমার বেবি কন্সিভ হয় সেটাও করবে! ব্যস, এটাই আমার শেষ কথা। এখানে এক্সট্রা আর কোনো কথা হবেনা। বিয়ে আজই হবে। তুমি কিভাবে কি ম্যানেজ করবে সেটা তুমি জানো।”

সামান্তা তার শেষ কথা জানিয়ে দিয়ে ধেই ধেই করে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মিশাল পড়ে গেল মহা বিপাকে। মনে তো হচ্ছেনা সামান্তার জেদের কাছে তার কোনো কথা টিকবে বলে। মিশাল তাদের ওয়েডিং প্ল্যান অন্যভাবে ভেবে রেখেছিল। মহা ধুমধামভাবে ভেবে রেখেছিল। যা কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা। তবে সামান্তা তার প্ল্যানে এভাবে পানি ঢেলে দিবে কে জানত? রাগে মাথা চুলকালো মিশাল। মুখ ভার হয়ে এলো তার। কপাল কুঁচকে সামান্তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,

“হুকুম দিয়ে ধেই ধেই করে হেঁটে চলে গেলেন মহারানী। এখন কিভাবে কি ম্যানেজ করি আমি।আগে তো দুই পরিবারের সবার সাথে কথা বলতে হবে। তাদের রাজি করানো যায় কিনা কে জানে। বিয়ে তো আর মুখের কথা নয়, যে বললেই হয়ে গেল। ধ্যাত, ভাল্লাগেনা।”

মিশাল তার কাজে লেগে পরল। দুই পরিবারের সবাইকে একত্র করার সিদ্ধান্ত নিলো। অন্যদিকে সামান্তা গাঁয়ে হাওয়া লাগিয়ে চলছে! মিশালকে নাকানিচুবানি খাইয়েই তবে সে শান্তি পাবে। মিশালকে জ্বালানোর মধ্যে এক পৈশাচিক আনন্দ নিহিত রয়েছে। যা কেবল সামান্তাই উপলব্ধি করতে পারে!

মিশাল তার কথা রাখল। বাতাসা বিলিয়ে মসজিদেই বিয়ে করল সামান্তাকে! যেখানে দুই পরিবারের সবাই এবং এলাকাবাসীরাও উপস্থিত ছিল। এমন বিয়ে তাদের এলাকায় প্রথম হয়েছে। তাই সবাই বেশ অবাক হলো এই বিয়েতে! তেমনি প্রশংসায়ও ভাসিয়ে দিলো মিশাল ও সামান্তাকে। কম খরচে নবীজির সুন্নত মেনে বিয়ে করেছে তারা। যা আজকাল খুব কমই দেখা যায়।

ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় বিয়ে সম্পন্ন হলো মিশাল ও সামান্তার। মিশালের ভাঙাচোরা বাড়িতেই সামান্তাকে ওঠানো হলো। রাত দশটায় তাদের ফুল সজ্জার ঘর সাজানো হলো। লাল পাড়ের একটি বেনারসি শাড়ি ও সাথে হালকা সাজে সামান্তাকে ফুলসজ্জার খাটে বসিয়ে রাখা হলো। চারিদিক থেকে জেনিয়া, সাইফা, সায়মা ও রুমকি মিলে সামান্তার সাথে হাসি তামাশা করছিল। বিভিন্নভাবে সামান্তাকে ক্ষেপাচ্ছিল। তাদের কান্ডে সামান্তা রেগে গেলেও পরক্ষণে লজ্জায় আবার মিটিমিটি হাসছিল।

বাড়ির ছাদে দাড়িয়ে আপন মনে সিগারেট ফুঁকছে সাহিল। পাশে মিশাল নিঃশব্দে দাড়িয়ে। অন্ধকারে ঢাকা রাতের আকাশে এক ফালি চাঁদ দেখার প্রয়াসে সে পলকহীন দৃষ্টিতে আকাশের পানে তাকিয়ে। মিশালের নীরবতা টের পেয়ে পাশ থেকে সাহিল বেপরোয়া গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কি রে? কি হয়েছে তোর? মুড অফ নাকি?”
“উঁহু। আজকের এই বিশেষ দিনে মুড অফ রাখা যায়?”
“তাহলে এত চুপচাপ কেন? কোনোকিছু নিয়ে টেনশন করছিস?”
“ফ্লাইটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই যেন বুকের ভেতরে অদ্ভুত এক হাহাকার বইছে। পাগলীটাকে ছেড়ে যাব কিভাবে? এবার তো সে আরও ভালোভাবে আটকে দিলো আমায়। এই বাঁধন ছেড়ে যেতে বুক কাঁপবে আমার।”
মিশালকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করল সাহিল। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,

“আরে এত টেনশন করিসনা তো। নে সিগারেট খা। একটান দে সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে।”
প্রত্যাখ্যান করল মিশাল। নাক সিঁটকে বলল,
“উঁহু। আজ আর খাবনা। এই দিনে অন্তত নিজেকে দূষিত করতে চাইনা।”
“গুড। তাহলে আমি একাই খাই। তুই যা, সামান্তা হয়ত তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিশাল। ম্লান হেসে বলল,

“যাচ্ছি। আকাশে চাঁদ খুঁজে আর লাভ নেই। চাঁদ আমার জন্য আমার ঘরেই অপেক্ষা করছে!”
দুঃখী দুঃখী মুখ নিয়ে সাহিল বলল,
“এখন যাকে চাঁদ ভাবছ, কিছুদিন পরে সে চাঁদই তোমাকে আকাশের তাঁরা গোনাবে! যেমন আমাকে প্রতি মুহূর্তে গোনায়!”

হাসতে হাসতে মিশাল ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। যেতে যেতে বলল,
“চাঁদকে পাশে রেখে আমি আকাশের তাঁরা গুনতেও রাজি। আফসোস, তুমি এতদিনেও তাঁরা গোনায় অভ্যস্ত হতে পারলেনা!”

ফুলসজ্জার ঘরে প্রবেশের জন্য মিশালকে মোটা অঙের টাকা পকেট থেকে খসাতে হয়েছে! নাছোড়বান্দা জেনিয়া, সাইফা, সায়মা ও রুমকি মিলে ফুলসজ্জার ঘরকে অবরোধ করে রেখেছিল প্রায়। টাকা ছাড়া তাদেরকে দূর করা যাচ্ছিলনা। তাই বাধ্য হয়েই মিশালকে টাকা খসাতে হয়েছে।

অবশেষে ফুলসজ্জার ঘরে ঢোকা হলো মিশালের। বজ্জাতগুলোর হাত থেকে মুক্তি পেল সে। দরজার খিল আটকে মিশাল স্বস্তির শ্বাস ফেলল। চোখ ঘুরিয়ে ফুলসজ্জার খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল বিশাল ঘোমটা টেনে সামান্তা আপাদমস্তক ঢেকে বসে রয়েছে। সামান্তার এই রূপ হজম হলোনা মিশালের! কপাল কুঁচকে এলো তার। ভূত দেখার মত চমকে সে ধীর পায়ে হেঁটে এলো সামান্তার দিকে। ধপ করে সামান্তার পাশে বসল। শুকনো ঢোঁক গিলে হাত বাড়ালো সামান্তার ঘোমটার দিকে। ঘোমটা তুলতেই দেখল সামান্তার লজ্জা মাখা চাঁদ মুখখানি! মুগ্ধ হলো মিশাল। তবুও যেন বিব্রত সে। গলা ঝাঁকিয়ে বলল,

“এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। তুই প্লিজ নরমাল হ। এই রূপে তোকে মানায়না! তোকে ডাইনি, দজ্জাল, রাগী রূপেই মানায়।”
অমনি মেজাজ তুঙ্গে ওঠে গেল সামান্তার। নাজুক ভঙ্গি পাল্টে সে তুখোড় রাগী দৃষ্টি ফেলল মিশালের দিকে। মিশালের শার্টের কলার চেপে ধরে চোয়াল উঁচিয়ে বলল,
“কি বললে তুমি? আমি ডাইনি, দজ্জাল? কবে, কখন, কোথায় আমি তোমার ঘাঁড় মটকেছি হ্যাঁ? কবে তোমার রক্ত চুষে খেয়েছি?”

“খাসনি। তবে এবার থেকে তো খাবি! আমিও কিন্তু ছাড় দিবনা! যা হবে ইকুয়েল ইকুয়েল হবে। বাই দ্যা ওয়ে, তোকে কিন্তু আজ ডায়ানের মতই ফুটফুটে সুন্দর লাগছে!”
সামান্তাকে রাগানোর জন্য কোনো সুযোগই ছাড়লনা মিশাল! ঠোঁটের কোণে ব্যগ্র হাসি ঝুলিয়ে সে চোখ মেরে দিলো সামান্তাকে। রেগেমেগে আগুন হয়ে সামান্তা সজোরে এক কামড় বসিয়ে দিলো মিশালের ঘাঁড়ে! রক্ত বের হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হলো ঐ জায়গাটি থেকে। দাঁতে দাঁত চেপে মিশাল ব্যথা সহ্য করল। পৈশাচিক হাসল সামান্তা। দাঁত কপাটি বের করে বলল,

“ডায়ান বলছিলা না? এবার ডায়ানের মতই আমি তোমাকে ট্রিট করব! সারাক্ষণ কামড়ের ওপর রাখব। রক্ত চুষে ফেলে দিব। ভালো হবেনা বলো?”
“ওকে। এবার তুইও রেডি হ। তুই নিজেই কিন্তু কামড় দিয়ে শুরু করেছিস। কথা দিলাম আগামী এক সপ্তাহও তুই রুম থেকে বের হয়ে কারো সামনে যেতে পারবিনা!”

বেচারি সামান্তা এবার বেশ ভয় পেয়ে গেল। চোখ জোড়ায় আতঙ্ক ভেসে ওঠল তার। শুকনো ঢোঁক গিলে সে যেইনা বিছানা ছেড়ে পালাতে গেল অমনি মিশাল হেঁচকা টানে সামান্তাকে বিছানার ওপর ফেলে দিলো। ব্যগ্র হেসে মিশাল মরিয়া হয়ে ওঠল সামান্তাকেনিজের করে নিতে। হাঁসফাঁস করতে থাকা সামান্তার কানের লতিতে মৃদু কামড় বসিয়ে নেশালো গলায় বলল,

“আমার লাভ টর্চার সহ্য করতে প্রস্তুত তো মহারানী? মৃত্যুর আগ অবধি আমার লাভ টর্চার তোকে সহ্য করতে হবে। এই জন্মে আমার হাত থেকে তোর কোনো নিস্তার নেই। এই জন্মে কাটানো একটা সেকেন্ড, একটা মুহূর্তও আমি তোকে শান্তি দিবনা। আমাকে পাওয়ার পিপাসায় তোকে প্রতিনিয়ত কাতরাতে হবে।”

মিশালের পাগলামিতে গাঁ ভাসালো সামান্তা। দু-চোখ বেয়ে তার আনন্দ অশ্রু বইতে লাগল। ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার আনন্দ তাকে অদ্ভুত এক তৃপ্তি দিচ্ছিল। খুশিতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা তার। আল্লাহ্’র কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে ব্যস্ত সামান্তা। অবশেষে সমস্ত বাঁধা বিপত্তি পাড় হয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত মিলন ঘটল।

তিন বছরের ছোটো ‘জেরিনকে’ কোলে নিয়ে ছয় বছরের ‘আকিফ’ সারা বাড়িময় পায়চারী করছে। দুজন হাসছে, খেলছে, মাঝে মাঝে আবার তুমুল ঝগড়াঝাটিও করছে। বাড়ির ড্রইংরুমে বসে থাকা মুরুব্বিরা শাহনাজ বেগম, জেসমিন বেগম ও নাজিয়া চৌধুরী মিলে পান চিবুচ্ছিলেন আর তাদের দুজনকে মনযোগ দিয়ে দেখছিলেন। মাঝে মাঝে তাদের কান্ডকীর্তি দেখে হেসে কুটিকুটিও হয়ে যাচ্ছিলেন। পান খাওয়া ভুলে আচমকা নাজিয়া চৌধুরী শাহনাজ বেগমকে বললেন,

“জেরিন ও আকিফকে ভালো মানিয়েছে তাইনা ভাবি?”
মুচকি হেসে শাহনাজ বেগম বললেন,
“তা আর বলতে? আমিতো চাই তারা সারাজীবন একসাথে এভাবেই মিলেমিশে থাকুক। কি বলো তুমি?”
“মন্দ বলোনি!”

ভিডিও কলে তর্ক করতে ব্যস্ত সামান্তা ও মিশাল! তাদের তর্কের বিষয় হলো সামান্তা কেন ফোন তুলতে করতে দেরি করল তা নিয়ে। জেরিনের জন্য খিচুড়ি রান্না করতে ব্যস্ত থাকায় মিশালের কলটি তুলতে পারেনি সামান্তা। কিছুতেই সামান্তার সমস্যা বুঝতে চাইছেনা মিশাল। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সামান্তা রেগেমেগে আগুন হয়ে মিশালের মুখের ওপর কলটি কেটে দিলো! হাত-পা কচলে কেঁদেকেটে বলল,

“এই লোকটাকে বিয়ে করাটাই আমার ভুল হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই তো বাহিরে বাহিরে রয়েছে। সংসারের দায়িত্ব, মেয়ে সামলানোর দায়িত্ব সে কিভাবে বুঝবে! তার ওপর মেয়েটাও হয়েছে তার মত ঘাড়ত্যাড়া! এই মেয়ে মানুষ করতে করতেই জীবন আমার অর্ধেক শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর তুলবনা কল। একদম কথা নেই এই লোকের সাথে আমার।”

দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল। সাহিলের ছেলে আকিফ তার দাদি অর্থাৎ নাজিয়া চৌধুরীর সাথে বাড়ি ফিরে গেল। বোধ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই আকিফ এই বাড়ি ছাড়েনা। জেরিনের প্রতি অসম্ভব টান তার। প্রতিদিন একবার হলেও সে এসে জেরিনকে দেখে যায়। জেরিনও আকিফকে ছাড়া কিছু বুঝেনা। সারাক্ষণ তার সাথে খেলা করতে পছন্দ করে।

রাত এগারোটা নাগাদ জেরিনকে নিয়ে ঘুমাতে গেল সামান্তা। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও জেরিনকে ঘুম পাড়াতে পারলনা সামান্তা। কেবল কান্নাকাটি করছে আর চিৎকার করে বাবাকে ডাকছে। ফোন দেখিয়ে বলছে বাবার সাথে ফোনে কথা বলবে! জেরিন হওয়ার সময় অনেক রিস্ক নিয়ে এসেছিল মিশাল। জেরিন চোখ খুলে প্রথমেই তার বাবাকে দেখেছে। জেরিনের যখন দু’বছর বয়স তখনও একবার এসে ঘুরে গেছে মিশাল। আবার কবে আসে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। দুপুরের পর থেকে সামান্তা এই অবধি মিশালের একটা কলও তুলেনি। আর তুলবেও না। মেয়ে কেঁদেকেটে খুন হয়ে গেলেও সে মিশালের কল তুলবেনা কিংবা নিজে ইচ্ছে করে মিশালকে কল করবেনা!

জেরিনকে পায়ে ঝুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে সামান্তা। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে মেয়ের সাথে। তবুও যেন কিছুতেই কান্না থামছেনা জেরিনের। বাবা বাবা ডাকতে ডাকতে খুন হয়ে যাচ্ছে সে! ইতোমধ্যেই ঘটে গেল এক অলৌকিক ঘটনা! সামান্তা স্বপ্নে রইল নাকি বাস্তবে তা বুঝতে পারলনা। রুমের দরোজা খুলে সে মিশালকে রুমে ঢুকতে দেখল! তার কোল থেকে জেরিনকে ছিনিয়ে নিতে দেখল। জেরিনকে বুকের মাঝে চেপে ধরে ভারি গলায় বলতে শুনল,

“বাবা এসে গেছি মা! আর কখনও বাবা তোমাকে ছেড়ে যাবনা!”
স্তম্ভিত হয়ে জায়গায় ঠায় বসে রইল সামান্তা। চোখের পলকও পড়া যেন বন্ধ হয়ে গেল তার! কান্না থেমে গেল জেনিয়ার। বাবার বুকের সাথে চুপটি করে মিশে রইল। থেমে থেমে কেবল ছোটো ছোটো শব্দে বাবা বাবা বলে ডাকতে লাগল। আবেগ আপ্লুত হয়ে মিশাল জেরিনের চোখেমুখে চুমু খেতে লাগল। আনন্দে চোখ বেয়ে টুপটাপ করে জলও গড়াচ্ছিল! বাবার আদর পেয়ে জেনিয়া হাসতে লাগল। খিলখিল করে হাসতে লাগল।
মেয়েকে শান্ত করে মিশাল এবার নিথর সামান্তার দিকে তাকালো। আচমকা সে চোখ টিপে দিলো সামান্তাকে। হেয়ালি স্বরে বলল,

“কি? অবাক হচ্ছ আমাকে দেখে? আবার জ্বালাতে চলে এসেছি তাই? এবার আর কোথাও যাবনা। সারাজীবনের জন্য তোমাদের কাছে চলে এসেছি! দূরত্ব আর ভালো লাগেনা আমার। পরিবারকে সাথে নিয়েই গোটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। এবার কেবল মৃত্যুই আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে পারবে। এছাড়া আর কারো সাধ্য নেই আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোর। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বুকে শ্রাবণ নিয়ে বেঁচেছি। আর বাড়াতে চাইনা এই বুকের শ্রাবণ। এবার একটু সুখ চাই, শান্তি চাই।”

বুকে যে শ্রাবণ তার সিজন ২ পর্ব ১৬

বসা থেকে ওঠে এলো সামান্তা। ঠোঁট উল্টে কেঁদে দু-হাত দ্বারা মিশাল ও জেরিনকে জড়িয়ে ধরল। বলল,
“আমিও চাইনা আমরা দূরে থাকি। তুমি, আমি, আমরা সর্বদা মিলেমিশে থাকি। শ্রাবণ শেষে ফাগুন আসুক আমাদের জীবনে।”

সমাপ্ত