দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৩১

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৩১
তাসফিয়া হাসান তুরফা

তালুকদার ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রির অফিশিয়াল মিটিংরুমে বাপ-চাচা ও অন্যান্য স্টাফ, ম্যানেজারদের সাথে বসে আছে নিশীথ। নজর তাদের সামনে বসে থাকা আবুল খন্দকার সাহেবের দিকে। বাকি সবার চোখেমুখে কৌতুহল। যে গ্রুপ ডিল ফাইনাল করলোনা সেই গ্রুপের মালিক কোন কাজে এখানে আসছেন আবার? আয়মান তালুকদার জড়তা ভেঙে গলা পরিষ্কার করলেন। সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন,

—খন্দকার সাহেব, সব কথা তো আমাদের মধ্যে হয়ে গেছে। ইভেন তিনদিন আগেও আপনার ম্যানেজার নিজে আমাকে বলেছে আপনাদের এ অফার সুইটেবল মনে হচ্ছেনা। তবে, হঠাৎ আপনার এখানে আসার কারণ?
খন্দকার সাহেব মৃদু হাসলেন। তিনি আয়মান সাহেবের চেয়ে বয়সে বড় হবেন কিছুটা। নাকের ডগায় চশমা ঠিক করে আয়মান সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—আমার ম্যানেজিং টিম আপনাদের প্ল্যানটা দেখেছে৷ আপনারা যে বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি এপ্লাই করার কথা চিন্তাভাবনা করেছেন, ওদের ধারণা এটা এ দেশে খাটবেনা। তবে আমি কাল থেকে ভাবছিলাম, ফাইলগুলো দেখলাম সবমিলিয়ে আমার মনে হলো একবার সরাসরি আপনাদের সাথে কথা বলা উচিত। যেদিন এ ডিলের প্রেজেন্টেশন হয় সেদিন তো আমি থাকতে পারিনি। আমার টিম দেখে গেছে শুধু৷ তাই আমি আজ নিজেই এলাম। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আপনারা কি আমায় আরেকবার আপনাদের ফুল প্ল্যানিং, স্ট্র‍্যাটেজি ডিটেইলে প্রেজেন্ট করে দেখাতে পারবেন?

নিশীথ মনে মনে দারুণ খুশি হয়! ওর মনে হলো যেন ও খন্দকার সাহেবের মুখে এ কথা শুনারই অপেক্ষায় ছিলো। আয়মান সাহেব কিছু বলার আগেই নিশীথ নিজ জায়গা থেকে বললো,
—অফকোর্স, স্যার। আমাদের আধ ঘন্টাখানেক টাইম দেন প্রিপেরেশনের জন্য? আমরা ফুল প্ল্যান ডিটেইলসে আপনাকে শো করছি! আম শিওর ইউ উইল বি ইম্প্রেসড বাই ইট!

খন্দকার সাহেব মাথা নেড়ে সম্মতি দেন। ম্যানেজারকে নিয়ে নিশীথ বেরিয়ে যায় প্রেজেন্টেশন এর দরকারি সবকিছুর প্রস্তুতি নিতে। আয়মান সাহেব ছেলের আত্মবিশ্বাসী চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকেন। নিশীথ যতক্ষণ রুম থেকে বেরিয়ে না যায় তিনি ওর দিকেই চেয়ে ছিলেন। তা যেন লক্ষ্য করলেন খন্দকার সাহেবও। আয়মান সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন,

—ইজ হি ইউর সান, মিস্টার তালুকদার?
—ইয়েস।
—নাম কি ওর?
—নিশীথ তালুকদার। আপনি যেই ডিলের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন ওর খুটিনাটি প্ল্যানিং এর পেছনে কিন্তু নিশীথই আছে। হি ওয়াজ ভেরি ডিটারমাইন্ড এবাউট দ্যা প্ল্যান! আপনিও আবার দেখুন, ভাবুন। আমাদের বিশ্বাস আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে!

—হুম। প্ল্যানটা প্রমিসিং লেগেছে দেখেই আমি নিজে এসেছি পুরোটা ফেস-টু-ফেস ডিসকাশন করতে। এখন দেখা যাক আপনার ছেলের প্রেজেন্টেশন কেমন হয়!
খন্দকার সাহেবের কথায় আয়মান সাহেব মাথা নাড়েন। পাশ থেকে আরেফিন তালুকদারও নিশীথের প্রশংসা করলেন ক্লায়েন্টের সামনে। মনে মনে তারা সকলেই চাইছে, নিশীথের পরিশ্রম যেন ব্যর্থ না যায়। মাত্রই এত বলার পর জয়েন করলো ছেলেটা, তারা কখনোই চাইবেন না নিশীথ ক্যারিয়ারের শুরুতেই ব্যর্থতার ছোয়া পাক!

ঘণ্টা তিনেক অতিক্রম হলো। প্রেজেন্টেশন শেষে বেশ খানিক প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চললো। নিশীথ ধৈর্য সহকারে খন্দকার সাহেব এর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলো। এরপর কিছুক্ষণ নীরবতা। সবার মধ্যে চাপা ভয়, এইবার বুঝি আবারো হতে হতে না হওয়া ডিল ক্যান্সেল হয়ে যায়? অবশেষে সব জল্পনাকল্পনা ছাড়িয়ে যখন খন্দকার সাহেব এনাউন্স করলেন,

—কংগ্রাচুলেশনস, ইয়াং ম্যান। দ্যা ডিল ইজ ফাইনাল!
সকলের চোখেমুখে খুশি-খুশি আমেজ। তা ছাপিয়ে সবচেয়ে নজর কাড়লো যে ব্যাপারটা তা হলো, খন্দকার সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে আয়মান সাহেব এগিয়ে আসছিলেন ছেলেকে মোবারক জানাতে৷ এমন সময় খুশির চোটে নিশীথ এক অদ্ভুত কাণ্ড করে ফেলে! ওর দিকে এগিয়ে আসা আয়মান সাহেবকে আচমকা জড়িয়ে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করে! ধরা গলায় বলে,

—আমি পেরেছি, বাবা। দেখেছো তুমি? আমি ঠিকই পেরেছি!
বলাবাহুল্য, ছেলের আচমকা এমন জড়িয়ে ধরায় আয়মান সাহেব নিজেও খানিকটা চমকে গেছেন! আর যেকোনো বাবা-ছেলের কাছে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা হলেও তাদের কাছে এটা ব্যতিক্রম ঘটনাই বটে! যেখানে নিশীথ তার সাথে দু’বেলা ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলেনা, সেখানে এসব নিতান্তই আদিখ্যেতা মাত্র! আর আজ এই মুহুর্তে এসে ছেলে নিজে থেকে কাছে আসায়, আয়মান সাহেব কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলেন। নিশীথের পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,

—কংগ্রাচুলেশনস!
ব্যস! তখনই নিশীথ স্তম্ভিত ফিরে পায়। সে কি করলো ভাবতেই হুট করে দ্রুতভাবে সরে আসে বাবার নিকট হতে। আয়মান সাহেব ছেলের দিকে আহত চোখে চেয়ে থাকেন। পরিস্থিতির জড়তা কাটাতে নিশীথ ওর চাচাকেও জড়িয়ে ধরে। অতঃপর, খন্দকার সাহেবকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যায় মিটিং রুম থেকে! তাদের অগোচরে পেছন থেকে দুটি চোখ সমস্ত ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে!

আজকাল দোলা প্রায়শই বিষন্ন থাকে। ওকে দেখলে মনে হয় যেন ওর শুভ্র মুখে সদা দুঃখের কালো বাদল ঘুরে বেড়ায়। এর কারণ অবশ্য দোলা বুঝেনা। শুধু এটা বুঝে, ওর এই মন খারাপের পেছনে নিশীথ আছে। যেদিন থেকে ও যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে, দোলার বিষন্নতা অশান্ত সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের ন্যায় মনের তীরে আছড়ে পড়ছে বারংবার। তেমনি এক মন খারাপের বিকেলে দোলার ফোনে হঠাৎ কল আসে। অন্যমনস্ক সে ফোন হাতে নিতেই চোখ দুটো বৃহদাকার ধারণ করে ফেলে!

নিশীথ ফোন দিয়েছে। এতদিন পর! এই একটা সংবাদই যেন ওর বিষন্নতাকে উৎফুল্লতায় রুপান্তর করতে সক্ষম হয়! দ্রুতবেগে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিশীথের শান্ত আওয়াজ ভেসে আসে,
—পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমাদের বাসার ছাদে আসো!

কথাটা বলেই ফোন কেটে দিলো নিশীথ। দোলা বিস্ময়ে হতবাক, কি করবে না করবে ভাবার আগেই মাথায় ওড়না দিয়ে একছুটে বেরোলো বাসা থেকে। পারভীন বেগম যেন বুঝলেন কিছু একটা, মেয়েকে এভাবে বেরোতে দেখেও তাই বিশেষ কিছু বলে থামালেন না ওকে! ছাদের গেটের কাছে পৌছাতেই দোলা তূর্যকে দেখতে পেলো। আগেকার ন্যায় এবারো দুজনের পাহাড়াদার হিসেবে গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সে। দোলাকে দেখেই তূর্য একগাল হাসলো। ওকে তাড়া দিয়ে বললো,

—জলদি যান, ভাবি। ভাই অপেক্ষা করছে!
দোলা মাথা নাড়িয়ে ভেতর যেতেই নিশীথকে উল্টোদিক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো। দোলার কদমের আওয়াজ পেয়েও পেছন না ফেরায় ও নিজেই নিশীথের সামনে গিয়ে দাড়ালো। নিশীথ ওকে দেখেও স্থিরচোখে তাকিয়ে থাকলো। কিন্তু এবার যেন দোলার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলো! সদা শান্ত চুপচাপ থাকা মেয়েটা অস্থির চিত্তে নিশীথকে প্রশ্ন করলো,

—আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেন?
নিশীথ এবারো উত্তর দিলোনা। দোলা রে’গে গেলো। এবার তেজি কণ্ঠে শুধালো,
—কিছু জিজ্ঞেস করছি আপনাকে, নিশীথ ভাই! আমার সাথে এতদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখলেন কেন? আর আমায় এখানে ডেকেও কোনো কথা বলছেন না কেন?
এবার নিশীথ উত্তর দিলো। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো দোলার নিকট,

—কেন কথা বলবো?
—কেন বলবেন মানে?
দোলা বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে! নিশীথ বেখেয়ালিভাবে বলে,
—মানে হচ্ছে আমি কথা বলা/ না বলায় কিই-বা হবে? তোমার কি আদৌ কোনো যায় আসে?
—আ,আপনি এভাবে বলছেন কেন? আমি কি কিছু করেছি?
—কিছু করেছো কিনা সেটাও তোমারই জানার কথা! নিজেই ভেবে নাও।

দোলার মাথা ঘুরে নিশীথের প্যাচানো কথায়। মিনিট পাঁচেক চিন্তাভাবনা করেও ও মনে মনে কিছু ঠাওর করতে পারেনা। পাশাপাশি, ওর প্রতি নিশীথের এমন বেখেয়ালি ভাব ওকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেনা। দোলা এমন ঠান্ডা, রুক্ষ নিশীথকে নিতে পারছেনা!তাইতো এসবে অতীষ্ঠ সে মিনতি করে বলে,

—দেখুন, আমি সত্যিই বুঝতে পারছিনা আমি কি এমন করেছি যার কারণে আপনি আমার উপর রাগ করেছেন! আমি অনেক ভেবেও কোনো কারণ খুজে পাচ্ছিনা। প্লিজ আমায় বলুন। আপনি না বললে আমি বুঝবো কিভাবে?
নিশীথ ঘাড় বাকিয়ে তাকায়। দোলা করুণ চোখে চেয়ে আছে। মেয়েটার সরল মুখ বলছে সে আসলেও কিছু বুঝতে পারছেনা নিশীথের এহেন আচরণের ব্যাপারে! সবকিছু দেখে নিশীথ ফোস করে এক শ্বাস ফেলে। এ মেয়েটার সাথে যতই ও রূঢ় হওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, দিনশেষে দোলার সরল-শুভ্র মুখের দিক তাকালেই নিশীথের সমস্ত রাগ পানি হয়ে গলে যায়।

নিশীথ আচমকা কয়েক কদম বাড়িয়ে দোলার নিকট এগিয়ে যায়‌! দোলাকে কিছু বুঝে উঠার সুযোগ দেবার আগেই ওর দু’বাহু চেপে ধরে বলে,
—রাকিব তোমার সাথে মামাবাড়িতে যা করার চেষ্টা করেছিলো সে ব্যাপারে তুমি আমায় একবারো বলোনি কেন? আমি তো এসব নিয়ে কিছুই জানতাম না। সেদিন তোমার মা না বললে হয়তো কোনোদিন জানা হতোও না!
দোলা অবাক হয়। শুধুমাত্র এ সামান্য কারণে নিশীথ ওর প্রতি এতটা রেগেছে? সে ওর থেকে কথা লুকিয়েছে বলে? ওর ভাবনার মাঝেই আবারো বাহুতে চাপ পড়ে দোলার। নিশীথ পুনরায় আরেকটু বল প্রয়োগ করে বলে,

—আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট কখন লাগে জানো, দোলনচাঁপা? যখন আমার মনে পড়ে যে আমি তোমায় আমার লাইফে যতটা ইম্পর্টেন্স দিই, তুমি আমায় তোমার লাইফে তার সিকি ভাগও দাওনা! এটা যেমন ভীষণ কষ্টদায়ক, একিসাথে অপমানজনকও বটে!

কথাশেষে নিশীথ নিজ হতেই দোলার হাত ছেড়ে দেয়, ওর নিকট হতে সরে আসে। দোলার চোখে জল চলে এসেছে ততক্ষণে। না, এ জল হাতের ব্যাথায় আসেনি বরং নিশীথের কথার আঘাতে এসেছে! ও মনে মনে ভাবে, তবে কি আনমনে সে এতটাই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে নিশীথকে? যে ছেলে ওর জন্য এতকিছু করলো তাকে কষ্ট দিতে দোলা মোটেও চায়নি কখনো। হঠাৎ এই প্রথম চোখের পানি ছেড়ে দোলা কাদতে থাকে নিশীথের সামনে। ভাঙা গলায় বলে,

—বিশ্বাস করুন নিশীথ ভাই, আমি ওই কথাটা কাউকেই বলতে চাইনি। হোক সেটা ভয়ে কিংবা লজ্জায়। কারণ সে ঘটনায় আমার এতটাই ঘৃণা লেগেছিলো যে বিয়ের ব্যাপারে না জানা অব্দি আমি মায়ের কাছেও বলিনি! সেখানে আপনাকে কিভাবে বলতাম বলুন? বিষয়টাকে আপনি যতটা সহজ ভাবছেন ততটাও সহজ নয়!
একটু থেমে দম নিয়ে বললো,

—আর এই সামান্য ব্যাপার এর জন্য আপনি আমার উপর এতদিন রে’গে থাকবেন আমি কল্পনাও করিনি কখনো! এভাবে চুপ না থেকে আমায় এটা বললেই তো পারতেন!
নিশীথ মৃদু হাসলো দোলার অস্থিরতায়। ও যোগাযোগ বন্ধ করায় দোলা এতটা অস্থির হয়ে যাবে ওর জন্য নিশীথ আসলেও ভাবেনি! তবে, মনে মনে ও খুশি হলো ভীষণ। এটাই তো ও চেয়েছিলো। কদম বাড়িয়ে দোলার মুখটা দু’হাতে ধরে উপরে তুললো। দোলা ততক্ষণে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। বন্ধ চোখের কার্ণিশ বেয়েও দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তেই নিশীথ ওর দুই চোখের পাতায় আলতো করে চুমু খেলো। দোলা হঠাৎ ফুপিয়ে কেদে উঠলো। নিশীথ ওকে দু’হাতে আগলে ধরে বললো,

—হুশ! থামো এবার। আর কাদতে হবেনা। আমি এসে গেছি তো!
দোলা কোনো জবাব দিলোনা। নিশীথের জড়িয়ে ধরায় কোনো প্রতিবাদও করলোনা এবার আর! চুপচাপ ওর হৃদপিণ্ডের ধুকপুক শুনায় মনোযোগ দিলো। নিশীথ বললো,
—আমি তোমায় ইচ্ছা করে ইগ্নোর করিনি, দোলনচাঁপা! গত কয়েকটা সপ্তাহ আমার উপর দিয়ে কতকিছু গেছে আমি তোমায় বলে বুঝাতে পারবোনা। আর তোমায় একটা খুশির খবর দেওয়া বাকি আছে!

—কি?
দোলা কৌতুহলী গলায় প্রশ্ন করে। নিশীথ বলে,
—আমি আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস জয়েন করেছি। সেটারই একটা ইম্পর্টেন্ট প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলাম। মেইনলি এজন্যই সময় পাইনি যোগাযোগ করার। ভেবেছিলাম ওটা পাকাপোক্ত হলেই তোমায় জানাবো একবারে! এন্ড গেস হোয়াট?
নিশীথ উৎফুল্ল গলায় বলে। দোলা ওকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। নিশীথের হাস্যোজ্জ্বল চেহারার দিক তাকিয়ে ও নিজেও হেসে বলে,

—আপনার প্রজেক্ট সফল হয়েছে, তাইনা? কংগ্রেটস!
নিশীথ হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ে। দুজন নিরবে খুশি মানায়। এরই মাঝে ছাদের দরজায় টোকা দিয়ে তূর্য বলে,
—ভাই, আকাশরা ফোন দিচ্ছে। নিচে নামতে হবে। তোমাদের কথা কি শেষ? আমি চলে যাবো?
—হ্যাঁ, দাড়া। আমিও আসছি এক মিনিট!
নিশীথ উত্তর দেয়। অতঃপর ওর দিকে চেয়ে থাকা দোলার হাত ধরে বলে,

—ক’দিন যোগাযোগ করিনি তাতেই নিজের কি হাল করে ফেলেছো? আমি তো চাকরিতে ঢুকেছিই। এবার বাসায় তোমার কথা বলবো। তারপর জলদিই নিতে আসবো তোমাকে সারাজীবনের জন্য! ততদিন আমার দোলনচাঁপার যত্নে যেন কোনো কমতি না হয়, মনে থাকবে?

গোধুলির আলোয় দোলার গাল দুটো ফুলে-ফেঁপে র’ক্তিম আভায় রা’ঙে। তা দেখে নিশীথ মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে। ওর প্রেমিক মনে নিষিদ্ধ লোভ জাগে! কিন্তু, নিশীথ সময় থাকতেই লোভগুলোকে খুব গোপনে দ’মন করে। সময় এলে সব হবে। তার আগে নয়!

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৩০

অতঃপর, নিশীথ বিদায় নিয়ে চলে যায় নিচে তূর্যের সাথে। অবুঝ দোলা সেদিক চেয়ে লাজুক হেসে মাথা নাড়ে। মনটা যেন হুট করেই বেশ ফুরফুরে লাগছে!
এই সুখের মাঝেও দোলার চোখের কোণে পানি জমে। ও দু’চোখে আশা নিয়ে নিশীথের যাওয়ার পানে চেয়ে ভাবে, এত সুখ কি কপালে সবে?

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৩২