পূর্ণতা পর্ব ১১

পূর্ণতা পর্ব ১১
নন্দিনী নীলা

প্রভাত হলে রুম পেয়ে গেছে এজন্য চলে যাবে পূর্ণতা আজকে জানতে পারলো সেটা। মা নাকি দুইদিন আগে থেকেই জানে এজন্যই তো বলি সব কিছু কোথায় নিয়ে যায় রুমের ভেতরে মোটামুটি ভালো জিনিস ছিল সব গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে আজকে প্রভাত চলে যাবে। পূর্ণতা স্কুল থেকে এসে ব্যাগটা রুমে রেখে ড্রেস পরিবর্তন না করেই দৌড়ে চলে আসলো প্রভাতের রুমে দেখলো রোজিনা বেগম আগে থেকে এখানে এসে সব কিছু গুছিয়ে দিচ্ছে হাতে হাতে। প্রভাত গ্যাসের চলা নিয়ে রুম থেকে বের হলো পূর্ণতা ওর পিছু পিছু আসছে।

“আপনি আজকে চলে যাবেন আমাকে আগে বললেন না কেন?”
“তোমার তো খুশি দিন আজকে। আমি তোমাকে আগে এতো খুশি দিতে চাইছিলাম না এজন্যই বলিনি।”
“আমার খুশির দিন কেন?”
“তোমার অপছন্দের মানুষটা চলে যাচ্ছে এবার তুমি শান্তিতে তোমার বাসায় থাকতে পারবে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আরে ওসব তো মজা করতে বলতাম অতটাও অপছন্দ করি নাকি। এখন আমাকে পড়াবে কে? আপনার কাছে পড়ে তো অনেক অংক শিখে গেছি। এখন তো আবার আগের মতন সব ভুলে যাব।”
“তারমানে বলছো তুমি আমাকে অপছন্দ করো না?’

” বাদ দেন তো এইসব আপনি যে আজকে চলে যাচ্ছেন আমাকে আগে বলেননি কেন?”
প্রভাত গ্যাসের চুলা গাড়িতে রেখে পূর্ণতা দিকে তাকিয়ে বলল,,”স্কুল ড্রেস পরিবর্তন করো আর ফ্রেশ হও যাও।”
‘কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন?”

“বললাম‌ই তো আমি চলে যাব শুনলে তুমি তো অনেক খুশি হতে এজন্যই বলিনি।”
পূর্ণতা মন খারাপ করে ওভাবে প্রভাতের পিছু পিছু ঘুরতে লাগল। আর প্রভাতকে কথা বলে জ্বালিয়ে মারল প্রভাত উত্তর দিচ্ছে তো দিচ্ছে না। পূর্ণতার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেছে প্রভাব চলে যাবে শুনে। কিন্তু পূর্ণতা খারাপ লাগাটা প্রকাশ করতে পারছে না।
যাওয়ার আগে প্রভাত একটা কথাই বলে গেল,”তোমার হিজাবটা নিয়ে গেলাম পূর্ণতা এটা আমাকে তোমার কথা মনে করাবে।”

পূর্ণতা তখন বোকা কন্ঠে বলল,,’আমাকে তো আপনি অপছন্দ করেন আমার কথা মনে করে কি করবেন? আমার হিজাব টা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে যান।”
“তুমি কি আমাকে অপছন্দ কর?”
কয়েকদিন আগেও পূর্ণতা মুখের ওপর স্বীকার করলেও এখন বলল,,”না।”

“তাহলে আমিও করি না। আমি তোমাকে বলেছি তো অপর পক্ষ থেকে যা পাই আমি সেটাই ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আর তোমার কথা কেন মনে করব সেটা আবার যখন দেখা হবে তখন বলব।”
প্রভাত চলে যাওয়ার পর পূর্ণতার মন খারাপ করে সোফায় বসে র‌ইল। রোজিনা বেগম ওকে ডেকে কয়েকবার বলল ড্রেস চেঞ্জ করতে কিন্তু পূর্ণতা উঠল না। ওর মনটা খারাপ হয়ে গেছে কিছু করতে ইচ্ছে করছে না। প্রভাত যেদিন এসেছিল সেদিন ও ওর মনটা এমনি খারাপ ছিল।

আজ যখন চলে গেল তখন ওর মনটা সেদিনের মতন ভীষণ খারাপ। মানুষগুলো এমন কেন এরা আসার সময় মন খারাপ করে দেয় যাওয়ার সময় মন খারাপ করে দেয় এরা কেন মনের মতো চলে না। পূর্ণতার আজকে খুশি হওয়ার কথা ছিল প্রভাত আসার পর থেকে যেভাবে তাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করেছে যা সব অপমান করেছে। কিন্তু তার চলে যাওয়ার কেন ওর বুকে ব্যথা করছে?

প্রভাতের সাথে পূর্ণতার তারপরে দেখা হলো এক মাস বাদে। এই দেখা হওয়াটা নিয়ে পূর্ণতা অনেক কষ্ট করেছে। প্রভাত যখন বাসায় এসেছিল তখন ওকে কিভাবে তাড়াবে সেই নিয়ে যতটা না কষ্ট করেছে তার থেকে দ্বিগণ কষ্ট করেছে প্রভাতের সাথে কিভাবে একবার কথা বলা যায় একবার দেখা করা যায় সেই চিন্তা করে। এই এক মাসে প্রভাত কে এতো বেশি মিস করেছে পূর্ণতা বুঝতে পেরেছে মানুষটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

সব সময় ঝগড়া করা বিরক্ত করা জ্বালানো যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ওর এই মন খারাপ, এই মিস করাটা যখন ওর বন্ধু-বান্ধব শোনে তখন বলে তুই প্রেমে পড়েছিস। পূর্ণতার নিজেরও কেন জানি মনে হয় ও মনে হয় প্রভাতের প্রেমে পরেছে। যখন প্রভাত ওর কাছে ছিল কখনো প্রভাত কে ওর কাছে সুন্দর মনে হয়নি।

কিন্তু এখন মনে হয় শ্যাম বর্ণের ওই পুরুষটার থেকে সুন্দর পুরুষ এই পৃথিবীতে আর দুটো নেই। এই পুরুষটা শুধু ওর যাকে ও জ্বালাবে, বিরক্ত করবে, যার সাথে প্রচুর ঝগড়া করবে। আবার দিনশেষে যে ওকে এত্ত এত্ত ভালোবাসা দিবে। ভালোবাসার কথা মনে হলেই পূর্ণতা লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।

পূর্ণতা রোজিনা বেগমের কাছে গিয়ে আবদার করল। ওর কয়েকদিন পরেই টেস্ট পরীক্ষা তারপরে এস‌এসসি পরীক্ষা প্রভাতের কাছে পড়ে ওর অনেক উন্নতি হয়েছিল কিন্তু এখন আগের মতো ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে ওর ব্রেন। প্রভাতের কাছে যদি পরীক্ষা পর্যন্ত পড়া যেত অনেক ভালো হতো ওর মাকে রাজি করাতে লাগল এই বলে। যেভাবেই হোক প্রভাতের কাছে পড়ার ব্যবস্থাটা যেন করে দেয়। পূর্ণতার মা তো এসব শুনে সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল কারণ তার অনেক পছন্দের প্রভাব। তিনি প্রভাতকে বাসায় ইনভাইট করল।

এক সপ্তাহ পর প্রভাত শুক্রবারে ওদের বাসায় আসবে বলল। পূর্ণতা প্রভাত আসবে শুনেই লজ্জা পেতে লাগল। আগে যখন প্রভাতের সাথে দেখা হয়েছে ঝগড়া হয়েছে তখন ওর মনে কোন অনুভূতি ছিল না। কিন্তু এখন এই এক মাসে ওর ছোট্ট মনটায় প্রভাত আষ্টে-পৃষ্টে ছড়িয়ে গেছে ভালোবাসে তাকে। এখন প্রভাত নামটা উচ্চারণ করতে হাজারো প্রেম প্রজাপতি উড়াউড়ি করে। পূর্ণতা কি পড়বে? কিভাবে সাজবে? প্রভাতের সামনে নিজেকে পরিপাটি সুন্দরী না বানিয়ে যাওয়া যাবে না।

পূর্ণতা আলমারি থেকে সবচেয়ে ফেভারিট টপসটা বের করে পরলো তারপরে সুন্দর করে সেজেগুজে প্রভাতের অপেক্ষা করতে লাগল। এদিকে রোজিনা বেগম মেয়েকে নতুন জামা পড়ে সেজেগুজে ঘুরতে দেখে কপাল কুঁচকে রইল‌
জিজ্ঞেস করলেন,,” এতো সাজগোজ কেন?
পূর্ণতা বলল,,”এমনি সাজতে ইচ্ছা করলো, ভাবছি কয়েকটা ছবি তুলে আব্বুকে পাঠাবো।”

আব্বু অনেকদিন ধরে আসে না এজন্য ওর আব্বু মাঝে মাঝেই পূর্ণতার ছবি চায়। পূর্ণতা খুব একটা ভিডিও কলে কথা বলে না ওর আব্বুর সাথে। রোজিনা বেগম শুনেই ফোন নিয়ে এসে মেয়ের ফটাফট কয়েকটি ছবি তুলতে লাগল তখনই কলিং বেজে উঠল পূর্ণতা ছবি তোলা বাদ দিয়ে দৌড়ে চলে গেল দরজা খুলতে।

প্রভাত প্রথম দিনের মতো মোটা ফ্রেমের একটা চশমা পড়ে এসেছে। ঢোলা ঢালা চেক শার্ট। প্রথমদিন পূর্ণতার ছেলেটাকে দেখে যতটাই আনস্মার্ট আর অপছন্দ হয়েছিল ‌ আজকে ফের দেখে পূর্ণতা মুগ্ধ হলো প্রভাতের সবকিছুই যেন ওকে মুগ্ধ করল ওই চশমা, এই ঢোলাঢালা শার্ট সব যেন পারফেক্ট। প্রভাত অনেক লম্বা গায়ের রং শ্যামবর্ণের ওর মনে হলো ছেলেদের এই গায়ের রংটায় পারফেক্ট।

প্রভাতের মুখের দিকে তাকিয়ে পূর্ণতা লাজুক হেঁসে বলল,,”কেমন আছেন?”
“ভালো। তুমি কেমন আছো?”
“ভালো ভেতরে আসুন না।”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে ভেতরে এসে বসল। পূর্ণতা প্রভাতের পাশে এসে দাঁড়ালো রোজিনা বেগম হালকা চা নাস্তা এনে প্রভাত এর পাশে বসল।

“কতদিন হয়ে গেল চলে গেছো আর তো দেখা সাক্ষাত নাই।”
“হ্যাঁ আন্টি এদিকে আর আসা হয় না আসলে আপনার সাথে দেখা করে যেতাম। পড়ালেখা নিয়ে অনেক বিজি থাকি।”
“বুঝি তো তুমি তো আর আমার মেয়ের মতো ফাঁকিবাজ।”

পূর্ণতা অন্যদিন হলে হয়তো মায়ের কথা শুনে রাগ জেদ দেখিয়ে চলে যেতো। কিন্তু আজকে আর মায়ের কথা রাগল না ওর মায়ের কথায় ধ্যান নেই
ও প্রভাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।
পছন্দের মানুষকে দেখার মাঝেও যে কি শান্তি তা আজকে ও প্রভাতের দিকে তাকিয়ে থেকে অনুভব করছে।

কয়েকটা কথাবার্তা বলে রোজিনা বেগম পূর্ণতা কে পড়ানোর কথাটা আবার বলল। এক ঘন্টা সময় নিয়ে যেন পূর্ণতাকে একটু পড়ায়। প্রভাত সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। ছেলেটা আগের বার বাসায় থেকেও পড়াতে রাজি হচ্ছিল না এবার তো বাসায় নাই। এখন রাজি হবে নাকি টেনশনে ছিল রোজিনা বেগম। কিন্তু রাজি হ‌ওয়াতে অবাক হলো।
সন্ধ্যায় প্রভাত বলে গেল পূর্ণতা কে পাঁচটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত এক ঘন্টা পড়াবে।
পূর্ণতা প্রভাতের পিছু পিছু বাসার বাইরে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,,”আপনি কিছু বলতে চাইছিলেন?”
প্রভাত কপাল কুঁচকে বলল,,”কি?”

” চলে যাওয়ার দিন না বলে গেলেন পরের বার দেখা হলে বলবেন কেন মিস করবেন!”
“কই আমি তো তোমাকে মিস করিনি!”
পূর্ণতা অভিমানী কন্ঠে বলল,,”সত্যি একটু মিস করেননি?”
প্রভাত বলল,,”না তো তোমাকে মিস করবো কেন? যে পরিমাণ জ্বালিয়েছ আমাকে এখন তো শান্তিতে আছি জ্বালানোর কেউ নেই।”

পূর্ণতা পর্ব ১০

পূর্ণতা মন খারাপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রভাত ওর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,”আগামীকাল থেকে আমি তোমাকে জ্বালাতে পড়াতে চলে আসব।”

পূর্ণতা পর্ব ১২