প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২১

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২১
তানিশা সুলতানা

চোখ ধাঁধানো সুন্দরী পূর্ণতাকে প্রথম নজরে দেখে সব পুরুষের হৃদয়ই কেঁপে উঠবে। আর যদি হয় সেই পুরুষ নারী লোভী। তাহলে তো তাদের মুখ দিয়ে লা লা ঝড়বে।
ঠিক তেমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে জমিদার বাড়ির অতিথি শালায়। জমিদার সাহেব অগোচরে বিদেশি খরিদ্দদের দেখিয়েছে পূর্ণতাকে। দেখেই তাদের লোভ লেগে গেছে। কিশোরী পূর্ণতাকে বিছানায় তোলার ইচ্ছে তখন থেকেই মনে জেগেছে। অপেক্ষার প্রহর গুনছে তারা।

জমিদারও সুযোগ বুঝে মোটা টাকা দাবি করেছে। এবং ওনারা রাজি হয়ে গিয়েছে। আগাম টাকাও দিয়ে দিয়েছে। অতিরিক্ত পাকনা পূর্ণতাকে বাড়ি ছাড়া করতে পারবে এবং হাতে মোটা অঙ্কের বেশ কিছু টাকাও পড়বে। এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পেরে জমিদার বেজায় খুশি।
তার খুশির মাত্রা আরও বেড়ে যায় যখন দেখতে পায় ইফাদ পূর্ণতাকে কোলে করে নিয়ে আসছে। মুখটা ঢেকে এনেছে। এটা অবশ্যই জমিদারই বলেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইফাদের মুখে হাসি নেই। কারণ তার খটকা লাগছে। পূর্ণতাকে ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছে তার বহুদিনের। আজকে সে সফল। নরম তুলতুলে পূর্ণতা তার কোলে। একটু পরেই নিজের পুরুষালি চিত্তে পিষে ফেলবে বাকিদের সাথে। সবাই মিলে ভোগ করবে তেজী নারীকে। তবুও মন মানছে না ইফাদের। এই নারীটির ছোঁয়া তার পরিচিত মনে হচ্ছে। মোলায়েম হাত জোড়া চেনা চেনা লাগছে। পূর্ণতার মুখটা দেখে তারপর ওনাদের হাতে তুলে দিতে পারলে বোধহয় মনের জ্বালা মিটতো।

সাহেব এগিয়ে আসে। সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসে।
“এনেছো তাহলে?
ইফাদ ছোট্ট করে জবাব দেয়।
” হুমম

“যাও এই অবস্থায় গাড়িতে তুলে দিয়ে এসো। অভিকে বন্দি করে রেখেছি আমি। যেকোনো সময় চলে আসবে।
ইফাদ এগোতে গিয়ে এগোতে পারে না। পা যেনো চলছে না তার। কোনো একটা মায়াজালে বন্দি সে। তারই মধ্যে দুজন বিদেশি লোক এগিয়ে আসে।
ভেঙে ভেঙে বাংলায় বলে

” আমার কাছে দাও। আমি নিয়ে যাচ্ছে।
ইফাদ দু পা পিছিয়ে যায়। তারা ছুঁয়ে দেওয়ার আগে সে মুখ দেখতে চায়। ইফাদ যদি খুব বড় ভুল না করে তাহলে এটা মিষ্টি। কলিজার টুকরো বোন।
বিদেশি লোক দুটো ভ্রু কুচকে তাকায় ইফাদের পানে। সাহেবও বেজায় বিরক্ত। কঠিন সুরে বলে
“কি হচ্ছে ইফাদ।

জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় ইফাদ।দুই চোখে পানি টলমল করে ওঠে
” দাদাভাই কেনো জানি মনে হচ্ছে। এটা মিষ্টি। পূর্ণতা না।
সাহেবের বুকটাও কেঁপে ওঠে। সে তারাহুরো করে মুখের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলে। অবচেতন মিষ্টি। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে সাহেব। গোটা দুনিয়ায় তার কোনো দুর্বলতা নেই। সংসার সন্তান বউ। কোনো মায়া তাকে আটকাতে পারে না। কিন্তু নাতনির বেলায় সে ভীতু দুর্বল। ভীষণ ভালোবাসে সে নাতনীকে।

ইফাদ বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় মিষ্টিকে৷
বিদেশি লোক দুটোও বিরক্ত।
তাদের মধ্যে একজন আবারও বলে ওঠে
“ওই মেয়েটা কোথায়?
সাহেব জবাব দিতে পারে না। মনে মনে সে রেগে যায় পূর্ণতার ওপর। ভেবেছিলো বিক্রি করে দিয়েই শান্ত হবে। তবে এবার পরিকল্পনা পাল্টে ফেলে। ওই মেয়ের তেজ এবং বুদ্ধিতে ভরা শরীরটা ভোগ করবে জমিদার। নাতী বউকে বিছানায় নিয়েই ছাড়বে। এবং তারপরই থামবে।
ইফাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলে

” বিচ্ছু মেয়েটা প্রচন্ড চালাক। সে চালাকি করে আমার বোনকে রেখে পালিয়েছে।
রেগে যায় বিদেশি ভদ্রলোক দুটো। হুঙ্কার ছেড়ে বলে
“তাকে খুঁজে আনুন। নাহয় আমাদের টাকা ফেরত দিন।
জমিদার সব টাকা আগেই নিজের কবজায় নিয়ে নিয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই তিনি হেসে ভদ্রলোক দুটোকে কিছু একটা বোঝায় এবং কুটিল হাসে। তারাও জমিদারের কথায় সায় জানায়।

ইফাদ মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বাড়ির দিকে যায়। মিষ্টিকে সে ভীষণ ভালোবাসে। গোটা জমিদার বাড়ির অশুদ্ধ পুরুষদের একমাত্র দুর্বলতা হচ্ছে এই মিষ্টি। তারা গোটা দুনিয়ার কাছে নরপিশাচ হলেও মিষ্টির কাছে সাধু পুরুষ।
ইফতিয়ার খানিকটা দুরত্বে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। সে জানতো মিষ্টির কোনো ক্ষতি হবে না তবুও নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে নি৷ মিষ্টিকে চোখের আড়াল করতে মন সায় দেয় নি। তাই সে আড়ালে থেকে গিয়েছে।
ইফাদ মিষ্টিকে নিয়ে যেতেই ইফতিয়ার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

বুকে হাত চেপে বিরবির করে বলে
” আমার পূর্ণতা
আমার শরীরে এক বিন্দু রক্ত অবশিষ্ট থাকা ওবদি তোমার শরীরে পরপুরুষের স্পর্শ লাগবে না৷
তুমি আমার না হওয়া শান্তি। তোমাকে আগলে রাখার দায়িত্ব আমার।

এতোখন গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে থাকা অভিরাজ স্থির হয়ে বসে পড়ে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। উসকোখুসকো চুল ফ্যাকাশে মুখ মণ্ডল এবং এলোমেলো শার্টে তাকে পাগল পাগল দেখাচ্ছে।
পানির অভাব বোধ করছে অভি। গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে তার। আঁখি পল্লব টকটকে লাল রং ধারণ করেছে। হয়ত কেঁদেছে সে।

অভির সামনে থাকা খাটে অর্ধ উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে একটা মেয়ে। গত পাঁচ ঘন্টা যাবত এই মেয়ের সাথে অভিকে এই কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়েছে। মেয়েটা বহুবার বহুভাবে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে অভিকে। নিজের সম্পূর্ণ জামাকাপড় খুলে ফেলতেও দুবার ভাবে নি।

কিন্তু অভির মধ্যে কোনো ধরণের উত্তেজনা সে সৃষ্টি করতে পারে নি। উল্টে দেখেছে চরিত্রহীন জমিদার নাতীর করুন মুখমণ্ডল। জল ভরা আঁখি। বউয়ের চিন্তায় ছটফট করতে থাকা সদ্য মনোনীত হওয়া এমপিকে।
যার শ্যামলা বর্ণে এবং চওড়া পুরুষালি শক্তপোক্ত শরীর দেখে যে কোনো রমনী ঘায়েল হবে। এই পুরুষের থেকে শারীরিক তৃপ্তি পেতে এই অতিথি শালার সকল রমনী ইচ্ছুক।

অভিরাজের মায়া ভরা মুখ দেখে এতোদিন বিছানায় পাওয়ার খায়েস জন্মেছিলো মেয়েটার। কিন্তু আজকে অভিরাজের ব্যবহারে মুগ্ধ মেয়েটা। মনে মনে বেশ কয়েকবার আওরায় “যে রমনী অভিশপ্ত জমিদার বাড়ির বড় রাজপুত্রের অর্ধাঙ্গিনী হয়েছে সে রমনী পৃথিবীর সব চেয়ে ভাগ্য বতী। আল্লাহ সেই ভাগ্যবতী নারীর মঙ্গল করুক”
খট করে আওয়াজে দরজা খুলে যায়। বদ্ধ উম্মাদ অভি দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়। দরজা খুলেছে ইশান। অভি ইশানের দুই গালে হাত রেখে শুধায়

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২০

“আমার পূর্ণ? আমার পূর্ণ কোথায়? ঠিক আছে তো আমার বউ?
ইশান মৃদু হেসে মাথা নারায়।
” ভাবি একদম ঠিক আছে। কিন্তু তোমাকে কে বন্দি করে রেখেছে এখানে?
শুকরিয়া আদায় করে নেয় অভি৷
অতঃপর চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২২