তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১১

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১১
নাদিয়া আক্তার সিয়া

মৌমিতা : বাবা কে পেয়ে আমাকে তো ভুলেই গেছিস তোরা । ( কিছুক্ষণ পর আবার বলে উঠে )
মৌমিতা বেগম : আর একটা কথা ছিলো আমায় ক্ষমা করে দিবি মেঘ । আমি জানি আমার পাপের ক্ষমা হয় না । কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে কোনো সময় খারাপ চোখে দেখি নি। আমি ভাবতাম তোর জন্য তোর মা মারা গেছে। তোর মাকে আমি নিজের বোনের মতো দেখেছি । কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি এতে তোর কোনো দোষ নেই। আমায় একটিবারের জন্য মাফ করে দে ।( মেঘকে জড়িয়ে ধরে )

মেঘ মৌমিতা বেগমের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো । মেঘ মৌমিতা বেগম কে তার মায়ের চোখেই দেখে এসেছে আজ পর্যন্ত । সে নিজেও জানে মৌমিতা বেগম দুই একটা কটু কথা শুনালেও কখনই তার গায়ে হাত তোলে নিই বা অবহেলা করে নিই । সেও মেঘকেও নিজের মেয়েদের মতোই ভালবেসেছে কিন্তু প্রকাশ করে নিই । মেঘ কলেজে যাওয়ার সময়ও কোনো কাজ করার আগেই উঠে দেখতো সবকিছু আগে থেকেই করা হয়ে গেছে । অন্নি, তন্নি কে বলতে বারণ করলেও সে দেখেছে তার মামি তার জন্য টিফিন আর কিছু টাকা লুকিয়ে অন্নি, তন্নি কে বেগ এ রাখতে বলেছে । সেই মানুষটা তার সামনে নিজেকে খারাপ প্রকাশ করতে চেয়েছে কিন্তু ভিতর থেকে তাকে প্রচুর ভালোবেসেছে । তখনি অহনার ডাকে মেঘ ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো ,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অহনা : মাকে ক্ষমা করে দে মেঘ। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে । সে তোকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবেশেছে । হয়তো তোকে খারাপ লাগানোর জন্য কিছু কটূ কথা শুনিয়েছে । কিন্তু বিশ্বাস কর সে সবসময় বলতো তোর দিকে যেন খেয়াল রাখি ।
অহনার কথা শেষ হতেই মেঘ বললো মৌমিতা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো ,

মেঘ : মামি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনি খারাপ চোখে দেখি নিই । তোমার মধ্যে নিজের মা কে খুজে পেয়েছি । তোমাকে আমার থেকে ক্ষমা চাইতে হবে না । আমি তোমার ঋণ কোনো দিনও শোধ করতে পারব না । এসব বলে আমার ঋণের বোঝা তুমি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছ ।
এই বলে মেঘ মৌমিতা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো । মৌমিতা বেগমও তাকে পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,

মৌমিতা বেগম : কান্না করছে কেনো আমার লক্ষী মেয়েটা । কোনো মেয়ে তার খুশির দিনে কান্না করলে কি কোনো মায়ের ভালো লাগে । কান্না থামাও নাহলে কিন্তু আমার বকা খাবে । ( হাসি দিয়ে )
ইমরান সাহেব : তোমাদের এভাবে দেখার ইচ্ছা আজ তাহলে পুরণ হলো । (মেঘ মাথায় হাত দিয়ে)
তাদের এভাবে দেখে অন্নি বলে উঠে ,

অন্নি : এক মেয়েকেই আদর করবে আমরা কি পর হয়ে গেছি নাকি । ( অভিমান করে )
এই কথা শুনে মেঘ , ইমরান সাহেব আর মৌমিতা বেগম হেসে দেয়। আর তার ৪ মেয়েকে একসাথে জড়িয়ে ধরে। তখনি অন্নি আবার বলে উঠে ,

অন্নি : এই খুশিতে একটা পিক তো তোলাই যায় ।
অন্নির মতামতে সবাই সম্মতি জানায় আর তারা একটা ফেমিলি ফটো তোলে ।
অন্নি : বাহ ! দারুন হয়েছে । এটা আমি ফ্রেম করে ঘরে টানিয়ে রাখবো ।
তখনি মৌমিতা বেগম আর ইমরান সাহেব অহনা আর মেঘকে বলে মিনহাজ সাহেব আর অরিন বেগমের সাথে দেখা করতে চলে যায় । সঙ্গে সঙ্গে হুল্লোড় পার্টির আগোমন ঘটে । তারা আসার পর সিয়াম বলে উঠে ,
সিয়াম : তো ভাবীরা আমাদের আপনার বোনদের সাথে একটু আলাপ করিয়া দেন । আমরাও একটু চিনি-জানি এই রমণীদের পরিচয় ।

সিয়ামের কথা শুনে অন্নি বলে উঠে ,
অন্নি : আমি থাকতে আমার বোন কেনো কষ্ট করবে বিয়াই সাহেব । চলুন আমরা সবাই একটা জায়গায় বসে পরিচয় হয়ে নিই ।
অন্নির কথা মতো সবাই অন্য দিকে চলে যায়। শুধু সিমরান আর মেহসান থেকে যায় । তাদের মেঘ আর অহনাদের কোনো সমস্যা হয় কিনা সেটা দেখার জন্য থেকে যেতে হয় ।

মেহসান কে দেখে মেঘ আর অহনা বলে উঠে , ” মেহসান তোমাকে সকাল থেকে দেখি নিই । কোথায় ছিলে ” ?
সিমরান : আসলে ওর বেশি চকলেট খাওয়ার জন্য পাতলা পায়খানা হয়েছে । সো ও সারাদিন রুম থেকে ওয়াশরুম এ ওয়াশরুম থেকে রুম এ আসছিলো আর যাচ্ছিলো । ( একটি মিথ্যে হাসি দিয়ে )
মেঘ : ওহ আমাকে তো কেউ বলো নিই ?

সিমরান : সিরিয়াস কিছু না। Don’t worry .
মেহসান : আসলে ভাবী শপিং মলে সিমরান আপু বলেছিলো যে আমার পাতলা পায়খানা হয়েছে ।
তাই তা এখন ভুগতে হচ্ছে । তাই বলে মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ । এই যে আবার আরেকটা বললো এখন আমায় কষ্ট কাঠিন্যে ভুগতে হবে । ( নেকা কান্না করে )
মেহসানের কথা শেষ হতে না হতেই তার আবার টয়লেট পেয়ে গেলো আর সে একদৌড়ে উপরে চলে গেলো । তা দেখে সিমরান মেঘ আর অহনাকে উত্তেজিত হতে বারণ করে নিজেও মেহসানের পিছন পিছন দৌড় দিলো ।
তখনি আহতাব সেখানে উপস্থিত হলো। আর মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো ,

আহতাব : কেমন আছো শালিকা ? তোমার বর তো তোমাকে খুজে পুরো বেহাল ওই সামনে আমার আর মেহতাব এর স্টেজ করা হয়েছে তুমি ওখানে যাও আর আমি আর অহনা এই স্টেজ এ বসছি ।
আহতাবের কথা শুনে মেঘ খুশি হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। সে অহনাকে জড়িয়ে ধরে মেহতাবের স্টেজ এ রওনা হলো । তখনি আহতাব পিছন থেকে ধন্যবাদ দিলো । মেঘ পিছনে ফিরে তাকাতেই আহতাব আবার বলে উঠলো ,

আহতাব : আসলে আমি তোমাকে অন্য কারনে ধন্যবাদ দিচ্ছি যে তুমি মেহতাবের সাথে মানিয়ে নিয়েছো । তোমাদের মধ্যে কোনো ভুল বুঝাবুঝি নেই । আমি জানি আমার ভুলের ক্ষমা হয় না কিন্তু কি করবো বলো আমি অহনাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসি আর আমি এটাও চাই নি তোমার জীবন নষ্ট হোক । পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও ।
আহতাবের কথা শুনে মেঘ একটা স্নিগ্ধকর হাসি দিয়ে বললো ,

মেঘ : জিজু আপনি কোনো ভুল করেন নি দয়া করে ক্ষমা চাইবেন না । আপনার জায়গায় আমি থাকলে একিই কাজ করতাম । তাই আমি চাই আপনি এই জন্য নিজেকে দায়ী মনে করবেন না প্লিজ । ( অনুরোধ করে )
মেঘের কথা শুনে আহতাব খুব খুশি হলো। সে প্রতিউত্তরে মেঘকে বললো ,
আহতাব : এই নাহলে আমার শালি । ঠিকাছে আমি তোমার কথা মানবো আমার একটা শর্ত আছে ।
মেঘ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো , ” ঠিকাছে জিজু বলুন কি শর্ত ?” ।
আহতাব বলে উঠলো ,

আহতাব : আমার তো নিজের আপন কোনো বোন নেই। সিমরান , শাম্মি , মিথিলা ওরা তো সবসময় থাকবে না খালামনির সাথে চলে যাবে । তাই আমি চাই আমার একটা বোন থাকুক । যে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে । আমার কাছে আবদার করবে। আর কখনো কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে নির্দিধায় বলবে । যদি না বলো আমি কিন্তু ভাববো তুমি আমাকে ভাই মনে করো না । ( সুন্দর একটা হাসি দিয়ে )
আহতাবের কথা শুনে মেঘ একটি মুচকি হাসি দিলো আর বললো ,

মেঘ : অবশ্যই বলবো ভাইয়া । আপনার বোন কিন্তু খুব আহ্লাদি সামলাতে পারবেন তো । ( মুচকি হাসি দিয়ে )
মেঘের কথা শুনে অহনা হেসে দিলো । আর আহতাব মেঘের মাথায় হাত রেখে মুচকি হাসি দিলো আর বললো ” আলবাত পারব ” । তারপর সে আহতাব আর অহনাকে বলে মেহতাবের কাছে চলে এলো । মেহতাব সেখানে বসে ফোন ঘাটছিলো । আর কিছু মেয়ে তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো । কিন্তু মেহতাবের সেদিকে খেয়াল নেই । মেহতাব ফোনের স্ক্রিন এর থেকে সামনে তাকাতেই মেঘ কে দেখতে পেলো । মেঘের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোমার আসতে এতো লেট কেনো হয়েছে ? ( রাগ দেখিয়ে )
মেঘ : আসলে ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম ।
মেহতাব : ঠিকাছে বসো ।
এই বলে মেহতাব মেঘের হাত ধরে মেঘকে বসিয়ে দিলো । মেঘ বসে মেহতাবের উদ্দেশ্যে বললো ,
মেঘ : আপনার ফ্যান ক্লাব এর মেয়েরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে । তাদের সাথে কথা বলতে পারতেন । আমার জন্য কেনো অপেক্ষা করছিলেন ?

মেঘের কথা শুনে মেহতাব বাম দিকে তাকালো সত্তিই কিছু মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে । সে এই জিনিসটাও বুঝতে পারে যে মেঘের তা সয্য হচ্ছে না । তাই মেঘকে আরেকটু জ্বালাতে সে বললো ,
মেহতাব : আমি তো জানতাম না আমার ফ্যান ক্লাব এ এতো সুন্দরী মেয়েরা আছে । তাহলে বিয়েই করতাম না । ( দুষ্টু হাসি দিয়ে )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ অভিমান করে বললো ,
মেঘ : হুম। এখন তো ভালোই লাগবে । আমি তো আপনার কাছে পুরনো হয়ে গেছি । ( নিচু স্বরে )
মেঘের কথা শুনে মেহতাব মেঘের মাথা উচু করে চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে মেঘের হাত তার বুকের বাম দিকে ধরে বললো ,

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১০

মেহতাব : তুমি কি জানো তুমি আমার জীবনে না এলে এই জীবনের মূল্য আমি কোনোদিনই বুঝতেই পারতাম না । রোজ সকালে তোমার সেই মায়া ভরা চেহারা না দেখলে আমার দিনই কাটতে চায় না । তোমার মুখের মায়া আমায় প্রতিদিন তোমার দিকে আকর্ষিত করে । তোমাকে নতুন করে পাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত করে । তুমি আমার জীবনের সাথে মিশে গেছো । তোমাকে ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না । তুমি আমার আদুরে মায়াবিনী । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১২