রাজনীতির রংমহল সিজন ২ গল্পের লিংক || সিমরান মিমি

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১
সিমরান মিমি

“এক্সকিউজ মি!শুনুন,এই টাকা দু’শো রাখুন।আর যত দ্রুত সম্ভব সেলুনে গিয়ে আপনার এই মুখভর্তি দাঁড়ি আর মাথাভর্তি জঙ্গল গুলো সাফ করুন।”
ডান হাতের মধ্যে দৃশ্যমান দুই শত টাকার নোটের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো লোকটি।তার পাশেই দাঁড়ানো সেক্রেটারি বেশে থাকা পাভেল শিকদার অবাকের ন্যায় চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।দুপাশে থাকা গার্ড সহ দলের অন্যান্য লোকেরাও অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।এ যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।
দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অনন্দা।দু-পা সামনে এগিয়ে ভয়ার্ত আর্তনাদ করে কবজি চেপে ধরলো স্পর্শীর।গলার স্বর নিচে নামিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-

তুই পাগল নাকি?এসব কি ধরণের অভদ্রতা স্পর্শী?উনি আমাদের এখানকার এমপি।তোর জন্য না জানি আমাকে কতটা ভোগ করতে হয়।
বলেই চাপা আর্তনাদ করে উঠলো।তারপর আলতো হাসার চেষ্টা করে সামনের দিকে তাকিয়ে আমতা-আমতা করে বললো-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ক্ষমা করবেন ভাইয়া।ওহ একটু এমনই মজা করে সবার সাথে।এখানে নতুন তো।আপনাকে চিনতে পারে নি।
হাত ছিটকে নিলো স্পর্শী।অনন্দা’র দিকে তাকিয়ে নাক ছিঁটকে বললো-
তো?আমি ভয় পাই নাকি ওনাকে?আর আমি খারাপ’ই বা কি বললাম?আমি তো বরং ভালোর জন্যই বললাম।শুনুন এমপিমশাই,এই যে আপনার মুখভর্তি দাঁড়ি আর মাথাভর্তি চুল এগুলো কেটে ফেলুন।ভীষণ ভয়ংকর দেখায় আপনাকে।এরকম জঙ্গল নিয়ে বসে থাকলে তো সবাই ভয় পাবে আপনাকে।শেষে দেখবেন কেউ ভোট’ই দিলো না।হেরে যাবেন।

কপালে হাত দিয়ে নিজের অসহায় অবস্থা জানান দিলো অনন্দা।তারপর স্পর্শীকে পুনরায় রাগত স্বরে বললো-
উনি বর্তমান এমপি স্পর্শী।অলরেডি ভোটে জিতে বসে আছে সে।
সামান্য আশাহত দেখা গেল স্পর্শীকে। কিন্তু তাও থামলো না।প্রতিবারের মতো আফসোসের স্বরে বললো-
দেখেছেন,সবাই আপনাকে ভয় পেয়েই ভোট দিয়ে জিতিয়ে দিয়েছে।আপনি আপনার জনগণকে খুব ভালোবাসেন,তাইনা?তাহলে দ্রুত এগুলো কেঁটে ফেলুন।দেখবেন, পরেরবার তারা আপনাকে ভালোবেসেই ভোট দিবে।

দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো পাভেল।এতো জোরে চাপার পরেও হাসির বেগ থামছে না।আঙুলের ফাঁক দিয়ে খিকখিক করে শব্দ বেরিয়ে যাচ্ছে অস্পষ্ট ভাবে।দলের মধ্য থেকেও চাপাঁ হাসির শব্দ কানে আসছে পরশের।
ভেতরটা রাগে, অসস্তিতে ফেটে যাচ্ছে ।হাতের দু’শো টাকার নোট’টা পাঁচ আঙুলের দ্বারা বদ্ধ তালুতে মুঁচড়ে যাচ্ছে।আজ এখানে একটা ছেলে হলে এতোক্ষণে ঠাটিয়ে চার পাঁচটা থাপ্পড় মারতো সে।কিন্তু ভাগ্য তার অতি বিষন্ন দেখেই সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সদ্য এমপি হয়েছে।এর মধ্যেই কোনো প্রাপ্তবয়স্কা নারীর গায়ে হাত বা কটু কথা এমপি হিসেবে তার বলা মোটেই সংগত হবে না।কেননা মুহুর্তের মধ্যেই ঘটনাগুলো ছড়িয়ে যাবে পুরো অঞ্চলে।জায়গাটা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে হলেও দেখা যেতো।দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে হাতের নোট’টা পাভেলের হাতে দিলো।

হনহন করে চলে এলো গাড়ির সামনে। ভেতরে ঢুকে বসতেই দ্রুতপায়ে এগিয়ে এলো পাভেল।দরজা খুলে ত্রস্ত পায়ে ভাইয়ের পাশে বসলো। একটা অসহ্যকর অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পরশ।রাস্তার মধ্যে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলো তাও দলের লোকের সামনে।এটা ভীষণ অপমান জনক।আসফাস করতে করতে পাভেলের দিকে তাকালো।হাতের মুঠোই দু’শো টাকার নোট’টা দেখেই চমকে উঠলো।আশ্চর্যের সুরে বললো-

“তুই টাকা’টা দিয়ে আসিস নি?”
পেট মুচড়ে উঠলো পাভেলের।আমতা আমতা করে বললো-
কেন?তুই কি দিয়ে আসতে বলেছিলি?না মানে মেয়েটা তো চলে গেল।তাই আর দিতে পারি নি।
মুহুর্তেই সকল রাগ মাথায় চেপে ধরলো পরশের।দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
তোকে কি টাকা’টা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য দিয়েছিলাম আমি?
পাভেল চোরাচোখে বললো-

দিয়ে দিতেও তো বলিস নি।হাতে দিয়ে চলে এসেছিস।আমি তো ভাবলাম…..
যাই বলিস,মেয়েটা কিন্তু খারাপ কিছু বলে নি।সত্যিই তোকে দেখলে আমার’ই ভয় করে।
ভ্রুঁ কুঁচকে পাভেলের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।কিছু একটা ভেবে অন্যদিকে তাকালো।এসব ঠুনকো বিষয় নিয়ে ভাবলে তার চলবে না।গত চারদিন ধরে তার দায়িত্বরত পিরোজপুর ৩ এর নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলো একে একে ঘুরে দেখছে সে।সে উদ্দেশ্যেই আজ এই উপজেলায় এসেছিলো।ভেতরে গ্রাম থেকে ঘুরে গাড়ির কাছে আসতে না আসতেই এরকম এক উগ্র,পাগল, মেয়ের সামনে পড়লো।

ভর দুপুর বেলা।ঘড়ির ঘন্টার কাঁটা তখন একটা’কে পেরিয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।সূর্যটা মাথার উপর খাঁড়াভাবে অবস্থান নিয়েছে।নিজের সমস্ত টুকু তেজ ধরণীতে বিস্তার করে এক অদৃশ্য আনন্দে মেতে উঠেছে।ভর দুপুর হওয়ার কারনে ইতোমধ্যে অনেক দোকান পাট’ই বন্ধ করা হয়েছে।প্রত্যেকে তার নিজ বাসস্থানে অবস্থান নিয়েছে খাওয়া-গোসল করার জন্য।দুরেই একটা টিনের ছাউনি দেওয়া দোকান।বন্ধ থাকলেও তার সামনে রয়েছে ছোট্ট একটা কাঠের বেঞ্চি।সেখানে দৃশ্যমান হচ্ছে অনবরত মান-অভিমান নিয়ে তুমুল ঝগড়া করা দুটো বসে থাকা নারী।

অনন্দা গাল ফুলিয়ে বসে আছে অন্য দিকে তাকিয়ে।কতক্ষণ পর পর স্পর্শীকে দেখছে আর মুখ ঝামটা মেরে চোখ সরিয়ে নিয়েছে।কিছুক্ষণ পর অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে ঝাঝালো স্বরে বললো-
তোর ওমন পাগলামি করার কি কোনো দরকার ছিলো স্পর্শী।সব জায়গায় তোর বাড়াবাড়ি।আজকাল তোকে নিয়ে রাস্তাঘাটে চলতেও আমার ভয় লাগে।আতংকে থাকি কখন না কখন তুই নিজের রুপ বের করে অন্যকে আক্রমণ করে বসিস।

আরে যেখানে গ্রামের চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলতেই সবার ভয় লাগে সেখানে তুই একজন এমপিকে এভাবে অপমান করলি।কোথাকার না কোথাকার মানুষ।চিনি আমরা ঠিকভাবে একে?উনারা থাকেন শহরে।এসেছে গ্রাম পরিদর্শন করতে।ভালো কথা।কিন্তু তুই কি করলি?উলটো যেচে গিয়ে তাকে অপমান করলি।ভাল্লাগেনা আমার।এসব যদি গ্রামে জানাজানি হয়।তাহলে?সবাই আমাকে দোষারোপ করবে। তুই তো আর এখানে থাকিস না।আমাকেই দিনশেষে সবার কথা শুনতে হবে।

ভ্রুঁ কুঁচকে এক ধ্যানে অনন্দার দিকে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।হাতের পেয়ারাতে শেষ কামড় বসিয়ে দিয়ে অন্য দিকে চাইলো।মুখের টুকু শেষ হতেই অনন্দাকে বললো-
আশ্চর্য! সামান্য এটুকু ঘটনার জন্য তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?তুই এমন ভাবে বলছিস যেন আমি তোদের এলাকার এমপিকে টিজ করেছি।আরে বাবা,উনি একজন ছেলে। উনি কেন এত্তো বড় বড় মেয়ে দের মতো চুল রাখবে?তার উপর আবার সেগুলো পেছনে ঝুটি বেধে রেখেছে।

মুখের অবস্থা দেখেছিস।দাঁড়ি গোফে একদম জঙ্গল হয়ে আছে।এ খায় কিভাবে?জংলী কোথাকার?ইচ্ছে তো করছিলো চুলের ঝুটি ধরে টেনে ফেলে দেই কাঁদায়।তুই ছেলে,নেতা মানুষ।নেতার মতো থাকবি।যে কোনো মেয়ে তোকে দেখলে ক্রাশ খাবে।হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিয়ে করার জন্য।তা না, মুখ,চুলের এমন অবস্থা করেছে যে দেখলে মেয়েরা কেন? ভোটার রাও দৌড়াবে।

দাঁতে দাঁত চেপে অনন্দা পুনরায় বললো-
তাতে তোর কি?তোর কোত্থেকে জ্বলছে।ওনার চুল উনি প্রয়োজনে কাঁধ কেন হাটু পর্যন্ত রাখবে।তোর সমস্যা কোথায়?
তেতে উঠলো স্পর্শী।গলা হাঁকিয়ে বললো-
আমার অনেএএক সমস্যা।আমি এসব ছ্যাচড়ামো দেখতে পারি না।তোদের এমপিকে বলিস মাথায় হিজাব বেধে রাখতে।দ্বিতীয় বার ওই চুল আমার সামনে পড়লে ন্যাড়া করে দিবো।

দ্রুতপায়ে বেঞ্চ থেকে উঠে এলো অনন্দা।স্পর্শীর হাত ধরে করুন কন্ঠে বললো-
বইন,তোর আমার বাড়িতে আর বেড়াতে হবে না।বিকালের বাসে তুই ঢাকা চলে যা।তোকে হাত জোড় করে বলছি।প্রয়োজনে মা যে পিঠা-খাবার,দাবার তোকে খাওয়াবে সেগুলো আমি ঢাকায় তোর জন্য নিয়ে যাবো।তাও তুই এখান থেকে যা।আর আমাকে একটু শান্তি দে।
থেমে,

আমার জীবনে র সব থেকে বড় ভুল তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা।
ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো-
এহহহহ!এমন ভাবে বলছিস যেন আমি তোর সাথে প্রেম করছি।তুই বার বার আমার সাথে ব্রেক আপ করতে চাইছিস। আর আমি তোর পা ধরে বলছি”বাবু,সোনা,আমাকে ছেড়ে যেওনা।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।”।
থেমে,
সর এখান থেকে।ফোট….আর শোন।দাওয়াত দিয়ে এনেছিস তুই।এবার আমার যেদিন যেতে ইচ্ছে করবে সেদিন যাবো।তার আগে এক পাও বের হবো না।প্রয়োজনে তোকে বের করে দিবো বাড়ি থেকে।

সন্ধ্যা বেলা।ঘড়ির কাঁটা তখন মাত্র ছয়’টা কে ছুলো।আশেপাশে আবছা অন্ধকার নেমে গিয়েছে।ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।ধীরে ধীরে কান্নার আওয়াজ বাড়ছে।সাথে চারদিকে হইচইপূর্ণ পরিবেশ।দ্রুতপায়ে দরজার কাছে আসতেই অনন্দা হাত চেপে ধরলো স্পর্শীর।চাপা আর্তনাদ দিয়ে ছোট্ট স্বরে বললো-

প্লিজ!ওদিকে যাসনা।ঝামেলা হবে।
হার্ট দ্রুত গতিতে চলছে স্পর্শীর।ওদিকে কান্নার আওয়াজ আরো বাড়ছে।পুনরায় ধমক মেরে জিজ্ঞেস করতেই অনন্দা বললো-
ওখানে একটা মৃত ছেলের সাথে একটা জীবিত মেয়ের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

প্রিয় পাঠক,দীর্ঘ একটা সময় লেখালেখি থেকে বিরত ছিলাম।আবার ফিরে এলাম আপনাদের টানে।বেশ কিছুদিন ধরে আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য গুলো মিস করছিলাম।নিয়ে এলাম পুনরায় প্রিয় চরিত্র গুলোকে।দ্রুত সর্বোচ্চ রেসপন্স করুন।টাইপিং স্পিড +লেখার ধৈর্য্য অনেক হ্রাস পেয়েছে।আপনাদের থেকে উৎসাহ পেলেই হয়তো পুনরায় তা বাড়বে।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২