প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২২

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২২
তানিশা সুলতানা

দীর্ঘ ৮ ঘন্টা পরে পিটপিট করে চোখ খুলে পূর্ণতা। মাথাটা এখনো ভারি ভারি লাগছে। চোখের পাতা কাঁপছে।
দৃষ্টি মেলতেই মাথার ওপরে থাকা সাদা রঙের দেয়াল দেখতে পায়। ঘাড় বাঁকিয়ে আশেপাশে তাকায়। এই কামড়া পূর্ণতা চেনে না। তখনই মনে পড়ে তাকে পাচার করার পরিকল্পনা চলছিলো। এক লাফে উঠে বসে পূর্ণতা। বুক কাঁপছে। নিজেকে দেখে নেয় ভালো করে। পোশাক ঠিকঠাকই রয়েছে। তার মানে কি তারা এখনো ওকে ভোগ করে নি?

হাত পায়ে মৃদু কম্পন অনুভব করে পূর্ণতা। ধীরে ধীরে আঁখি পল্লব ভাড়ি হয়ে ওঠে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে।
বিরবির করে বলতে থাকে
“এমপি সাহেব
কোথায় আপনি? আমাকে বাঁচান। আমার গায়ে পরপুরুষের ছোঁয়া লাগতে দিয়েন না এমপি সাহেব।
আমি আপনার সাথে বাঁচতে চাই। সংসার করতে চাই আপনার সাথে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এতো তাড়াতাড়ি আমি মরতে চাই না। এখনো আপনার সাথে জোছনা বিলাস করা বাকি। আপনাকে প্রাণ ভরে দেখা বাকি। আপনার হাত ধরে অনেকটা পথ হাঁটার ইচ্ছেটা পূর্ণ করা বাকি। আপনার সন্তানের মা হতে চাই আমি। আমার কোলে ছোট্ট একটা রাজকুমার আসবে। যাকে নিয়ে আমি আপনি খুনসুটি করবো। আমার বড্ড ইচ্ছে এমপি সাহেব। আপনার সাথে সুখের রাজ্যে বসবাস করবো।

এতো অপূর্ণ ইচ্ছে নিয়ে আমি দুনিয়া ছাড়তে চাই না। আমাকে বাঁচিয়ে নিন।
তখন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে পলি। হাতে খাবারের থালা। পলিকে দেখে পূর্ণতা আশার আলো খুঁজে পায়। দুই একবার কথা হয়েছিলো তাদের। বেশ ভালো মানুষ। শুধু পরিস্থিতির চাপে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়েছিলো।
পলি এসে পূর্ণতার পাশে বসে। একটু হেসে হাত বুলায় পূর্ণতার মুখে

“ভয় পেয়ো না। তুমি সুরক্ষিত
কিছু তো ছিলো এই কথায়। সত্যিই পূর্ণতার ভয় অর্ধেক কমে যায়। ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে। এই কান্না সুখের। এটা প্রশান্তির কান্না।
পলি পূর্ণতাকে টেনে বুকে নেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

“দায়িত্ববান স্বামী পেয়েছো। সে নিজের জান দিয়ে দিবে তবুও তোমার গায়ে এতটুকু আঁচড় লাগতে দিবে না। ভাগ্যবতী তুমি মেয়ে। শুকরিয়া আদায় করো। চোখের পানি ফেলো না।
কান্নার মাঝেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে পূর্ণতার। সে ঠিক জানতো অভি তাকে বাঁচিয়ে নিবে৷ গোটা দুনিয়ার সাথে লড়াই করে হলেও পূর্ণতাকে নিজের বুকে আগলে রাখবে।
মাথা তুলে পূর্ণ। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে জিজ্ঞেস করে

“আমার এমপি সাহেব কোথায়?
পলি ভাতের থালা হাতে তুলে। বেগুন ভাজা আর শুকনো লঙ্কা দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে জবাব দেয়
“তোমার কাছেই আসছে। খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই চলে আসবে।
বলে পূর্ণতার মুখের কাছে এক লোকমা ভাত এগিয়ে দেয়। পূর্ণতা পলির মুখ পানে এক নজর তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে

“আমি ওনার সাথে খাবো। আসুক উনি।
মুখটা কালো হয়ে যায় পলির৷ সাথে বোধহয় একটু বিরক্তও হয়৷
“ তুমি কেনো না খেয়ে বসে থাকবে? খেয়ে নাও।
“উনিও না খেয়ে আছে। এক সাথেই খাবো
হাল ছাড়ে পলি। হাত ধুঁয়ে ভাতের থালা নামিয়ে রাখে।
“তুমি বোধহয় সবাইকে বিশ্বাস করো না তাই না?
মৃদু হাসে পূর্ণতা।

“ আপনাকে বিশ্বাস করছি। জমিদার বাড়ির বউ করেছি আমি আপনাকে। অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তি দিয়েছি। সেইটুকু কৃতজ্ঞতা থেকে আপনি আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।
পলি প্রতিত্তোরে জবাব দেয় না। শুধু ফোঁস করে শ্বাস টানে। কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলো পূর্ণতাকে। কিন্তু বলতে পারছে না। পলিকে উসখুস করতে দেখে পূর্ণতা বলে
“আমার শাশুড়ী রয়েছে এসবের পেছনে জানি আমি।

চমকায় পলি। এই কথাই সে বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু পূর্ণতা জানলো কি করে?
পলিকে চমকাতে পেরে তৃপ্তির হাসি হাসে পূর্ণতা।
“আপনি যে খাবারটা এনেছেন এতেও ড্রাগ মেশানো রয়েছে।
এবার ঘামতে থাকে পলি। শুকনো ঢোক গিলে এদিক ওদিক দৃষ্টি লুকাতে থাকে।
“বাঘের গুহায় ঢুকে বাঘের সাথে লড়াই করতে নেমেছি। এইটুকু সতর্ক তো থাকতেই হয় তাই না?
জবাব দেয় না পলি। একটু বসে থেকে ভাতের থালা নিয়ে চলে যায়।
পূর্ণতা ভাগ্যকে ধিক্কার জানায়।

অভি আসে আরও কিছু সময় পরে। দরজা খুলে পূর্ণতাকে বসে থাকতে দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। এক কিলোমিটারে বেশি পথ সে দৌড়ে এসেছে।
বিধ্বস্ত অভিকে দেখে পূর্ণতারও নজর আঁটকে যায়। আবারও আঁখি পল্লবে ভীড় জমায় অশ্রুকণারা।
কতোক্ষণ পরে দেখলো অভিকে? হবে সতেরো আঠারো ঘন্টা। এ যেনো সতেরো আঠারো বছর মনে হচ্ছে।
মানুষটা যেনো কিছু মুহুর্তেই বদলে গিয়েছে। সব সময় পরিপাটি হয়ে থাকা মানুষটির কুঁচকানো শার্ট, এলোমেলো চুল, ফুলোফুলো চোখ দুটো, ক্লান্ত আদল খানা।

সব মিলিয়ে অন্য রকম লাগছে পূর্ণতার এমপি সাহেবকে।
অভি ধীরে ধীরে পা ফেলে এগিয়ে আসে পূর্ণতার নিকট। দুই হাত গলিয়ে দেয় পূর্ণতার দুই গালে। বৃদ্ধ আঙুলের সাহায্য মুছে দেয় পূর্ণতার চোখের পানি। মাথা নারিয়ে বারণ করে কান্না করতে। অভির আঁখিতেও টলমল করছে পানি। অতঃপর পূর্ণতা দুই হাতে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে অভির কোমর। অভিও পরম যত্নে আগলে নেয় পূর্ণতাকে৷
“আমার পূর্ণতা৷ আমার জান

আমি চলে এসেছি। পৃথিবীর কোনো শক্তিই পারবে না আমার থেকে তোমাকে কেঁড়ে নিতে। প্রাণ থাকতে তোমাকে কেউ ছুঁতে পারবে না জান।
বিলাপ বকতে থাকে অভি। পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে শুনতে থাকে। আহহা কলিজা ঠান্ডা হচ্ছে তার। তৃষ্ণা মিটছে। এই মানুষটার থেকে দূরে যেতে হলে পূর্ণতা বাঁচবে না।
অভি পূর্ণতাকে বুক থেকে তুলে। পূনরায় দুই গালে হাত দিয়ে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে পূর্নতার চোখে মুখে।
পূর্ণতা মৃদু হেসে বলে

“আমার এমপি সাহেব থাকতে আমার কিচ্ছু হবে না। ভয় পাবেন না। আমি আছি আর সারাজীবন থাকবো। এবার অভি শান্ত হয়।
বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
পূর্ণতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
“আমার হৃদয় আপনাকে ঘৃণা করার আগে যেনো আমার মরন হয়।

জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো ইফতিয়ার। দীর্ঘ ৭ ঘন্টা সে একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তৃষ্ণা মিটিয়ে দেখছিলো পূর্ণতাকে। আর নিরাপত্তা দিচ্ছিলো। যখন পূর্ণতা শান্ত হয়ে ঘুমচ্ছিলো ইফতিয়ারের দৃষ্টি নরছিলো না। কি আছে মেয়েটার মাঝে?
এই মেয়েটাকে পৃথিবীর কোথায় গেলে পাওয়া যাবে? কি করলে এই মেয়েটার হৃদয়ে একটু জায়গা পাওয়া যাবে?
“পরপারে তুমি আমারই হবে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২১

তোমার হৃদয় জুড়ে আমার বসবাস থাকবে। থাকবেই
আমার আল্লাহ নিষ্ঠুর নয়। আমার এতো ভালোবাসা বিফলে যাবে না। আমি হারবো না।
চোখের কোণে জমে থাকা
অশ্রুকণা হাতের উল্টো পিঠে মুছে প্রস্থান করে ইফতিয়ার। পেছন ঘুরে তাকাতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু তাকায় না।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২৩