দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৩০

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৩০
তাসফিয়া হাসান তুরফা

দোলা রুমে এসেই সবার প্রথম নিশীথের নাম্বারে ফোন করলো। ফোন বাজলো ঠিকি কতক্ষণ, তবে কল রিসিভ করা হলোনা! তবু ও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলো, একটা সময় কল নিজে থেকেই কেটে গেলো! দোলা মনের সাথে দ্বন্দ করে আরেকবার নিশীথের নাম্বারে কল দিলো। মূলত, অন্যদিন হলে ও মোটেও নিশীথকে নিজে থেকে এত রাতে ফোন দিতোনা কিন্তু আজকের ব্যাপার ভিন্ন।

আর সবার মতোন দোলা বিশ্বাস করতে পারছেনা যে, রাকিবকে কোনো ছি’নতাই’কারী মে’রেছে। বরং, কেন যেন দোলার মনে হচ্ছে এসবের পেছনে অন্যকারো হাত আছে! এবারো ফোন বাজলো ঠিকি কিন্তু আগেরবারের মতো অপেক্ষা করতে হলোনা দোলার, উলটো নিশীথ খুট করে ওর ফোন কেটে দিলো! দোলা অবাক হলো! এর আগে কখনো নিশীথ এমন করেনি। আজ ওর কি হলো? দোলা নিজের মনকে বুঝ দিলো, হয়তো ব্যস্ত আছে দেখে নিশীথ ফোন কেটেছে। ফ্রি হলে নিজেই কল দিবে। কিন্তু ধৈর্য ধরে আধা ঘণ্টার মতো অপেক্ষার পরেও নিশীথ ফোন দিলোনা একবারও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এদিকে রাত ততক্ষণে ১১.৩০টা পেরিয়েছে। দোলার এবার ইতস্তত লাগলো। মস্তিষ্ক বলছে, এ সময় নিশীথকে আর ফোন দেওয়া উচিত না। মনে পড়লে নিজেই ফোন দিবে। কিন্তু মন বলছে নিশীথ এর নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে নয়তো সচারাচর ও এমন করেনি কখনো! অবশেষে, মনের কথা শুনে দোলা তৃতীয়বার নিশীথকে ফোন দিতেই এবার কল ঢুকলোইনা। উল্টো ফোনের ওপাশ থেকে যান্ত্রিক আওয়াজ বলছে “দুঃখিত, আপনি যে নাম্বারে ফোন করছেন তা এ মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা”

এবার দোলা হয় নিশ্চিত যে, নিশীথের কিছু একটা হয়েছে। নয়তো ফোন কাটার পাশাপাশি বন্ধ রাখবেনা নিশ্চয়ই! চিন্তিত দোলা কিছুক্ষণ অস্থিরভাবে রুমের মাঝে পায়চারি করে রুমের মাঝে। বেশ খানিকটা দুশ্চিন্তাময় রাত কাটে ওর!

কয়েকদিন পর ১২টার দিকে দোলা ভার্সিটির জন্য বের হচ্ছিলো বাসা থেকে। এমন সময় গলির মোড়ে সেই টং এ এলাকার কিছু ছেলেপেলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। নিশীথ নেই, তবে ওর বন্ধুরা আছে। যার মধ্যে তিনজনকে দোলা চিনে! ওরা নিশীথের সাথেই থাকে প্রায় সময় ফলে দোলার চিনতে ভুল হয়না একটুও। আকাশ, কবির ও তূর্য। বরাবরের ন্যায় পাশ কেটে যেতে নিয়েও দোলা হঠাৎ থেমে যায়৷ দোলাকে থামতে দেখে আড়চোখে তিনজন তাকালে ও ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে আসে৷ ছেলেগুলো কিছুক্ষণ একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ির মাঝে দোলা ইতস্তত ভাবে বলে,

—আপনাদের একটু সময় হলে কিছু কথা বলতাম, ভাইয়া।
—হ্যা অবশ্যই, ভাবি। আপনি দাঁড়ান, আমরা আসছি।
আকাশ বেশ স্বাভাবিক ভাবে বল্লেও এই প্রথম কেউ “ভাবি” সম্বোধন করায় দোলা বেশ লজ্জা পায়! তবু কিছু না বলে চুপচাপ দোকানের বাইরে এসে ফাকা জায়গায় দাঁড়াতেই মিনিট দুয়েকের মাঝে ওরা তিনজন চলে আসে। ছেলেদের চোখেমুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বিদ্যমান, যেন ওদের তিনজনের কেউই বুঝছেনা হঠাৎ দোলা এভাবে কথা বলার কারণ! ওদের ভাবনার মাঝে নিরবতা ভেঙে দোলা বলে উঠে,

—নিশীথ ভাই কি রাকিবকে মে’রেছেন? আপনারা কিছু জানেন?
দোলার প্রশ্নে ওরা একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। আকাশ মিনমিনে কণ্ঠে বলে,
—আসলে ভাবি আমরা সঠিক বলতে…

—আমার থেকে কিছু লুকোবেন না প্লিজ। অনুরোধ করছি! আমি জানি নিশীথ ভাই এর কাজকর্ম সম্পর্কে আপনাদের অবশ্যই জানার কথা। সেজন্যই মূলত আপনাদের ডেকে এনে প্রশ্নটা করা। আমার এ বিষয়ে জানা ভীষণ জরুরি, প্লিজ আমায় সত্যিটা বলুন! রাকিব হসপিটালে পৌছানোর পেছনে নিশীথ ভাইয়ের হাত আছে কি না?
কবির আবারো আমতা আমতা করে মিথ্যা বলতে নিলে তূর্য ওকে থামিয়ে দেয়। কি মনে করে যেন ঠান্ডা গলায় পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দোলার দিকে।

—রাকিবের এ অবস্থার পেছনে নিশীথ ভাউ দায়ী এটা আপনাকে কে বলেছে? রাকিব?
দোলা ভ্রু কুচকায়। মাথা নাড়িয়ে বলে,
—না তো! ওর যে অবস্থা, ধো’লাই খেয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের বেডে। ও কিভাবে কি বলবে? আমি নিশীথ ভাইকে যতদূর জানি সে হিসেবে নিজ থেকে আন্দাজ করে নিয়েছি। এখন আপনারাই বলতে পারবেন আমার আন্দাজটা সঠিক কিনা!

আকাশ মাথা নাড়ে। মিনিটখানেক চিন্তাভাবনা করে অবশেষে মুখ খুলে বলে,
—যদিও নিশীথ ভাইয়ের কড়া নির্দেশ ছিলো কাউকে যেন এ বিষয়ে কিছু জানানো না হয়। কিন্তু আপনি যেহেতু আমাদের ভাবি। আমরা জানি আপনাকে বললে ভাই জানলেও আমাদের তেমন কিছু বলবেনা!
আকাশের কথায় এবং বারবার “ভাবি” সম্বোধনে দোলা লজ্জায় কুকড়ে যায়। ছেলেগুলো ওর চেয়ে বয়সে ঢেড় বড় হবে, অন্তত ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারে তো হওয়ারই কথা। তাও ওকে কিভাবে ভাবি ডাকছে! ইশ, কেমন লজ্জাজনক বিষয়! তবু সত্যিটা তো আজ জানতেই হবে। তাই লজ্জাকে পাশে সরিয়ে দোলা নম্রমুখে বললো,

—জি। আমাকে বলুন প্লিজ। কাল রাত থেকেই এ ব্যাপারে জানার জন্য আমি অস্থির হয়ে আছি কিন্তু নিশীথ ভাই ফোন ধরছেনা, অফ করে রেখেছেন। তাই না পারতে আপনাদের নিকট আসা!
ছেলেরা বুঝে ওর ব্যাপারটা। তিনজন খানিকক্ষণ ফিসফিসিয়ে কিছু একটা আলোচনা করে। অতঃপর তূর্য পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ভিডিও চালু করে ফোনটা দোলার হাতে দেয়। কবির বলে,
—ভিডিওটা মনোযোগ দিয়ে দেইখেন, ভাবি। সিনেমার চেয়ে কম লাগবেনা মোটেও! মা’রামা’রিতে নিশীথ ভাইয়ের জুড়ি নেই!

দোলা সব শুনে ভিডিও প্লে করে। মিনিট পাঁচেক হবে হয়তো ভিডিওটা। রাতের অন্ধকারে ঠিকমতোন কিছু বুঝা যাচ্ছেনা, তবে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আবছাভাবে যেটুকুই দেখা যাচ্ছে তাতে হ্যাংলা রাকিব ও লম্বা-চওড়া নিশীথ এর অবয়বটুকু স্পষ্ট বুঝতে পারছে দোলা! আশেপাশে গুটিকয়েক ছেলেরা মিলে ঘিরে রেখেছে ওদের দুজনকে। মধ্যেখানে রাকিবকে ইচ্ছামতোন মা’রছে নিশীথ। একেকটা ঘু’ষির সাথে গা’লি ও হু’মকি দেওয়া তো আছেই। সবগুলো কথা স্পষ্ট না শুনলেও দোলা যেটুক শুনতে পারলো তার সারমর্ম দাড়ালো এরকম যে নিশীথ মা’রতে মা’রতে রাকিবের উদ্দেশ্যে বলছে,

—শা’লা বা’স্টার্ড! এত বড় কলিজা তোর? তোর সাহস কি করে হয় আমার জানের দিকে হাত বা’ড়ানোর? কে দিছে এই সাহস তোকে বল?
নিশীথ বেপরোয়া ভাবেই মেরেই যাচ্ছে। এরই মাঝে আকাশের ভীত কণ্ঠ শুনা যায়,
—ভাই, ছাড়ো এবার ওকে। এমনিই রোগা ছেলে বেশি মা’ইর খেলে ম’রে যেতে পারে! পুলিশ জেনে গেলেও ঝামেলা হবে!

—ম’রুক। আমার দোলনচাঁপার দিকে কুনজর আগে ওর একশবার ভাবা উচিত ছিলো! এখন কিছু করার নেই।
নিশীথ যেন এক ক্ষি’প্র বাঘ, যাকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। এদিকে মা’ইর খেতে খেতে রাকিবের অবস্থা যখন আধ’মরা তখন নিশীথের বন্ধুরা মিলে অবস্থা বেগতিক হবার আগেই ওকে ধরে সরিয়ে আনে রাকিবের থেকে। দোলা পুরো ভিডিওটাই শ্বাসরোধ করে রেখে।

ফোনটা কবিরের হাতে ফিরিয়ে দিলেও এখনো বুকের মাঝে ধ্বকধ্বক করতে থাকা হৃদপিণ্ডের ওঠানামা বুঝতে কোনো কষ্ট হয়না ওর! নিশীথ ওর প্রতি এতটা পজেসিভ, বিষয়টা ভাবতেও দোলার বক্ষপিঞ্জরে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। ওর প্রতি কেউ কখনোই এতটা অধিকারবোধ দেখায়নি যেটা নিশীথ করে। ছেলেটা দোলাকে বারবার অবাক করে! আবেগ ও বিস্ময়ে জর্জরিত দোলার ভাবনায় ছেদ পড়ে তূর্যের ডাকে। ধ্যান ফিরলে সেদিকে তাকালে তূর্য বলে,

—এখন অন্তত নিশীথ ভাইয়ের প্রপোজালে রাজি হয়ে যান, ভাবি। নিজের মানুষ বলে বলছিনা, তবে আমাদের ভাইয়ের মতো সত্যিই কেউ হয়না! আপনি ভীষণ লাকি এত অল্প সময়ের মধ্যেও নিশীথ ভাই আপনাকে এত বেশি ভালোবাসে!।
দোলা ওদের কি বলবে খুজে পায়না। এরই মাঝে কবির রসাত্মকভাবে বলে,

—শুনেন ভাবি, তূর্য একদম ঠিক বলছে। যোগ্য ছেলে হারালে কিন্তু কাঁদতে হবে আড়ালে! আগেই বলে দিচ্ছি!
আকাশ কবিরের মাথায় চাটি মারলেও ওর কথা বলার ধরনে দোলা হেসে ফেলে। নিশীথের দলের ছেলেপেলেও যেন ওর মতোনই ফাজিল! দেখতে হবেনা দলপতিটা কে! দোলা ওদের কথা আগ্রাহ্য করে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো,
—আচ্ছা, এই যে আপনারা সবাই মিলে রাকিবকে ধো’লাই দিলেন। তাহলে হসপিটাল থেকে ফোন করে কেন বলা হলো ছি’নতা’ইকারীর আক্র’মণ?
দোলার বোকা প্রশ্নে ছেলে তিনটে একত্রে হেসে উঠে। আকাশ বলে,

—নিশীথ ভাই কি কাঁ’চা খিলাড়ী নাকি? ভাইয়ের অনেক বুদ্ধি। আমাদের ছেলেরাই রাকিবকে হসপিটালে নিয়ে গেছে এলাকাবাসী সেজে আর ভাইয়ের টাকাতেই ওকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে! কিন্তু এসব কেউ জানেনা। ভাই যেভাবে প্ল্যান করেছিলো সবকিছু ঠিক সেভাবেই করা হয়েছে! আর রাকিব যে মা’র খেয়েছে ও জীবন থাকতে আর কোনোদিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলবেনা।

আপনার দিকে তাকানো তো অনেক দূরের কথা! রাস্তা ক্লিয়ার একদম!
নিশীথের সুনিপুণ বুদ্ধিকৌশলে দোলা চমৎকৃত হয়। এতকিছু করলো অথচ এতটা সূক্ষ্মভাবে যে কেউ একটা কিছু সন্দেহও করতে পারলোনা! আসলেই লোকটা প্রশংসার দাবিদার! দোলা সবকিছু শুনে ছেলেদের ধন্যবাদ জানায়।

ওদের থেকে বিদায় নিয়ে তূর্যর ডাকা রিকশায় চড়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। নিশীথ ওর জন্য এতকিছু করলো অথচ কাল থেকে একটাবার ওর ফোন অব্দি ধরলোনা। একটাবার নিজে থেকে কল দেওয়া তো দূরের ব্যাপার! বিষয়টা দোলাকে কষ্ট দিলো ভীষণ!
ফলে, পুরোটা পথ ওর মাথায় শুধু নিশীথের কথাই ঘুরপাক খেতে লাগলো!

নিশীথের আজকাল ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটছে। মাস্টার্স প্রায় শেষ। শুধু আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট পাওয়া বাকি। পরীক্ষা দিয়ে ও ফ্রি বসে থাকায় চাচার অনুরোধে বাবার কোম্পানিতে সপ্তাহ দুয়েক গিয়েছিলো। অবশ্য শুধুমাত্র চাচার অনুরোধে বললে ভুল হবে, নিশীথ সবসময় নিজের মর্জিতেই চলে। এবারো বিশেষ ব্যতিক্রম হয়নি কেননা অফিসে জয়েন করার পেছনে ওর নিজস্ব একটা কারণ আছে।

ওইদিন দোলার বাসায় দোলার মায়ের সাথে যতটুকুই কথা হয়েছে, তাতে সে বুঝেছে পারিবারিক অবস্থা যেমনি হোক না কেন উনি যথেষ্ট আত্মসম্মানী মহিলা। অবশ্যই তার মেয়ের বিয়ে কোন বেকার ছেলের নিকট দেবেন না, নিশীথ বিষয়টা নিয়ে ভেবেছে। ওদিন পরিস্থিতির উত্তাপে সকলের সামনে খালিমুখে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও বাসায় এসে নিশীথের অনুধাবন হয় দোলাকে বিয়ে করতে হলে ওর কিছু একটা করতে হবে।

আর যাই হোক, বাপের পয়সায় খায় এমন ছেলের নিকট কোনো পিতামাতাই নিজের মেয়ের দায়িত্ব দেবেন না, এমনকি আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন নিশীথ নিজেও এ বিষয়ে সম্মতি জানায়। মূলত, সে তাড়না থেকেই ওর নিজেদের কোম্পানিতে জয়েন করা! আর কিছু হোক না হোক অন্তত অভিজ্ঞতা বাড়বে! কাজ শিখতে পারবে!

নিশীথের বাবা ছেলের মেধা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জানেন। এজন্যই এতবার বলতেন ওকে কোম্পানিতে জয়েন করার কথা। অবশেষে যখন সেদিন এলোই, তাই কিছুদিন ওর কাজের সূক্ষ্মতা এবং স্কিল পরীক্ষার জন্য ওকে কোম্পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিল ফাইনালের কাজ করতে দিয়েছিলেন। নিশীথও নিজের জে’দ দেখিয়ে বেশ খেটেছিলো অনেকদিন। এ কারণেই দোলাসহ অন্য কারও সাথে কোনোরুপ যোগাযোগ করেনি এতদিন। সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে কাজে মনোযোগ দিয়েছিলো। কিন্তু এত পরিশ্রম করার পরও সে ডিল ফাইনাল না হওয়ায় নিশীথ খানিকটা দমে গেলো। কিছুদিন অফিসে এলোনা। নিশীথের বাবা ছেলের পরিস্থিতি বুঝলেন, ওকে এ ক’দিন জোর করলেন না অফিসে আসার জন্য!

এমনই এক দুপুরে ওদের কোম্পানি “তালুকদার ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রি”-তে নিজেদের কেবিনে বসে ছিলেন নিশীথের বাপ ও চাচা- আয়মান ও আরেফিন তালুকদার৷ দুই ভাই বিজনেস রিলেটেড আলোচনা করছিলেন। কোম্পানির কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টক ও শেয়ার নিয়ে কথাবার্তার মাঝেই একটা স্টাফ আসে তাদের কেবিনে। সালাম দিয়ে বলে,
—ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত, স্যার। তবে একটা জরুরি খবর দেওয়ার ছিলো।
—কি খবর? জলদি বলো!
আয়মান সাহেব শুধান। স্টাফ জানায়,

—কিছুক্ষণের মাঝেই এখানে খন্দকার গ্রুপের মালিক আবুল খন্দকার সাহেব আসছেন। উনার পিএ ফোন করে জানিয়েছে মাত্র। আপনাদের সাথে নাকি খুব ইম্পর্টেন্ট কথা ছিলো!
খন্দকার সাহেবের সাথে কথা শুনে দুই ভাই কিছুক্ষণ একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। তারপর স্টাফকে বিদায় দিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করতে থাকেন।

তাদের চিন্তার কারণ, এতদিন ধরে তাদের কোম্পানি এই খন্দকার গ্রুপের সাথেই একটি ডিল ফাইনাল করার চেষ্টা করছিলো। নিশীথের এত প্রচেষ্টার ফলেও কিভাবে কিভাবে যেন বনিবনা হচ্ছিলোনা! ফলে, এত বিপুল সম্ভাবনাময় ডিল ফাইনাল না হওয়ায় সকলে বেশ খানিকটা পেরেশানিতে ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে হুট করে খন্দকার সাহেবের এখানে চলে আসা, তাও কোনো আগাম বার্তা ছাড়াই এটা যেন খুবই বিস্ময়কর ঠেকলো দুই ভাইয়ের নিকট!

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ২৯ (২)

আশার আলো নিয়ে বড় ভাইয়ের নির্দেশে আরেফিন সাহেব তৎক্ষণাত ফোন দিলেন নিশীথকে। সে তখন ওদের মেইন অফিসের আশেপাশেই ছিলো। চাচ্চুর কথা শুনে নিশীথ বুকভরা উচ্ছাস নিয়ে জলদি জলদি রওনা হলো অফিসের নিকট।
ওর মনে আশা জাগলো, এবার কোনোভাবে চুক্তিটা পাকা করা যাবেনা তো?

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৩১