প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২০

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২০
তানিশা সুলতানা

গভীর রাত। ঘড়ির কাটায় দুইটা ছুঁই ছুঁই। চারিদিকে শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। মাঝেমধ্যে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে আছে। রাস্তার পাশে জ্বলতে থাকা ল্যামপোস্টের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ইফতিয়ারকে। হাঁটু মুরে বসে আছে সে পিচ ঢালা রাস্তায়। কানে ফোন। পরনে ঢিলেঢালা কালো টিশার্ট এবং ফ্রী কোয়াটার প্যান্ট।
মিষ্টি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছে শখের পুরুষকে। মানুষটিকে দেখার তৃষ্ণা মেটে না মিষ্টির।
একটানা দুই চার দিন তাকিয়ে থাকলে পারলে বোধহয় মন ভরতো।

আজকে লোকটাকে বেশ উসখুস লাগছে। দূর থেকেও মিষ্টি বুঝতে পারে বেশ অশান্ত সে। কোনো কারণে চিন্তিত। ইচ্ছে করে জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু সাহস হয় না।
দুজনই নিরব রয়েছে বেশ কিছু খন যাবত। মিষ্টি ইফতিয়ারের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছে। ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরতে মানুষটিকে। বলতে “আপনার সব দুঃখ গুলো আমাকে দিয়ে আমার সুখ আপনি নিয়ে নিন। আপনার বিরহে জর্জরিত অদলখানা আমার বুকে যে তীরের মতো আঘাত হানে। আমি সয্য করতে পারি না”
ইফতিয়ার হঠ্যাৎ প্রশ্ন করে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“পূর্ণতাকে ভালোবাসো মিষ্টি?
মিষ্টি চমকায়৷ কেনোনা সে অন্য চিন্তায় বিভোর ছিলো। একটু সময় নিয়ে জবাব দেয়
” হ্যাঁ ভীষণ ভালোবাসি।
“আমিও ভালোবাসি।
মৃদু হাসে মিষ্টি। আঁখি পল্লব ভিজে ওঠে। বুকের ভেতর অসয্য যন্ত্রণা গুলো দলা পাকিয়ে যায়। ধরে আসা গলায় বলে
” জানি আমি। আর এটাও জানি পূর্ণতার খোঁজ খবর রাখার জন্যই আমার সাথে কথা বলেন৷
ইফতিয়ার জবাব দেয় না। হয়ত অপরাধ বোধ হচ্ছে। মিষ্টি সময় নেয় না। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে ওঠে

“আমি আপনার থেকে ভালোবাসা চাই না। শুধু আপনাকে ভালোবাসতে চাই। আপনার দুঃখের ভাগিদার হতে চাই। খারাপ সময়ে কাঁধে হাত রাখতে চাই। যখন ভাবির কথা মনে পড়ে আপনার বুকে অসয্য যন্ত্রণা শুরু হবে সেই মুহুর্তে আপনার বুকে আমার মাথা রেখে যন্ত্রণা কমিয়ে দিতে চাই।
আমি আপনার বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।
ইফতিয়ার আলতো হাসে।

” তুমি থাকতে চাইলে আমি রেখে দিবো। কথা দিলাম।
তবে কখনো বিরক্ত হলে পূর্ণতার প্রতি আমার পাগলামি না মানতে পারলে সসম্মানে মুক্তি দিবো।
“আমি কখনোই বিরক্ত হবো না। আপনাকেও কথা দিলাম।
অতঃপর আবারও দুজন চুপ করে যায়।
মিষ্টি বলে

” এতো রাতে এখানে আসলেন যে? বাসায় যাবেন না?
ইফতিয়ার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“অভি বাসায় নেই। পূর্ণতা একা। রাত পোহালেই বন্দি করে রাখা মেয়েদের বিদেশে পাচার করা হবে। তোমার দাদাভাই উঠেপড়ে লেগেছে পূর্ণতাকে শেষ করতে।
আমাকে যে পূর্ণতাকে বাঁচাতে হবে।

নিজের পরিবারের প্রতি আকাশ সমান রাগ মিষ্টির। কিন্তু কখনো কাউকে অভিযোগ করে নি। বড্ড ইচ্ছে করে কাউকে জড়িয়ে ধরে বলতে ” এখান থেকে নিয়ে যাও আমায়। এখানে মানুষ থাকে না”
কি যাবে কোথায়? কে শুনবে কথা? কেই বা নিয়ে যাবে?
ইফতিয়ার বলে
“মিষ্টি ঘুমাও এবার। রাখছি।

বলেই ইফতিয়ার কল কেটে দেয়। এবং সরে যায় রাস্তা থেকে। হয়ত লুকিয়ে পড়লো। মিষ্টি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে যায়। ঘুম আসবে না। এই মুহুর্তে মাকে বড্ড প্রয়োজন। ফোনটা লুকিয়ে রেখে মিষ্টি শিউলির রুমে যায়। এমনটা সে প্রায়ই করে। ঘুম না আসলে বাবা মায়ের মাঝ খানে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
আজকে বাবা মায়ের কামড়ার কাছাকাছি যেতেই দেখতে পায় শিউলি পূর্ণতার কক্ষের দিকে যায়। মিষ্টি মা বলে ডেকে ওঠে।

চমকায় শিউলি। হাতে থাকা নেশা জাতীয় তরল পদার্থের শিশিটা লুকিয়ে ফেলে শাড়ির আড়ালে। একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
“তুই ঘুমস নি?
মিষ্টি আহ্লাদী হয়ে জড়িয়ে ধরে শিউলিকে। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে
” ঘুম আসছে না মা। তুমি কি ভাবির রুমে যাচ্ছিলে?
চলো চলো আমরা তিন জন আজকে এক সাথে ঘুমাই।

বলেই শিউলির বুক থেকে মাথা তুলে মিষ্টি। তারপর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় রুমে। পূর্ণতার চোখে সবেই ঘুম জড়ো হয়েছে। চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমের দেশে তলিয়েছে প্রায়। তখনই দরজা খোলার শব্দ কানে আসে।
এক লাফে উঠে বসে পূর্ণতা। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মিষ্টি এবং শিউলি।
মিষ্টি হেসে পূর্ণতার পাশে বসে
“ভাবি আজকে আমরা এক সাথে ঘুমবো।

জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় পূর্ণতা। মনে মনে সে ভীষণ ভয় পেয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে মনে হচ্ছে অভিকে বোধহয় হারিয়ে ফেলবে। দুষ্টু লোকদের কবলে পড়ে যাবে। হাজার পুরুষের ছোঁয়া লাগবে শরীরে। নষ্ট মেয়ে উপাধি পাবে।
এসব মনে হতেই ভয়ে শিওরে উঠছে সে। বড্ড অসহায় লাগছে। অভি যখন চলে গেলো। পূর্ণতার ইচ্ছে করছিলো লোকটাকে বলতে “আজকে আমাকে একা রেখে কোথাও যাইয়েন না দয়া করে”
কিন্তু বলতে পারে নি।

মনের মধ্যে অভিকে নিশে সন্দেহ দানা বাঁধছিলো। মনে হচ্ছিলো “অভি যুক্ত নেই তো এসবে? কোথায় যায় সে?”
কিন্তু তখনই আবার মন কেঁদে বলে উঠেছে
“যার বা পাঁজরের হাড় দ্বারা আমার সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে অবিশ্বাস করার আগে যেনো আল্লাহ আমায় মরন দেয়”।
মিষ্টি শুয়ে পড়েছে। শিউলিও আলতো হেসে বিছানায় এসে বসে৷ পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দেয় পূর্ণতার মাথায়। চুমু খায় কপালে। পূর্ণতা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

“বুকের কাছে টেনে নিয়ে মাটির কাছে ফেলে দেওয়া মানুষ গুলোর মুখে এতো মায়া কেনো থাকে?
নিখুঁত অভিনয় মানুষ করে কি করে ?
ওদের বুক কাঁপে না? মায়া হয় না?
মিষ্টি কোমর জড়িয়ে ধরে শিউলির।
“পৃথিবীর সব থেকে ভালো মা আমার।

ভাবি শুয়ে পড়ো। আমার মায়ের হাতে জাদু আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে আর দেখবে ঘুম পেয়ে যাবে।
পূর্ণতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শুয়ে পড়ে। শিউলি মাঝখানে। আর দুই পাশে পূর্ণতা এবং মিষ্টি।
” মা কখনো খারাপ হতে পারে না। চোখের দেখা ভুল হতে পারে। তাই না মা?
পূর্ণতা শিউলির বুকে মাথা রেখে বলে। শিউলি জবাব দেয় না। শুধু আলতো হাসে।
খুব সকালে শিউলি জেগে যায়। পূর্ণতা আর মিষ্টি ঘুমচ্ছে। আস্তে আস্তে উঠে পড়ে শিউলি। কোমর হতে শিশি বের করে একটুখানি তরল পদার্থ খুব সাবধানে পূর্ণতার ঠোঁটের ওপর ঢেলে দেয়।

অতঃপর অতি দ্রুত শিশি লুকিয়ে ফেলে কোমরে।
তারাহুরো করে নেমে যায় বিছানা হতে। চটি পায়ে চাপিয়ে চলে যাবে তখন পূর্ণতা হাত ধরে ফেলে শিউলির।
চমকে ওঠে শিউলি। শুকনো ঢোক গিলে তাকায় পূর্ণতার পানে।
আধবোজা চোখ মেলে করুন গলায় পূর্ণতা বলে

“মা
আমি মরে গেলে দয়া করে এই বাড়ির এক কোণায় কবর দিতে বলিয়েন আমায়। আমি আমার স্বামীর বাড়ি মাটিতে মজে যেতে চাই।
শিউলি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না। পূর্ণতার হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।

অভি ফেরে নি। পূর্ণতা অপেক্ষা করছিলো অভির জন্য। যতখন পর্যন্ত হুশ ছিলো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলো অভির দেখা পাওয়ার জন্য। এখন চোখ মেলে তাকাতে পারছে না পূর্ণতা। অস্থির হয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। উঠে বসার শক্তিও তার নেই৷
কথা বলছে মনে মনে কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।
পূর্ণতা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতের স্পর্শে পূর্ণতার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ১৯

“এমপি সাহেব বাঁচান আমায়। আমার ফুলের মতো পবিত্র গায়ে পরপুরুষের স্পষ্ট লাগতে দিয়েন না।
পূর্ণতার এমপি সাহেব আসে না।
” আল্লাহ আমার জানটা কবজ করি নিন। পর পুরুষ স্পর্শ করার আগে আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নিন আল্লাহ। আমি কলঙ্কিনী হওয়ার আগেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাই।
আমার দোয়া কবুল করুন আল্লাহ।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ২১